ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৯২
সম্পাদকীয়,
মধুদাদা, পেরজাপতি, পুণ্যি, পানু আর জয়াবতী। এদের এতদিনে আমরা সকলে চিনে গেছি। পেরজাপতির জীবনের গল্প শুনে আমিও তো তোমাদের মতো অবাক হয়ে গেছিলাম। তৃষ্ণা আন্টি এদের সবাইকার গল্প প্রতি সপ্তাহে কত যত্ন নিয়ে বুনে আমাদের শোনান। শুনতে শুনতে হঠাৎ দেখি ঝম ঝম করে বৃষ্টি এসে গেছে। আরে হবে না কেন? বর্ষাকাল তো। শুধু বর্ষা নয়, সব ঋতু নিয়েই ছড়া লিখে পাঠিয়েছেন বিশ্বনাথ আঙ্কেল। রাখী আন্টি আবাত মন খারাপ করা একটা গল্প লিখে পাঠিয়েছে। তবে গল্পের শেষটা পড়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। তোমরা পড়ে জানিও কিন্তু তোমাদের কেমন লাগলো। এছাড়া প্রমিত, শুভায়ু আর স্নেহার আঁকা কেমন লাগল জানিও। তোমাদের বন্ধু রিয়া মাকে চিঠি লিখেছে ছড়ার ছন্দে। খুব মন খারাপ হচ্ছে মায়ের জন্য? মন ভাল করতে পড়ে নিও কঙ্কাবতী, ডমরু চরিত। কার লেখা জান তো? ঠিক বলেছো ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর কথা লিখেছেন পীযূষ আঙ্কেল। আর যার কথা বললাম না সেটা হল গরুতে ঘাস খায়। রাকেশ আঙ্কেলের তোলা ছবিতে বাছুরটি কিন্তু ঘাস খাচ্ছে একটি ছোট্ট বন্ধুর হাত থেকে। -- মৌসুমী ঘোষ।
ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
চতুর্বিংশ পর্ব
তৃষ্ণা বসাক
মধুদাদা এল
২৮
জয়াবতীর গর্বে বুক ফুলে গেল। তার গঙ্গাজল পুণ্যি, পুথির জ্ঞান তার তুলনাহীন, শক্ত শক্ত সংস্কৃত শোলোক তার মুখস্থ, পানুর সঙ্গে সে কিছু পাতায়নি ঠিকই, প্রথম প্রথম সে খুব হিংসেও করত ওদের সঙ্গে , কিন্তু আজকাল তার সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেছে তাদের, মোটের ওপর তাকে বন্ধুই ভাবে সে, তো সেই লিকলিকে পানুর আঁক কষতে জুড়ি নেই, পেরজাপতিও বেশ আঁক কষতে পারে, তাছাড়া সে ফুরসত পেলেই বসে বসে চিত্র করে, যা হাতের কাছে পায় তাই দিয়ে। একদিন সে কাঠকয়লা দিয়ে রান্নাঘরের সামনের দাওয়ায় এমন এক চিত্র এঁকেছিল যে সবাই হতবাক। সে এঁকেছিল জ্বলন্ত চিতার সামনে থেকে একটি মেয়েকে উদ্ধার করে ঘোড়ায় তুলছে আর একটি মেয়ে। পুণ্যি আর পানু যদিও সেই ছবি দেখে বেশ মনক্ষুণ্ণ, পুণ্যি তো বলেই ফেলল ‘আমরাও যে তোকে বাঁচালাম, ধরে রাখলাম, হাত দিয়ে আগলে রাখলাম, তোর তো তখন কোন জ্ঞান ছিল না, ঢুলছিলি, আপিম খাইয়েছিল কিনা!’ আর পানু তো তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে বলল ‘ভারি বেইমান মেয়ে তো তুই পেরজাপতি, আমি কী জোরে চেঁচালাম হর হর মহাদেব-সে বুজি কিছু না! আর ছবি আঁকলি কিনা শুধু জয়াবতীর!আমি বুজি ফেলনা, দেখব আবার বিপদে পড়লে কে বাঁচায়!’পানুর রাগ বেশিক্ষণ থাকে না, একটু পরেই সে এক মুঠো কুল নিয়ে এসে পেরজাপতির কাছে এসে বলল ‘ভাব ভাব ভাব’
ভাব হয়ে যাবার পর সে পেরজাপতিকে তুতিয়ে পাতিয়ে নিজের একটা ছবি আঁকাল। তাতে আবার পুণ্যির মুখ হাঁড়ি হল, আর সাগরজল এসবের সাতে পাঁচে থাকে না, অবশ্য সে এসেছেই মোটে কয়েকদিন, বাড়ির ঠিকানা বা বাবার নাম তাকে দিয়ে বলানো যায়নি, সেসব কথা সে এড়িয়ে যায়। কেন কে জানে।তাই আর জিজ্ঞেস করে না জয়াবতী।
একদিন জয়াবতী আর পুণ্যিকে ডেকে সেনমশাই চিন্তিত মুখে বললেন ‘ দেখো মা, ওই যে উমাশশী, ওর বাড়ির ঠিকানা বা পিতার নাম কিছু পেলে? আমি লোক লাগিয়ে কুঁকড়োহাটিতে পাঠিয়ে সব খবর বের করতে পারি, কিন্তু গ্রামদেশ তো, ডাকাতে উঠিয়ে নিয়ে গেছে মেয়েকে- এ কথা জানাজানি হলে ভালো হবে না’
জয়াবতী মনে মনে মস্ত জিভ কাটল। সেই যে তর্পণের সকালে পালকি করে আসতে আসতে ঠাকমা দেখেছিল, পথের ধারে এক কোণে একটা ফুটফুটে মেয়ে পড়ে আছে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রাণ হাতে দৌড়ে আসার জন্যে তার পরনের শাড়ি ছেঁড়া, হাত পায়ে কেটে ছড়ে গেছে, কপালেও, সেখানে বিন্দু বিন্দু রক্ত চন্দনের মতো আঁকা যেন। সেই মেয়েকে প্রাণে ধরে ফেলে আসতে পারেনি ঠাকমা আর খুড়িমা।তারা এক মুহূর্তের জন্যেও ভাবেনি কাদের ঘরের মেয়ে, কী জাত, বামুন বদ্যির থেকে নিচু জাত কিনা, ছোঁবে কি না ছোঁবে, ঠাকমার কথায় কাহাররা মেয়েটাকে উঠিয়ে এনেছিল পাল্কীতে, ওর মুখে চোখে জলের ছিটে দেওয়া হয়েছিল। পাল্কিটা বেশ বড়। ঠাকমার কোলে মাথা, মানোর মার কোলে পা- এমনভাবে শোয়ানো হয়েছিল মেয়েটাকে, ওর গায়ের কাপড় আলগা করে দেওয়া হয়েছিল, আর খুড়িমা সমানে তালপাখা জলে ভিজিয়ে ওকে বাতাস করে যাচ্ছিল, যাতে ওর গায়ে ভেজা ভেজা হাওয়া লাগে। এতক্ষণ ধরে ছোটার ক্লান্তি, তারপর একটা আশ্রয় পেয়েছে, সেই ভেজা ভেজা বাতাসের ছোঁয়ায় মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছিল। পাল্কির দুলুনিতে ওর আরাম হচ্ছিল নিশ্চয়। সেই ঘুম একেবারে ভেঙেছিল পালকি গঙ্গার ধারে এসে থামার পর। জয়াবতী অবাক হয়ে ভাবে মেয়েটা যদি কবরেজের মা-পরিবারের হাতে না পড়ে অন্য কারো হাতে পড়ত! আর বাঁচতে হত না। প্রথমে তো ওর কী জাত এই ভেবে আকুল হয়ে ওকে কেউ ছুঁয়েও দেখত না, রাস্তায় ওই ভাবেই ফেলে আসত। তারপর হয় বাঘে শেয়ালে এসে ছিঁড়ে খেত নইলে ডাকাতরা আবার দেখতে পেয়ে তুলে নিয়ে যেত। হয় ওকে ডাকাতের সঙ্গে বে দিয়ে দিত, নইলে সোজা চালান করে দিত কাশীতে। সেখানে সুন্দর দেখতে মেয়েদের নাকি ভারি কদর। কদর মানে আর কি, সেই মেয়েটাকে গান শিখিয়ে নাচ শিখিয়ে গড়েপিটে নিত, তাকে দিয়ে অনেক রোজগার করাত, তাতে তার কোন ভাগ থাকত না, এমনকি সে নিজের সমাজের বাইরে গিয়ে পড়ত। জয়াবতী ভাবল কোনটা ভালো? এই গামের মধ্যে ছোট্ট বেলায় বে হয়ে সারাজীবন ঘুমটার আড়ালে গুড়ের নাগরির মতো কাটিয়ে দেওয়া না দূর দেশে গিয়ে নাচ গান করে জীবন কাটানো? যাই হোক কবরেজের মায়ের চোখে পড়েছিল বলে প্রাণে বাঁচল মেয়েটা, কবরেজের ঘরে এটুকু সবাই জানে প্রাণ বাঁচানোর চেয়ে বড় ধর্ম আর কিছু নয়।রুগীর সেবা করাই নিত্যপুজো। রুগী চণ্ডাল হলেও রুগীর সেবা করতেই হবে, তাকে ছুঁতেই হবে। রুগীর যেমন কোন জাত নেই, তেমন জাত হয় না কবরেজের। ভগমান যেমন জীবের প্রাণ দিয়েচেন, তেমনই সেই প্রাণ রক্ষের কাজ দিয়েচেন কবরেজকে।জয়াবতী দেখেছে কত দূর দূর গ্রাম থেকে হেঁটে কি পালকিতে কত রুগী আসছে, সঙ্গে তার আত্মীয়স্বজন। তারা মাথায় হাত ঠেকিয়ে বলে কবরেজ মশাই সাক্ষাৎ ভগমান। শুনে ভারি গর্ব হয় জয়াবতীর। শুধু তাই নয়, ওর মনের মধ্যে হিংসে রাগ জেদ মেশানো এক অদ্ভুত ভাব খেলে যায়। কদিন পরে বাপধনদের তার নাম করেই কপালে হাত ঠেকাতে হবে। বলতে হবে জয়াবতী ঠাকরুন সাক্ষাৎ ভগবতী। হুঁ হুঁ বাবা, এমনি এমনি তো আর বাপ মা ভাই ফেলে পরের বাড়ি পড়ে নেই সে! না না ছি ছি, পরের বাড়ি কীসের? নিজের রক্তের লোকেও এত করবে না। সবাই যেন কীসে এই মেয়েগুলোকে ভালো রাখবে, দুটো ভালো খাবার খাওয়াবে তাদের- এই ভেবেই অস্থির।খুড়িমা অবশ্য মাঝে মাঝে একটু কেমন ধারা ব্যাভার করেন। পেরজাপতিকে যে আগুন থেকে তুলে আনা হয়েছে, এ কথা তিনি ভুলতে পারেন না। আগুনদেবতার মুখের গ্রাস কেড়ে আনা একটা মেয়ে তাঁর সংসারে কী কী অমঙ্গল ডেকে আনতে পারে, তাই ভেবেই তিনি সারাক্ষণ সিঁটিয়ে থাকেন ভয়ে আর তাই মাঝে মাঝে জয়াবতীর সঙ্গে একটু রুক্ষ গলায় কথা বলেন। জয়াবতী ভেবে দেখেছে জগতের বেশির লোকেই খারাপ না, তারা কোন না কোন কারণে ভয় থেকেই এমন খারাপ ব্যাভার করে। জয়াবতীর তাতে কিছু এসে যায় না। খুড়িমার কথায় বোকা পুণ্যিটা ঘরে লুকিয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদে, পেরজাপতির হাবাগোবা মুখে সুখ দুঃখ কিছুই বোঝার জো নেই, তবে সে নিজে এখনো ভোলেনি তাকে আগুনের মুখ থেকে টেনে আনা হয়েছে। সে সধবা না বিধবা না কুমারী- সে নিজেই ভালো করে বোঝে না। খুড়িমা যখন কান্নাকাটি করেন, সে সেই সময়টা কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। কিন্তু জয়াবতী ছাড়ার পাত্রী নয়। সে হয় নানান যুক্তি দিয়ে খুড়িমাকে বোঝায় নয়তো হাসি ঠাট্টা করে বিষয়টা হাল্কা করার চেষ্টা করে। কিন্তু পুণ্যিকে বোঝাবার সময় সে ভারি কড়া। ‘জানিস কবরেজ হতে গেলে কত কষ্ট করতে হয়? লোকের কতা কি গায়ে ফোটে? বলার মুক আর চলার পথে কেউ কোনদিন বন্ধ করতে পারে রে? খুড়িমা যদি বলে আনন্দ পায় বলুন, আমাদের কাজ আমরা করি’ সেই খুড়িমাও রুগির সেবা করার প্রাথমিক নিয়মগুলো জানেন দেখে মুগ্ধ হল জয়াবতী। হায়, এরা যদি একটু পড়াশোনা শিখত!
তারপর তো হৈ হট্টগোল, নৌকা চড়া, বাড়ি এসে তাকে এবাড়ির হালচালে অভ্যস্ত করানো-এসবের মধ্যে আর সাগরকে জিজ্ঞেস করা হয়নি তার গাঁয়ের খবর। ইস! সে যদিও এই নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে।
জয়াবতী কী বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই ধূলিধূসর পায়ে কে যেন ফটক পেরিয়ে আসছে দেখা গেল। জয়াবতী লাফিয়ে বলল ‘মধুদাদা! মধুদাদা!’
প্রমিত নস্কর, পঞ্চম শ্রেণী, রঘুনাথবাড়ি রামতারক উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব মেদিনীপুর
ঋতুর মজা
বিশ্বনাথ চৌধুরী
ডিং ডং ডং গ্রীষ্ম আসছে
দর দর ঘাম শরীরে ভাসছে।
জল থৈ থৈ বর্ষা এসেছে
রাস্তা পথটা তাইতে ভেসেছে।
শিউলি গন্ধে শরৎ আসে
নীল আকাশে মেঘ ভাসে।
চুপি চুপি হেমন্ত ঝরে
জড়োসড়ো শীতটি পড়ে।
কোকিলের ডাকে বসন্তকাল
শীতের বিদায় ছেড়েছি শাল।
স্নেহা দাস, অষ্টম শ্রেণী, জওহর নবোদয় বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুর
ভাতচোর
রাখী সরদার
জৈষ্ঠের ভ্যাপসা গরমে লোকজন অতিষ্ঠ,একটুও বাতাস বইছে না।সুরমা রাতের কাজকর্ম সেরে বিছানায় এসে বসে।সিলিং ফ্যানটা ঘুরছে তো ঘুরছে।গায়ে একটুও হাওয়া লাগেনা।সারাদিন
খাটাখাটনির পর একটু সুস্থ হয়ে ঘুমানোর ও উপায় নেই। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে সবেমাত্র ঘুমের ঘোর এসেছে সুরমার।এমন সময় ঘটাং করে কি একটা শব্দ হয়।সে বিছানায় উঠে বসে।বুকটা ঝনাৎ করে ওঠে।পাশের ঘরে রুনু ঝুনু ঘুমাচ্ছে। 'ওদের ঘর থেকে কি শব্দটা এলো?'সুরমা লাইট হাতে বিছানা থেকে নেমে পড়ে।ওদের বাবা বাড়ি থাকেনা, সপ্তাহে একদিন আসে, সংসারের দায়দায়িত্ব সব তার। আবার শব্দটা হয়। শব্দটা রান্নাঘর থেকে আসছে মনে হল। সুরমা পা টিপে টিপে এগোয় রান্নাঘরের দিকে।মনে মনে ভাবে -আজও কি তবে সেই হুলোটা এসেছে?।মনে মনে
বলে -'আজ হুলোর ঠ্যাং ভাঙবো।'
এই কদিন ধরেই কাদের এক হুলো বিড়াল ভাত চুরি করে খেয়ে যাচ্ছে।মাঝেমধ্যে রাতে তার ডাক
শোনা যায় রান্না ঘরের পিছন থেকে। ঝুনুটা পান্তাভাত আর পিঁয়াজ খেতে ভালবাসে।কিন্তু এ কদিন ওই বিড়ালের জ্বালায় মেয়ের পান্তাভাত খাওয়া হয়না।রান্না ঘরে সুরমা ঢুকে দেখে ভাতের হাঁড়ির সরা উল্টে পড়ে আছে।জানালার কোল ঘেঁষে একটা সিমেন্টের তাক করা।বিয়ে হয়ে আসা অবধি দেখে আসছে তার শাশুড়ি মা রাতে ওখানেই ভাতের হাঁড়ি খাবার দাবার রেখে আসছে।সে ও তাই রেখে আসছে,এতদিন কিছু হয়নি।জানালা টা রাতে লাগিয়ে দেওয়া হতো।এই কদিন হলো জানালার পাল্লাটা ভেঙেছে। পাড়ার টুপলা মিস্ত্রিকে খবর দেওয়া হয়েছে।কিন্ত সে এখন এ তল্লাটের নাম করা কাঠের মিস্ত্রি।সময়ই পাচ্ছেনা।কদিন পর এসে সারাবে বলেছে।এদিকে বিড়ালের জ্বালায় সুরমা অস্থির হয়ে ওঠে।আজ তো সে দুজন লোকের ভাত রেখেছিল। সকালে উঠে দ্যাখে হাঁড়ির খোলে দু'চারটে দানা পড়ে। একেবারে সাফসুতরো করে খেয়ে গেছে। কাল সকালে পান্তাভাত না পেলে মেয়েটা যে কি গোলমাল করবে।আর ভাবতে পারেনা সুরমা,চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ে।
সকালে তো বাড়ি মাথায় করে তোলে ঝুনু।পান্তাভাত না খেয়ে ঝুনু পড়তে যাবেনা।পাড়ার হারান মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়ে।তার এই ক্লাস সিক্স চলছে।খুব জেদী,যা বলবে সেটাই দিতে হবে।পান্তাভাত নেই দেখে চেঁচামেচি শুরু করে।
'মা তুমি তো জানো আমার পান্তাভাত আর পিঁয়াজ ভালো লাগে।কেন রাখোনি?'রাতে একটু বেশী করে ভাত রান্না করতে পারোনা?'
'আরে রেখেছিলাম, কাল একটু বেশি করেই রেখেছিলাম , এই গরমে পান্তাভাত ভালো লাগবে বলে,কিন্ত কাল রাতেও বিড়ালটা খেয়ে গিয়েছে।'
'মা কেন এমন বলছো?বলো যে খরচ বাঁচাচ্ছো।এমনিতেই তো বলো অনেক খরচ।চালাতে পারছোনা।বাবা আর কত পরিশ্রম করবে।'
'ঝুনু এসব কি কথা বলছিস?এইটুকু মেয়ে কোথা থেকে এমন কথা শিখছিস! মায়ের কথা বিশ্বাস করতে পারছিস না?কাল দুজনের মতো ভাত রেখেছিলাম। একটা শব্দ পেয়ে উঠে পড়ি।রান্না ঘরের দিক থেকে শব্দটা আসে বুঝতে পারি।গিয়ে দেখি সরা উল্টে পড়ে আছে।হাঁড়িতে এক দানাও ভাত নেই।'
'দুজনের ভাত একটা বিড়াল খেতে পারে!কেন বোকা বোকা কথা বলছো মা?'রুনু বলে ওঠে।
কখন যে রুনু এসে দাঁড়িয়েছে সুরমা দেখতে পায়নি।সুরমা মেয়েদের কথাবার্তায় অবাক হয়।
'এ্যাই ঝুনু তোর জন্য বগাদার দোকান থেকে ঘুগনি আর পাঁউরুটি এনে দিচ্ছি, ওটা খেয়েই পড়তে যা।মা তাড়াতাড়ি রান্না বসাও,আজ সাড়ে নটার ট্রেন ধরবো,কলেজে একটু দরকার আছে।আজ তো বাবা আসবে, তাড়াতাড়ি ফিরবো।'
সুরমা কোন কথা বলেনা।তার মেয়েরাও তাকে অবিশ্বাস করে,বোকা ভাবে,মনে মনে ঠিক করে আজ রাতে সে ঘুমোবেনা।রান্না ঘরের চ্যালাকাঠ দিয়ে আজ বজ্জাত বিড়ালের কোমর ভাঙবে।সুরমা তাড়াতাড়ি রান্না বসাতে যায়।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটু তাড়াতাড়ি রান্না বসায়। আজ সুরমা দেরি করে। রুনুর বাবাও ফিরবে রাত্রে।মানুষ টা সারা সপ্তাহ নিজে হাতে আধসেদ্ধ
ভাতেভাত ফুটিয়ে খায়। সুরমা গোটা গোটা করে
মুসুর ডাল, লাল পিঁয়াজ ছড়িয়ে আলু ভাজে, পটলের পোস্ত করে।
রাতে সবাই একসাথে খেতে বসে। ঝুনু হঠাৎ বলে ওঠে--
জানো বাবা আমাদের বাড়ি একটা হুলো বিড়াল আসছে কদিন,সে আবার দুজন মানুষের ভাত খায়। 'বলেই হো হো করে হেসে ওঠে।'
জগদীশ মানে রুনুর বাবা ও হাসতে হাসতে বলে
--'দূর তা হয় নাকি!'
'হয় বাবা, মাকে জিজ্ঞেস করো।বাবা এ বিড়াল মনে
হয় কোন অশরীরী। বিড়াল রূপে আসে মনে হয়!'
ঝুনুর কথায় জগদীশ ও রুনু এবার আরো জোরে জোরে হাসতে থাকে। সুরমা ঝংকার দিয়ে ওঠে --
'আমি মিথ্যেবাদী? আজই প্রমাণ করবো।' বলেই সুরমা উঠে যায়, আর ভাত খায়না। পরিবেশটা কেমন গুমোট গরমের মতো হয়ে ওঠে।
মেয়েরা তাদের ঘরে শুয়ে পড়ে।সুরমা চুপ করে বসে থাকে। জগদীশ ঘুমিয়ে পড়ে কখন যেন।
হঠাৎ সুরমার চিৎকারে জগদীশ ও মেয়েদের ঘুম ভেঙে যায়।রান্নাঘর থেকে চিৎকার শুনে সবাই ছুটে সেদিকে যায়। জগদীশ উৎকণ্ঠার সাথে
বলে -'কী হয়েছে? কী হয়েছে?'
'জানো আজ ভাতচোর কে আর একটু হলেই হাতেনাতে ধরেছিলাম। ব্যাটা পালাল হাত ফসকে।'
বেড়ালকে কখনো ধরতে পারো!এক কাজ করো
কাল থেকে রাতে যা কিছু খাবারদাবার থাকবে
তোমার শোবার ঘরে রেখো। ঘরে ঠাকুর আছে তো কী হয়েছে,ভাত তরকারি রাখা যেতেই পারে। তুমি আমার মায়ের মতো শুচিগ্রস্থ হয়ে গেলে দেখছি।'
'বিড়াল কে বললো? জানো একটা ছেলে এ কদিন ভাত চুরি করে খাচ্ছে।'
'কী বলছো মা!' --রুনু অবাক স্বরে বলে ওঠে।
'হ্যাঁ রে, একটা শব্দ হতেই আমি পা টিপে টিপে রান্নাঘরে আসি,মনে হচ্ছিল কেউ যেন অতি সাবধানে সরাটা নামিয়ে রাখছে। আমি লাইটটা জ্বালাতেই দেখি একটা বছর আঠার র ছেলে রোগা ডিং ডিং করছে। লিকলিকে হাত বাড়িয়ে হাঁড়ি থেকে ভাত বের করে খেয়ে চলেছে।'
'বলো কী?এত সাহস! মা কাল রাতে আামি দেখছি
কোন চোর ভাত খেতে আসে।বাবা কাল দিন টা থাকো।'
'
তাইতো থাকতেই হবে। আমার রুনু মায়ের পান্তাভাত
কে খেয়ে যায় দেখতেই হবে।'
আজ সন্ধ্যায় বাড়ির সবাই কেমন একটা উত্তেজনায় ফুটছে।পাড়ার রবিকাকাকেও ডাকা হয়েছে। সবাই পরিকল্পনা করছে এমন অভূতপূর্ব চোরকে কিভাবে ধরা যায়। সুরমা একটা সব্জি
আর ঝাল ঝাল মাংস রান্না করছে। রাতে সুরমা
সবাইকে খাইয়ে দাইয়ে কী মনে করে বাটিতে
একটু মাংস ঝোল আলু তুলে রাখে।সবাই তাড়াতাড়ি খেয়ে আলো নিভিয়ে দেয়।
ঝুনু ফিসফিস করে বলে -
'দিদি বাবা আর রবিকাকা কোথায়?'
'ওরা রান্না ঘরের পিছন দিকে আছে।'
একটু চুপ করে থাকার পর বলে --
'দিদি এখনো আসছেনা কেন?'
'চুপ কর্, কিছু একটা শব্দ হচ্ছে। '
'রান্নাঘরের দিক থেকে না?'
'আঃ, চুপ করবি।'
হাঁড়ির সরাটা যেন আজ বড় বেশি সন্তর্পণে নামানো হচ্ছে। এমন সময় দপ করে রান্না ঘরের আলোটা জ্বালায় সুরমা। রান্নাঘরের পিছনে
ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা রবি মণ্ডল আর
জগদীশ হাতেনাতে ধরে ফেলে ছেলেটিকে।
'কী রে তুই?' -রবিকাাকা জিজ্ঞেস করে।
ওকে চেন? -জগদীশ বলে ওঠে।
চিনি,এতো মুসুর।
কি রে তুই ভাত চুরি করে খাস?
ছেলেটি কোন উত্তর দেয়না-শুধু আঁ,আঁ করে শব্দ
করে ওঠে। ইতিমধ্যে সুরমা,রুনু, ঝুনু সবাই এসে উপস্থিত। ঝুনু বলে ওঠে --
'রবিকাকা মুসুর!এ আবার কে?'
আরে এতো রমেন ডাক্তারের বাড়িতে মাসখানেক
হলো এসেছে। ওর তো ক্যানিং এর ওদিকে বাড়ি। বাসন্তীর কোন একটা গ্রামে। সেই আাইলায়
ওদের সমস্ত ধুয়ে মুছেনিয়ে চলে গেছে। ওর বাবা,মাও ওই সময় ঝড়ে মাটির ঘর চাপা পড়ে মারা যায়। অদ্ভুত ভাবে ও মাটির একটা চাঙড়ের
মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল।গ্রামের মানুষেরা ওকে বাঁচায়।
'সে কি! ওর বাবা মা নেই!' সুরমা জানতে চায়।
'না বৌদি ওর বাবা মা ওই ঝড়ে মারা যায়।
এতদিন কোন রকমে গ্রামের মানুষের কাছে এক আধবেলা খেয়ে বেঁচেছিল। কোন কাজকর্ম করতে
পারেনা, ছোট্ট থেকেই নাকি আধপাগল। কে ওকে
সারাজীবন বসিয়ে খাওয়াবে।রমেন ডাক্তারের
কাজের মেয়েটার দুঃসম্পর্কের ভাগ্না হয়। ওই ই মাসখানেক হল এনেছে। কিন্তু রমেন ডাক্তারের বউকে চেনতো? ছেলেটা ঠিকঠাক খেতে পায়না।'
ঝুনু চেঁচিয়ে ওঠে --' তা বলে আমাদের বাড়ির
ভাত চুরি করবে!'
'আাঃ ঝুনু কী হচ্ছেটা কী? 'সুরমা ঝুনুকে চুপ করতে বলে। তারপর মুসুরকে ডাকে, যত্ন করে আসনপেতে
দিয়ে বসতে বলে। থালায় ভাত বেড়ে দেয়। মুসুর জুল জুল করে একবার ভাতের থালার দিকে একবার ঝুনুর দিকে দ্যাখে।
'আরে খা -আ-আ,ও কিছু বলবেনা। 'সুরমার কণ্ঠস্বরে একটা যেন মায়ের স্নেহের ছোঁয়া পায়
মুসুর।মুহূর্তে খেতে বসে যায়।
'মা ও কি শুধু ভাত খাবে?আর কিচ্ছু নেই? '--বলে ওঠে ঝুনু।
ততক্ষণে মুসুর গোগ্রাসে মুঠো মুঠো শুধু ভাত খেতে আরম্ভ করেছে। সুরমা রান্নাঘর থেকে একবাটি মাংসের ঝোল এনে মুসুরের পাতে ঢেলে
দেয়।জগদীশ অবাক হয়ে বলে ওঠে --
'মাংসের ঝোল ছিল! তবে যে ঝুনু যখন চাইল
বললে আর নেই! '
''জানি আজ ভাতচোরটা আসবেই। আমরা সবাই
মাংসঝোল ভাত খাব আর ও শুধু ভাত খাবে? অভুক্ত ছেলেটাকে শুধুভাতের থালা কেমন ভাবে
মুখের সামনে এগিয়ে দেব বলো?সেজন্য একবাটি
মাংসের ঝোল তুলে রেখেছিলাম।'
বলতে বলতে সুরমার শান্ত দুচোখ স্নেহে টল টল করে ওঠে।ওদিকে অন্ধকার আকাশে তখন একটি
নক্ষত্র আনন্দে আরো উজ্বল হয়ে জ্বলতে থাকে।
নক্ষত্র টি এতদিন বড় ম্রিয়মাণ ছিল মুসুরের জন্য।
মা
রিয়া মন্ডল
নবম শ্রেণী, জওহর নবোদয় বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুর
মা, মাগো, ওমা
ভাবছো তুমি, তোমায় ছেড়ে আছি ভালো?
নাগো না ‚ বুঝি আমি তুমি ছাড়া জীবন কালো।
হয়তো এখন‚ থাকতে হবে তোমার থেকে অনেক দূরে‚
ভরসা রেখো‚ তোমায় ছেড়ে থাকবো শুধুই পড়ার সুরে।
এখন যদি পেতাম তোমায় আমার পাশে‚
অনেক কথা বলতাম তোমার কাছে এসে।
যখন তুমি মনের কথা বলো ফোন করে
আবেগ বলে‚ সামনে পেলে কাঁদতাম তোমায় ধরে।
রোজ সকালে যখন আমার মনে পড়ে তোমার কথা ‚
বুক পাঁজরের বাঁ দিকটা তখন করে অনেক ব্যথা।
সেই ব্যথাতেই উছলে আসে আমার চক্ষু ভরা জল ‚
চিন্তা কোরনা দেবই আমি তোমার আশার মিষ্টি ফল।
স্মরণীয়
(ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার
বাংলা সাহিত্যে ব্যঙ্গ-কৌতুক রচনায় ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় যে সমস্ত অমর চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে লুল্লু ও ডমরুধর সবচেয়ে জনপ্রিয়। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই উত্তর চব্বিশ পরগনার শ্যামনগর নিকটস্থ রাহুতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ত্রৈলোক্যনাথ। বাবা বিশ্বম্ভর মুখোপাধ্যায় ছিলেন দরিদ্র ব্রাহ্মণ, মা ছিলেন সাধারণ গৃহবধূ। প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেছিলেন চুঁচুড়ায় ডাফ সাহেবের স্কুল ও ভদ্রেশ্বরের কাছে তেলেনীপাড়া স্কুলে। কিশোর বয়সেই পিতামাতা ও পিতামহীকে হারিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। প্রথাগত শিক্ষা শেষ হয়ে যায় পঞ্চম শ্রেণীতেই। যদিও অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে চিরকালই শিখে গেছেন নানা ভাষা ও নানা বিজ্ঞান। কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতা দিয়ে। বীরভূমের দ্বারকা, রাণীগঞ্জের উখড়া এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরোধে তাঁর জমিদারির অন্তর্গত সাহাজাদপুরের স্কুলেও পড়িয়েছেন ত্রৈলোক্যনাথ। এরপর শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে কটকে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন ১৮৬৭ সালে। এই সময় তিনি ওড়িয়া ভাষা শেখেন এবং 'উৎকল শুভকরী' নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৭০ সালে উইলিয়য়াম হান্টার কর্তৃক 'বেঙ্গল গেজেটিয়ার' এর অফিসে করনিক নিযুক্ত হন। কিছুকাল এই কাজ করার পর উত্তর পশ্চিম ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে কৃষি ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান করণিক নিযুক্ত হন। এই সময় দুর্ভিক্ষ হলে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে অভিনব উপায় বের করেন - গাজর চাষের মাধ্যমে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচান। ১৮৮১ সালে ভারত সরকারের রাজস্ব বিভাগের চাকরিতে যোগদান করেন। ১৮৮৬ তে কলকাতা মিউজিয়ামের সহকারী কিউরেটর পদে নিয়োগ পান। ১৮৯৬ তে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
মাত্র নয় বছর বয়সে নিজের আবিস্কৃত লিপিমালা তিনি মাটির চাকতি ও কাঠের ফলকে লিখে রাখতেন। আশ্চর্য এই যে সেই লিপিমালার সঙ্গে পিটম্যানের 'শর্টহ্যান্ড রাইটিং' এর অনেক মিল পাওয়া যায়। বাংলা, ইংরেজি, ওড়িয়া, হিন্দি, পারসি ও উর্দু সহ বহু ভাষা তিনি লিখেছিলেন। তিনি বহুভাষী দেশ ভারতের একটি রাষ্ট্রভাষার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন ও বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বঙ্গবাসী অফিস থেকে প্রকাশিত 'জন্মভূমি' মাসিক পত্রিকাতে বহু প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তাঁর ভাই রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায় কে 'বিশ্বকোষ' অভিধান রচনায় উৎসাহিত করেন এবং প্রচুর সহায়তা করেছিলেন। 'ওয়েলথ অব ইন্ডিয়া' নামক একটি পত্রিকা সম্পাদনায় সহায়তা করতেন তিনি। তাঁর রচিত বিখ্যাত কয়েকটি গ্রন্থ হল 'কঙ্কাবতী'(১৮৯২), 'ভূত ও মানুষ'(১৮৯৬), 'ফোকলা দিগম্বর'(১৯০০), 'মুক্তামালা'(১৯০১), 'ময়না কোথায়'(১৯০৪), 'মজার গল্প'(১৯০৫), 'পাপের পরিনাম'(১৯০৮), 'ডমরু-চরিত'(১৯২৩) ইত্যাদি। 'ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা'(১৯০৩) নামক একটি প্রবন্ধ সংকলনও তিনি লিখেছিলেন। A Handbook of Indian Products, A Descriptive Catalogue of Products, A List of Indian Economic Products নামক বই গুলি তিনি ভারতের দরিদ্র শিল্পীদের বাঁচানোর জন্য লিখেছিলেন যাতে বিদেশীরা এদেশীয় পন্য সম্বন্ধে জেনে কিনতে পারেন ও শিল্পীদের লাভ হয়। তিনি ভূতত্ত্ব, রসায়ন, জীবতত্ত্ব, নরতত্ত্ব, উদ্ভিদতত্ত্ব সহ নানা বিজ্ঞান শাখায় জ্ঞান লাভ করেছিলেন।
প্রথম জীবনের দরিদ্রতা কাটিয়ে শেষ জীবনে তিনি অর্থবান ও যশবান হয়েছিলেন সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায়। ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভ্রমণ করেছেন নানা দেশে। ১৯১৯ সালের ৩ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছেলেবেলা ৯১ পড়ে কুহেলী দাশগুপ্ত যা লিখলেন)
মৌসুমী ঘোষ সম্পাদিত" জ্বলদর্চি " ছেলেবেলা ৯১পড়লাম। উল্টোরথের বিশেষ সংখ্যা। সম্পাদকের কলমে বিষয় ভিত্তিক আলোকপাত মনোগ্রাহী। চিত্রগ্রাহক কল্যাণ সাহার তোলা সাজানো রথের ছবি দেখে নস্টালজিক হলাম। আমি ছেলেবেলায় একবার রথ টেনেছিলাম। আমাদের গ্রামের বাড়ি ডাবুয়ার কাছে জগন্নাথ হাট। ছোড়দি, নান্টু দাদু আর পল্টু দাদু সাথে কচিকাচারা। রথের রশি ধরে টান। ভীড়ের মাঝে ছোড়দি মানে বাবার পিসিমা আমায় আগলেছিলেন। বাংলাদেশে ছোটরা রথ সাজিয়ে বার হয় এমনটা দেখিনি। কলকাতায় এসে দেখেছি বাচ্চারা কি সুন্দর রথ সাজিয়ে বড়দের সাথে সামলে চলে!রথের ছোট্ট দেবতার সামনে ফুল, নকুলদানা ,বাতাসা। কেউ কাঁসর বাজায়, আবার কেউ ঘন্টা বাজিয়ে চলে। কখনো বৃষ্টিতে ভেজা রাস্তা। তাতেও বাচ্চাগুলো কি সুন্দর রথ টেনে চলে। বারান্দায় বসে দেখতাম। আমার দুই পিসতুতো ভাই রথ বানিয়ে সাজাতো। মনের মাঝে সেসব ছবিই জেগে উঠল। তৃষ্ণা বসাকের" জয়াবতীর জয়যাত্রা"য় গঙ্গার বুকে নৌকায় বসে পুণ্যির সুষ্ঠু তর্পণ করা দেখলাম।মেয়েমানুষের তর্পণ করার পক্ষে জয়াবতীর যুক্তি শুনে অবাক হই। পড়াশোনায় মন নেই যার, তার কত অকাট্য যুক্তি,বুদ্ধি!
"মা গঙ্গা তো মেয়েমানুষই ,তাই কি না" পুণ্যির তর্পণ করা জয়াবতীর না পসন্দ হলেও ,কেমন কথার মার প্যাঁচে পুরুত মশাইকে বাক রহিত করে সে।এমনি করেই সইয়ের পাশে থাকা। সোনা মুগের ডাল দিয়ে ঘি সমেত খিচুড়ি অমৃত যেন! আহা! আবার জয়াবতীর সাথে মনে মনে গঙ্গার ইলিশ মাছ ভাজার কথা ভেবে জিভে জল ভরে এলো।ডাকাতের কবল হতে পরিত্রাণ পাওয়া উমাশশীর ছড়া সাজানো দেখে মনে হয় ,ও যেন স্বভাবকবি! সেন মশাইয়ের উদ্যোগে আশা করি জয়াবতীর সাগরজল মানে উমাশশী হয়তো সুন্দর একটা জীবনে ফিরবে। এটা জানতে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। অসাধারণ জয়যাত্রার সঙ্গী হোক সবাই।
পৃথা নস্কর একটি খুব সুন্দর মৎস্য কন্যার ছবি এঁকেছে। ছবিটি অভিনব।
জলজ প্রাণীদের মাঝে ,সরীসৃপগুলো যেন মৎস্য কুমারীকে আগলে রেখেছে ! ভজন দত্তের "চড়কগাছে একদিন "পড়ে চড়কের মেলার স্মৃতি ফিরে পাই।হই হট্টগোল, ভীড়ে বাবা মায়ের হাত ধরে মেলায় যাওয়া। গরম জিলিপি, পাঁপড় ভাজা আহা! কত আনন্দ সেসব দিনে! সুরজিত সিং একটি ছোট্ট মিষ্টি কৃষ্ণ এঁকেছে। বংশীধারী যেন আপন মনে সুরে সুরে সাথীদের ডেকে চলেছে!
তারাপ্রসাদ সাঁতরার "বল কি হে" ছড়াটি বেশ মজার । ভানুপ্রিয়া মাহাতের "ইচ্ছে করে"ছড়াটি পড়ে আমার ও মন চায় হারিয়ে যেতে।
সৌগত রায়ের "ক্যাট -কাহন" পড়ে জানলাম পৃথিবীর ধনী বেড়ালের কথা। বেড়াল মিষ্টি স্বাদ বোঝেনা -এটা জানা ছিলনা। পেঁয়াজ, রসুন, আঙুর বেড়ালের জন্য ক্ষতিকারক। ফেলিসেট নামক প্রথম মহাকাশ যাত্রী বেড়ালের কথা জানলাম। মানুষের আঙুলের ছাপের মতো বেড়ালের নাকের ছাপ ও আলাদা হয়। ৩৮বছর বেঁচে থাকা অস্টিন নামক বেড়ালের কথা জানলাম।
স্মরণীয় কলমে পীযূষ প্রতিহার তুলে ধরেছেন বাংলার খ্যাতিমান কবি, নাট্যকার ও সংগীতস্রষ্টা দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের কথা। বাংলার মনীষীদের সম্পর্কে জানা, চেনা বর্তমান প্রজন্মের জন্য খুবই মূল্যবান সুযোগ। জ্বলদর্চি ছেলেবেলার সাথে ছোট ,বড় আমরা সকলেই অজানা কিছু জানতে পারি। আবার ছবি, ছড়া,গল্পের আমেজে আনন্দ ও ভাগ করে নিতে পারি।
আরও পড়ুন
0 Comments