জ্বলদর্চি

রম্য কবিতা, পর্ব-৭ /তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

রম্য কবিতা, পর্ব-৭

তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

(১)
দিকনির্দেশক দাড়ি

কতো পূজো জমা হয় রোজ রোজ শ্রীপদে!
কাপালিক এসে নাকি বাঁচাবেন বিপদে!
তবু ঝড় বাড়ি বয়ে এসে ভাঙে সংসার
নিয়ে যায় সব, বাকি রাখেনা প্রশংসার।
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালে আবহাওয়া দফতর,
ঝড়ের মর্জি তবু অধরা; অথান্তর।
যাদের রেডিও, টিভি কিচ্ছুটি নেই হায়!
“দিন আনে, দিন খায়”- এমন ধরন যায়,
তাদের ভরসা শুধু মইনের দাড়িতে,
হাওয়া পেলে তাতে, চাপেনাকো ভাত হাঁড়িতে।
তেলে জবজবে করে রেখে দেয় বৃদ্ধ,
দুইহাত লম্বা সে দাড়ি নিশ্ছিদ্র।
কোনদিকে হাওয়া বয়, কত তার গতিবেগ?
সাইক্লোন হবে কিনা- হেন যত উদ্বেগ;
আভাস পড়েই ধরা দাড়ি দেখে খুঁটিয়ে,
দাড়ি বেঁকে গেলে ছুট্‌ পাততাড়ি গুটিয়ে।


(২)
করোটি না স্ন্যাপড্রাগন


ফ্রান্স থেকে ‘অ্যাবিগেল দি ফিভাঁ’ এ বঙ্গে-
এসেছেন, ঘুরছেন, ‘প্যালা’ আছে সঙ্গে।
ছিন্নমস্তা দেবী দেখে মাথা চুলকে-
“গলে দিলো মরা স্ন্যাপড্রাগনের ফুল কে?”
শুধোলেন বিদেশিনী, প্যালা শুনে হতবাক;
সে নামই শোনেনি প্যালা, ফুল দেখা দূরে থাক।
করোটিকে- বিদেশিনী বলে নাকি মরা ফুল!
পাপ দেবে ঠাকুরেরা- হলে জেনেশুনে ভুল।

'স্ন্যাপড্রাগনের ফুল শুকোলে যে বীজাধার-
করোটির মতো লাগে'- সেটা আর জানা কার?



(৩)
নিম্নমানের প.নি.প.চ.


ওদের কারোর সাথে কোনো কথা কইবিনা
                      জানিসনা আমাদের ঝগড়া,
চিনলিনা আজো! ওরা- এক ছাদে এক হওয়া
                          দুনিয়ার বড় বড় ঠগ-রা।
বুড়োটা ঘাটের মড়া, তবু শখ যায়নিকো,
                নেশাতেই থাকে চূড় রাত-দিন,
বুড়িটার ঢঙ দেখে গা-পিত্তি জ্বলে যায়,
                   বয়স মানেনা, রাখঢাকহীন।
বড় ছেলেটাতো বেশি শ্রীঘরেই পড়ে থাকে,
             জমিদারি খেয়ে মোট’ও বয়েছে,
তেমন ঢলানে বড় বৌ’টাও, কতো বলি!
                মেয়েটাও ওরই মতো হয়েছে।
ঘুষ দিয়ে মেজো, সেজো -চাকরিও হাতিয়েছে,
                  আদৌ ছিলোনা কেউ যোগ্য,
তবুও ওদের বদমেজাজ বদলালোনা,
                      সমাজের ব্যাধি দুরারোগ্য।
পুরো মনোরুগী ছোটো ছেলে, অগা, উন্মাদ,
              লালা ঝরে, আগোছালো সজ্জা,
দেখিসনি সারাদিনই বৌ-শাশুড়ির র‍্যালা,
                   মুখে আনতেও যেন লজ্জা।


(৪)
উচ্চমানের প.নি.প.চ.


বাইরে যতোই কন চীন, রাশিয়ার কথা,
    যান শুধু আমেরিকা, ইউরোপ,
নেপথ্যে পুঁজিবাদ ঠাসা গলা অব্দিই,
    প্রকাশ্যে করে যান দোষারোপ।
এলাকার উন্নতি নিয়ে কথা বললেই,
   বিদেশে যাওয়ার কথা বলতেন,
কৃষক, শ্রমিক নিয়ে ভাষণেতে গললেও,
   ধুলো-বালি থেকে দূরে চলতেন।
কে টুকে বুকার পেলো, কি দুখে নোবেল গেলো
   কার ছবি চুরি হলো বঙ্গে,
পাকিস্তানের নাকি আগে থেকে প্রেম ছিলো
   জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে!
কোন দেশ রাজি হলো অস্ত্র-শস্ত্র দিতে,
   কোন দল পাজি হলো তার খোঁজ,
দিতে ভুলতেননাকো অথচ নিজের কাজই
   ভুলতেন, ফাঁকিবাজি রোজ রোজ।
দ্বিচারিতার এতো কি কারণ বুঝিনি তা,
    দলবদলিও কাল করেছেন,
আজকে সকালে দেখি নামাবলী গায়ে এঁটে,
    ধর্মঘটের গান ধরেছেন।
গরু নিয়ে মাতামাতি শুরু করেছেন ভারি
   গোবর খাইয়ে তবে ছাড়বেন,
চারবেলা পেট ভরে মুরগি-খাসি সাঁটিয়ে,
   'পশুপ্রেমী' হতেও কি পারবেন!
পড়াশোনা করে এতো, কতই মাইনে পাই!
   ঋণে ঋণে হয়ে আছি জেরবার,   
না পড়েই দেখি উনি বাড়ি-গাড়ি হাঁকালেন!
    গিরগিটি নিয়ে যতো কারবার।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments