তিনটি কবিতা
অর্ণব মিত্র
মনে পড়ে
মনে পড়ে মেঘলা দিনে
বহুরুপা পুকুরের ধারে
সেই প্রাইমারী স্কুল,
বৃষ্টির দিনে
পুকুরের সবুজ জল
উপচে আসতো পাড়ে
আর
ঘুরে বেড়াত
মেঘের প্রতিবিম্ব
সারা দুপুর জুড়ে,
মনে পড়ে
পুকুরের ধার দিয়ে
ছায়া ঢাকা সেই নিবিড়
স্কুলে যাওয়ার ঢালু পথ,
কখনো বর্ষার জলে
ভেসে যেত সেই পথ ,
মনে পড়ে সেই পথে
ছোটো ছোটো পায়ে
বর্ষার জল ডিঙ্গিয়ে
স্কুলে যাওয়া
ও ফেরা,
মনে পড়ে স্কুলের টিফিনে
সেই শালপাতায় জড়ানো কাঁচা শসা,
গরম ঘুগনির গন্ধ,
মনে পড়ে কাঁচের জারে
রঙ্গিন চকলেট
আর
মনে পড়ে
স্কুলের ছুটির পরে পাওয়া
সেই নরম পাউরুটির গন্ধ,
মনে পড়ে,
বৃষ্টির দিনে-
ও মেঘলা সন্ধাবেলায়
স্কুল বাড়ির বন্ধ গেট,
ও
স্কুলমাঠের নির্জনতা।
মনে পড়ে স্কুলের মঞ্চে
সমবেত গান,
নাটকের উল্লাস,
রাংতার মুকুট,
ঝলমলে বস্ত্র,
বকাসুর-বধ,
সীতা-হরণ,
আর অনুষ্ঠানের শেষে
পুকুরপাড় ধরে
বাড়ি ফিরে যাওয়ার কোলাহল,
আর
মনে পড়ে
গ্রামের স্কুলের সামনে
তিরিশ বছর আগে
সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যেবেলা
একসাথে ছবি তোলার সময়
শেষ দেখা
মৌমিতা, শ্রাবন্তি,
ও
সরমা জানার মুখ।
ইঙ্গিত ক্লাবের গলি
মেঘলা দিনে
পেরিয়ে যাই
বৃষ্টি ভেজা পাড়া
ও
ইঙ্গিত ক্লাবের গলি,
চারিদিকে বাড়ি দিয়ে ঘেরা
ঢালু গলিপথে
চলে গেছে দূরে।
আজ বহুদিন পর
এসে দেখি
নিঝুম দুপুরের নির্জনতায়
পড়ে আছে
সেই কবেকার
ইঙ্গিত ক্লাবের গলি,
এই গলিতে ও এই মাঠে
আনাগোনা চলত দিনরাত,
কুয়োর ধারে
সেই বাদামী রঙের মাটি
ও সবুজ ঘাসের মাঠ।
এই মাঠে
খেলেছি কত,
সেইসব দিন ও
বন্ধুদের কোলাহল
যেন কানে আসে
আজও,
মনে পড়ে
তিরিশ বছর আগের
বিকেলগুলো,
আসেপাশে বাড়ির মাথায়
পড়েছে এসে
বিকেলের পাকা হলুদ রঙের আলো
মনে পড়ে
শরৎকালের সকাল
কুয়াশায় ভেজা ঘাস
দুর্গাপূজার প্যান্ডেল
ঝলমলে আলো ও
সেই সব হিন্দি গানের রেশ -
আজও ফিরে ফিরে আসে
স্মৃতির ভিতর,
সাইকেল এগিয়ে চলে
সেই সব কথা
বারবার
মনে আসে -
বাড়ি যাওয়া ভুলে
অনেক রাত অব্ধি
প্রতিদিন
এই মাঠে কাটানো সময় ।
মনে পড়ে
বন্ধুদের কথা ,
তাদের মুখ
চোখের সামনে ভাসে
তারা সব কোথায় আজ !
আনন্দ মনে হয় দিল্লিতে ,
অতনু ব্যঙ্গালোরে
আর শুভাশিস !
এই মাঠ,
এই পাড়া,
এই গলি থেকে
তারা আজ কোথায় -কত দূরে !।
তবু মনে হয়
বহুদূরে বসে
তারাও কি ভাবে
তিরিশ বছর আগের
সেইসব কথা ,
কোন এক নিভৃত সময়ে
যখন ফিরে তাকায়
তারা অতীতের দিকে
মনে পড়েনা
কিশোর বয়সের দিনগুলো
আর আজও
এমনি এক মেঘলা দিনে
বহুদূরে বসে
তাদের চোখের সামনে কি
ভেসে ওঠে
চারিদিকে বাড়ি দিয়ে ঘেরা
সবার চোখের থেকে দূরে
স্মৃতি বুকে নিয়ে
নির্জনতায় পড়ে থাকা
সেই কবেকার
ইঙ্গিত ক্লাবের গলি।
বিড়ালটা
(কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বিড়াল’ কবিতার অনুসরণে)
সারাদিন একটা বিড়ালের সাথে
ঘুরে ফিরে দেখা হয় আমার,
কখনো দেখি গলিতে
গাছের আলোছায়ায় মাঝে
ঝরে যাওয়া বাদামি পাতার উপর বসে আছে
বা ইউক্যালিপটাস গাছের গোড়ায়
নখ আঁচড়াচ্ছে নিজের মনে মগ্ন হয়ে,
আবার কখনো দেখি
পাঁচিল থেকে লাফ দিয়ে
গলি পেরিয়ে যাচ্ছে-
আর একটি বাড়ির দিকে
হয়ত এক টুকরো মাছের আশায়,
আর দেখেছি বারবার
সচকিত হয়ে তার ফিরে তাকানো ।
যাওয়া আসার পথে
একবার তাকে দেখি
আবার সে হারিয়ে যায় কোথায় !
সন্ধা হয়ে এল বামদিকের আকাশ
সূর্যের আলো
গাঢ়ও হলুদ হয়ে পড়েছে
বাড়িগুলোর মাথায়,
এরপর রাত্রি নামবে
আর অন্ধকারে মিশে যাবে
দরজা, জানলা, সিঁড়িঘর,
বাদামী ও সবুজ পাতা,
পাঁচিল , গলিপথ ও
বিড়ালটা।
পরের দিন আবার তাকে দেখব
পরিচিত এই গলিতে ঠিক,
রাত্রি এলে – অন্ধকার হলে
আবার সে হারিয়ে যাবে কোথায় !
চিত্র- অর্ণব মিত্র
2 Comments
Prothom duti kobita otiter Smriti-romonthon o ek ee dhoroner. Triteeyo kobita ti Jibsnande -r onusari holay o sekeeyota somponno, chomok achhe.
ReplyDeleteতৃতীয় কবিতাটি বেশী ভালো।
ReplyDelete