আষাঢ়ে গল্পের আল ধরে পর্ব দশ
তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য
আজীবন শিখি
আজ শিক্ষক দিবস আজন্ম কাল ধরে এই শব্দটির গুরুত্ব বা ভার অপরিসীম । অনেক পন্ডিত বা সবজান্তারা ঠাট্টা তামাশা করেন বটে।
আমার প্রশ্ন তারা নিজেরা বা তাদের ছেলেমেয়েরা স্কুল কলেজে যায়নি ? যেকোনো উৎসব অনুষ্ঠানের বিরোধী আমি নই ....থোড়বড়ি খাড়া জীবনে বিশেষ বিশেষ দিনে আমরা সকলেই ঝলমলিয়ে উঠি । আমি সব থেকে বেশি শিখেছি মায়ের কাছে তারপর নিজের জীবনের কাছে। এছাড়া জীবনে বহু গুণী শিক্ষা গুরু এবং বিখ্যাত নৃত্য গুরুদের পেয়েছি । তাঁরা আমায় যতটা দিয়েছেন বা এখনো দিয়ে চলেছেন আমি হয়তো তেমন ভাবে নিতে পারিনি। যেকোনো জিনিস শিখবার জন্য ধৈর্য্য অনুশীলন এর খুব প্রয়োজন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা হারিয়ে ফেলি। অনেক সময় অনেক বই অর্ধেক পড়ে ফেলেরাখি ..আবার অন্য বই পড়তে শুরু করি ।আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা বড়ই অদ্ভুত ...হয়তো আমার যা ভালো লাগে তা পড়তে পারব না ....ঐ ইস্কুলে গিয়ে যন্ত্রের মতো আমাকে পড়তে হবে । যদি আমি তড়িৎ এর মতো উজ্জ্বল ছাত্র /ছাত্রী না হই তবে শেষ বেঞ্চ আমার জন্যই রইলো।অথচ এই আমি ভালো নাচতে পারি গাইতে পারি বা আঁকতে পারি।
প্রথম বেঞ্চের ছাত্ররা তো আমার মতো পারেনা !
আমার কী খুব দরকার অঙ্ক ইতিহাস,ভূগোল সাতসতেরো জানার ? যত অঙ্কের শিক্ষক এ জীবনে দেখেছি সবাই কে আমার শত্রু মনে হতো কারণ সব বিষয়ে ভালো নম্বর পেতাম শুধু অঙ্ক বাদে। বিদ্যাসাগরের ছবি আঁকা যে লাল রঙের বর্ণপরিচয়। সুনীল মাস্টার পড়াতে আসার আগে বই টা লুকিয়ে ফেলতাম।কারণ ওতে নামতা যোগ বিয়োগ যত্তসব বাজে জিনিস আছে ,পড়তে বসলেই খুব ঢুলতাম।ওমনি সুনীল মাস্টারের কানমলা সেই কান অনেক ক্ষণ লাল থাকত। আমার ভালো লাগতো " রাম বনে ফুল পাড়ে গায়ে তার লাল শাল হাতে তার সাজি " আমি উঠোনে ফুল গাছ থেকে সাজিতে ফুল তুলতে পারতাম ,আমারও লাল জামা ছিল .....সবটা আমার সাথে মিলতো। "এ ঐ ওঔ ভাত আনো বড়ো বউ" বিধু গয়লানি মায়ে পোয় সকাল বেলা গরু দোয় আঙিনায় কানাই বলাই রাশি করে সরিষা করে কলাই" এসব মুখস্ত করতে বেশি সময় লাগতোনা । কিন্তু সমস্যা ঊনত্রিশ,ঊনচল্লিশ,ঊনপঞ্চাশ কিছুতেই মনে থাকতো না। আসলে রাস্তা তো সহজ হয়না গিঁট জট থাকবেই । তবে সেদিনের কথাটা মনে আছে অঙ্ক ক্লাসে পড়াচ্ছেন মঞ্জুরী ব্যানার্জী তিনি আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সমানের বেঞ্চে অ্যালজেব্রা বুঝিয়ে যাচ্ছেন আমি কখনো তাকাচ্ছি আর খাতায় যা করার তাই করছি হঠাৎ তিনি আমার দিকে এগিয়ে এসে খাতা টা কেড়ে নিলেন পুরো নিস্তব্ধ ক্লাস বললেন তোমরা দেখ কেমন কাব্য করছে মেয়ে।
এই যে রামধনু এঁকেছে আর মেঘ তার নিচে আবার কবিতা ! আমি যতচেষ্টা করছি মেয়েটা সব বিষয় এতো ভালো করে অঙ্ক টাই বা কেন পারবে না ? উনি কি না কাব্য করছেন? অনেক বকা ঝকা চললো ,মারেন নি বললেন এতো রোগা কোথায় আর মারবো? তারপর থেকে আমার বাড়ির কাজ (homework) আলাদা থাকতো।
বাড়িতে যদি কেউ আসতো
বাবা মা সবাই বলতো একটা নাচ কর একটা শ্যামা সঙ্গীত গাও দু একটা যা শিখেছিলাম সবেমাত্র সবাই খুব ভালো,দারুণ এসব বলতো ...মা বাবা বলতেন সবই ভালো তবে অঙ্কে খুব কাঁচা।যাইহোক এটা গার্জেন দের বলা উচিৎ নয় তাই অঙ্কটা আমার পাকলো না কোনো দিন । কিন্তু নাচ রীতিমতো ,গান ও শিখেছি আবার অল্প বয়সে বিয়ে করে সংসার মেয়ে মানুষ করা এগুলো কী
অঙ্ক নয় ? নিজেও জীবনে বহুদিন নাচ শিখিয়েছি তাছাড়া অনার্স এবং পাশ কোর্সের মেয়েদের দর্শন পড়িয়েছি।
এখনো সময় সুযোগ পেলে নাচ শেখাই নিজেকে কখনো শিক্ষক বলে দাবি করিনা .....আজীবন ছাত্রীই আছি। বহুদিন আগের ঘটনা দুর্গাপুরে মাছ ওলা মাছের ওজন বলেছে এক কেজি পঁচিশ গ্ৰাম এই এতো টাকা করে হলো মাছের কেজি। বান্ধবী টি তার বর কে বলছে হ্যাঁ গো এককেজির দাম তো জানি কিন্তু পঁচিশ গ্ৰামের দাম তাড়াতাড়ি বল ....সত্যি বাবা মাছ ওলা গুলোও কিন্তু একেক জন অঙ্কের পোক্ত শিক্ষক। দেখুন আমি নই শুধু এরকম অনেকের আছে অঙ্কের জ্ঞান। তাই ভেবেছিলাম আর যাইহোক এমন একজন কে বিয়ে করবো সে যেন অঙ্কটা ভালো জানে ।সে ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে।আর ইচ্ছে আমার বাচ্চাকে ঠিক ঠাক অঙ্ক শেখাবো সে ইচ্ছা ও ভগবান দারুণ ভাবে পূর্ণ করেছেন।
খুব ছোট বয়স থেকেই স্কুলের পত্রিকা দিয়ে কবিতা শুরু তারপর লিট্টল ম্যাগাজিন।বই করেছি বহু যুগ পরে। 1995 সালে কিছু লেখা একত্রিত করেও বই করতে পারিনি । তবুও লিখেগেছি যেমনই হোক মনেরও খিদে থাকে যেখানে ভালোবাসা অক্ষর হয়ে কথা বলে। পড়তে ভীষণ ভালোবাসি পড়াতে নয় ।বর্তমান সাহিত্য জগতে যাঁদের লেখা রোজ আমাকে সমৃদ্ধ করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তাঁরাই আমার শিক্ষক।
সর্বপোরি আমার জীবনই আমার শিক্ষক। আর সময় সবচেয়ে বড় শিক্ষক আপনাকে ঘাড় ধরে শিখিয়ে পড়িয়ে নেবে। এই যে করোনার সময় কতকিছু আমরা শিখলাম। ঠেকবেন এবং ঠকবেন তবেই শিখবেন। জোর করে কিছু শেখা যায়না কাজের প্রতি ভালোবাসা শ্রদ্ধা অবশ্যই থাকতে হবে। তবে যে কোনো ভালো অভ্যাস আমাদের কে শিক্ষিত করে তোলে।
আসল শিক্ষা মন এবং মননশীলতা বোধ।
আপনার মূল্যবোধ আপনাকে আলো দেখাবে।
পরিবার ভালো থাকলে পরিবেশ ভালো থাকবে।
আমরা শ্রম করব এবং শিখব। কষ্ট করে অর্জিত সাফল্যের একটা অপার আনন্দ আছে।
কষ্টার্জিত সাফল্যের নাম পূজা।
পবিত্র হৃদয়ের নাম প্রেম এবং শিক্ষা।
0 Comments