জ্বলদর্চি

ড. পরমেশ আচার্য ( অধ্যাপক, বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিশারদ, ডি লিট )/ভাস্করব্রত পতি

মেদিনীপুরের মানুষ রতন, পর্ব -- ১৯

ড. পরমেশ আচার্য ( অধ্যাপক, বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিশারদ, ডি লিট )

ভাস্করব্রত পতি


পেশায় অধ্যাপনা করা। নেশায় বাংলা সাহিত্য চর্চা করা। পারিবারিক সূত্রেই বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যের সাথে নিবিড় বন্ধন। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি তাঁর নিজ কর্ম গুণেই হয়ে উঠেছেন ‘মেদিনীপুরের মানুষ রতন'। তিনি অধ্যাপক পরমেশ আচার্য। প্রাচীন বাংলা পুথি নিয়ে তাঁর নিত্য গবেষণা।

ড. পরমেশ আচার্য বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েছেন। করেছেন পি এইচ ডি। এফ.আর.এ.এস (লন্ডন), ডি.লিটও তাঁর জিম্মায়। 'বাংলা সাহিত্য : সংস্কৃত সাহিত্যের ধারানুসরণ' বিষয়ে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট অর্জন করেছেন ড. সুব্রত কুমার পালের অধীনে। সাহিত্য সেবায় মিলেছে 'সাহিত্যাচার্য', 'সাহিত্যরত্ন' খেতাব। তিনি লিখেছেন "বিদ্যাসাগরের শকুন্তলা : বিচার ও বিশ্লেষণ', 'সাহিত্য অন্বেষা', 'ভাষা সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে মেদিনীপুরের সংস্কৃতচর্চা', 'পুথি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পাঠ, সম্পাদনা ও গবেষণা ( শ্রীচৈতন্যচরিত)' ইত্যাদি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুরে আদি বাড়ি। এখানকার মোহনপুর গ্রামের খ্যাতনামা এক সংস্কৃতসেবী পন্ডিত বংশে তাঁর জীবন যৌবন আবর্তিত। মোহনপুর হাইস্কুল, মহিষাদল রাজ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা। ১৯৮৭ সাল থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে অধ্যাপনা। বাংলা, সংস্কৃত, ওড়িয়া এবং অসমীয়া ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষ। কাব্য, প্রবন্ধ, গল্প, নাটক, উপন্যাস, লোকসাহিত্য, ভ্রমণসাহিত্য, তুলনামূলক সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে শতাধিক মৌলিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের রচয়িতা। আটটি মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। যেগুলি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত। এছাড়া বহু গ্রন্থের অংশবিশেষ রচনায় তাঁর মুন্সিয়ানা অনস্বিকার্য। কাকা কৃত্তিবাস আচার্য ছিলেন বারুইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দাদা অধ্যাপক হৃষিকেশ আচার্য ছিলেন কাদম্বিনী চতুষ্পাঠীর সর্বেসর্বা। এরকম পরিবারের সন্তান হিসেবে সাহিত্য চর্চা নিয়ে লেগে থাকবেন— এটাই স্বাভাবিক।

ড. পরমেশ আচার্য ইউ.জি.সি তথা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থানুকুল্যে তিনটি Minor এবং একটি Major Research Project নিয়ে বহুবিধ গবেষণা কাজের সঙ্গে যুক্ত। অধ্যাপক পরমেশ আচার্যর কাছেই রয়েছে ২০টি বিরল পুথি। এরমধ্যে ১৮টি তালপাতার এবং ২টি তুলোট কাগজের পুথি। পারিবারিক কাদম্বিনী চতুষ্পাঠীতে রয়েছে তুলোট কাগজের চিকিৎসা শাস্ত্রের পুথি, ২০০ বছরের প্রাচীন তুলোট কাগজের স্মৃতিশাস্ত্র, তালপাতার ব্যাকরণের পুথি এবং তালপাতার ওড়িয়া ভাষার তন্ত্রের পুথি। এসব পুথি গবেষনার ক্ষেত্রে অমূল্য সম্পদ। সংস্কৃত ও বাংলা এবং ওড়িয়া ও অসমীয়া ভাষার তুলনামূলক গবেষণা আর প্রাচীন তালপাতা ও তুলোট কাগজের পুথির পাঠোদ্ধার এবং সম্পাদনায় তিনি আজীবন নিমগ্ন। তাঁর তত্ত্বাবধানে দুজন গবেষক বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি লাভ করেছেন। 

তিনি চান তাঁদের সংগৃহীত পুথিগুলি রক্ষিত হোক। পুথির নির্যাস থেকে তিনি তুলে আনতে চান লুকিয়ে থাকা সাহিত্যকে। তাঁদেরই পারিবারিক ‘প্রসন্ন চতুষ্পাঠী'তে রয়েছে শতাধিক পুথি। সংস্কৃত চর্চার জন্য অধ্যাপক ত্র্যম্বক কুমার মিশ্র এখানে পড়িয়েই রাষ্ট্রপতি শংকরদয়াল শর্মার হাত থেকে পেয়েছেন সংস্কৃত চর্চার জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। মীরগোদার রানিসাইতে অবস্থিত চতুষ্পাঠীতে রয়েছে অমূল্য সম্পদ। মহামহোপাধ্যায় স্মৃতি তর্ক স্মৃতিতীর্থ নলিনীকান্ত মিশ্রও পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম-এর কাছে সাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। এখন রানিসাইতে থাকেন রামচন্দ্র মিশ্র। এখানে মিলবে পাঠ্য, স্মৃতি, ব্যাকরণ, কাব্য, ন্যায়, বেদান্ত-এর পুথি। এরকম পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত তিনি। তাই তিনি তাঁর সাহিত্যসেবাতে সবসময়ই স্থান দেন লুপ্তপ্রায় সাহিত্যকে। 

মেদিনীপুর জুড়ে নানা সভাসমিতি-সেমিনারে তিনি হন মুখ্য বক্তা। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়, বেলুড়মঠ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন পাঠন ও গবেষণার সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত। তিনি চান আবারও উজ্জীবিত হোক পুথি কেন্দ্রিক পাঠদান। এরাজ্যের চতুষ্পাঠীগুলি যাতে পুনরুজ্জীবিত হয় তার জন্য তাঁর ভাবনা নিরন্তর। এজন্য তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন লড়াই।


দুই মেদিনীপুরের যত টোল ও চতুষ্পাঠী রয়েছে সেগুলি কিরকম অবস্থায় রয়েছে, কি কি পুথি রয়েছে, সেখানে কি কি পড়ানো হয় ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন। সেইখানে বাংলা ভাষা চর্চার নানা দিক ফুটে ওঠে তাঁর লেখনীতে।

কলেজে প্রশাসনিক বিষয় দেখভাল করা কিংবা সাংসারিক বিষয়ে সুপথে চালিয়ে যাওয়া সবেতেই তিনি সোজা ভাবে হাঁটেন। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথেও রাখতে হয়েছে ভালো সম্পর্ক। কিন্তু সব কিছুর মূলে তাঁর 'রতন' হয়ে ওঠার কার্যক্রম। সেখানে তিনি একশো শতাংশ সফল।

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. অভিনন্দন পরমেশদা।আরো এগিয়ে যাও।এখন অখন্ড অবসর পেয়েছ।এবার সময়কে ধরে রেখো।ভালো থেকো।

    ReplyDelete