জ্বলদর্চি

সম্রাট পৃথ্বীরাজ – এক গগনচুম্বী প্রত্যাশার অপমৃত্যু /রাকেশ সিংহ দেব

সম্রাট পৃথ্বীরাজ – এক গগনচুম্বী প্রত্যাশার অপমৃত্যু

রাকেশ সিংহ দেব

পরিচালক: চন্দ্র প্রকাশ দ্বিবেদী
অভিনয়: অক্ষয় কুমার, মানুষী চিল্লর ,সোনু সুদ, সঞ্জয় দত্ত, আশুতোষ রানা, মানব ভিজ। 
মুক্তি : ৩ জুন, ২০২২ 

রেটিং – 2/5 

এই মুভির মেকিং এর পেছনের গল্প যখন ফলাও করে প্রচার হচ্ছিল তখন দুটি পরস্পর বিরোধী মন্তব্য কানে এসেছিল। পরিচালক চন্দ্র প্রকাশ দ্বিবেদী জানিয়েছিলেন এই মুভির চিত্রনাট্য তাঁর দীর্ঘ আঠারো বছরের গবেষনা এবং তিনি অক্ষয় কুমারকে মাথায় রেখে তা লিখেছেন। মূল নায়ক চরিত্র পৃথ্বীরাজ হিসেবে অক্ষয় কুমারের হ্যাঁ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি মুভিটি বানাননি। এদিকে সুপারস্টার অক্ষয় কুমার ছাতি ফুলিয়ে বললেন তিনি এই মুভির শ্যুটিং এর কাজ মাত্র ছেচল্লিশ দিনে শেষ করেছেন। 

মানে ব্যাপারটি ঠিক কি দাঁড়াল? এ যেন পুরাণের মাতা বিনতার গল্প। যিনি স্বামী কাশ্যপের নিষেধ উপেক্ষা করে অধৈর্য্য হয়ে নিজের দুটি দৈব ডিমের একটিকে তাড়াহুড়ো করে ভেঙে ফেলে বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। এখানেও ঠিক তাই, আঠারো বছরের অপেক্ষা শেষে বেরোল এক দুর্বল মুভি। বড়মাপের নায়কদের নিয়ে ছবি করা বেশ বড় চাপ। ছবির চিত্রনাট্য থেকে ছবির এডিটিং, সব কিছুতেই নাক গলাবেন নায়ক।


 আর তার ফলে যা ঘটবে, তা দাঁড়াবে ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’! মুভির ট্রেলারে অক্ষয় কুমারের পৃথ্বীরাজ অবতার দেখে অনেকে আশঙ্কায় ঢোঁক গিলেছিলেন। আড়াই ঘণ্টার একটু বেশি এই ছবির প্রতিটি ফ্রেম বুঝিয়ে দিল, অক্ষয় শত চেষ্টা করেও, পৃথ্বীরাজ চৌহান হতে পারেননি, বরং মিডিয়া প্রচারিত দেশপ্রেমী অক্ষয় কুমার হয়েই রয়ে গেলেন! গল্প আফগান শাসক মহম্মদ ঘোরি (মানব ভিজ) তার ভাই মীর হোসেনের বান্ধবী চিত্ররেখাকে বন্দী করেছিলেন। প্রাণ ভিক্ষা করে মীর হোসেন সম্রাট পৃথ্বীরাজ চৌহানের (অক্ষয় কুমার) কাছে আসেন।

 সম্রাট পৃথ্বীরাজ, যিনি উদ্বাস্তুদের রক্ষার দায়িত্ব নিলেন, তিনি মহম্মদ ঘোরিকে বার্তা পাঠালেন যে হয় চিত্ররেখাকে ফিরিয়ে দিতে হবে নয়তো যুদ্ধ হবে। এখান থেকেই দু’জনের মধ্যে শত্রুতা ছিল। সম্রাট পৃথ্বীরাজ 1191 সালে তরাইনের যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘোরিকে পরাজিত করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাকে ক্ষমা করে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়। এদিকে, ছবিটি আমাদের যুদ্ধ ছাড়াও পৃথ্বীরাজ চৌহানের ব্যক্তিগত জীবনের একটি উঁকি দেয়, যখন তিনি কনৌজের রাজকন্যা সংযোগিতার প্রেমে পড়েন। এই বিয়েতে ক্ষুব্ধ হয়ে কনৌজের রাজা জয়চাঁদ পৃথ্বীরাজের প্রতি ঘৃণাবশত মুহম্মদ ঘোরির সাথে হাত মেলান। এর পরে পৃথ্বীরাজ এবং ঘোরির মধ্যে যুদ্ধ হয়, যেখানে পৃথ্বীরাজ এবং চাঁদ বারদাই (সোনু সুদ) প্রতারণার মাধ্যমে বন্দী হন। ‘পৃথ্বীরাজ রাসো’ নামে এক কাব্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’ ছবি তৈরি হয়েছে। ছবিতে মূলত উঠে এসেছে মহম্মদ ঘোরির সঙ্গে পৃথ্বীরাজ চৌহানের সম্মুখ সমর, দেশের জন্য তাঁর গর্বে, দেশকে বিদেশি শত্রুর হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে লড়াই করে যাওয়া। এই বীরগাথাকেই আড়াই ঘণ্টা ধরে পর্দায় তুলে ধরলেন পরিচালক। 

ছবির প্রথমভাগ বেশ ভালই লাগবে। তবে দ্বিতীয়ভাগে এসে হঠাৎ করে আগ্রহ ধরে রাখা যায় না। বিগ বাজেটের মুভি হঠাৎ একতা কাপুরের মেলোড্রামাটিক মেগাসিরিয়াল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে দ্বিতীয় অর্ধের সাবপ্লটে নারী শক্তির উত্থান, বড্ড ঘ্যান ঘ্যানে লাগে। সেজেগুজে নাচ করতে করতে  সংযোগিতার জহর দেখে মনে বেদনার চেয়ে বিরক্তির উদ্রেক করে। সবচেয়ে বিরক্ত লাগে চরিত্রদের সংলাপে বার বার উর্দু শব্দের উপস্থিতি দেখে। পরিচালক চন্দ্র প্রকাশ দ্বিবেদী যিনি কালজয়ী মেগাসিরিয়াল চানক্য বানিয়েছেন, তাঁর চিত্রনাট্যে এই ধরনের ভুল অমার্জনীয়। যুদ্ধের দৃশ্যগুলো ভাল লাগে দেখতে, কিন্তু সেগুলোর জন্য যথেষ্ট স্ক্রীনটাইম ও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি যা বেশ হতাশ করে। 

এক যোদ্ধার কাহিনী দেখতে যাব আর যুদ্ধটাই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে না পারলে তো এরকম পিরিয়ড ড্রামার সাড়ে বার আণা মিছে। ছবিটিতে দমদার সংলাপ আছে। মারকাটারিও বলতে পারেন, কিন্তু মাঝে মধ্যেই যেন তা খেই হারিয়ে ফেলে। অক্ষয়ের পাশে অভিনয় করেও, নজর কেড়েছেন মনোজ যোশী, আশুতোষ রানা, সাক্ষী তনওয়ার। তাঁরা আরেকটু স্ক্রিনটাইম পেলে ভালই হতো। নবাগতা মানুষী চিল্লর এই ছবিতে শুধুই সাজানো পুতুল।



রেটিং
5 – অসাধারণ 
4 – বেশ ভালো 
3 – ভালো
2 – দেখতে পারেন
1 – না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments