জ্বলদর্চি

রম্য কবিতা/পর্ব-৬/তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

রম্য কবিতা
পর্ব-৬
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

(১)
চোয়াল পাখা

শব্দটা ঠিক-ঠাকই শুনেছেন, বড়দা,
সাথে বিনামূল্যেই মিঠে পান ও জর্দা।
লঙ্কায় ঝাঁঝ তবু কাছে পিঠে জল নেই,
জিভ কেটে প্রদাহ বা ঘুষি খেয়ে দাঁত নেই,
রাগে এলে একগাল গালাগালি বন্য,
ভিতরে আগুন তবু না ছোঁড়ার জন্য;
খুঁজে পাওয়া যাবেনাকো ভূভারত ঘাঁটলে,
এমন এনেছি পাখা চোয়ালেতে সাঁটলে-
ঝড় তুলে দাবদাহ করবেই শান্ত,
পরের ষ্টেশনে নেমে যাবো, যদি চান তো-
দয়া করে জানাবেন, এ যে দ্রষ্টব্যই,
দরদামে লাভ নেই, দাম ঊননব্বই।
একটি তড়িৎকোষে পরিষেবা বারোমাস,
রাস্তায়, সস্তায় সংযম, উল্লাস।


(২)
ছিঁচদন্ত

‘শ্বদন্ত’- শুনেছি, ‘তদন্ত’- শুনেছি, ‘ভদন্ত’- শুনলুম কাল,
শুনছি নেত্রী নাকি ‘অদন্ত’-মাড়ি নিয়ে দন্ত্যবর্ণে নাজেহাল!
ভাঙা দাঁত, গোটা দাঁত, সরু দাঁত, মোটা দাঁত, উঁচু-নিচু দাঁতে গৃহযুদ্ধ,
দুধে দাঁত, সোজা দাঁত, ক্ষুদে দাঁত, গোঁজা দাঁত, দাঁতে আক্কেলও অবরুদ্ধ।
‘ছেদকদন্ত’ দিয়ে কামড়াই মুলো, কুলও, পড়শির ধুলো খেয়ে ক্লান্ত,
‘পেষকদন্তে’ ব্যথা চিবিয়ে চিবিয়ে গুঁড়ো, গজ দাঁতে হাসি দুর্দান্ত।
দন্তায়ুধেরা দাঁতে দেখেইনি আছে কিনা ‘গজদন্তে’র মতো ধার,
‘হন্তদন্ত’- বুঝি, ‘ইসদন্ত’ও- বুঝি, ‘ছিঁচদন্ত’টা কি আবার?

দাঁতের চিকিৎসক বলে কি বোঝাবে যা-তা, বানাবে যেমন খুশি শব্দ?
প্রতিটা দাঁতের নাম নতুন নতুন দিলে, বাঙালি শ্রোতারা হবে জব্দ!
তোমার নতুন রুগী - কি যেন কি নাম তার ! সে নাকি বড়ই ছিঁচকাঁদুনি,
একে তো চিরনদাঁতি, তাতেও কনকভাতি যেন হয় দুপাটির বাঁধুনি।
প্রশ্ন ছিলোনা তার- “চোখ, নাকি জলাধার? কেন মনে আসে যায় ভাঙা মেঘ!”
কাঁদতে সে ভালোবাসে, তাইতো কান্না আসে, ‘কতো হারে আসে’- নয় উদ্বেগ।
রোগটা বাড়তি গজদাঁত নিয়ে, কাত নিয়ে, ভাবমূর্তির ক্ষয় ঢের হয়,
কাঁদলে কাউকে দেখে, ভেজানো ঠোঁটের থেকে, একটিই দাঁত কেন বের হয়!
নিজের দুঃখে হোক, পরের দুঃখে হোক, বোঝানো যায়না কেঁদে কষ্ট!
কাঁদো কাঁদো মুখে ওকে, দেখে বিস্মিত লোকে, উঁকি দেওয়া দাঁতে ভাব নষ্ট।
ছিঁচ করে কাঁদলেই, ও দাঁতটা বের হবেই- দেখে দিলে নাম সেইজন্যেই?
চিকিৎসা শাস্ত্রে বা বাংলার অভিধানে, যে দাঁতের কোনও উল্লেখ নেই!
--

(৩)
প্রান্তিক ছাত্র

কালকের পড়া ভালো শুনিনি- বুঝলি জগা!
আজ পড়া ঠিকঠাক শুনবই,
বান্ধবী যতো সুন্দরই আশে-পাশে থাক,
হবে জানি কাছাকাছি মন, বই।
‘চুপ থেকো, চুপ রেখো’-অলিখিত আবেদন
শিক্ষক মশায়ের চেহারায়,
বুঝিনা কেনযে আসে দমফাটা হাসিগুলো
কড়া নিষেধাজ্ঞার পাহারায়।
শিক্ষক লিখে যান, বোঝা দায় কি বোঝান!
ভুরু কুঁচকিয়ে আমি ক্লান্ত,
পাশে কে যে মাথা নাড়ে, বুঝে না কি না বুঝে তা-
দেখেই হয়েছি বিভ্রান্ত।
এমন বাজে পড়ানো দেখেও- দেখিনি কেউ
দাঁড়িয়ে বলেনা- “ঘুম পাচ্ছে”,
পাশের ছেলেকে এটা বলতে যাবো কি,
ব্যাটা ততখনে বসেই ঘুমাচ্ছে!
পড়ানো শেষের আগে মনোযোগ বাড়ে ঠিকই,
সাথে আসে উঠি-উঠি মনোভাব,
সহজে দেয়না ছাড়া, সামনে বসেছে যারা,
অমানুষ পড়ুয়ার যা স্বভাব!
ঔৎসুক্য যতো, মেটেনা সময়মতো-
বাইরে যাওয়ার তাড়া বাড়ছে,
কিন্তু দুঃখ হল-পরের ক্লাসের শুরু-
এসে দরজায় কড়া নাড়ছে।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments