জ্বলদর্চি

ধাকড় : হলিউডি অ্যাকশনের অপাচ্য ককটেল /রাকেশ সিংহ দেব


ধাকড় : হলিউডি অ্যাকশনের অপাচ্য ককটেল

রাকেশ সিংহ দেব

পরিচালক - রজনিশ রাজি ঘাই
অভিনয় - কঙ্গনা রাণাওয়াত, অর্জুন রামপাল, দিব্যা দত্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
মুক্তি - ২০ মে ২০২২

রেটিং - 2/5

এখন ইন্টারনেটের যুগে বিশ্ব চলচ্চিত্রের দরজা সাধারণ মানুষের সামনে খুলে গেছে। ডাবিং এর আশীর্বাদে এখন হলিউড থেকে রিজিওনাল মুভি সব ধরনের স্বাদ চেখে দেখতে ব্যস্ত দর্শক। এইসময়ের স্মার্ট দর্শকদের সামনে যদি মহিলাকেন্দ্রিক বলিউড অ্যাকশন মুভির নামে হলিউডের কপি পেস্ট জগাখিচুড়ি পরিবেশন করা হয় তাহলে তা দর্শকদের সহ্য হবে কি করে? এমনই দশা হয়েছে কঙ্গনা রানাওয়াত এর নতুন ছবি 'ধাকড়' এর। প্রায় ১০০ কোটির মুভি বক্স অফিসে উপার্জন করেছে মাত্র ৩.৭৭ কোটি টাকা।

 সাম্প্রতিক ইতিহাসে এইরকম ডিসাস্টার মনে পড়েনা। মুভিতে কি ছিলনা? ভালো অভিনেতা, ভালো অ্যাকশন, ভালো লোকেশন। তবে কি স্মার্ট দর্শকরা এখানে আনস্মার্ট হয়ে পড়েছেন? 

'ধাকড়' ছবিতে ইন্টারন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের ফিল্ড অফিসারের চরিত্রে কাজ করেছে কঙ্গনা রাণাওয়াত। ভারত সরকারের একটি গোপন ইউনিট হিসেবে দেখানো হয়েছে এই ডিপার্টমেন্টকে। যদিও পুরো বিষয়টি কাল্পনিক। মধ্য ভারতের এক কয়লা খনিকে কেন্দ্র করে চলা আন্তর্জাতিক পাচারচক্রকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলাই এজেন্ট অগ্নির মিশন। এই কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সম্পর্কে তথ্য খুঁজে বের করা এবং সেইসব ব্যক্তিকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলার কাজ সঁপে দেওয়া হয়েছে তার কাঁধে। তবে এই কাজ করতে গিয়ে রুদ্রভিরের মুখোমুখি হয় অগ্নি। অগ্নির স্মৃতিতে ফিরে আসে তার কৈশোরের এক খুনের স্মৃতি যাতে সে তার পরিবারকে হারিয়েছিল। এই খুনে জড়িত ছিল আজকের রুদ্রভির, যার সঙ্গে ব্যক্তিগত একটি হিসেব চোকানোর পথে হাঁটতে শুরু করে অগ্নি। 'এক আজনবি' এর বহুদিন  পর  অর্জুন রামপাল আবার নেতিবাচক চরিত্রে হাজির হয়েছেন,তার জন্য ভক্তদের অনেক আশা ছিল। কিন্তু তারা হতাশ করে। ছবির অপর ভিলেন দিব্যা দত্ত। যৌনপল্লির অন্ধকারে লুকিয়ে অপারেট করে তাঁর চরিত্র। তাকে ধাওয়া করেই ছদ্মবেশে অগ্নি পৌঁছায় যৌনপল্লিতে। এই ছবিতে অগ্নির বস রিংমাস্টারের ভূমিকায় দেখা গেছে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে। সরকারি আধিকারিকের ভূমিকায় ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। যে কোনও মূল্যে হিউম্যান ট্রাফিকিং রোখার মিশনে অগ্নিকে তিনিই নির্দেশ দিয়েছেন।


 তবে এতকিছুর পরেও ছবিটি জমল না। পরপর দুর্দান্ত অ্যাকশন সিকোয়েন্স একটি সিনেমার সাফল্যের কারণ হতে পারে না। তার জন্য ভালো চিত্রনাট্যের প্রয়োজন রয়েছে বৈকি। প্রথমেই যে বলেছি আজকের স্মার্ট দর্শকদের কথা তারা ফ্রেম টু ফ্রেম ধরে ফেলেছে এর অনেক অ্যাকশন সিকুয়েন্স অ্যাটমিক ব্লণ্ড, ব্ল্যাক উইডো, কিল বিল, জন উইক এর মতো অসাধারণ হলিউড অ্যাকশন মুভির টুকলি। শিল্পের ভাষায় যাকে বলে অনুপ্রাণিত। সর্বোপরি চিত্রনাট্য বড্ড খাপছাড়া। মাত্র দু' ঘণ্টা দশ মিনিটের এই ছবি শুধুমাত্র এই খামতির কারণে অতিরিক্ত দীর্ঘ এবং মন্থর বলে মনে হয়। যদিও পরিচালক চেষ্টা করেছেন ছবিটিকে তরী পার করানোর। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। রজনীশ ঘাইয়ের প্রথম ছবি ধাকড়,দর্শকদের হতাশ করেছে। ছবিটি পরিচালনার দিক থেকে খুবই দুর্বল। 


এখানে গল্পের ওপর কোনো কাজ করা হয়নি। চরিত্রগুলোকে শক্তিশালী করাও হয়নি। অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলিতে নজর দিতে গিয়ে তিনি স্ক্রিপ্টটিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছেন। কঙ্গনা রানাওয়াত, দিব্যা দত্ত, অর্জুন রামপালের মতো অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও কোনও চরিত্রই দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারে না,কারণ সেই ছবির দুর্বল স্ক্রিপ্টিং। না কঙ্গনার অ্যাকশন, না দিব্যা দত্তের অভিব্যক্তি,কিছুই বাঁচাতে পারে না ছবিটিকে। সেই কারণে মুক্তির মাত্র দ্বিতীয় সপ্তাহেই মুভি থিয়েটার থেকে পুরোপুরি গায়েব হয়েছে ছবিটি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের জন্য মুভির ডিজিটাল স্বত্ব পর্যন্ত বিক্রি করেননি নির্মাতারা। তাই স্মার্ট দর্শক যারা মুভিটি মিস করেছেন তারা আদৌ কোনদিন এই মুভি দেখতে পাবেন কি না তা ভগবান জানেন। 


রেটিং

5 - অসাধারণ 
4 - বেশ ভালো 
3 - ভালো 
2 - দেখতে পারেন
1 -  না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments