জ্বলদর্চি

দৈত্যাকার ব্যাকটেরিয়া /নিশান চ্যাটার্জী

জীবনের গভীরে বিজ্ঞান-১৭

দৈত্যাকার ব্যাকটেরিয়া

নিশান চ্যাটার্জী


জীবজগত এতো বৃহত্তর ও বিচিত্র যে তার প্রত্যেকটি ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে রয়েছে রহস্য। এই সকল রহস্য কোনো অংশেই ফেলুদা বা ব্যোমকেশের রহস্যময়তার থেকে কম নয়। বিজ্ঞানীগণের বহু পরিশ্রমের ফসল হল আজকের বিশেষ জ্ঞান। কিন্তু রহস্যের ঘনঘটা এতোটাই বেশি যা এইসব কালজয়ী আবিষ্কারকেও অনেক সময় প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ সমগ্র তথ্যই এক এক সময়ে যুক্তিহীন হয়ে দাঁড়ায়। আজকের পর্বে সেরকমই একটি বিশেষ ঘটনা নিয়ে আলোচনা করবো। এতদিন ধরে আমরা জেনে এসেছি যে এই মহাবিশ্বে দুই ধরনের কোশের অস্তিত্ব রয়েছে। একটি হলো প্রোক্যারিওটিক বা আদিম প্রকৃতির কোশ এবং অন্যটি হলো ইউক্যারিওটিক বা উন্নত বৈশিষ্ট্য যুক্ত কোশ। এদের মধ্যে প্রোক্যারিওট প্রকৃতির যে সকল কোশের উদাহরণ আসে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাকটিরিয়া। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত একটি কোশ দ্বারাই তাদের যাবতীয় কার্যকলাপ চালিয়ে যায়।

 এছাড়াও ব্যাকটেরিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এরা অণুবীক্ষণিক। অর্থাৎ অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এদের দেখতে হয়। খালি চোখে এদের দেখা যায়না। কিন্তু ঐ যে বললাম বিজ্ঞানে চিরন্তন সত্য বলে কিছু হয়না কারন বিজ্ঞান হলো পরিবর্তনশীল। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে প্রকৃতিতে যারা খুব অসহনীয় পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। এদের বলা হয় "গামা প্রোটিও ব্যাকটেরিয়া"। এই পর্যন্ত তো ঠিকই আছে কিন্তু গোল বাঁধলো যখন জীব বিজ্ঞানী অলিভার গ্রোস ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যানগ্রোভে একবিশেষ ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান যা খালি চোখেই দৃশ্যমান। 

এই ব্যাকটেরিয়াটির আকার আমাদের চোখের পাতার ন্যায়। সাদা রঙের একটি সূত্রাকার গঠন তারা ম্যানগ্রোভের জলাশয়ে পাতার গায়ে আটকে থাকতে দেখেন। তবে প্রাথমিক দৃষ্টি তে তারা এটিকে ব্যাকটেরিয়া বলে ভাবতে পারেননি। বরং ছত্রাক বলেই ভুল করেছিলেন। পরবর্তীতে সেলভিনা রিজো নামের একজন গবেষক এদের ব্যাকটেরিয়া বলে অভিহিত করেন। ব্যাকটেরিয়া যে আণুবীক্ষনিক নাও হতে পারে এই ধারণা বিজ্ঞানের জগতে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ব্যাকটেরিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম হলো "থায়োমার্গারিটা"। এটি একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ হলো "সালফার মুক্তা"। এই নামকরণের কারণ হলো এদের একটি কোশের মধ্যে উপস্থিত কিছু সালফার কণার ওপর আলো বিচ্ছুরিত হলে তা মুক্তোর মতো দেখায়। এদের গঠন বৈচিত্র্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে এদের একটিমাত্র কোশ পাতলা পর্দা দ্বারা একাধিক প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। এককোশী জীবনের মধ্যে এই প্রকোষ্ঠের উপস্থিতি আধুনিক গবেষণায় একটি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। নামিবিয়াতেও এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে এবং গবেষণায় জানা গেছে এই ব্যাকটেরিয়া জলের মধ্যে দূষিত পদার্থ ও গ্যাস ধ্বংস করে জলের পরিবেশকে জলজ প্রাণীদের উপযুক্ত করে তোলে। যদিও কৃত্রিম পদ্ধতিতে এই কোশের পালন করা এখনো সম্ভব হয়নি। তবুও সেই সম্ভবনার কথাও বিজ্ঞানীরা উড়িয়ে দেননি। যদি তা সম্ভব হয় তাহলে এ বিশ্বে জীবনের অস্তিত্ব ও তার বিস্তার সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য জানা যাবে ও একই সঙ্গে। 

ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে যেসকল তথ্য এতো দিন জেনে এসেছি সকলেই তারও আমূল পরিবর্তন হবে যা আদতে বিজ্ঞানের অনেক নতুন দিক উন্মোচিত করবে যা রহস্যের জাল কে কিছুটা হলেও ভেদ করতে পারবে। রহস্যময় বিজ্ঞানের জগতে এই দৈত্যাকার ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হলো ঠিকই কিন্তু আমরা এখনো এটা  উদগ্রীব এটা জানার জন্য যে- বাহুবলীরা যেমন আমাদের জগতে রাজত্ব করে। এরাও কি ব্যাকটেরিয়ার জগতে সে রকমই রাজত্ব করে চলেছে? তা যদি হয় তাহলে বলতে হবে এই রাজা কিন্তু স্বৈরাচারী নয়।

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments