জ্বলদর্চি

মারণবীজের আজব ধাঁধা পর্ব ৪ / বাসুদেব গুপ্ত

মারণবীজের আজব ধাঁধা পর্ব ৪ 

বাসুদেব গুপ্ত

এক কিলোমিটার ব্যাসের একটা গোল বৃত্ত। দশ ফুট উঁচু পাঁচিলের ওপর আরো দু ফুট তীক্ষ্ণ কাঁটাতারের বেড়া। তারও পিছনে ইউক্যালিপটাস গাছের সারি উঠে গেছে সোজা আকাশে প্রায় ১০০ ফুট। সাদা রহস্যময় তাদের শরীর। বিকেল বেলা হাওয়া দিলে চারদিকে একটা অদ্ভুত গন্ধ ঘুরতে থাকে। কারো খুব পছন্দ। কারও ভালো লাগে না। গাছের গায়ে লাগানো ক্যামেরাগুলো পাতার আড়ালে ঘাপটি মেরে। ছবি তুলতে থাকে সকাল বিকেল সন্ধে রাত। 

মোটা ইস্পাতের গেট দিয়ে আটকানো প্রবেশপথ। বাইরে থেকে ভিতরের কিছু দেখা যায়না। সেখানে আধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে সতর্ক পাহারা দিচ্ছে স্পেশাল গার্ড। গেট দিয়ে ঢুকে আবার একটা পরিখা। না, তাতে জেমস বন্ড সিনেমার মত হাঙর ঘুরে বেড়াচ্ছে না। কিন্তু জল ডিঙিয়ে উঠতে গেলে পেরোতে হবে বিদ্যুতের বেড়া। তার থেকে সহজ উপায় স্মার্ট কার্ড ঢুকিয়ে অপেক্ষা করা। পরিখার উপর টানা সেতু আস্তে আস্তে নেমে আসবে। সেতুর উপরের রাস্তা ট্যাংক যাবার মত শক্ত করে তৈরী । সেতু পেরোলে আবার একটা বৃত্ত। সেখানে যাওয়া ও আসার সময় ফুল বডি স্ক্যান। যতরকম বিপজ্জনক ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়া জানা আছে, তার সবগুলোই এখানে স্ক্যান হবে। এক মিনিট সময়। তার মধ্যে লাল আলো না জ্বললে আপনি এবার ঢুকতে পারেন সোজা ভিতরতম বৃত্তে যেখানে আপনাকে অভিবাদন জানাবার জন্য রিসেপশানে আছে একটি রোবট। 

গুড মর্নিং স্যার ডক্টর বেরা। গুড মর্নিং ম্যাম নিশা কৌশল। গুড মর্নিং মিজ মণিকা অগ্নিহোত্রী। কার্ড যেমন ছোঁয়ানো হবে রোবট কথা বলে উঠবে। দরজাটা একজনের জন্য খুলেই আবার বন্ধ হয়ে যাবে। 
ন্যাশনাল মাইক্রোবয়োলজি রিসার্চ সেন্টার NMRCতে আজ নতুন অতিথি। এখানে ঢোকার অনুমতি তা বড় তা বড় নেতা মন্ত্রীরাও সহজে পান না। তাঁদের জীবনের ঝুঁকির ভয় দেখানো হয়। মনে করিয়ে দেওয়া হয় ইউহানের মত বিপর্যয় এখানেও ঘটে যেতে পারে। ইউহান গবেষণাগার ছাড়াও ভাইরাস জমিয়ে রাখা আছে বেশ কয়েকটি গবেষণাগারে আমেরিকার CDC এটলান্টা আর সাইবেরিয়ার ভেক্টর ইন্স্টিটিউটে স্মল পক্সের ভাইরাসের সংগে আরো অনেক ভাইরাস যত্ন করে রাখা আছে। NMRCতে কি কি নমুনা রাখা আছে তা কেউ জানে না। ক্লাসিফায়েড সিক্রেট। 
এখানকার খবর বাইরে খুব একটা যায় না। উন্নত দেশেরা, অন্ততঃ সেখানকার সাধারণ মানুষ ভারতকে তেমন একটা পাত্তা দেয় না। ইন্ডিয়া মানে হাতে ভিসা নিয়ে লাইন করে প্লেনে ওঠা লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার কুলি। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি আর নোংরামি, আর অধুনা বাবাজী ও মোল্লা সাহেবদের পেশী আস্ফালন। এ দেশের কাছে খুব কিছু ভালো আশা কেউ করে না। আবার ভয় পাবারও কিছু নেই। দুম করে রাশিয়ার মত এদেশ ওদেশে মাঝে মাঝেই ট্যাংক চালিয়ে মানুষ মারবে এমন আশংকা নেই। 

এই সমীকরণটা ধাক্কা খেল যখন করোনা প্যানডেমিকে ভারতে দু দুটো ভ্যাক্সিন ঝটপট আবিষ্কার হয়ে গেল। সেগুলো যে কাজের হল তাই নয়, অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংগে লড়তেও তারা খুব সফল। বিভিন্ন বহুজাতীয় ওষুধ বিক্রেতার টনক নড়ল ও ভারতে একমাত্র গবেষণাকেন্দ্র এই NMRCর খবরাখবর বার করার জন্য লোক লাগল। স্বাস্থ্য মন্ত্রী একটু ধর্মভীরু মানুষ কিন্তু তিনি সবটাই ছেড়ে দিয়েছেন ডঃ রাজেন বেরার ওপরে। এই বিশাল সিকিউরিটর ব্যবস্থা সবই ডঃ বেরার। আর আলফাল টিভির লোকজন এখানে আসুক এটা ওঁর মোটেই পছন্দ নয়। 

কিন্ত এই চ্যানেলগুলোই তো সরকারের ব্যাকবোন। বিপদে পড়লে এরাই সরকারের হয়ে দিন রাত লড়ে যায়। বুক চাপড়ায়, থুতু ছোটায়। কাজেই যখন তথ্য দপ্তর থেকে অনুরোধটা স্বাস্হ্য দপ্তর হয়ে তাঁর কাছে এল তখন আর বারণ করা গেল না। একটু কিন্তু কিন্তু করাতে মন্ত্রী বললেন আপনার হাতেই সব। আপনি ঠিক করবেন কি দেখাবেন আর কি দেখাবেন না। আমরা এখন ভ্যাকসিন রফতানী করছি। আমাদের একটা ইমেজ তৈরী করতে তো হবে। সবসময় সিক্রেট সিক্রেট বলে বাড়াবাড়ি করলে লোকে সন্দেহ করবে। ডঃ বেরা আর প্রতিবাদ করেন নি শুধু মনে মনে ভেবেছিলেন দিশি চ্যানেল দেশের বাইরে কতটা বিশ্বাসযাগ্য তাই বা কে জানে? উল্টে এমন একটা প্রোগ্রাম করবে দেশকা মান দেশকি শান হমারা ভাইরাস লায়েগা বিশ্বসম্মান, এইসব বলে বিদেশে হাসির পাত্র না হতে হয়। 
মিস মণিকা একটি নামকরা চ্যানেলের চীফ নিউজ এডিটর। The news. সাদামাটা নাম। সরকার এই চ্যানেলটা খুব পছন্দ করে। কারণ এরা গাঁক গাঁক করে না চেঁচিয়ে সুন্দর করে দুই পক্ষের বক্তব্য তুলে ধরে। আর তারপরেই তাদের আসল কারুকার্য। এমন করে সব ঘটনাকে কাটছাঁট করে, কিছু সন্দেহ, কিছু অবিশ্বাস পাঞ্চ করে দেবে, শেষ পর্যন্ত মনে হবে সরকার মানুষের জন্য দিনরাত খাটছে আর বিপক্ষের লোকেরা নেই কাজ তো খৈ ভাজ করে সরকারের পিছনে পড়ে আছে। ভালো স্ক্রিপ্ট লেখে। মণিকার টপ লেভেল থেকে সুপারিশ। 

মণিকা যে ঊর্বীর ক্লাসমেট সেটা অবশ্য কেউ জানে না। ঊর্বীর কাছেই সমস্ত ব্যাপারটা ওর শোনা। 
“প্লেন ল্যান্ড করার জন্য নীচে নামা শুরু করতেই হঠাৎ এ এল ৫২র পাইলট ঘোষণা করেন আমি আপনাদের পাইলট বলছি। একটা জরুরী ঘোষণা। আমি হঠাৎ চোখে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না। ভয় নেই। আমার কো পাইলট এখন প্লেনটা ল্যান্ড করবে। আপনারা ব্রেস পজিশনে সীট বেল্ট বেঁধে মাথা নীচু করে হাতের নীচে রেখে বসুন। বিমানের ক্রুদের সংগে সহযোগিতা করুন। বিমান যদি জলে ল্যান্ড করে… এটুকু বলার পর একটা প্রচন্ড আর্তনাদ ভেসে আসে, ককপিটে শোনা যায় অনেক বিভ্রান্ত ও আর্ত গলার আওয়াজ, আতংকে কেমন হিম হয়ে যাত্রীরা কেউ একেবারে চুপ, আর কেউ কেউ আর্তনাদ করতে শুরু করে একটা ভয়ংকর গোলমাল শুরু হয়।“
ঊর্বী সুন্দর করে বর্ণনা দিয়ে একটা ডকুমেন্ট করে পাঠিয়েছে মণিকাকে। আইটি পেশার গুণ। প্লেন জলে ল্যান্ড করার পর ধরাধরি করে ক্যাপটেনকে নিয়ে যাবার সময় চোখগুলো বীভৎসভাবে কোটর থেকে বেরিয়ে থাকার দৃশ্যের কথাও বাদ দেয়নি। তারপর অনুরোধ করেছে আরো বিশদ অনুসন্ধান করতে। 

আরও লেখে, “প্রতিটি যাত্রীকে রিলিজ করার আগে একটা ফর্মে সই করানো হয়েছিল। তাতে লেখা, বিমানের যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য বিমান জলে নামতে বাধ্য হয়। বিমানকর্মীরা আমাদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যথাসাধ্য করেছে। আমরা কৃতজ্ঞ।“ 
“মুখে বলে দেওয়া হয় বাইরে কোনরকম দুর্ঘটনার কথা খবরদার বলা যাবে না। তাতে দেশের সিকিউরিটি ভীষণ বিপন্ন হতে পারে। বিন্দুমাত্র কিছু জানাজানি হলে কিন্তু জাতীয় সিকিউরিটি আইনে গ্রেফতার করা হতে পারে। আর এই আইনে দশ বছরও বিনা বিচারে জেলে থাকতে হয় সেটা তো আপনারা শুনেছেন। কাজেই সাবধান। “
কোন চ্যানেলে বা খবরের কাগজে বা ইউটিউবে আর কোন খবর বেরোয় নি। যেমন বেরোয় নি মাউন্ট আবুর রাস্তায় এক স্বপ্ন দেখা নারীর হঠাৎ ৫০০ ফুট নীচের খাদে হারিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া । 
মণিকা এখনো সেটা জানে না। কিন্তু একটা ভয়ংকর কিছু চারদিকে হচ্ছে সেটা বোঝার মত বুদ্ধি ওর আছে। সেটা বার করতেই হবে। যে কোন ভাবে। এটা একটা বড় সুযোগ। 
ডক্টর বেরা তীক্ষ্ণ চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকেন মণিকার দিকে। জরীপ করেন অভ্যাসবশতঃ। তারপর একটু স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে বলেন, কফি খান। সরি, আমরা কিন্তু স্ন্যাক্স অফার করি না সিকিউরিটির জন্য। নিশা আপনাকে বুঝিয়ে দেবে কারণটা ।
মণিকা হেসে ফেলে। হাসলে ওকে উজ্জ্বল দেখায়, চোখে বুদ্ধির দীপ্তি ফুটে ওঠে, আর ঠোঁটের ভংগীতে হাজার জাহাজ না হোক দু একটি নৌকাকে নোঙরছাড়া করতে পারে। ডঃ বেরার অণুবীক্ষণের চোখ। ওঁর চোখ একটু ছোট হয়ে আবার আগের মত। মণিকার চোখ এড়ায় না। গোলমাল আছে।
সেটা চেপে গিয়ে তার সাংবাদিক সত্তা বাইরে নিয়ে আসে। প্রশ্ন করে,
-আচ্ছা গেটে রিপোর্ট করা থেকে এই কনফারেন্স রুমে আসা পর্যন্ত আপনাদের শুধু সিকিউরিটি। কি সিকিউরিটি রে বাবা। ব্যাপারটা কি? আপনারা কি এটম বোমা বানাচ্ছেন নাকি। করোনার ভ্যাক্সিন করেছেন শুনেছি। তাতে গোপন করার কি আছে এত? একটু বুঝিয়ে বলবেন? 
মণিকা এক নিঃশ্বাসে বলে মাইকটা সামনে সাবলীলভাবে এগিয়ে দেয় 
-ইউহানের নাম নিশ্চয় শুনেছেন। বেরা উল্টে জেরা করার মত বলে ওঠেন। 
-সবাই শুনেছি। ওখানকার বাজারেই প্রথম কোভিডের খোঁজ পাওয়া যায়। ওখানে নানা রকম অদ্ভুত প্রাণী বাদুড় প্যাঙ্গোলীন এসব বিক্রি হত। তাদেরই কেউ বহন করছিল এই ভাইরাস। তাদের রক্ত মাংস নোংরা বডি পার্টস, এসব থেকেই মানুষের শরীরে লাফিয়ে পড়ে করোনা সার্স ২। তারপর ভীষণ বেগে সারা পৃথিবীতে ছড়াতে থাকে। এত দ্রুত হু হু করে ছড়ানোর জন্য হু পর্যন্ত এর গতি প্রকৃতি ধরতে পারে নি। অবশেষে অতিমারী শুরু হয় সারা পৃথিবীতে।
এক নিঃশ্বাসে এতটা বলে মণিকা একবার নিশার দিকে তাকায়। নিশা মন গিয়ে শুনছিল। 
-কি ঠিক বললাম তো? মণিকার প্রশ্ন নিশাকে। 
নিশা বলতে যাচ্ছিল একদম ঠিক, কিন্তু তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বেরা বলে ওঠেন, 
-এত শুনেছেন আর শোনেননি ভাইরাসটা শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে হাওয়াবাহিত, স্পর্শ বাহিত নয়। তাহলে মার্কেটে কি ছোঁয়া হয়েছিল, তার কোন তাৎপর্য আছে কি? ভাইরাসটা ইউহানের ভাইরাস ল্যাব থেকেও বেরিয়ে এসে থাকতে পারে। অনিচ্ছাকৃত ভাবে, বা ইচ্ছাকৃত ভাবে? আপনারা অর্ধেক জেনেই সব প্রচার করে দেন। এতে গবেষণার ক্ষতি হয়।

মণিকা একটু থতমত হয়ে সপ্রতিভ হবার চেষ্টা করে, 
-তা শুনেছি। কিন্তু আমরা সাংবাদিকরা অকাট্য প্রমাণ না পেলে বিশ্বাসও করি না আর রিপোর্ট তো অবশ্যই করব না, বলেই মণিকার মনে হলো, ওর কথা কেউ ঠিক বিশ্বাস করল না, তাই আরো যোগ করে, মানে সেটাই আমাদের প্রিনসিপল। সবাই না মানলেও আমাদের চ্যানেলে আমরা মেনে চলি।
বেরা ওর কথাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। চশমাটা একবার নামিয়ে ফুঁ দেন, একটু ধুলো পড়েছিল। তারপর বলেন, 
-সরি। এই যে ফুঁ দিলাম, আপনি কি জানেন এর থেকেই সম্পূর্ণ মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে? এই ভাবে একটা ভাইরাস যদি কোনভাবে ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসে তা থেকে শুরু হবে আর একটা অতিমারী। আমরা কোন রিস্ক নিতে পারি না। প্রতিটি প্রোটোকল পুংখানুপুংখ ভাবে মানতে হবে। এটা তো ছেলেখেলার জায়গা নয়। ভাবুন CDCতে যদি আজ টেররিস্টরা এটাক করে ও সেখানে সংগ্রহ করে রাখা স্মল পক্সের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে কি সর্বনাশ হতে পারে। আপনারা চ্যানেলে হৈ হৈ করবেন, আরটিআই করবেন। বোঝেন না, গোপনীয়তার প্রয়োজন আছে। এই পৃথিবীর স্বার্থেই। 
মণিকা দমে গেলেও মচকায় না। সে আরো এগিয়ে যায়, 
-বুঝলাম। কিন্তু আপনারা এখানে কি এমন নতুন ভাইরাস জমা করে রেখেছেন যে তাতে সর্বনাশ হয়ে যাবে? করোনার টিকা তো আপনারা বার করেই ফেলেছেন?
নিশা আর বেরার চোখাচোখি মণিকার চোখ এড়ায় না, নিশা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল বেরা চোখের ইংগিতে ওকে থামিয়ে দেয়। মণিকা জানে ওর ক্যামেরার রেকর্ডিং ও এডিট করে তবে এখান থেকে বেরোতে পারবে। প্রশ্নটা করবে কিনা ভাবতে খানিকটা সময় নেয়। তারপর সোজা বেরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে 
-আমাকে ল্যাব দেখাবেন না? কফি তো শেষ। চলুন। একটু কথাও বলব আপনার সায়েন্টিস্টদের সংগে। 
বেরা নিশাকে দেখিয়ে বলেন, 
-আমায় কয়েকটা কাজ সেরে নিতে হবে। এই আপনাকে সব দেখাবে। কিছু কিছু জায়গায় আপনি যেতে পারবেন না, হাইলি রিস্কি। আমাদের ভ্যাকসিন বানাবার পদ্ধতি বুঝিয়ে দেবে, সেটা একটু ভালো করে লিখবেন। সেটার…
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মণিকা হাসে। মাইকটা বন্ধ করে বলে, 
-জানি জানি, আপনাদের এই কৃতিত্বের গুণগান তো আজ সারা পৃথিবীতে। সেই জন্যই আমার আসা। তবু আমাদের কাজই আরো আরো জানা। জানতে চাইবো, বিরক্ত করবো। আপনারা বলার হলে বলবেন। চলুন নিশা ঘুরে আসি।

হঠাৎ বেরার ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠে। রিংটোন শুনেও একজনের সম্বন্ধে অনেক কিছু বোঝা যায়। মণিকা মনে মনে নোট করে। বেরা খুবই ক্যাজুয়ালি সরি বলে একটু দূরে গিয়ে ফোনটা ধরেন। কথা বলতে বলতে মুখের রেখাগুলো পাল্টায়। চাপা স্বরের কথা শোনা না গেলেও তাঁর চোখে মুখে উত্তেজনা চোখ এড়ায় না। একটা শব্দ মণিকার কানে এসে লাগে ট্রেন একসিডেন্ট। নিশা ওকে তাড়াতাড়ি বার করে নিয়ে যায় কিন্তু যেতে যেতে বারবার পিছনে তাকিয়ে একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে। 

-ট্রেন একসিডেন্ট? ড্রাইভার হঠাৎ মারা গেছে!। খুব চাপা স্বরে নিরীহ প্রশ্ন করে মণিকা, কিন্তু নিশার কানে কথাগুলো বাজ পড়ার মত গিয়ে পড়ে। নিশা আমতা আমতা করে বলে 
-মানে? বুঝলাম না ঠিক।
-আমি সব না হলেও কিছুটা জানি। গাড়ীর একসিডেন্ট, প্লেনের জলে ল্যানডিং, আর এখন বোধহয় ট্রেনের ড্রাইভার? হঠাৎ চোখে যন্ত্রণা, দৃষ্টি বিভ্রম, তারপর চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসা, আধঘণ্টার মধ্যে ডেথ। জানি। কিন্তু জানি না যারা এর সংস্পর্শে এসেছে তাদের কি হলো? আপনার সংগে আমার কথা আছে। না না পালাবার চেষ্টা করবেন না যে খবরগুলোর আমি জানি সেগুলো কিন্তু প্রকাশ করি নি আজও। আমরা বুঝি কোনটা ড্রাগ দো ড্রাগ দো বলে চ্যানেলে নাচার খবর আর কোনটা সিরিয়াস। যদি আমি পুরোটা জানি তাহলেও আমি প্রকাশ করব না। কিন্তু যদি না বলেন বা চেপে যাবার চেষ্টা করেন তাহলে সত্যের খাতিরে মানুষের স্বার্থে আমাকে সবটাই বার করতে হবে। বলুন। হাত বাড়িতে দেয় মণিকা ডিল? 
নিশা অসহায়ভাবে ওর হাতটা চেপে ধরে। 
-বলব। যা জানি সব। কিন্তু কিচ্ছু এখন প্রকাশ করবেন না। ডিল?
 -ক্রমশঃ-

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments