ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৯৮
সম্পাদকীয়,
বর্ষাকালে ব্যাঙের ডাক শোনোনি এমন কেউ আছো নাকি? ব্যাঙের ডাক তো শুনেছো কিন্তু জানোকি, ব্যাঙের ডাককে এককথায় কি বলে? মক-মক। কি শুনেই হাসি পেল তো? আমি বলিনি কিন্তু। রাকেশ আঙ্কেলের তোলা প্রচ্ছদের ব্যাঙটা বলল। বর্ষাকালে ব্যাঙেরা শুধু ডাকেই না, গ্যাঙর গ্যাঙ করে এক ঘেয়ে আলাপ করে। আরে শুধু কি ব্যাঙ, তারাপ্রসাদ জেঠু বলল, শিয়ালেরাও নাকি সুরালাপ করে। হ্যাঁ গো। সেই গায়ক শিয়ালের নাম সুরদাস পন্ডিত। হাসি যে থামেই না। তবে তোমরা যে যাই বলো, আদৃতা কিন্তু খুব বুদ্ধিমান। বুদ্ধিমান বলেই না পাখি হতে চেয়েছিল। আদৃতা কে? পারমিতা আন্টির গল্প পড়লেই ওর সঙ্গে তোমাদের আলাপ হয়ে যাবে। আরে এ আলাপ মানে কিন্তু গানের আলাপ নয়। এই আলাপ মানে চেনা জানা। এই যে জয়াবতীর সঙ্গে তোমাদের কেমন আলাপ পরিচয় হয়ে গেছে বলো। এদিকে জয়াবতী তো সেই পালকি যুগের মেয়ে। তাও তৃষ্ণা আন্টি জয়াবতীর গল্প বলে বলে আমাদের চেনা জানা করিয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ গো গল্প। গল্প বলাও যায় আবার গল্প লেখাও হয়। যেমন অঙ্কিতের দাদু গল্প বলেন আর সেই গল্প লেখে অঙ্কিতের বন্ধু অনুষ্কা। কি গল্পে গল্পে হল কিনা নতুন বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ পরিচয়? পীযূষ আঙ্কেল এবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, বিশিষ্ট নাট্যকার শম্ভু মিত্রের সঙ্গে। গল্পে গল্পে আলাপ তো বেশ জমে উঠেছে, তাবলে কৃতিশা, প্রীতিলতা আর শুভঙ্করের আঁকা কেমন লাগল তা তোমরা জানাতে ভুল না। আর শোনো তোমরা তোমাদের সব সব ছোটো বন্ধুদের জানাতে ভুল না, শততম ছোটোবেলা এসে গেল। আর সেই আনন্দে আমরা উৎসবে মেতে উঠব। - মৌসুমী ঘোষ
ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
৩০ প র্ব
তৃষ্ণা বসাক
৩৪
জয়াবতী আসতে আসতে ভাবছিল সে তো একা যাচ্ছে না, চার চারটে মেয়ে, কোথায় থাকবে? তাদের তো ঘর মোটে দুটো। খুব বড় বড় হলেও। একটা ঘর আবার আরেকটা ঘরের লাগোয়া। নাহয় মেঝেতে ঢালাও বিছানা পেতেই শোবে। কিন্তু চার চারটে মেয়ে শুলে কত রাত অব্দি হাসি তামাশা চলবে। পিতাঠাকুর ভোরে ওঠেন, দুর্গাগতির ঘুম ভেঙ্গে যাবে , ছেলেমানুষ। এইসব সাতপাঁচ ভেবে ভেবে আসছিল সে। যদিও পুণ্যি কাল রাতে বলেছিল, ওদের তো পেল্লায় বাড়ি। বাড়িতে সন্তান বলতে একা সে। খুড়িমার কোন সন্তান হয়নি। পুণ্যি আর পুণ্যির মা, খুড়িমা আর খুড়োমশাই –এই চারজন অত বড় পুরীর এক কোণে পড়ে থাকে। কত ঘর তালা বন্ধ। দোতলার দক্ষিণ খোলা ঘরখানায় তারা থাকবে। তবু কথাটা ঠিক জয়াবতীর মনে ধরেনি। হাজার হোক পরের বাড়ি। এইসব ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকে সে অবাক হয়ে গেল। এ কি ভোজবাজি নাকি? যেখানটায় বসে সে কালি তৈরি করত, সেখানে এক মস্ত আটচালা ঘর। সে এসে কবরেজি করবে বলে বানিয়েছেন পিতাঠাকুর। এই ঘরেই দিব্যি থাকবে তারা। পুণ্যি শুধু রাত্তিরে মার কাছে গিয়ে শোবে। নইলে তার মার ভারি মন খারাপ হবে।
জয়াবতী প্রথমেই সেই ঘরে ছুটে যাচ্ছিল, কিন্তু মা বলল আগে স্নান করে দুটি খেয়ে তবেই তারা ও ঘরে যাবে। একটা নতুন মেয়েকে দেখা গেল চারজনের শাড়ি গামছা নিয়ে স্নানের ঘাটের দিকে চলেছে।তাদের নিজেদের পুকুর আছে। খিড়কির দরজা পেরিয়েই পুকুরঘাট। মা বলল ‘ওরে কালী, ধুঁধুলের জালি দিয়ে এদের বেশ করে গা ঘষে দিস, যা ধুলো মেখে এসেছে সব’
‘এ কি নতুন নাকি মা? এর নাম বুঝি কালী?’
‘তোদের দেখাশোনার জন্য রাক্লুম মাগো। না, না ওর নাম বিন্ধ্যবালা। মস্ত নাম কে ডাকে? গায়ের রঙ্গের জন্য ওকে সবাই কালী ডাকে , আমিও তাই ডাকি।‘
‘সেকি কতা! গায়ের রং কালো বলে কালী ডাকবে? এই যে ডাগর ডাগর চোক, টিকটিকে নাক, একঢাল কালো চুল- এসব বুজি কিচু না? ওর নাম আজ থেকে দিলুম কাঁচ পোকা। ওরে কাঁচপোকা, দেকি তুই কেমন পুকুরে ঝাঁপাই দিতে পারিস?’
পিতাঠাকুর পেছন থেকে বললেন ‘এত বেলায় আর ঝাঁপাই জুড়ে স্নান করো না মা। ঘাটের ওপর জল তুলে দিক। মাথাধুয়ে গা মুছে নিও। অবেলায় স্নান করলে অসুখ করবে’
‘আমরা যে বদ্যি তা ভুলে যাচ্ছেন নাকি জেঠামশায়?’ হিহি করে হেসে উঠল পুণ্যি। পুণ্যির মার দু চোখ ভরে গেল মেয়ের হাসি দেখে। শেষ কবে মেয়ে এভাবে হেসেছে কে জানে।মেয়ের হাসি দেখে তার চোখে আনন্দে জল এল। সেটা গোপন করতেই সে জয়াবতীর মাকে বলল ‘ও দিদি, মেয়েগুলো তেতেপুড়ে এসেছে, স্নান সেরে এখানেই দুমুঠো খেয়ে নিক। রোজ রাত করে আমার কাছেই খাবে। তোমার কোলের ছেলে, দুবেলা এত মানুষের ধকল তুমি নিতে পারবে না’
জয়াবতীর মা এ কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। ‘কী যে বলো দিদি, এত লোক কোথায়! মেয়েটা দশ মাস কাছে নেই, বুকটা খাঁ খাঁ করছে। তোমার যেমন আমারো তেমন ঘর খালি। পুণ্যিও তো আমার ঘরের মেয়ে। ওর নিরামিষ ভাত আমি আগেই নিয়মনিষ্ঠা করে করিয়ে রেকেছি। সঙ্গের মেয়েদুটো দেকেচ, কী ঠাকুর ঠাকুর মুখ । ওরাই হাতে হাতে দেকবে সব কাজ করে দেবে। আর খেয়ে ঘুমের কতা বলছ? আমার মেয়ে ঘুমুবে? তবেই হয়েছে। একুনি দেকবে বনেজঙ্গলে ঘুরতে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর একন তো আর সুবিধে। বদ্যি হয়েচে, বলে দিলেই হল, ওষুধপালার জন্য লতাপাতা খুঁজতে যাচ্ছি’
এইটা বলার সময় তার মুখে চোখে গর্ব ফুটে উঠল, আর তা দেখে ভারি ভাল লাগল পুণ্যির মার। তার মেয়েও তো বদ্যি হবে। কেউ আর বেধবা বলে দূর ছাই করতে পারবে না। দুয়ারে পালকি পাঠিয়ে দেবে বদ্যি ঠাকরুনকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। সে দিন খুব দূরে নেই।
এ বাড়ির উঠোন পেরুলেই ও বাড়ির দালান। সেদিকে যেতে যেতে পুণ্যির মা বলে গেল ‘যা বললুম দিদি, অন্য দিন কী হবে জানি না, আজ রাতে তোমরা সবাই আমাদের বাড়ি পাত পেড়ো কিন্তু। আমি পাঁচ ভাজা, কুমড়োর ছোকা, মোচার ঘণ্ট, লুচি আর ক্ষীর করব। আমার আমার ছোট জা ওর আঁশ হেঁসেল থেকে পাকা রুইয়ের কালিয়া আর চিংড়ির ডালনা দেবে।‘
‘বাব্বা, এত রান্না তোমরা দুই জায়ে করতে পারবে? তাছাড়া বাচ্চারা খাচ্ছে খাক, আমরা আবার কেন?’
‘আজ এতদিন পর ঘরের মেয়েরা ঘরে এল, সবাই মিলে একটু আনন্দ করব না? যাই, কটা পিঠে করারও ইচ্ছে আছে। এই কমাস তুমি তো জানোই, আমি তো প্রায় সেদ্ধ ভাত খেয়ে কাটিয়েছি। জা জোর জবরদস্তি করে নিরামিষ পদ রেঁধে রেঁধে দিত’
জয়াবতীর মা ভাবল কথাটা সত্যি।তারাও তো কোনরকমে ঝোল্ভাত খেয়ে কাটিয়েছে, রান্নি বেশি রান্না করলেই ওর পিতাঠাকুর রাগ করতেন। সারাদিনটা একরকম কাটলেও রাত আর কাটতে চাইত না। আরো কী কী ভাবছিলেন তিনি, তখুনি পেছন থেকে জয়াবতী এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরল, স্নান করে কাচা কাপড় পরে এসেছে সে, চুলগুলো পিঠের ওপর খোলা, চুল থেকে মাথা ঘষার কী সুন্দর বাস বেরচ্ছে। কী অপরূপ দেখতে হয়েছে তার মেয়ে, এই কমাসে যেন তার রূপ আরো খোলতাই হয়েছে। ততক্ষণে সবাই স্নান সেরে কাচা কাপড় পরে উঠোনে তাঁর কাছটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। জয়াবতীর মার মনে হল অবিকল চারটি ছোট ছোট দুগগা ঠাকুর। রূপে গুণে বিদ্যায় বুদ্ধিতে ঝলমল করছে। কই দেখে যাক তো জমিদার গিন্নি, টাকা আছে বলে তো তার খুব জাঁক। কত টাকা খরচ করে মায়ের পুজো করে, কিন্তু এই দরিদ্র পণ্ডিতের ঘরে যে জ্যান্ত দুর্গা উঠেছে।
তিনি জয়াবতীকে বলেন ‘ছাড় ছাড়, চল তোদের খেতে দিই। এতটা পথ এসেছিস, সবার মুখ শুকিয়ে গেছে একেবারে’
রান্নাঘরের দাওয়ায় খেতে বসল ওরা। জয়াবতী খেয়াল করল মা চারজনকে চারটে নতুন আসন দিয়েছেন। এগুলো মায়ের তোলা আসন, অতিথিদের জন্য তোলা থাকে। তাদের জন্য বার করেছে দেখে খুব আনন্দ হল তাদের। শুক্তো, কাঁচকলা ভাজা, নারকেলের বড়া, দুধ দিয়ে লাউ-র ঘণ্ট বড়ি ছড়ানো আর মাগুর মাছের ঝোল। জয়াবতী খেয়েই বুঝতে পারল এই রান্নাগুলোর বেশিই মায়ের হাতের করা। অমন শক্ত মন জয়াবতীর, তবু মায়ের রান্না খেতে গিয়ে তার চোখে জল আসছিল। সেটা ঢাকার জন্য সে পুণ্যিকে বলল ‘কাল ভোরে আবার আমরা সেই মন্দিরের পেছনে বনে যাব কেমন?’পুণ্যির আসন একটু দূরে। মাছের ঝল ছাড়া সে সবই খাচ্ছে, তার জন্যে শেষ পাতে আবার দুধ কলা। খেতে খেতে সে ঘাড় নাড়ল।
জয়াবতীর হঠাৎ কী যেন মনে পড়েছে, সে বলে উঠল ‘মা মধুদাদা আর কাহারদের খেতে দিয়েছ?’
‘তোকে অত জেঠামি করতে হবে না। তারা সব নাইতে গেছে। নেয়ে এলেই খেতে দেব। ওদের জন্য তোর পিতাঠাকুর নতুন গামছা আর ধুতি কিনে রেখেছেন’
আঁচিয়ে ওরা বড় দালানে মাদুর বিছিয়ে সবে বসতে যাবে, অমনি কে যেন উঠোনে ঢুকে এল। হারান। জমিদারের খাস হরকরা। এসেই বলল ‘জমিদার মশাই পত্তর দিয়েচেন। জয়াবতী ঠাকরুন আর পুণ্যি ঠাকরুনকে নিতে পালকি আসবে একটু পরেই। তাঁর মায়ের বড় অসুখ’
জ্যাবতী পুণ্যিকে বলল ‘দেখলি পুণ্যি, ঢেঁকি সগগে গিয়েও ধান ভানে’
তারপর হারানকে বলল ‘দুটো পালকি যেন পাটানো হয়। আমরা চারজন যাব’।(ক্রমশ)
সুরদাস
তারাপ্রসাদ সাঁতরা
শিয়ালের শিয়ালিটা
কখনো কি দেখেছ?
বিদঘুটে গানে তার
সুর খুঁজে পেয়েছ?
চাঁছাছোলা গলাখানা
গান ধরে হুক্কা
গান শুনে অন্যের
প্রাণে লাগে ধাক্কা।
সেই গান পাহাড়ের
ঘুম দেয় চটকে
গাছেদের পাতা পড়ে
আম পড়ে ফস্কে।
গান শুনে পাতিহাঁস
ভয় পেয়ে গর্জায়
কোন ফাঁকে এসে বেটা
কার ঘাড় মটকায়।
সারারাত ভয়ে থেকে
ভোরে ফোটে শেফালি
শুক পাখি রেগে বলে
পোড়ামুখো জ্বালালি।
সুরদাস পন্ডিত
শিয়ালের নামটা।
গান শুনে শিয়ালি
নাচ জুড়ে খেমটা।
ভুল
পারমিতা মন্ডল
"কী হয়েছে আদৃতা? চুপচাপ বসে আছ কেন? লেখ। দেখ, তোমার সব বন্ধুরা কী সুন্দর লিখছে। সময় তো চলে যাচ্ছে।" ম্যামের কথা শুনে একটু কুঁকড়ে যায় ক্লাস ফোরে পড়া নয় বছরের মেয়েটি।" চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। ওর বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মুখ দেখে অঙ্কের ম্যাম একটু অবাক হয়। অবাক হবারই কথা। আদৃতা একটু দুষ্টু বটে, কিন্তু পড়াশোনা করে মন দিয়ে। কয়েক দিন আগে ওর বন্ধু আরুশি একটা হোমওয়ার্ক করে নিয়ে আসেনি বলে ম্যাম একটু বকাবকি করেছিলেন। তারপর ম্যাম ক্লাস নিয়ে বেরিয়ে গেলে আদৃতা আরুশিকে বলেছিল, "এই জানিস, রোজ হোমওয়ার্ক করতে হয়। যে হোমওয়ার্ক করে না সে কিভাবে সুইজারল্যান্ড যাবে! আমি পড়াশোনা করে একটা মস্ত বড় চাকরি করবো। তারপর যখন আমার অনেক টাকা হবে আমি সুইজারল্যান্ড ঘুরতে যাব। মা আমাকে বলেছে, ভালো করে পড়লে সব কিছু করা যায়।" তো এই রকম চিন্তা যার মনে জায়গা করে নিয়েছে সেই কিনা আজ বসে আছে চুপচাপ! এতো সহজ অঙ্ক! এগুলো তো আদৃতা নিমেষে করে ফেলে। অঙ্ক ম্যাম তার এই রকম আচরণ দেখে অন্যান্য ম্যাডামদের জানায় কথাটা। কী জন্যে ভয় পেয়ে আছে আদৃতা? এই প্রশ্ন প্রিন্সিপাল ম্যামের কান অব্দি পৌঁছে যায়। যতই হোক ভালো, বড় স্কুল। প্রত্যেকটা বাচ্চার যত্ন নেয় সবাই। প্রিন্সিপাল ম্যাম বিষয়টা শুনে কল করে তার বাবা-মাকে।
"হ্যালো!"
"হ্যালো, আপনি কী সৌমিত রায়? আদৃতা রায়ের বাবা?"
"হ্যাঁ বলছি।"
"আমি ওর স্কুলের প্রিন্সিপাল ম্যাম। ওর ব্যাপারে একটু কথা ছিল। আপনি কী একবার স্কুলে আসতে পারবেন?"
"আচ্ছা, কিন্তু কী ব্যাপার ম্যাডাম?"
" আপনি আসুন, তারপর বলছি।"
"ঠিক আছে। আমি তো অফিসে আছি। যদিও অফিস স্কুলের কাছেই তবুও একটু সামলে যেতে দেরি হবে।"
" ঠিক আছে।"
কথাগুলো শুনে বেশ চিন্তায় পড়লেন সৌমিতবাবু। মেয়ে এমন কী করলো! মেয়ের মা তৃণাকেও ডেকে নিলো। অফিস থেকে বসকে বলে সৌমিত গেল স্কুলে। ওদিক থেকে তৃণাও এসেছে।
আদৃতার পরীক্ষা শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ আগেই কিন্তু ওকে ছাড়েনি। ও কেন ভয় পেয়ে আছে সেটা জানাটা জরুরী ওর মুখ থেকে। যদি বাবা-মা এলে কিছু বলে। প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে সৌমিত ও তৃণা ঢুকলো ঘরে। প্রিন্সিপাল ম্যাম বসতে বললেন। তারপর সব ঘটনা খুলে বললেন। জানালেন, আদৃতার প্রথম পরীক্ষাটা ভালোই হয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় পরীক্ষা থেকে ও কেমন একটা আচরণ করছে! একটু আধটু লেখে আর চুপচাপ বসে থাকে। জানালার দিকে তাকিয়ে গাছ , পাখি দেখে। এক ম্যামকে বলেছে, "আমি পাখি হতে চাই।" লিখতে বললে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। কথাগুলো শুনে তো সৌমিত ও তৃণা থ। আদৃতাকে প্রিন্সিপালের ঘরে নিয়ে আসা হয়। প্রিন্সিপাল ম্যাম আদৃতাকে জিজ্ঞেস করে,"কী হয়েছে আদৃতা? তুমি তো ভালো মেয়ে। তাহলে পরীক্ষার খাতায় লিখছ না কেন? আর তুমি পাখিই বা হতে চাও কেন? তুমি তো একটা মিষ্টি মেয়ে।" কোনো উত্তর না দিয়ে বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখ আরো শুকনো হয়ে যায় আদৃতার। ভয় যেন আরো গ্ৰাস করে নেয় ছোট্ট আদৃতার মন।
প্রিন্সিপাল ম্যাম কাছে ডেকে আবার জিজ্ঞেস করলে আদৃতা এবার কেঁদে কেঁদে বলে, "প্রথম দিন ইংলিশ পরীক্ষায় একটা ভুল হয়েছে। মাম্মা বাপিকে বলেছিলাম। ওরা বলেছে আমার দ্বারা কিছু হবে না। আমি সুইজারল্যান্ড কখনো যেতে পারবো না। আমাকে এতো টাকা খরচ করে এই স্কুলে আর পড়াবে না। পাখি হলে সব জায়গায় যেতে পারবো।" মেয়ের মুখে এই কথা শুনে সৌমিত ও তৃণা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। প্রিন্সিপাল ম্যাম একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে আদৃতাকে আরো কাছে টেনে বলেন, "তুমি সব পারবে। একটু ভুল হয়েছে তো কী হয়েছে। ভুল না করলে কী কেউ শেখে? ভুল করলে তবেই শোধরানো যায়, শেখা যায়। আর একটা কথা মন দিয়ে শোনো। কখনো পেছনের দিকে তাকাবে না। সব সময় তোমার চোখ থাকবে সামনের দিকে। মানে যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। আমাকে সামনেরগুলো ভালো করে করতে হবে, এটা ভাববে। বুঝতে পেরেছ?"
