গুচ্ছ কবিতা
শুভশ্রী রায়
ভাঙাচোরা জীবন
খুচরো যাপন করি, ভাঙাচোরা অসম্পূর্ণ বসতিতে
কোনো মতে চব্বিশটা বেওকুফ ঘন্টা এঁটে যায়।
সমস্ত অসোয়াস্তি জড়ো হয়, ফের ছড়িয়ে পড়ে
সারা দিন ধরে অভাব আর ক্ষিদে আমাকে খায়।
তার মধ্যেই বেঁচে থাকা, তার মধ্যেই নিয়তিকে ঘাঁটা
কবিতার শরীরকে কলম ধীরে ধীরে গড়ে তোলে।
মায়া বড়, যদিও দু' চারটে পংক্তিই সম্বল এ জীবনে
তবু তফাত হয়ে যায় তাদের সঙ্গে দেখা না হলে।
প্যাপিরাস ও ভিক্ষা
বৃষ্টির কথা কী বলব আমি?
সেই তো টানা নিজের কথা বলে যায়।
রোদের কথাই বা বলি কী ভাবে
সকাল হ'লেই তো সে নিজের জিভ দিয়ে
পোড়াতে শুরু করে!
আকাশের কথা? সে তো নিজেই
ঝুঁকে আছে পৃথিবীর মুখের ওপর,
কত কথা বলছে মুহূর্তে মুহূর্তে,
মাটিকে দেখ, ভিতকথা হয়ে শান্তভাবে শুয়ে।
আর আমি এই সব কথা ও বার্তার মধ্যে থেকে
কিছু ভিক্ষা চাইছি, হাতের প্যাপিরাস বাড়িয়ে।
নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা
যে লোভনীয় চৌরাস্তায় নাগরিকগণ
সমস্ত ন্যায়নীতি ত্যাগ করেছেন
সেইখান থেকে হারিয়ে গেছে,
শেষ দেখার সময়ে স্মৃতি অনুযায়ী
পরণে ছিল আলোর জামা।
প্রতি দিন ধর্ষিত হওয়া
ও তারপরে মিডিয়ার সামনে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পাহাড়প্রমাণ যন্ত্রণা চোখেমুখে,
নারী না পুরুষ, অপ্রাসঙ্গিক;
বয়স সভ্যতার চেয়ে অনেক বেশী
নাম তার আত্মা।
অন্তিম বিচার
শেষের ভেতরে ন্যায়
আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে
তবে আমরা তাকে চাইনি অন্তিমে
চেয়েছিলাম খানিকটা হাঁটার পরেই,
পাইনি।
নিরাসক্ত ন্যায় শেষেই আসে
কেউ তাকে অভিশাপ দেয় কেউ ভালোবাসে,
তার কিছু আসে যায় না তবে
আমাদের অনেক তফাত হয়ে যায়।
কার অন্তিম কখন আসে তাও অস্পষ্ট,
তার ওপর আরো প্রশ্ন
একদম শেষে ন্যায় নিয়ে কী করব?
কখনো দূরে কখনো কাছে হৃদয়হীন আদালত
লোভী আইনজীবী পুষে পুষে স্ফীত হয়ে যায়।
চরিত্র
অপেক্ষা থাকে সময়ের খাঁজে,
শুধু অপেক্ষায় আছে
মস্ত ছুরি নম্রতার মধ্যে লুকনো
সুযোগ পেলেই পিঠে গেঁথে দেবে
তারপরে "ব্রুটাস তুমিও" নতুন করে!
কেন? সিজার তো সেই কবে বলে গেছে!
কাম্য তাপ
জীবনকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে গিয়েই
হাতে যদি তাপ লাগে অসহ্য তো লাগুক না
তাই বলে কী একই দৃষ্টিতে দেখব চিরকাল?
নতুনকে ছুঁতে গিয়ে মরণ হো'ক কন্ঠলগ্না।
0 Comments