জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ৮৯

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ৮৯


সম্পাদকীয়,
কলকাতার রাস্তায় হাতে টানা রিক্সা দেখেছো নিশ্চয়ই। কেউ কেউ চেপেও থাকবে। এই রিক্সা যারা টানেন তাদের দেখে আমার খুব খুব কষ্ট হয়। তোমাদেরও কারো কারো কষ্ট হয় তা আমি জানি। তবে কি জানো এখন এদের সংখ্যা কমে গেছে। প্রায় নিশ্চিহ্ন বলা যায়। অথচ এদের একজনের ছবি তুলে মৃণাল আঙ্কেল ছোটোবেলার ছোটোবন্ধুদের উপহার দিয়েছেন। এই রেয়ার ছবিটা যত দেখছি তত ভাবছি উড়োজাহাজের যুগে এখনও মানুষে টানা রিক্সা চড়ে কেউ? উড়োজাহাজের কথায় মনে পড়ে গেল, দেশ বিদেশে ভ্রমণের কথা। এবারের সংখ্যায় ব্যাংকক ভ্রমণের পরবর্তী পর্ব লিখে পাঠিয়েছেন জয়তী আন্টি। কলকাতার হাতে টানা রিক্সার গল্প হল, ব্যাংককের চাতুচাক বাজারের গল্প হল এবার তবে বন্দনা আন্টির পাড়ার গল্প পড়ে নাও। কালু আর ভুলুর গল্প। এবারের সংখ্যায় শহরের ছবি এঁকেছে শ্রীপর্ণা। আর গ্রামের ছবি জয়দীপ। নদীর ছবি স্নেহা। এছাড়াও  অদ্রিজা দিদি তার ছড়ায় সোনাঝুড়ির হাটের গল্প বলেছে। মজার কথা তোমাদের বন্ধু অঙ্কিত আমাদের টাইম মেশিনে  বসিয়ে নিয়ে চলে গেছে অনেক অনেক দূরে যার সম্বন্ধে কল্পনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের। তৃষ্ণা আন্টির উপন্যাস পড়ে জানলাম, জয়াবতীরা আবার হাজিপুরের গঙ্গাঘাটে গেছে তর্পণ করতে। গঙ্গারঘাটের কথা শুনে মনে পড়ে গেল আমার বাড়ির গঙ্গাঘাটের কথা। সেই ঘাটের নাম জোড়াঘাট, এখন এটাকে অনেকে বন্দেমাতরম ঘাটও বলেন। কেন জানো? এই ঘাটের পাশেই যে বাড়িতে বঙ্কিমচন্দ্র থাকতেন একসময়, সেখানে বসে উনি বন্দেমাতরম সঙ্গীতের সুরের সাধনা করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রকে নিয়ে এবারের সংখ্যায় লিখেছেন পীযূষ আঙ্কেল আর এঁকেছে সায়নী। সবমিলিয়ে এবারের সংখ্যা দেশবিদেশ গ্রাম শহর নদীর গল্প বুনেছে। এই মানস ভ্রমণ তোমাদের কেমন লাগল জানিও কিন্তু। -- মৌসুমী ঘোষ।



ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর  জয়যাত্রা
একবিংশ পর্ব
তৃষ্ণা বসাক


কুঁকড়োহাটির মেয়ে!
২৫
 
এত ঝগড়াঝাটি করে ঘোড়ায় আসা হল, এখন খুড়িমাদের পালকি সুভালাভালি এলে হয়। পুরোহিত মশাইও চলে এলেন  দেখতে দেখতে। সোনাটিকরির সেই ঠাকুর মশাই নয়। গোপাল চুরির পর থেকে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কটা আর আগের মতো নেই।বেশ একটু চিড় ধরে গেছে। তাছাড়া তাঁর বয়স হয়েছে।এতদূর থেকে তাঁকে তো টেনে আনা  যায় না।  এই হাজিপুরে গঙ্গার ধারে বিশেষ বিশেষ তিথিতে অনেক পুরুত ঠাকুর ঘোরেন, একজনকে ডেকে নিলেই হল। এই ছিল  সেনমশাইয়ের ইচ্ছে। কিন্তু খুড়িমা তাই শুনে ভেবে পাগল। তিনি সব বিষয়েই খুব হুতাশে ভোগেন দেখেছে জয়াবতী। একটু হাওয়া দিল কি দিল না, বলবেন ‘ওরে শিগগির দরজা  জানলা বন্ধ কর’, পাশের রাস্তায় কেউ একটু জোরে চিৎকার করলেই ভাবেন বর্গী এলো দেশে। নিজের ছেলেটি নিয়ে তিনি এতদিন বেশ ছিলেন। কিন্তু জয়াবতী আর পুণ্যি এসে তাঁর চিন্তা বেড়ে গেছে হাজার গুণ। তার ওপর যেদিন চিতার আগুন থেকে ওরা পেরজাপতিকে তুলে আনল, সেদিন থেকে তিনি কেমন যেন হয়ে গেছেন। সবসময় চমকে চমকে ওঠেন। চারদিকে অমঙ্গলের ছায়া দেখতে পান। যে মেয়েকে আগুনে উচ্ছুজ্ঞু করা হয়ে গেছিল, তাকে অমন করে টেনে আনলে তো ভগবানের মুখের গ্রাস কেড়ে খাওয়া হয়।
জয়াবতী জিগ্যেস  না করে পারেনি, ‘ভগবান এখানে কে গা খুড়িমা?’
‘কেন? অগ্নিদেব?’
আগুন নাকি দেবতা! কচি কচি মেয়েগুলোকে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে, তাকে দেবতা ভাবতে বয়ে গেছে জয়াবতীর। সে ট্যাঁক ট্যাঁক করে বলল ‘পেরজাপতিকে পুড়িয়ে মারলে বুজি তোমার আনন্দ হত, ও খুড়িমা? পেরজাপতি জানলে অত দুকখু পাবে জানো?’
‘তা কেন? তবে কী জানিস একটা কতা আছে, পুড়বে মেয়ে উড়বে ছাই, তবেই মেয়ের গুণ গাই’’
‘কী যে বল খুড়িমা, মাথামুণ্ডু নেই, কবে কোন এক ছোট জায়গার ছোট ঘটনা নিয়ে একটা ছড়া বাঁধা হয় মুখে মুখে, সেটা মুখে মুখেই ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু তা বলে সে কথা সবার জন্য নাকি? সব মেয়েদের পুড়িয়ে মারলে এই পিথিমির কিছু থাকবে বুজি? ছিস্টি যে রসাতলে যাবে গো’
জয়াবতীর কথা শুনে কেমন থমকে যান খুড়িমা। দস্যি হলে কি হবে, এ মেয়ে খুব তলিয়ে ভাবে সব কিছু নিয়ে, তা সত্যি। কিন্তু বুঝেও যেন তাঁর ভয় কাটতে চায় না। সেনমশাই যখন বললেন ওখানে অনেক পুরুত ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ায়, একজনকে ডেকে নিলেই হবে, সেই শুনে খুড়িমার বুক ধড়ফড় করে উঠল। ‘যদি, যদি পুরুত না পাওয়া যায়, তবে এতগুলো মানুষ  তর্পণ করতে পারবে না! মা গো মা, আমি কোতায় যাব গো?
এতগুলো লোক যে মহাপাতক হবে। ওপরে পিতে পিতেমোরা বসে আছে একটু জলের আশায়, তা না পেয়ে তাঁরা শাপশাপান্ত করবেন। এই তো আমার শিবরাত্তির সলতে পানু, কি রোগা ছেলে, ওর যদি কিছু হয়ে যায়!’
জয়াবতী তো কথা না কয়ে থাকতে পারে না, সে অমনি বলতে গেল ‘আহা খুড়িমা, ধরো পুরুত পাওয়াই গেল না, তা অঞ্জলি করে গঙ্গাজল তুলে পেন্নাম ঠুকে দিলেই হবে, তাঁদের তো জল পাওয়া নিয়ে কতা। বাড়িতে ঠাকমা জল চাইলে তুমি কি পুরুত ডাকো, নাকি ঘড়া থেকে তাঁর চুমকি ঘটিতে জল ঢেলে তাঁর হাতে দিয়ে তাঁর তেষ্টা মেটাও? তাছাড়া আমি নাহয় লেকাপড়ায় তেমন সুবিধে করতে পারিনি, আমাদের পুণ্যি এখানে আসার আগে থেকেই কত সমোসকিত পুথি মুখস্থ করে ফেলেছে, ও যদি সেই বদ্দির পুথি পড়ে মধুলতার নাম না বলত, তবে এদ্দিনে আমি আর আমার ভাই অনাথ হয়ে পথে পথে ঘুরতুম। তাই পুরুত না পেলে কী আর হবে? দুটো তর্পণের মন্তর কি আর পুণ্যি বলতে পারবে না? সে আমি ওকে গড়েপিটে নিয়ে যাব অখন। তুমি আর দিক করো না গো খুড়িমা। ওসব তুমি আমার ওপর ছেড়ে দাও। তোমরা এমনি পুজোয় যা যা লাগে, ফুল বেলপাতা, পাঁচ রকম ফল, বাতাসা গুছিয়ে নিও। আর যতীন ময়রার মেঠাই নিশ্চয় যাচ্ছে, শুধু চিঁড়ে দইয়ে কিন্তু আমার শানাবে না, এ আমি আগে থাকতে বলে রাকলুম’
মেঠাইয়ের কথাটা না হয় বাদ দাও, পুরুত নিয়ে মাথা খারাপ করার দরকার নেই- এমন কথা এবং তার সপক্ষে অকাট্য যুক্তি শুনেও অমন শান্ত খুড়িমা কেন এত ক্ষেপে গেলেন কে জানে! চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে বললেন আগে থেকে পুরুতের ব্যবস্থা না হলে তাঁরা কেউ যাবেন না হাজিপুর। আর তাই শুনে সেনমশাইও, অমন রাশভারি মানুষ এমনিতে, কেনই বা এত ভয় পেয়ে পুরুতের যোগাড়যন্ত্র করে ফেললেন, তা কে জানে। বড়দের কাজকর্মের থই পাওয়া জয়াবতীর কম্মো না আর যাই হোক। পুরুত খুঁজে পাওয়া গেল হাজিপুরের কাছের গাঁ বাসুলডাঙ্গা থেকে। সেখানে নাকি মা বাশুলী খুব জাগ্রত দেবতা। সতু ভটচায সেই বাসুলডাঙ্গার পুরুত শুনে ঠাকমা কপালে হাত ঠেকালেন, খুড়িমার মুখেও নিশ্চিন্তির হাসি ফুটল। সেই সতু ভটচাজ এসে পা ধুচ্ছে দেখল জয়াবতী।অনেকখানি পথ হেঁটে এসেছে।চেহারা আর ধুতি দেখেই মনে হচ্ছে অভাবী মানুষ। আহা, বড় মায়া হল জয়াবতীর। সতু ভটচাযের চেহারার সঙ্গে তার পিতাঠাকুরের চেহারার মিল আছে যেন। বুকটা কেমন হুহু করে উঠল তার। আজ মহালয়া, তবু কেন যে পিতাঠাকুর কোন পত্তর দিলেন না কে জানে। ভুলেই গেছেন নাকি তাদের? অভিমান হতে গিয়েও তাকে শরতের হাওয়ায় উড়িয়ে দিল সে। এমনও তো হতে পারে তাঁদের শরীর ভালো নেই, কথাটা মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুকটা এক মুহূর্তের জন্যে কেঁপে উঠল তার। কিন্তু সেটাকে সে আমল দিল না। ঠিক করল আজ ফিরে সেনমশাইকে বলবে, দুএকদিনের মধ্যেই যেন তাদের বোলসিদ্ধিতে পাঠিয়ে দেন। নিজের বাড়ি যাবে, তার জন্যে নেমন্তন্নের কী আছে? তাছাড়া পুণ্যিকে পেছনে চাপিয়ে ঘোড়ায় চড়ে সে নিজে নিজেই যেতে পারে, দিব্যি রাস্তা জিজ্ঞেস করে করে চলে যাবে।
সোনাটিকরি থেকে বোলসিদ্ধি হেঁটে গেলে এক বেলার বেশি পথ। পালকিতে এক বেলার কম, ঘোড়ায় গেলে আধ বেলাও লাগবে না। সে যখন ঘোড়ায় চেপে বাড়ির দোরে গিয়ে দাঁড়াবে, তার পিতাঠাকুরের মুখে কি বিস্ময় ফুটে উঠবে, মা কেমন ভয় পেয়ে যাবেন আর দুর্গাগতি, খেলা ফেলে কীরকম টলমল পায়ে ছুটে আসবে তার প্রায় অচেনা দিদিকে দেখতে- ভাবতেই রোমাঞ্চ হল জয়াবতীর। তার ইচ্ছে হল এখুনি সেনমশাইকে গিয়ে বলে সে কালই ঘোড়ায় চেপে বোলসিদ্ধি যাবে, তিনি যেন সব ব্যবস্থা করে দেন, কিন্তু সেনমশাইয়ের শুকনো  মুখ দেখে আর কিছু বলতে পারল না। সতু ভটচায তাড়া দিলেন ‘ও কবরেজ মশাই, এখন একটা খুব ভালো যোগ আছে, এই সময় তর্পণ করে ফেলতে পারলে ভাল হত।’
সেনমশাই চিন্তিত মুখে বললেন ‘সে তো বুঝলুম পুরুতমশাই, কিন্তু এদিকে’
তিনি বলার সঙ্গে সঙ্গেই পানু আনন্দে চিৎকার করে পাঁই পাঁই করে ছুটল সামনের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে সবাই দেখতে পেল, রেবতী কাহাররা বাপ বেটায় চার জন মিলে পালকি বয়ে আনছে। ‘ঠাকমা এসে গেছে, মা এসে গেছে’ বাব্বা এমন খেংরা কাঠি হলে কী হয়, কী গলা রে বাবা, কান ফাটিয়ে দেবে যেন।ভাবখানা এমন যেন ও একাই খুশি হয়েছে, আর কেউ হয়নি।ভারি হিংসুটে যাহোক। আর কেমন অভব্য ছেলে। বলল কিনা ঠাকমা এসে গেছে, মা এসে গেছে, আরে ওই পালকিতে তো মানোর মা-ও আছে, তার কথা বলতে হবে না? তার কোলেপিঠেই তো মানুষ তুই! সে কি বানের জলে ভেসে গেছে নাকি? পালকি দাঁড় করিয়ে রেবতী কাহাররা গামছা ঘুরিয়ে হাওয়া খাচ্ছিল, পানুর সঙ্গে জয়াবতী, পুণ্যি, পেরজাপতি সবাই গিয়ে দাঁড়াল, ঠাকমাদের নামাবে বলে। আর দাঁড়াতে গিয়ে ওরা তো থ। ঠাকমা, খুড়িমা আর মানোর মার সঙ্গে এ আবার কে? গুটিসুটি মেরে পড়ে আছে, কপালে আবার রক্তের ধারা।
ঠাকমা নামতে নামতে বললেন ‘পানু, শিগগির তোর বাবাকে ডাক। মেধো ডাকাতের খপ্পর থেকে পালিয়ে বনে লুকিয়ে ছিল। কদিন খায়নি কে জানে। এখুনি পেটে কিছু না পড়লে বাঁচানো যাবে না’
‘মেধো ডাকাত!’
‘হ্যাঁ, কুঁকড়হাটির ভালো বংশের মেয়ে, ডাকাতে তুলে নিয়ে গেছল’
কুঁকড়োহাটির মেয়ে! জয়াবতী ছবির মতো দাঁড়িয়ে রইল কথাটা শুনে। ( ক্রমশ)


জুটি

বন্দনা সেনগুপ্ত 

তোমরা কি কালু ভুলুকে জানো? কি করেই বা জানবে? তোমরা তো আর আমাদের পাড়ায় থাকো না! আমাদের পাড়ার বাইরের দিকে, ওই যে গো যেখানে ময়লা ফেলার বড় ভ্যাটটা আছে, তার কাছেই ওদের আস্তানা। ভুলু মানে একটা বছর বারোর ছেলে। কালু মানে কালো কুচকুচে এক নেড়ি কুকুর। দুজনে অভিন্ন হৃদয় বন্ধু, সর্বদাই একসাথে।

ভুলে এই পাড়ারই ছেলে। ওর মা বাবা নাকি এদিকেই কোথাও ফুটপাথে থাকত। একদিন রাস্তা পেরোতে গিয়ে ট্রাকে কাটা পড়ে গেছিল ওর বাবা। তাও তখন মা ছিল। ওর মা আবার শিব ঠাকুরকে খুব মানতেন। তাই আহ্লাদ করে ছেলের নাম রেখেছিলেন ভোলানাথ। তা গরীবের আবার অত বাহারের নাম! বিকৃত হতে হতে এখন হয়েছে ভুলু, ভুলে। তা একবারের প্রচন্ড ঠান্ডায় ওর মাটাও মরে গেল। তখন আর ওর কতই বা বয়স! বছর পাঁচ ছয় হবে। অনাথ হলেও তখনও ভেসে যায় নি। রাস্তারই এক দাদু আশ্রয় দিয়েছিলেন, যতদিন বেঁচেছিলেন। এক এনজিও, যারা পথশিশুদের শিক্ষা দিত, তাদের দয়ায় ওর অক্ষর পরিচয়ও হয়েছিল। কিন্তু, সে সুখের দিনেরও শেষে, দাদু মারা যাবার পর, আজ ও পরিপূর্ণ ভাবেই একলা।

উঁহু। ভুল হল তো! 

একদিন রাতে একটা কুঁই কুঁই কান্নার আওয়াজ শুনে ভ্যাটের পাশে গিয়ে দেখে একটা ছোট্ট কুকুর ছানা, এত কালো যে ওকে অন্ধকারে বোধহয় দেখাই যাবে না, কাঁদছে। ওর মাকে কোথাও দেখতে পায় নি আমাদের ভুলুবাবু। তাই ছানাটাকে বুকে করে নিজের আস্তানায় নিয়ে আসে সে। সেই থেকেই একে অন্যের সঙ্গী। যা পায়, দুজনে ভাগ করে খায়। 

আমাদের ভুলুবাবু রাস্তায় থাকে বটে, কিন্তু ভিক্ষাও করে না আর চুরিও করে না। হাত পেতে কারুর কাছ থেকে কোনও দয়ার দানও নেয় না। মিথ্যাও বলে না। ও কাজ করে। যে যা কাজ করতে বলে, হাসিমুখে করে দেয়। পাড়ার সব লোক, দোকানদার, ছোট ছোট হোটেল রেস্তোঁরাওয়ালা, সবাই চেনে ওকে। ভালবাসে। সবার সব ছোটখাট কাজেই ওকে ডাকে। ওকে কাজ দিয়ে নিশ্চিন্ত। যত্ন করে করে দেবে। তাই দিনের শেষে ওর নিজের আর কালুর মতন খাওয়ার অভাব হয় না। কালুকেও ভুলুবাবু ডাস্টবিন ঘেঁটে খেতে দেয় না। নিজে যখন যা কেনে, তাই ওর সাথে ভাগ করে খায়। খাবারের দোকানীরা অবশ্য অনেক সময়েই কাজ করিয়ে টাকার বদলে ভাল করে খাইয়ে দেয়। সেদিন ওদের ভারি মজা।

অবশ্য করোনার সময় খুব কষ্ট হচ্ছিল। তবে, ফুচকা দোকানদার রমেশ কাকু দেশে যাওয়ার সময় নিজের ঠেলা দেখাশোনার ভার ওকে দিয়ে যাওয়ায় এখন ওদের রাতে শোয়ার চিন্তা নেই। বিশেষ করে শীতে ও বর্ষায় খুব মজা। ঠেলায় ঢুকে শুয়ে থাকে।

তা এখন তো সব জায়গাতেই উন্নয়ন হচ্ছে। আমাদের পাড়াতেও ঝাঁ চকচকে শপিং মল, শাড়ি গাড়ির দোকান ইত্যাদি অনেক কিছু হয়েছে। 

এখন একদিন হয়েছে কি, ওই যে গাড়ির দোকান, তার ওয়াচম্যানের শরীরটা অত ভাল ছিল না। আবার অন্য ওয়াচম্যান আসেনি বলে সে ছুটিও পায় নি। তাই আমাদের ভুলুবাবুকে ডেকেছিলেন বাসনকটা মেজে দেবার জন্য। পরে মজুরি দিয়েছিলেন একটা টিফিন বাক্স। কোন খদ্দের বুঝি ফেলে গেছে। "নষ্ট হবে খাবারটা। তোরা খেয়ে নে।" বলেছিলেন ওয়াচম্যানবাবু। "আমিই খেতাম, কিন্তু শরীরটা নিচ্ছে না। খেয়ে নে। বাবুদের বাড়ির ভাল খাবার। নষ্ট করিস না।" 

তা কালুর কিন্তু ব্যাপারটা একটুও পছন্দ হয় নি। সে ভৌ ভৌ করে ভুলুর চারপাশে ঘুরে নিজের অপছন্দ বোঝানোর খুব চেষ্টা করছে। তার একটুও ইচ্ছা নয় টিফিনটা নেওয়ার। ভুলুবাবু তো বুঝতেই পারছে না যে কি হল। যাই হোক, সে তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা, পিছনের মজা পুকুরের পাড়ে মস্ত বড় পাথরটার উপরে গিয়ে বসল। সেখানে কিছু অন্য লোকও ছিল। গাছের ছায়ায় কেউ কেউ খাচ্ছে, কেউ কেউ খাওয়া শেষ করে শুয়ে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। কালু তো লাফাঝাঁপি করছে, পারলে ভুলুর হাত থেকে টিফিনটা ফেলেই দেয়। ভুলুতো বুঝতেই পারছে না কালু কি বলতে চাইছে। ও তো এমনি কখনও করে না!

ও খাবার আগে প্রথমে খাবারটা নাকের কাছে নিয়ে এল। আগে শুঁকে দেখে ভাল লাগলে তবে খাবে। কিন্তু, এ কি? বাক্সটা থেকে একটা আওয়াজ আসছে না? কানের কাছে নিয়ে ভাল করে শোনে সে। হ্যাঁ। খুব মৃদু, কিন্তু একটা টিকটিক আওয়াজ আসছে। মাঝে মাঝে এ বাড়ি ও বাড়ি টিভি দেখার কল্যাণে ওর ব্যাপার বুঝতে দেরি লাগে না। ভয় পেলেও বুদ্ধি না হারিয়ে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ও বাক্সটা পুকুরের জলে ছুঁড়ে দেয়। বিকট শব্দ করে চোখ ধাঁধাঁনো আলোর সাথে বাক্সটা ফেটে যায়। পুকুরের জল যেন টগবগ করে ফুটে ওঠে।

তারপর? 

তারপর ফটো, টিভি, সংবাদপত্র, পুলিশ, পুরস্কার  … আরও কত কি! ভুলু বলে কালু যদি অমনি লাফাঝাঁপি না করত, ওই টিফিন সম্বন্ধে অত আপত্তি না জানাত, তাহলে কালু মোটেই শুঁকতে যেত না। ও তো ভেবেছিল খাবারটা বোধ হয় নষ্ট হয়ে গেছে তাই কালু অমনি করছে। ভুলু বলে কালুর জন্যই ওর প্রাণটা বেঁচেছে। তার সঙ্গে ওখানে উপস্থিত আর সবারও।

কালু ভুলু তো এখন হিরো। কি বল?



অনুযোগ

অদ্রিজা সাঁতরা

জ্বলছে আলো, চলছে গাড়ি
শহুরে ঠাটবাট
কোথায় গেল আমার প্রিয়
সোনাঝুরির হাট?

বাবা বলত, "এই শহরে 
আকাশ ছোঁয়া বাড়ি
ঝকঝকে মল, চকচকে স্কুল
অট্টালিকার সারি!

এখানে সব লোকজনেরা
রেঁস্তোরাতে খায়
কথায় কথায় দেখবি কেমন
ইংরেজি আওড়ায়!"

গ্রাম ছেড়ে তাই এলাম চলে
শেষ হল না খেলা
পথের বাঁকে রইল পড়ে
আমার ছোটবেলা।

এই শহরে নামে না রাত
বড্ড ধোঁয়া দিনে
মানুষগুলো মুখ ঢেকেছে
মোবাইলের স্ক্রিনে।

কোথায় আমার বন্ধুরা সব?
কোথায় সবুজ মাঠ?
পাখপাখালি, ধানের ক্ষেত আর
ডুব সাঁতারের ঘাট?

দাও ফিরিয়ে সেই চেনা মুখ
সেই হাসি সেই মজা
যাক না নেমে মিথ্যে যত
আড়ম্বরের বোঝা।


মানুষ জাত 

অঙ্কিত ঘোষ
নবম শ্রেণী
সুখচর কর্মদক্ষ চন্দ্রচূড় বিদ্যায়তন
উত্তর ২৪ পরগণা


সালটা ৩৯৮১ সাল। এখানে মানুষ আর মানুষ নেই। সব যন্ত্রসম। এখনকার দিনে কেউ যদি একটা গাছ ভুল করে দেখে নেয়, তাহলে তাকে 'সেলিব্রিটি' ভাবা হয়। গাছ দেখার জন্য মানুষ হাজার টাকার টিকিট কেটে ‘ প্লান্টিজিয়ামে’ যায়।দূর দূরান্তে কোন গাছ নেই, থাকবেই বা কি করে পূর্বপুরুষেরা যে গাছ কেটে কেটে ধ্বংস করে গেছে।

যাক সেকথা, এখনকার কথায় আসা যাক।২৪১৩ সালে এক বড়সড় উল্কা এসে পৃথিবীতে পড়ে, যার ফলে পৃথিবী দু' টুকরো হয়ে যায়। কিন্তু সেখান থেকে পৃথিবীর  ২ নং অংশে মানুষ এক সেতু বানিয়ে ফেলেছে তার উপর আলোর চেয়েও ৯০% তীব্র গতিসম্পন্ন যান চলাচল করে। এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যেতে সময় লাগে মাত্র দেড় মিনিট। এই তো কাল অম্বল বাবু বৃহস্পতি গ্রহে একটা কুড়ি বিঘা জমি কিনে এলেন। তিনি হলেন  পৃথিবীর প্রথম অংশের এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী। পৃথিবীর প্রথম অংশ বললাম, কারণ তিনি পৃথিবীর প্রথম টুকরোটায় থাকেন। তিনি  একটি টাইম মেশিন বানিয়েছেন। তা অম্বল বাবুর একটি ছেলে আছে, যার নাম অম্বলেশ্বর।সে খুব দুষ্টু, কিন্তু বড় মনের। 

আজ হঠাৎ অম্বলেশ্বর একটু টাইম মেশিনের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছে।ব্যাপারটা অম্বলের একটু সন্দেহজনক মনে হতেই, তিনি তার কাছে যাবেন, এমন সময় অম্বলেশ্বর এক লাফে টাইম মেশিনে উঠে ২০২২ টিপে চলে যায় অতীতে।

এ কি! অবাক হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে অম্বলেশ্বর। একি নোংরা পৃথিবী! এখানে যেখানে সেখানে গাছ কাটা হয়, যে গাছ কি না তাদের সময়ে দেখা  যায় না’।প্ল্যান্টিজিয়ামে’  মানুষ বহু টাকা খরচ করে যায় গাছ দেখতে। সেই গাছই এত অবহেলায় কাটা হচ্ছে। ছিঃ ছিঃ । অম্বলেশ্বর দৌড়ে গিয়ে কিছু মানুষের পায়ে পড়ে বলল , দয়া করে গাছ কেটো না। এ আমাদের সম্পদ যে। কিন্তু সেই লোকটি তাকে পাগল বলে সরিয়ে দিল।

অম্বলেশ্বর এরকম বহু মানুষের পায়ে পড়ল, কিন্তু কোন লাভ হল না।উলটে তাকে গালিগালাজ শুনতে হল।
 এমন সময় অম্বল বাবু এসে গেছেন টাইম মেশিনে চড়ে।অম্বলেশ্বর সব খুলে বলে বাবাকে।তারপর অম্বল বলেন, জানিস তো মানুষ প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করে না। গাছ কাটার ফলে যে কি হতে চলেছে, তা এরা কল্পনা করতে পারছে না। এ গুলি ব’লে তিনি ছেলে কে নিয়ে আবার তাঁদের সময়ে ফিরে যান।শুধু যেতে যেতে একটি কথাই বলেন’’ এ মানুষ জাত শোধরাবার নয়, এদের শিক্ষা চাই–”


ধারাবাহিক ভ্রমণ
আলো-অন্ধকারে শ্যামদেশ
পর্ব - ২
জয়তী রায়

তেইশবছর ব্যাংকক বসবাস কালে তেইশকোটি বার যে বাজারে গিয়েছি, সেটা হল বিশ্বের বৃহত্তম উইক এন্ড মার্কেট চাতুচাক।  মানুষ ছাড়া বাকি সব বিক্রি হয় এখানে। পাশে এখন একটা ঠাণ্ডা বাজার করা হয়েছে সাজানো গোছানো। আমরা সেটাই যাই না। এই পুরনো বাজারের গন্ধ, তার অজস্র গলি গলির পর গলি, সরু সরু...একটা গলি পার হলেই নতুন আবিষ্কার। আর কত রঙ। কত রঙ। সেই সঙ্গে দরাদরি করো। এখানে দেখেছি প্রীতি জিন্দা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বিদ্যা বালান । সে অবশ্য ব্যাংককে অহরহ দেখা যায়। অমিতাভ বচ্চন আমার বাড়ির পাশের গলিতে এক আজনবি র শুটিং করছিলেন। কাউবয় স্ট্রিট। পৃথিবী বিখ্যাত সব নাইট ক্লাব। কিন্তু, যে বছর প্রীতি জিন্দা কে দেখেছিলাম, সে বছর প্রবল সুনামি আছড়ে পড়েছিল। খুব অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান প্রীতি। সে জন্য মনে আছে। না হলে ফিল্মি তারকা দেখা ব্যাংককে খুব সাধারণ ব্যাপার। আর বিজনবাবুর কথা তো বলার মত নয়। তিনি অক্লেশে বলবেন , ওই দেখো লোকটাকে ফারুক শেখের মত দেখতে। সুন্দর হাস্যময় ভদ্রলোক বাংলা বুঝে পালিশ  হিন্দি তে  বললেন: ম্যায় ফারুক শেখ হুঁ।


প্রাচীন সিয়াম বা ancient city

 আজ বলব এক ঘুমন্ত রাজ্যের কথা। রাজ্যের মত করে তৈরি করে রাখা এক শহরের কথা। মানুষের দ্বারা নির্মিত এই শহরটি থাইল্যান্ডের সমুত প্রাকান প্রদেশের কুমির খামারের কাছে 320 হেক্টরের ঘুমন্ত শহরটিতে ঢুকলে মনে হবে যেন , টাইম মেশিনে করে পৌঁছে গেছি পাঁচহাজার বছর আগের কোনো প্রাচীন রাজ্যে। 
  ট্রাভেল এজেন্ট নিয়ে থাইল্যান্ড গেলে তারা কোনোদিন ই এই জায়গায় নিয়ে যাবে না। প্রবেশমূল্য অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি। 
*******
 লেক ভিরিয়াফ্যান্ট ( lek viriyaphant)  যিনি এই কাজটি করেন, কারণ তিনি দেখেন অনেক প্রাচীন স্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তখন তিনি প্রাচীন কলানুক্রমিক অনুযায়ী সাজিয়ে ফেলে শহরটি তৈরি করেন। 
**********
আয়ুথান রাজাদের প্রাসাদ রেখে দেওয়া হয়েছে হুবহু।  অপূর্ব কারুকার্য। নিজেদের গাড়ি নিয়ে ঘোরা যায় অথবা সাইকেল করে ঘুরে বেড়ানো যায়। সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। ভিতরে মখমলের মত সবুজ ঘাস। অতি অবশ্য  মাটিতে বসার উপযুক্ত ব্যবস্থা
সঙ্গে রাখবেন। তবে, বিশাল চত্বর জুড়ে পর্যটকদের  বসার সু বন্দোবস্ত আছে। খাবারের দোকান আছে। থাই খাবার ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় না, প্রচুর দাম, নিজেরা খাবার বানিয়ে নিয়ে যাওয়া ভালো। 
এই যাদুঘর বা ঘুমন্ত শহরে 200 টির বেশি স্থাপত্য আছে। 3 ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। কি নেই! প্যাগোডা, মন্দির, ছোট গ্রাম, কেনাকাটার জিনিস, প্রাচীন বিশ্বের রেপ্লিকা। 


