জ্বলদর্চি

প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ/দুর্গাদাস মিদ্যা

প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ

দুর্গাদাস  মিদ্যা 


কালের কোলাহলে সব কিছু বিলীন হয়ে যায় তবুও থেকে যায় কিছু স্মৃতি যার উপস্থিতি মন ভরিয়ে রাখে কালে কালান্তরে। সেই রকম একটি স্মৃতি সতত অবস্থান করে আমার মনের ভিতর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কাব্য সৃষ্টির মধুর ঝঙ্কার। 

তিনি কতবার  কতভাবে অপমানে আহত হয়েছিলেন তবুও তিনি পরাভূত হননি কোনোদিন। আজও আমাদের কোন দুঃখ কষ্টে অথবা সঙ্কটে তাঁর সৃষ্টি আমাদের জীবনকে নব নব রসে সিঞ্চিত করে প্রবহমান পূত সলিলা গঙ্গার মতো। আমার একাকীত্বের জীবনে আমি তাঁকে জীবন দেবতা বলে মনে করি যখন সঞ্চয়িতায় সংকলিত কবিতা গুলি পড়ি একটি একটি করে। বৈশাখ মাস এলেই যেন তিনি হৃদয়ের দরজায় কড়া নাড়েন। আন্দোলিত করেন আম্রপল্লবের মতো। 

  সেইরকমই পড়ছিলাম চিত্রা কাব্যগ্রন্থ। চিত্রা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে সুখ কবিতাটি স্থান পেয়েছে। কবিতাটি রচিত হয়েছে আজ থেকে একশ তেইশ বছর আগে ১৩চৈত্র ১২৯৯বঙ্গাব্দে। অথচ এখনও কত মনোমুগ্ধকর এবং প্রাসঙ্গিক তা বলে বোঝানো যাবে না। এমন সব উপমা তিনি তুলে এনেছেন যা পড়লে অবাক হতে হয়। পদ্মা নদের বুকে তিনি ভাসমান বোটে আছেন সেই অবস্থায়  কবিতাটিতে বর্ণনা করছেন এক মেঘমুক্ত দিবসের  সেখানেই যে সুখ অনুভূত হল তার বিবরণ। 

  সমস্ত কবিতাটি অদ্ভুত এক চিত্রকল্প রচিত হয়েছে যা পরম সত্য এবং সুন্দর। প্রথম লাইনেই চমক---প্রসন্ন আকাশ হাসিচে বন্ধুর মতো, সুন্দর বাতাস মুখে চক্ষে বক্ষে আসি লাগছে মধুর, অদৃশ্য অঞ্চল যেন সুপ্ত দিগ্বধূর উড়িয়া পড়িছে গায়ে। অসম্ভব এক রোমান্টিকতা এমনভাবে মনকে স্পর্শ করে যা আমার মনকে এতদিন পরে ও আলোড়িত করে। জানি সকলেই বলেন -উপমা কালিদাসস্য। কিন্তু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এই ব্যাপারে কম যান না। এখানে এই সত্য উদ্ঘাটিত হবে---বক্র শীর্ণ পথখানি দূর গ্রাম হতে শস্যক্ষেত্র পার হয়ে নামিয়াছে স্রোতে তৃষার্ত জিহ্বার মতো। যারা নদীর ধারের গ্রামের মানুষ তারা নিশ্চিত জানেন এই উপমা কত প্রাজ্ঞল। 

কবি পদ্মা নদীতে বসে এই সব চিত্র দেখছেন  আর মুগ্ধ হয়ে বর্ণনা করছেন অনুভব করছেন মানসিক সুখ। 

 তিনি আনন্দে আন্দোলিত, আন্দোলিত পদ্মার জলের মতো, স্রোতের মতো। তারই রূপ সৌন্দর্য তুলে এনেছেন এই কবিতায়। তিনি বলছেন- উলঙ্গ বালক তার আনন্দে ঝাপায়ে জলে পড়ে বারম্বার কলহাস্যে, ধৈর্য্য ময়ী মাতার মতন পদ্মা সহিতেছে তার স্নেহজ্বালাতন। কি অপূর্ব এক বাৎসল্য রসের রূপ বর্ণনা করলেন কবি যা আমাদের মনকে বাৎসল্য রসে সিক্ত করলেন অনায়াসে। কবি আজ সুখী এই প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে। তাই তিনি বলছেন- আজি বহিতেছে প্রাণে মোর শান্তিধারা। মনে হইতেছে সুখ অতি সহজ সরল, কাননের প্রস্ফুট ফুলের মতো, শিশু আননের হাসির মতন। এইযে এমন সুন্দর এক আনন্দঘন সুখ পরিসরের কথা বললেন স্বাভাবিক সৌন্দর্য ভরা উপমাগুলো দিয়ে এই মুন্সীয়ানা শুধুমাত্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ  এনেছেন অনায়াসে। তিনি তাঁর প্রিয়জনকে শোনাতে চান এই সব গান যা বিশ্ববীনা থেকে উঠে আসছে এবং কবিকে মুগ্ধ করছে। এই স্থির শান্ত জলে  যে সৌন্দর্য লুকিয়ে ছিল তা কবি চাক্ষুষ করলেন আর অপার এক সুখ অনুভব করলেন তাই শেষ পঙতিতে কবি বলছেন - চারিদিকে দেখে আজি পূর্ণ প্রাণে মুগ্ধ অনিমেখে এই স্তব্ধ নীলাম্বর, 
স্থির শান্ত জল  মনে হল, সুখ অতি সহজ সরল। এই কবিতাটি পড়ে আমরাও সুখের স্পর্শ পাই, খূব সহজ সরলভাবে  আমাদের হৃদয়কেও তুষ্ট করে আনন্দ দেয়। সেই আনন্দের স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ যিনি আজও আমার প্রাণের ঠাকুর, যাঁকে বুঝতে আমার অসুবিধা হয় না এবং দুঃখে সুখে তিনি আছেন আমার কাছে কবিতায় এবং গানে। তাঁকে এই বৈশাখের দিনে অনেক শ্রদ্ধা এবং প্রণাম। 

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇




Post a Comment

0 Comments