একটি দীর্ঘ কবিতা
একটি বোকা মেয়ের আত্মকথা
বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
আমি তো ছিলাম/মা ও বাবার/একটি মাত্র/মেয়ে,
মানুষ হয়েছি/সাগর সমান/স্নেহ ভালোবাসা/পেয়ে।
খাগড়া শহরে/থাকতাম আমি/মুর্শিদাবাদ/জেলা
মফস্বলের/ছোটো এ শহর/সকলেই করে /হেলা।।
আদরিণী মেয়ে বড়ো তো হলাম ভর্তি হলাম স্কুলে,
কিশোরী বয়সে যৌবন এলো আমার দেহের কুলে।
সকলে বলতো আমি নাকি এক অতি সুন্দরী পরি,
যারাই দেখতো তারাই বলতো"এরূপ দেখেই মরি"।।
শ্রীমণ্ডিতা,সুডৌল তনু বেরোতাম বাড়ি হতে,
দুই চোখ ভরে সকলে দেখতো- সুদেহিনী দেহ স্রোতে,
আমার তখন কুতুহলে বেশি বুদ্ধি অনেক কম,
বুঝি নি এ কুঁড়ি ফুল্ল হয়েছে সুন্দর অনুপম ।।
এ র প রে
আমি তো ছিলাম অতি বোকা মেয়ে,
আমার কাহিনী শুনবে কি ?
ভাবছো হয়তো রোজকার কথা,
'এ কথা আবার শুনবো কি ?'
নাও যদি শোনো তবুও বলবো,
বেশি সময় আর নাই হাতে,
আমার কাহিনী শুনে যদি কারো,
চেতনাটা আসে সে কথাতে ।।
সতেরো বছর বয়স আমার,
বুদ্ধিতে মন পাকে নি তো ,
আকুল প্রেমের ডাকে সাড়া দিয়ে,
ভাবিনি ঘটবে এমন তো ।।
প্রেমিক আমার অতি পরিচিত,
আমারই সে সহপাঠী ছিলো,
প্রেম পিয়াসায় আকুল হয়ে সে যে
আমাকে ভিক্ষা চেয়েছিলো ।।
অন্তঃ সত্ত্বা হয়ে গেলাম আমি,
আমারই নিজের বোকামি তে,
কি করবো সেটা জানতে চাইলে,
থামালো আমাকে বকুনিতে ।।
ভয়েতে আকুল, বিহ্বল হয়ে,
গেলাম তো আরও দু তিনবার,
শেষেতে আমার ভাগ্যে জুটলো,
বকুনির সাথে বেদম মার ।।
অভিযোগ করে জানালো আমায়,
আমি নাকি এক স্বৈরিণী,
অবৈধ প্রেম অনেকেরই সাথে,
আমি নাকি এক দ্বিচারিণী ।।
কার সন্তান গর্ভে আমার-
কে জানে? সে আর দায়ী তো নয়
ভ্রষ্টাচারিণী আমিই এখন,
আমাকে এ দায় নিতেই হয়।।
কোনও পথই আর খোলা রইলো না,
এবার আমাকে যেতে হবে,
দুটি প্রাণ যাবে বিনষ্ট হয়ে,
দুজনে রবো না এই ভবে ।।
বাড়িতেই আছে কীটনাশক এক,
দু ফোঁটা খেলেই হবো তো শেষ,
মান সম্মান দুইই বাঁচবে,
মিটে যাবে ইহলোকের ক্লেশ ।।
যাবো তার আগে বলে যেতে চাই,
এটাই আমার শেষ কথা ।
এখনই তো বাক রোধ হয়ে যাবে,
মিটবে আমার সব ব্যথা ।
"আমার বয়সী যে মেয়েরা আছো,
শোনো গো আমার শেষ এই বাক,
থেকো না তোমরা বোকা হয়ে কেউ,
ঘটিও না যেন এই বিপাক ।।"
(সংবাদ পত্রের একটি সংবাদের ওপর ভিত্তি করে
এই auto biography টি রচিত হয়েছে। যখন লিখি
তখন বার বার আমার দুই চোখ জলে ভরে
উঠছিলো)
0 Comments