সুমেরু মাউন্টেন প্যালেস সবচেয়ে অদ্ভুত জায়গা, যেখানে মনে করা হয়, সমস্ত মহা জাগতিক প্রাণীরা এসে মিলিত হয়। 
যাই হোক, সোম থেকে রবিবার পর্যন্ত খোলা। সকাল 9 টা থেকে সন্ধ্যা 7 টা। 
 থাইল্যান্ড বা শ্যামদেশ দেখতে হলে ancient city অবশ্য দেখতে যেও কিন্তু।



স্মরণীয়
(বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার


বাংলা গদ্য সাহিত্যে ও উপন্যাসের ধারায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্তমান উত্তর চব্বিশ পরগনার কাঁঠালপাড়া গ্রামে ১৮৩৮ সালের ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেক্টর। মা ছিলেন দুর্গাসুন্দরী দেবী। প্রথমদিকে কিছুদিন গৃহশিক্ষকের কাছে শিক্ষালাভ করলেও বিদ্যালয় শিক্ষা শুরু হয় মেদিনীপুরে পিতার কর্মস্থলে। সেখানে একটি ইংরেজি স্কুলে ১৮৪৪ সালে ভর্তি হন তিনি। প্রায় চার বছর ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে কাঁঠালপাড়া ফিরে আসেন এবং শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় প্রভূত দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি খুব সুন্দর আবৃত্তি করতে পারতেন। ১৮৪৯ সালে হুগলী কলেজে(বর্তমান হুগলী মহসিন কলেজ) ভর্তি হন তিনি। ১৮৫৩ সালে এই কলেজে পড়াকালীন জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং বৃত্তি পান। ঐ বছরই সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কুড়ি টাকা পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

 এই সময় থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকায় নিয়মিত গদ্য ও পদ্য লিখতে শুরু করেন। এই দুটি কাগজে তাঁর বহু রচনা প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮৫৬ সালে আবার তিনি সিনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় সকল বিষয়ে কৃতিত্ব দেখিয়ে দুবছরের জন্য কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ঐ বছরই আইন পড়বার জন্য প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরের বছর ১৮৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের জন্য বি এ পরীক্ষায় দশজন ছাত্রের মধ্যে মাত্র দুজন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসু  উত্তীর্ণ হন। ১৮৫৮ সালেই যশোরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ পান। ১৮৬৯ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি এল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করে পাশ করেন। এরপর সুদীর্ঘ তেত্রিশ বছর খুলনা, মুর্শিদাবাদ, হুগলী, মেদিনীপুর, বারাসত, হাওড়া, আলিপুর প্রভৃতি স্থানে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেন। ১৮৯১ সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
     ১৮৫২ তে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় কবিতা লিখে যে সাহিত্য সাধনার শুরু তার প্রথম বড় প্রকাশ হল ১৮৫৬ তে কবিতাগ্রন্থ 'ললিতা। পুরাকালিক গল্প। তথা মানস' এর মাধ্যমে। এরপর কাব্যচর্চা ত্যাগ করে উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৮৬৫ তে 'দুর্গেশনন্দিনী' উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক রোমান্স বলে আজও বিবেচিত হয়। ১৮৬৬ তে দ্বিতীয় উপন্যাস 'কপালকুণ্ডলা' এটিও রোমান্টিক উপন্যাস, ১৮৬৯ এ 'মৃণালিনী' উপন্যাস দ্বাদশ শতাব্দীর বঙ্গদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে রচিত। এরপর পরপর 'বিষবৃক্ষ'(১৮৭৩), 'রজনী'(১৮৭৭),  'কৃষ্ণকান্তের উইল'(১৮৭৮), 'রাজসিংহ'(১৮৮২), 'আনন্দমঠ'(১৮৮২), 'দেবীচৌধুরানী'(১৮৮৪) ও 'সীতারাম'(১৮৮৭) উপন্যাস গুলো প্রকাশিত হয়। এছাড়াও ইংরেজিতে Rajmohan's Wife'(১৮৬৪)  নামে একটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চরিত্র চিত্রণে, কাহিনী বিন্যাসে ও ভাষার প্রয়োগে এক অভূতপূর্ব মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় তুলনামূলক সমালোচনা শুরু করেন। ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, ভাষা, সমাজ প্রভৃতি বিষয়ে বেশ কিছু উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ রচনা করেন তিনি। 'লোকরহস্য'(১৮৭৪), 'বিজ্ঞানরহস্য'(১৮৭৫), 'কমলাকান্তের দপ্তর'(১৮৭৫), 'বিবিধ সমালোচনা'(১৮৭৬), 'সাম্য'(১৮৭৯), 'কৃষ্ণচরিত্র'(১৮৮৬), 'বিবিধ প্রবন্ধ'(১ম ভাগ-১৮৮৭ ও ২য় ভাগ-১৮৯২), 'ধর্মতত্ত্ব অনুশীলন'(১৮৮৮)', 'শ্রীমদ্ভগবদগীতা'(১৯০২) প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম সেরা কীর্তি হল 'বঙ্গদর্শন'(১৮৭২) পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা (১৮৭২-৭৬)। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা ঔপন্যাসিক হিসেবে 'সাহিত্যসম্রাট' ও হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের কাণ্ডারী হিসেবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে 'ঋষি' আখ্যা লাভ করেন। তাঁর লেখা 'বন্দে মাতরম্' গানটি ভারতবর্ষের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ১৮৯১ সালে 'রায়বাহাদুর' খেতাব ও ১৮৯৪ সালে 'কম্প্যানিয়ন অব দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অব দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার' খেতাবে ভূষিত করেছিল।
       ৮ এপ্রিল ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে এই মহান স্রষ্টা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।



পাঠপ্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছোটোবেলা ৮৮ পড়ে বেথুয়াডহরী, নদীয়ার বানীয়া সাহা যা লিখল)  

তিন বছরের কলেজের স্মৃতি বুকে নিয়ে আপাতত  চেষ্টা আরেক নতুন অধ্যায়ে পা দেওয়ার। একদিকে কলেজের পুরোনো দিনের সেই মিষ্টি দিনগুলো আর অন্যদিকে পরের ধাপে এগোনোর এক অদম্য ইচ্ছে, এই দুইয়ের মেলবন্ধন আমায় প্রতিনিয়ত মোটিভ করে চলেছে নিজের লক্ষ্যটাকে অ্যাচিভ করতে। আর ঠিক এই মুহূর্তে যখন হাতে আসে "জ্বলদর্চি" র ছোটোবেলার ৮৮ তম সংখ্যাটি তখন যেন জীবনে চলার পথটা আরও অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে এক লহমায়। মন জুড়িয়ে ওঠে প্রচ্ছদের হৃদয়ে  ক্যামেরা বন্দী হওয়া এমন ধুসর রাস্তার দুপাশে সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেওয়া শান্ত, স্নিগ্ধ এবং নরম সবুজের কাল্পনিক স্পর্শে। এমন একটি ছবি অস্থির মনকেও যেন শান্তির ছোঁয়া দিয়ে যায় অচিরেই। শ্রদ্ধেয় চিত্রগ্রাহক ঋপণ আর্য মহাশয় কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এমন একটা সুদক্ষ মনোমুগ্ধকর ক্লিক উপহার দেওয়ার জন্য। 
কলেজ জীবনে প্রিয় প্রফেসররা শিখিয়ে ছিলেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে আত্মনির্ভরশীল হওয়া   বর্তমান সমাজে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের জটিল সমাজে যেমন একটি ছেলের উপার্জন করাটা একটা বাধ্যতামূলক বিষয় তেমনই মেয়েদেরও এই দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী হওয়া সমানভাবে ইম্পরট্যান্ট। আর এই নারী সমাজ কে যৌক্তিক, সুবিবেচক, এবং অনেক বেশি ন্যায়পরায়ণ হতে শেখায় প্রখ্যাত কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, লেখিকা শ্রদ্ধেয়া তৃষ্ণা বসাক দিভাই এর "জয়াবতীর জয়যাত্রা" ধারাবাহিক উপন্যাসটি। উপন্যাসে জয়ার পালকির বদলে ঘোড়ায় চড়া নিয়ে সকলের সাথে যে যুক্তি তর্ক তা আমায় মুগ্ধ করেছে। বয়স অনুযায়ী  মেয়েটির জ্ঞানের পরিধি এতটা বিস্তৃত যে এমন একজন চরিত্র হওয়ার লোভ সামলানো যায় না। উপন্যাসটা পড়তে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল নিজেকে একবার জয়াবতীর জায়গায় দেখতে। মেয়েদের যে সবসময় সমাজের চাপে বা বয়ঃজ্যোষ্ঠ মানুষদের ভয়ে ভুলটাকে মেনে নিতে হবে তা নয়, ভুলটাকে ভুল আর ঠিকটাকে ঠিক বলে মেনে নিয়ে অন্যায় এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে মেয়েদেরকেও। সহজ সরল ভাষার উপন্যাসটিতে অন্তর্নিহিত রয়েছে নারী সমাজের এক দারুণ চিত্র। এই চিত্রের সান্নিধ্যেই উপন্যাসটি আমার ভিতরে এক প্রতিবাদী সত্তা জাগিয়ে তুলেছে। আমার হৃদয়ের দূর্বলতাকে কাটিয়ে নতুন এক সাহস এনে দিয়েছে উপন্যাসটি। আমায় সঠিক পরিস্থিতিতে সঠিক আচরণ করতে একটা দিশা দিয়ে গেলো উপন্যাসের এই অংশটি। আশা রাখি পরের পর্ব গুলোতে নিজেকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করতে পারবো জয়াবতীর সান্নিধ্যে।
সময় বয়ে যায় নিজের ছন্দে কাউকে তোয়াক্কা না করেই। আমরাই বা কম কিসের? দীর্ঘদিনের অতিমারী পরিস্থিতিকে সামলে নিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরাও। এই মারণ ব্যধি কতো রকম যে পরিবর্তন ফেলেছে জীবনে তা নতুন করে বলার হয়তো বা প্রয়োজন নেই আর। তা বলে কলম কি আর থামে? কখনোবা এই ভয়ানক পরিস্থিতিই হয়ে উঠেছে গল্পের প্লট। এরকমই একটি দারুণ মজার গল্প পড়লাম শ্রদ্ধেয়া লেখিকা সুনৃতা মাইতির কলমে। শেষে কিনা বুলটিদের বাড়ির লোডশেডিং এর পিছনে ভুলো মনের পান্ত কাকুর কান্ডকারখানা! ডান দিক বাঁ দিক গুলিয়ে ফেলে সিঁড়ির আলো নেভাতে গিয়ে শেষমেশ অন্য বাড়ির মেইন ফ্রেম সুইচ অফ করে ফেলার যে কান্ডখানা ঘটিয়েছেন বেচারা পান্তবাবু তা সত্যিই মজার। তবে শুধু মজাই নয় গল্পে আছে কোভিড পরিস্থিতিতে কিভাবে মানুষ বিশেষ করে ছোটোরা ঘরে বসে নিজেদের সময় অতিবাহিত করেছে তার এক নমুনা। 
"রোববার সকালটাতে এখন........দাবা কিংবা অন্তাক্ষরী খেলে।"
সবমিলিয়ে এমন মজার গল্পটা মন ছুঁয়ে গেল। গল্পের শেষের অংশটা সত্যিই ভোলার নয়।
অন্যদিকে আবার টাইগার হিলের ধারে শ্রদ্ধেয় লেখক গৌতম বাড়ই স্বয়ং ছোট্ট ছেলে হয়ে তার কাকার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে এক জঙ্গলে শয়তান প্রেত বুড়ো ইয়োটাকুর কবলে পড়ার যে কাহিনীটি উপস্থাপন করেছেন তা ভীষণ চিত্তাকর্ষক বলে মনে হয়েছে আমার। বিশেষত শিশুদের কাছে এই গল্পটা যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তার দাবি রাখবে তা বলাই যায়। গল্পটা পাঠ করার সময় আমার যেন মনে হচ্ছিল আমিও বোধহয় ওই তিন ক্ষুদের সাথেই চলেছি পাহাড়ি জঙ্গলের রহস্য ভেদ করতে। এই বুঝি হিংস্র ইয়োটাকু আমার সামনে হাজির হবে। তবে আমি যদি লেখক, রাজু, আর ছোট্ট মিসির সাথে ওই জঙ্গলে যেতাম তাহলে ওই বদমাইস ইয়োটাকুর লাঠির সাহায্যে সবাইকে ইঁদুর বানিয়ে দেওয়ার কথা শুনে নিশ্চিত  অক্কা যেতাম, যা ভীতু আমি! যাইহোক, গল্পে ওই তিনজনের সাহস দেখে আমিও কিছুটা বল পেলাম মনে। শোনো ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা কিন্তু কখনো বাবা মা কে না বলে কোথাও যেয়ো না যেন! কেমন? বলা তো যায় না কোথা থেকে দুষ্টু দৈত্যটা না এসে আবার হাজির হয়!
তবে যাই বলো বন্ধুরা বাবা মায়ের সাথে ঘুরতে যাওয়ার মজাটাই আলাদা। যদিও পড়াশোনার ব্যস্ততার জন্য বাবা মা র সাথে এ বছর ঘুরতে যাওয়ার সময় ও সুযোগ কোনোটাই হয়ে ওঠেনি, তাই একটু তো মন খারাপই তবে আনন্দের বিষয় হলো এই মনখারাপে আমাকে এক দারুণ মেডিসিন দিয়ে গেলো "জ্বলদর্চি" র মাননীয়া লেখিকা জয়তী রায়ের ধারাবাহিক ভ্রমণের এই পর্বটি। ঘরে বসেই ব্রহ্মা মন্দিরে কাল্পনিক ভ্রমণ সেরে ফেললাম। এখানে প্রথমেই যেটা ভালো লাগলো সেটা হলো লেখিকার গুছিয়ে লেখার স্টাইলটি। কোনো স্থাপত্যের সৌন্দর্যতাকে এমন ভাবেও বর্ণনা করা যায় তা আমার অজানা, এতটাই সাবলীল লেখার ভাষা। মানুষের মধ্যে থাকা আধ্যাত্মিকতা কেও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা ব্রহ্মা মন্দিরের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। লেখিকার অতুলনীয় বর্ণনা মন্দিরের নৃত্যরত প্রার্থনাকারীদেরকে দেখার জন্য উদগ্রীব করে তুলেছে আমাকে। মনের ইচ্ছে পূরণ করতে সময় বের করে একদিন তো যাবোই ওই দেশে, তোমরা যাবে তো ছোট্ট বন্ধুরা আমার সাথে? 
আচ্ছা বন্ধুরা, যদি পূজোর ছুটির কোনো একটা দিন দেখে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে কেমন হবে?  পূজো বলতে মনে পড়লো এবারের সংখ্যায় এক মিষ্টি ভাই "মহিষমর্দিনী" নিয়ে একটা সুন্দর কবিতা লিখেছে। এ হলো দূর্গা মায়ের আরেক রূপ।  কিভাবে সূচনা হলো এই পূজোর তা কবিতার আকারে সুকৌশলে উপস্থাপন করেছে প্রবাহনীল। বয়স অনুযায়ী এমন বিষয়কে কবিতায় প্রকাশ করা সত্যিই কঠিন। আমি হলে তো পারতাম না। খুব ভালো লেগেছে আমার কবিতাটি। তোমার লেখা আরও কবিতা পড়তে চাই। শুনিয়ো কিন্তু ভাই!
প্রতিবারের মতো এবারের সংখ্যাতেও মাননীয় পীযূষ প্রতিহার মহাশয়ের লেখায় স্থান পেয়েছে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। শিক্ষাবিদ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর কথা কম বেশি জানা ছিল আমার, তবে বেশ কিছু অজানা তথ্য "স্মরণীয়" থেকে জানতে পারলাম। অনেকটা সমৃদ্ধ হলাম লেখকের কলমের সুবাদে। জানা জিনিসের মধ্যেও যে কতোকিছু না জানা থাকে তা এই ধরনের লেখা থেকে বেশ  উপলব্ধি করা যায়। অনেকখানি উপকৃত হলাম লেখকের লেখা পাঠ করে। তবে মৌসুমী দিভাই এর কাছে একটা অনুরোধ জানাতে চাই যে, যদি পত্রিকার এই অংশটিতে এই সকল মহান ব্যক্তিত্ত্বদের জীবনকথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁদের কোনো ছবি বা পোট্রের্টকেও উপস্থাপন করা যায় তাহলে কি কোনো অসুবিধা হবে? যদিও এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত, তবু মনে হলো তাই বললাম, কারণ পাঠকরা মহান মানুষদের জানবে অথচ তাদের ছবির সাথে পরিচিত হবে না, এটা বোধহয় ঠিক নয়। তবে এটা সত্য যে "জ্বলদর্চি" র সকল পাঠক হয়তো কম বেশি পরিচিত থাকেন এই মহৎ ব্যক্তিত্বদের ছবির ব্যাপারে তবুও যারা এ বিষয়ে অপরিচিত তাদের কথা মাথায় রেখে এটুকু কি করা যেতে পারে না? যদি সম্ভব হয় তবে আরও বেশ কিছু পাঠক উপকৃত হবে, তাই না?
পত্রিকার শেষে প্রকাশিত মাননীয়া গল্পকার বাসবদত্তা মহাশয়ার "জ্বলদর্চি" র ৮৭ তম সংখ্যার সংক্ষিপ্ত পাঠপ্রতিক্রিয়াটি পত্রিকার সফলতাকে প্রতিফলিত করে। অল্প কথায় বর্ণিত এমন সুন্দর লেখা সত্যিই অনবদ্য। 
শুধু অক্ষরে গাঁথা লেখাসমূহই এই পত্রিকার একমাত্র বৈশিষ্ট্য নয়, ছোট্ট ছোট্ট শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবিও এই পত্রিকার প্রাণসম। ষষ্ঠ শ্রেণীর  জয়দীপের পেন্সিল শেডের শ্রীকৃষ্ণের ছবিটি অসাধারণ একটি শিল্পকর্ম। খুব সুন্দর ভাবে আলোছায়ার ব্যবহার করেছে জয়দীপ। শ্রী কৃষ্ণের মুখের হাসিটা যেন ছবিটাকে অনেকখানি জীবন্ত করে তুলেছে জয়দীপের হাতের ছোঁয়ায়।
ছোট্ট সৃজিতার মুখাবয়বের চিত্রটি ওর নামের মতোই মিষ্টি। রংয়ের ব্যবহারও ছবি অনুযায়ী যথেষ্ট সুন্দর। আশা রাখি তুমি চেষ্টা করলে একদিন অনেক বড়ো শিল্পী হবে। চতুর্থ শ্রেণীর এষণার গ্রাম্য দৃশ্যটিও প্রশংসার দাবি রাখে। আরও অনেক অনেক ছবি আঁকো আর আমাদের উপহার দাও। পরবর্তীতে এমনই মন ভালো করা ছবি তোমার কাছ থেকে পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। 

পরিশেষে ধন্যবাদ জানাতে চাই শ্রদ্ধেয়া সম্পাদক মৌসুমী দিভাইকে। তিনি না থাকলে এই পত্রিকার সংস্পর্শে হয়তো আসা হতো না আমার। আশা রাখি  পত্রিকা খুব শীঘ্রই একশোতম সংখ্যায় পা রাখবে, সৃষ্টি হবে সাহিত্যের আরেক নতুন অধ্যায়। প্রার্থনা করি সকলকে নিয়ে এভাবেই বাকি পথটা এগিয়ে চলুক "জ্বলদর্চি" সাফল্যের মুকুট মাথায় নিয়ে।

 আরও পড়ুন

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments