জ্বলদর্চি

চলার পথের দিনলিপি /তড়িৎ ভট্টাচার্য

চলার পথের দিনলিপি
তড়িৎ ভট্টাচার্য 


আজ সোমবার। ঘড়িতে ২-৩০মিনিট।আমি টিফিন খেয়ে এসে বিশ্বনাথ চ্যাটার্জীর চেয়ারটা নিয়ে দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসলাম। তপনের পেছনের যে জানালা, সেই জানালা দিয়ে সোজা চোখ এবং মন চলে গেল দক্ষিণ আকাশের অপূর্ব মেঘ স্তুপের ওপর। কি যে বিরাট শোভা আর কি অসাধারণ চলমান দৃশ্যের সৃষ্টি হচ্ছে তা বলার নয়। ধবধবে সাদা মেঘের পর মেঘ আর তার ওপর প্রখর সূর্যের আলো। মাঝে মাঝে নীল আকাশ ঘন নীল। এক অদৃশ্য আহ্বান। অনেক নীচে জলভরা আষাঢ়ের মেঘ তারও নীচে আবার আলোয় ভরা দিগন্ত। সব মিলিয়ে প্রকৃতির চিত্রপটে এক অনবদ্য চিত্র। আমি একমনে তাকিয়ে আছি আর দুচোখ দিয়ে এই শোভাকে একেবারে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝে কৃষ্ণাকে, তপনকে বলছি কি অপূর্ব শোভা দেখুন। কিন্তু ওদের দেখার সময় কোথায়। এই চলমান দৃশ্যপটের ওপর আবার ইতস্তত উড়ে বেড়াচ্ছে চিল শকুনের দল। এখানে থেকে ওদের ঠিক এক-একটা বিন্দুর মতো দেখাচ্ছে। সেও এক দৃশ্য। আষাঢ়ের ভরা আকাশের তলায় এই যে পৃথিবী , তার বাসিন্দা আমরা। কতটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু কজন এই অপূর্ব শোভা দেখছি।  বর্ষা এমনই ঋতু যে সময় যারা সারা সময় আকাশ জুড়ে অহরহ পরিবর্তন। এই জলভরা মেঘ তারপরই আবার রৌদ্রকরোজ্জ্বল আকাশ। কোথাওবা শ্লেট রং এর আকাশে ছলছল বর্ষার রূপ। কখনোবা ঝমঝমে বৃষ্টির পর খোলা নীল আকাশ।  আর যখন ঘন কালো মেঘ একটু একটু করে জমতে শুরু করে এবং পরিশেষে তা সারা আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে যে বিরাট শোভার সৃষ্টি করে তা বর্ণনার অতীত। এই মুহূর্তে আমি খোলা জানালা দিয়ে বাইরের এই বিরাট জগতের দিকে তাকিয়ে চলে গিয়েছিলাম মেঘের রাজ্যে-- যেন মেঘের রাজ্যে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কখনও মেঘের মধ্যে, কখনও মেঘের বাইরে। আমার সারা শরীরে আষাঢ়ের মেঘের গন্ধ।  এ এক এমন অনুভূতি যা কাউকে বোঝানো যায় না।আমার এমন হয়। আর হতো আর এক জনের, যার নাম 'বিভূতিভূষণ'। পথের কবি বিভূতিভূষণ। আমার একান্ত প্রিয় আপনজন।  আবার চারপাশ কেমন ছায়া ছায়া  মেঘলা হয়ে এসেছে। সকালে আজ প্রচণ্ড রোদ ছিল। মনেই হচ্ছিল না এটা বর্ষাকাল। দেখতে দেখতে দিনগুলো কেমন কেটে যাচ্ছে।  এইতো সেদিন আষাঢ় পড়লো।১লা আষাঢ়ের দিন খুব বৃষ্টি হলো। আমি দেবব্রত বিশ্বাসের গান বাজালাম বাড়িতে বসে। আর আজ ২৭ তারিখ। সময় কিভাবে কেটে যাচ্ছে বলার নেয়। বয়স বেড়ে যাচ্ছে। ৫২ পেরিয়ে ৫৩তে পড়লাম। এই Industry তে ঢুকেছিলাম ২২ বছর বয়সে। একদিন এখান থেকেও রিটায়ার্ড করে চলে যাবো। তারপর একদিন এই সুন্দর পৃথিবী থেকেও চলে যেতে হবে। যেমন আমার বাবা, ঠাকুর্দা, দাদামশাই চলে গিয়েছেন। মনটা মাঝে মাঝে খারাপ হয়। আবার মনে হয়, এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। স্নেহ প্রেম মমতা ভালোবাসা, স্ত্রী পুত্র পরিজন বন্ধু বান্ধব প্রিয়জন কেউই  চিরকালের জন্য নয়। এইতো এইমাত্র অশোক গাঙ্গুলি এসে বললো পতাকা তো নামায় নি-- অর্থাৎ রাজ্যপাল নুরুল হাসান Dying bed এ শুনছি  নাকি মারা গিয়েছেন। এই তো জীবন -মৃত্যু। কাউকে ছাড়ে না। ঘড়িতে এখন ৩-৩০মিনিট। একবার নিচে এল আই সি অফিস যেতে হবে।আজ এই অবধি।

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments