জ্বলদর্চি

এক গুচ্ছ কবিতা /শুভশ্রী রায়

এক গুচ্ছ কবিতা
শুভশ্রী রায়

সর্বনাশী

কোনটা বেশি এই জীবনে, পাপ অথবা পুণ্য?
আমি বলি, সবার আগে বিচার পাবেই শূন্য!
পাপের সাথে পুণ্য মিশেই গাঁথা মানব জীবন
কখনো শুদ্ধ ফের অপবিত্র দিকেও ঝোঁকে মন।
সবাই যাকে ভালো বলে সে খাপের মধ্যে আঁটা
অদৃশ্য এক খাঁচার ভেতর জন্মকর্ম এবং হাঁটা
বিশেষ করে মেয়ে মানুষ হয়ে জন্ম যদি নাও,
গোণার বাইরে চলাফেরায় কত বাধাই পাও!
যারা যুগে যুগে ঠিক করে সংজ্ঞা ভালো মেয়ের
তারাও কী ত্রূটিবিহীন, তাদের বিচার করে কে?
তাইতো আদর্শ এক নারী হয়ে বাঁচতে রাজী নই
জীবন নিজেই গড়ে নেব, মন্দ বলে গণ্যও বা হই,
কলম থেকে ঝরুক আগুন মুখের থেকে হাসি
পুরুষবাদী সমাজ হেঁকে বলুক "সর্বনাশী"।

 
প্রাণপূর্ণা

আমার জীবনকে কেউ নরক বানাবে, এত সহজ ভেব না
ভেতরের সমস্ত সবুজ কিছুতেই মরূর জঠরে দেব না
নরকে যদি বা পৌঁছতে হয় কখনো কারো কূট-জালে পড়ে
অসহনীয় উষ্ণতাকে নিজের মায়ায় নেব শীতল করে।


প্রাসাদ

এক সময়ে ছিল গমগমে প্রাসাদ
এখন কয়েকটা ইঁটের হাহাকার,
নিয়মিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে যায় হাওয়া,
"ঢুকব, কী ঢুকব না"
করেও এসে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে রশ্মির হাসি,
এখানে ওখানে পড়ে থাকে সুরার বোতল;
উৎসবের আগে পরে কন্ডোমের মোড়ক বেশি বেশি।

প্রাণের প্রাসাদের অবস্থা দেখতে
জ্যোৎস্নারাতে গলা জড়াজড়ি করে নেমে আসে দোর্দণ্ডপ্রতাপ এক শাসক ও তার প্রিয়তম মোসাহেব।

দুর্দশা দেখে বেদনার্ত প্রভু সহচরকে বলে-
"ওরে, সময়কে থামা,
ফের বসব উঁচু আসনে
অট্টালিকা ভরে যাবে শাসনে।"
সহচর বলে, "কী করে বসবেন হুজুর,
কোথায়ই বা প্রজা,
আমরাই তো অনস্তিত্ব সাগরে ভাসছি,
পরে আছি আলোর জামা!"


নৌকো

যেতে হবে দূরে, এই বিভ্রমবৃত্ত ছাড়িয়ে
আরেক অস্তিত্বে, ব্যবধান বলতে
জলের বিস্তার সুদীর্ঘ;
ওই পারে আমাকে নিয়ে যাবে
এক নৌকো মাঝিবিহীন,
রহস্যের সাম্রাজ্যকে ভয় নয় তবু!
শুধু সাহস রাখা বুকের ভেতর,
স্রোতস্বিনী যেন অবশেষে বুঝে যায়
তার চেয়েও গভীর আমি।


চেতনা

কী এক ঘোর লেগে আছে চোখে,
সংসার অস্পষ্ট হয়ে আসছে,
আঁশগন্ধে বমি  
মাথা তবু টেনে নিতে চাইছে সুসংবাদ 
আলো শুষে নিতে আগ্রহী চোখ,
ক্রমশ পুঞ্জিভূত হ'চ্ছে বোধবুদ্ধি;
যেন কপালের মধ্যে টিপ হয়ে ঢুকে পড়বে
ব্রহ্মান্ড, অসহ্য তেজ তার সহ্যের বাইরে
সামান্য এ আধারের, সব কিছু এ মুহূর্তের 
এরকম, অস্তিত্বের গোড়া ধরে টান মেরেছে 
কোনো এক মহাজাগতিক তরঙ্গ।
 
পেজে লাইক দিন👇

 

Post a Comment

0 Comments