আলতো হাসি মুখে টেনে আদৃতা ঘাড় নাড়ায়। প্রিন্সিপাল ম্যাম আদৃতার বাবা মায়ের দিকে তাকালে তারা বলে ওঠে, "ভুল করেছি ম্যাম। মস্ত বড় ভুল! আমরাও শুধরে নেব।" প্রিন্সিপাল ম্যামের মুখে হাসির ঝিলিক। শুধু একটা কথাই শেষে বলেন, "উৎসাহ, শুধু উৎসাহ।"
কিছু সময়
অঙ্কিত ঘোষ
নবম শ্রেণী
সুখচর কর্মদক্ষ চন্দ্রচূড় বিদ্যায়তন
উত্তর ২৪ পরগণা
বাবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ছাদে বসে আছে। কতদিন হলো দাদু আসেনি।
ওর দাদু নিউমোনিয়ায় ভুগছিল, তাই মা বাবা হসপিটালে ভর্তি করে এসেছে দাদু কে। কাল আসবেন। কিন্তু বাবাই সেই তিনদিন ধরে গল্প শোনেনি। যদিও বাবাই একা নয়, ও আর ওর তিন বন্ধু শুভ্র,অনুষ্কা ও রিমি। অনুষ্কা খুব আদুরে, দাদুর কাছে বেশ আদর পায়।সবাই হিংসা করে,তবে তেমন কোনো গভীর হিংসা নয়। ওরা খুব ভাল বন্ধু।
যাই হোক আজ দাদু আসবে।বাবাই খুব উত্তেজিত। কিন্তু যা দেখল, দাদু সবে হাসপাতাল থেকে ফিরেছে সে ছুটে গিয়ে গল্প শোনার আবদার করে, কেমন আছে জিজ্ঞাসা করে।
বাবা বকে বলল - বাবাই, দাদু সবে ফিরেছেন একদিন বিশ্রাম নিতে দাও,তারপর এস।
বাবাই দমে গেল। রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করল যেন দাদু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ।
পরের দিন বাবাই যা দেখল, তাতে পুরো অবাক। সকাল বেলা দাদু একেবারে ফিট ইয়াং - ম্যান এর মতো জগিং এ বেরোচ্ছেন। দেখে বাবাই ঘুম ভুলে গিয়ে বলল - লেগে পড়ো দাদু, সাব্বাস !
শুনে মা,বাবা, দাদু, বাবাই সক্কলে হেসে উঠল।
বিকেলে অনুষ্কারা এসেছে বাবাই ও আছে গল্প শুনবে বলে।
গল্প শুনে সবাই বলল - দাদু বেশ গল্প বলতে পারোতো, তাহলে বই লিখলে ভালই হত।
দাদু হেসে বললেন - তা তোরা আমার গল্প শুনে লিখতেও তো পারিস। অনুষ্কা বলল - গ্রেট আইডিয়া দাদু।...
দাদু - হ্যাঁ তাহলে অনুষ্কা দিদিমণি তুমি লিখো, কেমন।
শুভ্র - আর আমাদের ভুলে গেলে দাদু!
দাদু - আরে পাগলা তোদের মাঝে থাকলে তো মনে হয় আমি সেই একুশ বছরের ছোকরা হয়ে গেছি।
বলেই সকলে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।
সবাই চলে গেল এবার বাবাই পড়তে বসবে। পড়তে পড়তে মা এসে চাউমিন দিয়ে গেল। কিন্তু পড়া শেষ করে সেটা খেল।
বাবাই ক্লাস সেভেনে। বড্ড ভালো ছেলে, কিন্তু এখনো দুষ্টুমি করে।শুভ্র, অনুষ্কা ও রিমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। সবাই দাদু কে খুব ভালোবাসে। দাদুও তাই। বাবাই এর ঠাকুমা নেই, চার বছর আগে স্ট্রোক হয়ে মারা যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হল। উঠেই দাদুর বকা শুনল-হতচ্ছাড়া এত দেরি করে উঠিস। তাড়াতাড়ি যা হাত মুখ ধো।জন্মদিনের দিন এত লেট ওঠা ছি-ছি-ছি। ও হ্যাঁ আজ তো বাবাই এর জন্মদিন সব ভুলে খেয়েছিস হতচ্ছাড়া।
বাবাই এর আজ একটু টেনশন আছে কেননা আজ ওদের রেজাল্ট। স্কুলে যাবে রেজাল্ট আনতে। আর এসে সন্ধে বেলায় দাদুর হাতে পায়েস খাবে কেক কাটবে কী মজা !
ভম ভম! স্কুলের বাস এসে গেছে, চিন্তিত মুখ নিয়ে বাবাইরা উঠল।স্কুলের বাসে আজ চুপচাপ ছিল।স্কুলে পৌছে যেই না রেজাল্ট পেল ওমনি কেদেঁ ফেলল আর বলছে - আ- আমি ফা-ফা-ফার্স্ট হয়েছি।
সবই দাদুর জন্য,দাদুই মনের বল জোটাতো।কত বড় উপহার সে পেল। বাসে অনুষ্কা বাবাই কে জড়িয়ে ধরে কনগ্রাচুলেশনশ বলল। আর বাবাই মনে মনে বলল - আরেকটা উপহার পেলাম হি হি হি।
বাড়ি পৌছেই বাড়ির সামনে অনেক ভিড় দেখল বাবাই। মনে হয় পাড়ার লোকেরা বাবাইকে শুভ জন্মদিন বলবে। কিন্তু সে পা বাড়াতেই কেমন একটা সন্দেহ হলো -- সবাই মাথা নিচু করে করে কেন?
একটু একটু করে ঘরে ঢুকছে সে।এমন সময় তার বুক টা জোরে ধড়াস করে উঠল - সামনে বাবা-মা দাঁড়িয়ে কাদছে আ- আ আর মাটি তে দাদুর দেহ যাতে গলা থেকে পা পর্যন্ত সাদা চাদরে ঢাকা।
তখনি বাবাই অজ্ঞান হয়ে যায়।রাতের দিকে তার জ্ঞান ফেরে সে তখন মায়ের কোলে মাথা রেখে।তারপর সে মাকে জিজ্ঞাসা করে - মা এসব কি করে হল?
তারপর সে জানল - মা যখন বাজার গিয়ে ছিল। বাবার জরুরি কাজ ছিল বলে মা বাজারে গেছিল। আর দাদু নাকি, সিড়ি থেকে পা হড়কে পড়ে মাথা ফেটে যায়। সারা ঘর রক্তে ভেসে গেছে,কিন্তু কেউ ছিল না।মা পরে এসে দেখে সব বলে। মা ক্ষমা চাইলো আর বলল - বাবাই এবারের জন্মদিন ভুলে যা সোনা,কিছু করার নেই।
কিন্তু বাবাই ভগবান কে তখন বলছে - হে ভগবান কত ভালো ভালো উপহার তো দিলে, কিন্তু সেরা উপহার টা.....
আর কিছু সময় যদি দাদু থাকত,তাহলে কী অসুবিধা হত।
স্মরণীয়
(শম্ভু মিত্র)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার
বাংলা তথা ভারতীয় থিয়েটারের অবিস্মরণীয় শিল্পী শম্ভু মিত্র। একাধারে তিনি নাট্য নির্মাতা, পরিচালক, আবৃত্তিকার ও চলচ্চিত্রাভিনেতা। কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলে ডোভার রোডের মামাবাড়িতে ১৯১৫ সালের ২২শে আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতা ছিলেন শরৎকুমার মিত্র ও মা ছিলেন শতদলবাসিনী দেবী। শম্ভু মিত্রের পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলী জেলার কলাছড়া গ্রাম। ১৯৩১ সালে বালিগঞ্জ গভর্ণমেন্ট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। এরপর কলেজের পাঠ শেষ না করেই বাবার সঙ্গে চলে যান ইলাহাবাদ। সেখানে থাকাকালীন লাইব্রেরীতে গিয়ে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, মনস্তত্ত্ব ও সমাজতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন। এরপর কলকাতা ফিরে এসে ১৯৩৯ সালে যোগ দেন রংমহল এর বানিজ্যিক নাটকে। পরে যোগ দেন মিনার্ভায়। আরও পরে নাট্যনিকেতনে 'কালিন্দী' নাটকে অভিনয় করে নজরে পড়েন নটসম্রাট শিশিরকুমার ভাদুড়ীর। পরবর্তীতে শিশিরকুমারের প্রযোজনায় 'আলমগীর' নাটকে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু নিজ চিন্তা ভাবনায় নতুনভাবে নাটক উপস্থাপন করতে স্বতন্ত্র একটি নাট্যঘরানা তৈরিতে উদ্যোগ নেন শম্ভু মিত্র।
১৯৪২ সালে তাঁর পরিচয় হয় ফ্যাসিবাদ বিরোধী 'অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন' এর শিল্পীদের সঙ্গে। ১৯৪৩ এ এই সংগঠন 'নতুনভাবে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ' হয়ে উঠলে তৎকালীন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পি. সি. জোশীর অনুপ্রেরণায় যোগ দেন এই সংগঠনে। গণনাট্য সংঘে থাকাকালীন শম্ভু মিত্রের উল্লেখযোগ্য নাট্য পরিচালনা হল 'জবানবন্দী' ও 'নবান্ন'। বিজন ভট্টাচার্য রচিত 'নবান্ন' নাটকটি শম্ভু মিত্রকে বিশেষ ভাবে চিনিয়ে দেয় তাঁর স্বতন্ত্র নাট্য ভাবনার কারণে। এটিই তাঁর পরিচালিত সবচেয়ে সফল নাটক। ১৯৪৮ সালে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের(শম্ভু মিত্র 'মহর্ষি' বলতেন) নেতৃত্বে বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠী গঠন করেন তিনি। ১৯৪৯-৭১ সাল পর্যন্ত বহুরূপীর প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথ, সফোক্লিস, হেনরিক ইবসেন, তুলসী লাহিড়ী সহ বহু খ্যাতিমান নাট্যকারের নাটক পরিচালনা করেন তিনি। ১৯৭০ সালে একটি আর্ট কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করে গঠন করেছিলেন বঙ্গীয় নাট্যমঞ্চ সমিতি। এই উদ্যোগ সফল করতে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় 'মুদ্রারাক্ষস' নাটকে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু তৎকালীন সরকারের অসহযোগিতা ও জমি না পাওয়ায় উদ্যোগটি সফল হয়নি।
১৯৭৬ সালে নাটক ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শম্ভু মিত্র ম্যাগসেসে পুরস্কার ও ভারত সরকার থেকে পদ্মভূষণ সম্মান পান। ১৯৭৭ সালে একবছরের জন্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। ১৯৭৮ সালে আকাদেমি অব ফাইন আর্টস এ শেষবারের মতো অভিনয় করেন 'দশচক্র' নাটকে। ঐ বছরই একই স্থানে 'চাঁদ বণিকের পালা' নাটকটি পাঠ করেন তিনি। ১৯৭৯ তে প্রায় দৃষ্টিহীন অবস্থায় নান্দীকার প্রযোজিত 'মুদ্রারাক্ষস' নাটকে সাড়া জাগানো অভিনয় করেন তিনি। ১৯৮০-৮১ সালে ফ্রিৎজ বেনেভিৎজের পরিচালনায় ক্যালকাটা রিপোর্টারির প্রযোজনায় 'গ্যালিলিওর জীবন' নাটকে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে নিজের প্রযোজনায় কন্যা শাঁওলি মিত্রের পরিচালিত 'নাথবতী অনাথবৎ' নাটকে অভিনয় করেন পিতা-পুত্রী একসঙ্গে। শাঁওলি মিত্রের পরবর্তী নাটক 'কথা অমৃতসমান' এও যুক্ত ছিলেন তিনি। কন্যার নাট্যসংস্থা পঞ্চম বৈদিক এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও আজীবন কর্মসমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯৮৫ সালে রবীন্দ্রসদনে পঞ্চম বৈদিকের প্রযোজনায় ও তাঁর পরিচালনায় 'দশচক্র' নাটকের পরপর পাঁচদিনে ছয়টি অভিনয় মঞ্চস্থ হয়। এটিই তাঁর জীবনের শেষ নাটক।
তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল 'নবান্ন', 'ছেঁড়া তার', 'পথিক', 'দশচক্র', 'চার অধ্যায়', 'রক্তকরবী', 'পুতুলখেলা', 'মুক্তধারা', 'কাঞ্চনরঙ্গ', 'বিসর্জন', 'রাজা অয়দিপাউস', 'বাকি ইতিহাস', 'বর্বর বাঁশি', 'পাগলা ঘোড়া', 'চোপ আদালত চলছে' ইত্যাদি। নাট্যকার হিসেবে রচনা করেছেন 'চাঁদ বণিকের পালা', 'উলুখাগড়া', 'বিভাব', 'ঘূর্ণি', 'কাঞ্চনরঙ্গ' ইত্যাদি কালজয়ী নাটক। এছাড়াও তিনি পাঁচটি ছোটগল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। দুটি একাঙ্ক নাটক রচনা করেছিলেন তিনি - 'গর্ভবতী বর্তমান' ও 'অতুলনীয় সংবাদ'। তাঁর রচিত 'কাকে বলে নাট্যকলা' ও 'প্রসঙ্গ:নাট্য' প্রবন্ধ গ্রন্থদুটি উল্লেখযোগ্য। তিনি হেনরিক ইবসেনের 'A Doll's House' ও 'An Enemy of the People' এর অনুবাদ করেছিলেন যথাক্রমে 'পুতুলখেলা' ও 'দশচক্র'। আবৃত্তিকার হিসেবেও শম্ভু মিত্র জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের লেখা 'মধুবংশীর গলি' কবিতাটি আবৃত্তি করে সাড়া ফেলেছিলেন। এছাড়াও 'রক্তকরবী', 'চার অধ্যায়', 'রাজা অয়দিপাউস', 'তাহার নামটি রঞ্জনা', 'ডাকঘর', 'চাঁদ বণিকের পালা' প্রভৃতি স্বকণ্ঠে রেকর্ড করেছিলেন তিনি। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি ও দিনান্তের প্রণাম তার প্রসিদ্ধ কবিতা আবৃত্তির রেকর্ড।
নাট্য পরিচালনার সূত্রেই পা রেখেছিলেন ছায়াছবির জগতে। তিনি খাজা আহমেদ আব্বাসের পরিচালনায় হিন্দি ছবি 'ধরতি কে লাল' এর সহপরিচালক ছিলেন। অভিনয় করেছেন 'মানিক', 'শুভবিবাহ', '৪২', 'কাঞ্চনরঙ্গ', 'পথিক' ও 'বউ ঠাকুরানীর হাট' এর মতো চলচ্চিত্রে। অমিত মিত্রের সঙ্গে 'একদিন রাত্রে' ও তার হিন্দি রিমেক 'জাগতে রহো' ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন। রাজ কপূর অভিনীত 'জাগতে রহো' ছবিটি 'গ্রাঁ পিঁ' সম্মানে ভূষিত হয়েছিল।
শম্ভু মিত্র সারাজীবন নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৫৬ সালে 'একদিন রাত্রে' ছবির জন্য 'ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড' ও ১৯৫৭ সালে 'জাগতে রহো' র জন্য 'ক্রিস্টাল গ্লোব' সম্মান পান তিনি। ১৯৬৬ সালে পেয়েছিলেন 'সঙ্গীত নাটক একাডেমী ফেলোশিপ'। ১৯৮২-৮৩ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার তাঁকে 'কালিদাস সম্মান' দিয়ে সম্মানিত করে। ১৯৮৩ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'দেশিকোত্তম' সম্মান পান তিনি। যাদবপুর ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি. লিট. পেয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৭ সালের ১৯ মে কলকাতার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
( ছোটোবেলা ৯৭ পড়ে রূপা চক্রবর্তী যা লিখলেন)
তৃষ্ণা বসাকের 'জয়াবতীর জয়যাত্রা " গল্পে পেরজাপতি নামটা মনোরম লেগেছে | ভগমানকে সৃষ্টি করেছে কে ? ভাবলাম তাতে যে গুহ্য কথাটি আছে তার হয়তো কিছু জানবো কিন্তু আমার মতো সে নিজেও যে বোঝেনি তা পড়ে খানিক হেসে নিলাম | গল্পের ছলে বিধবাদের ভিন্ন করে রাখার কুসংস্কারটি সুন্দরভাবে তিনি বলেছেন , উচিত - অনুচিত বেশ কিছু কথা উপযুক্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে মজার কথার মাঝে গল্পটিতে |
ছোট্ট সৃজিতা রায়ের ছোট্ট হাতের আঁকা খুব ভালো লাগলো | শ্রুজন বেরার আঁকাতে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া পেলাম |
"ফিরে দেখা বোটানিক্যাল গার্ডেন " - শ্ৰীছন্দা বোস বনভোজনের মোড়কে গার্ডেনের বিশেষত্ব বিষয়ে এবং তার সৌন্দর্য্য বর্ণনায় অনেক তথ্য দিয়েছেন | ২৭০ বছরের আশ্চর্য চোখের মণি বটবৃক্ষ আমার মনেও ছায়া ফেলে গেলো মনোগ্রাহী লেখাটিতে |
"টুকুর বন্ধু " পড়তে গিয়ে ভয়ংকর রোগের নামটা জেনে মনটা খারাপ হলেও পাউডারের কৌটোয় পোষা ভুত , বুলবুলি হওয়ার ইচ্ছে জেনে তার প্রতি ভাবনা বাড়িয়েছি ইচ্ছে পূরণ হোক এমন কামনায় | মায়ের প্রতি বাবার দুর্ব্যবহারে মনে নাড়ার সাথে পড়লো দীর্ঘশ্বাস | আমিও চাই ভূত ম্যাজিক ইরেজার দিয়ে তার সব কষ্ট দুঃখ মুছে দিক | শেষের দিকটা বেশ ভালো লাগলো সরিত| আহমেদের লেখাটি পড়ে |
" অহংকারের পতন" এ হিংসের ফল যে ভালো হয় না তার পরিণাম কি হতে পারে তা মিষ্টি একটা গল্পের মাঝে বুঝিয়েছেন রূপম সরকার |
বিদেশে আমরা অনেকেই যেতে পারিনি কিন্তু মলয় সরকারের " হিমবাহের ঘাড়ের উপর " পড়ার সময় মনে হয়েছে আমি যেন সেখানেই আছি | কত অজানাকে জানা সম্ভব হলো গল্পের ভেলায় চড়ে |
পীযুষ প্রতিহার -এর "স্মরণীয় " -তে রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনে ঋদ্ধ হলাম |
আরও পড়ুন
0 Comments