জ্বলদর্চি উৎসব ১৪২৯ || কবিতা
টাইম কল
অনিতা অগ্নিহোত্রী
কলে জল আসার সাইরেনে যে দেশে ভোর হয়
সীসের মত আকাশ থেকে খসে পড়লে চাঁদ
গা -পোড়ানো রোদের মধ্যে দিয়ে সেখানে আমি চলেছি নিজের কাছ থেকে দূরে
গাছ যদি শিকড় নিয়ে হাঁটতে পারত, হয়তো সে আমার গলায় বলত, মেঘ দাও।
গাছের পায়ে শেকল, তাই পোড়ে।
আগুন লাগা আঙুল তুলে সে মৃত্যুকালীন জবানবন্দী দিয়ে যায় শহর কে।
আমি তা পারবোনা।
চলে যাচ্ছি সেইজন্য, শরীর থেকে কষ্টের বাকল খুলে রেখে,
নিজের থেকে অনেক দূর,
আর পিছন ফিরে দেখছি নিজের ছায়াচ্ছন্ন বিষাদ।
আমারই মত তার অবয়ব।
সাইরেন বেজে গেছে কিন্তু জল আসেনি টাইম কলে,
এমন এক শুকনো খটখটে দিবাস্বপ্নের ভিতর কোমর পর্যন্ত ডুবিয়ে ,
সে দেখছে চাঁদ খসে পড়ছে সীসের মত আকাশ থেকে।
আর টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাচ্ছে মেঘরজনীর স্বপ্ন।
দিলীপ মহান্তী
ভূমি
কথার সমুদ্রে এক দ্বীপ জেগে ওঠে
দৃষ্টি নাচে ঢেউ-এর তরঙ্গ মাখা গায়ে
কতখানি নীল রং স্বপ্ন এনে দেয়
চপল ঠোঁটের মায়া আগুন গড়ায়...
ঘর
জ্যোৎস্না মেখে শিশুর জন্ম হয়
হাওয়া দিয়ে যায় চাদরের আঘ্রাণ
অন্ধকারে ঢাকা থাকে নগ্নতা
প্রতিটি দেওয়ালে ভোটের ভিক্ষা চাওয়া...
এস.মহীউদ্দিন
শ্বেত পাথর
শ্বেত পাথরের আড়ালে সাত রং রামধনু মেখে বসে আছো, পাখি ঠোঁট ভাষাগুলো
বৃক্ষ বাকলে জড়িয়ে আছে
প্রাচীন রাগের শব্দগুলো ঘরের মৌখিক গানে মেতে ওঠে
আমি ভ্রমণ স্বপ্ন মেখে চলে যাই
আমার ফেলে যাওয়া ছায়া শরীর দেওয়াল জুড়ে ব্যস্ত থাকে,
স্নেহময়ী আবেগ মায়া ফিরে যাচ্ছে ধ্বনি সর্বস্ব পথ দিয়ে
পৃথিবীর সব কথা কেউই মনে রাখে না, রাখতে পারে না।
আমাদের প্রতিদিন জন্মদিন আসে, প্রতিদিন মৃত্যুদিন;
আমি তোমার হৃদয়সমগ্র ব্যবধানে নীরব নতজানু বসে থাকি...
পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
হারজিত
আকাশকুসুম ভাবা আকাশের চৌখুপি ছেড়ে।
ভালোবাসা ভুলে গেছি ভাত-রুটি জোগানের জেরে।
তবুও তো ফুল ফোটে চাঁদ ভাঙে মায়া জ্যোৎস্নায়।
হৃদয়হীনেরা হারে হৃদয়েরা জাতে ওঠে তাই।
আপোষ
হৃদয়ে তোমার ছোঁয়া, ভাবনাতে বিরামহীনতা।
ঢেউ তাতে চুপিসারে অনুভবে খোঁজে নীরবতা।
আমি যদি হই তুমি, তুমি হও আমার নিয়তি।
আমার আপোষ শুধু সেই হেরে যাওয়াটার প্রতি
রাখহরি পাল
সত্য ও মিথ্যা
১.
মৃত্যুমুখর এই পৃথিবী জল ছড়া দেয় রবি
দখিন খোলা বারান্দা মন আঁকছে তবু ছবি
ছবির স্রোতে প্রবহমান একটি নদীর ধারা
দুই তীরে তার নুড়ি কাঁকর জমছে বাস্তুহারা।
২.
সন তারিখের হিসাবখানি পাতানো সংসার
নীরব যখন ব্যাপ্তি মুখর অসীম নিরাকার
স্মৃতির চিঠি হাতড়ে ফেরে পুরানো ডাকঘর
সত্য হল নদীর ধারা মিথ্যে বালির চর।
আবীর ভট্টাচার্য্য
অভীপ্সা
১.
থাকা এবং না থাকারও ব্যবধানের মাঝে
একটি দু’টি বন্ধু তবু আলোয় খুঁজে রাখি
হৃদয় খুঁড়ে বেদনগান অহর্নিশ-ই বাজে
স্বজন আমায় সে দুর্দিনেও দেয় না কভু ফাঁকি।
২.
রাত পেরোনো দ্বিধান্বয়ী সন্ন্যাসী যে আলো
হেঁটে বেড়ায় মায়াবিধুর ছায়াপথের ধারে
নাথবৎ এ জীবনজোড়া অনাথবৎ কালো
কেমন করে ধন্য করে মহতী নিরাকারে!...
গৌতম বাড়ই
অ্যাডেনিয়াম
বাগান টবে কি মিলমিশে অ্যাডেনিয়াম ফুল
যত্নের মাটি মরু গোলাপে উষ্ণ চুলের কাঁটায়
যেন তোমার হাতের চোয়ানো পয়োধি-ক্ষীর
আশ মিটিয়ে বাঁচবে পাথরে গভীর সুরেলায়---
এক এবং একক
শ্রীধর বড় হচ্ছিল, এই বড় হতে- হতে একদিন দেখলাম সে আমাদের ছাড়িয়ে ঐ দূরাকাশে উড়োজাহাজের উচ্চতা পেল। উড়লো প্রকৃত কৈ? শুধু আশপাশের সবাই ছোট হতে-হতে ক্রমে অদৃশ্য হয়ে গেল
সিদ্ধার্থ সাঁতরা
সময়
আজকাল সেভাবে আর ভাবি না কিছুই
পাতা ঝরে যায় ঝিঁঝিঁ পোকাদের কোলাহল খুব
ঋতুর মুখে আগুন ছায়ার মতো একাকী
সব ছাড়িয়ে জেগে আছে সময়ের অপাপবিদ্ধ মুখ...
সিনেমা
পুরনো দিনের মতো চলমান ছবি ঘরের ভেতর
গড়ে নেওয়া কতকিছু বাস্তবতার বিভ্রম এর ওর তাকে
উঠে আসে স্মৃতি খুব চেনা সময়ের আত্মকথা
ছোট ছোট মুহুর্তগুলি স্বপ্নের মতো ছুঁয়ে আছে আমাকে...
নরেন হালদার
সস্তা আলাপ
১.
গলির মোড়ে সস্তা ভোরে উষ্ণ আলাপন,
বস্তা ভরা আবেগগুলো আবেগী ক্রন্দন।
ঘুণধরা ওই মনগুলো সব নাচিয়ে হাতে পায়ে
এক বিকেলে হঠাৎ করে উড়ে গেল হাওয়ায়।
২.
এদিক ওদিক সপ্ত নিশীথ সপ্ত দিনের খেলা
মেঘগুলো সব কোথায় গেল পেয়ে নতুন ভেলা।
জীবনে যার তাল থাকে না, থাকে না শিহরণ,
গলির মোড়ে এমনি সূর্য ডুববে আজীবন।
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
উচ্চারণ
অনেক কথাই অনুচ্চারিত, গোপন ব্যথার মতো
বলা যায় না, বোধগম্য হয় কখনো-
আকাশে মেঘ আসে, মেঘভাঙা বৃষ্টি হয় --
ধুয়ে যায় সব— সূর্য উঠবে ব'লে।
পতন
উল্লম্ব পতনের শব্দে চমকে ওঠে চরাচর
লিপিবদ্ধ হয় কত আঘাত, অস্ফুট স্বর,
হিসাব থাকে না শুধু নীরব অবিশ্বাসের—
কান্না পাথর গলায়, মন তবু অনড়।
তুলসীদাস মাইতি
অন্ধকার
এখানে রাত্রিচর মানুষের গোপন পাঠশালা।
গাছেদের অতল ঘুমে শান দেওয়া
আঁচের অদৃশ্য উনুন।
আধ ছেঁড়া বিছানায় ভয় শুয়ে থাকে।
রাত্রি
এখানে সঞ্চিত অথবা ঋণ করা রংমশাল জ্বলে
সকাল হলে যে ছাই পড়ে থাকে তা দিয়েই
নক্ষত্র নদীর অদৃশ্য আত্মকথা ও
হারানো রৌদ্রমঙ্গল কাব্য লিখি।
তড়িৎ ভট্টাচার্য
১.
তোমরা কি কেউ বলতে পারো আমার প্রিয়া থাকে কোথায়
রক্ত রাঙা রঙে রাঙিয়ে ফুলটি গোলাপ ফোটে যেথায়
ওড়না দিয়ে ঢাকা মুখে সেই রঙেরই গুলবাহার
বেদুইনের কন্যা প্রিয়া আরব দেশে বাস তাহার
২.
আমাদের চলা শুরু হয়ে গেছে
কোন সে প্রাচীন কালে
স্বাক্ষর তার আছে ধরা ঐ
সপ্তর্ষির ডালে
প্রদীপ কুমার পাল
অঝোর বৃষ্টি
মেঘের ক্ষত মেঘের অন্ধকার
ঝোড়ো হাওয়ায় বৃষ্টিকে যায় চেনা
কাঁপা কাঁপা কষ্টটা যার, তার
লতাপাতার বাঁধন দিলেও এ ঝাঁট মানবে না।
বাজুক মাদল
বুকের ভেতর মাদল মাদল ঢেউ
অশ্রু বাঁধন মড়ক পথের বাঁকে
এমন উদাস দেমাকী মনটাকে
তরুণ নদীর মতই যেন ভালবাসুক কেউ।
স্মৃতি সাহা
বৃদ্ধ হলে
১.
বৃদ্ধ হলে অশেষ জ্বালা
কখন কি হয় যায় না বলা
শরীর হয় আনফিট
মেজাজ হয় খিটখিট
২.
অল্প কথায় ভীষণ রাগ
বাড়ে শুধু ভুলের ভাগ
থাকলে টাকা বড়ই আদর
নইলে কমে সব কদর
৩.
রাতে ঘুম যায় কমে
বকবকানি বাড়ে দমে
খাওয়া কমে বাড়ে লোভ
মনে জমে যত ক্ষোভ
৪.
ঘরে থাকলে ভীষণ বোঝা
বাইরে গেলে করে মজা
বৃদ্ধ হলে ওষুধ সাথী
কেউ হয় না সমব্যথী
প্রতাপ সিংহ
মানুষের জন্য
মানুষের জন্য বাড়ি বানালাম, ঘাট বানালাম --
উপরে ওঠার সিঁড়ি বানালাম
পাখা বানালাম, বর্ষাতি বানালাম, শীতবস্ত্র বানালাম,
তবু মানুষ কিছুতেই মানুষ হল না।
ছোটো পত্রিকার দুঃখ
ছোটো পত্রিকার দুঃখে রাত্রে
তোমার ভালো ঘুম হল না,
তাই কবিতাগুলো পানসে, গল্পগুলো রঙচটা লাগল
আর প্রবন্ধগুলোকে মনে হল বেয়ারা, বিদঘুটে!
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি
স্বপ্ন
যা গেছে তা যাক– এসো, স্বপ্ন নতুন গড়ি
ভালোবাসার আকাশতলে ভাসাই মিলন তরী।
প্রাণের মাঝে ফুটিয়ে তুলি নতুন আলোর ভোর
উদার হৃদয় উঠুক নেচে কাটুক দ্বন্দ্ব ঘোর।
পরিযায়ী
পরিযায়ী পাখিদের মতো মন আমার
ভেসে যায় সুদূরে-সাত সাগর পেরিয়ে
অনেক দূরে সাতপূর্ণির ঘাটে,
ওখানে রয়েছে আমার ভালোবাসা।
শম্ভুনাথ শাসমল
বিধ্বস্ত বিশ্বাস
কথা ছিল একসাথে পথ চলার
কিন্তু পথটা বদলে নিলে
নিরাপত্তার একটা বড়ো হাত
ভেঙে দিয়ে গেল বিশ্বাস
ঘরভাঙা পশু
প্রাণ বাঁচালেই জীবনটা দাবী করা যায় না
মানবতা ছাড়িয়ে স্বার্থপরতাই
তাহলে হিমালয় হয়ে উঠবে
নিজের ঘরটাও শেষ হবে একদিন।
স্বপন কুমার দে
দুঃসময়
১.
যদিও খুব শক্ত, তবুও বলি, আজ ভালো থেকো।
আলোক-দুর্ভেদ্য অন্ধকার-অতলে তলিয়ে যেও না।
পেশি শক্ত করো, পায়ের টিপ আরও মজবুত,
পথের বাধা তোমার হাওয়ায় যাক উড়ে।
২.
যোগ্যতমের উদ্বর্তন, শক্তিমানের জয়
মনের আলোয় পথের আঁধার ঢাকো।
নিজের হাতটা নিজেই ধরো চেপে
নিজের ওপর ভরসাটুকু রাখো।
শুভজিৎ মুখার্জী
যেভাবে বেঁচে আছি
১.
বাক-স্বাধীনতা আছে,
তবু, সবকিছু যায় না বলা ---
অলিখিত নিয়ম বাছে
দিশা, সমাজের পথ চলা !
২.
ধর্ম তো আসলে বিশ্বাসে!
ব্যক্তির ভাবনায় ভিন্ন ---
মানবতার ভুয়ো আশ্বাসে,
অনুভূতি হয় ছিন্ন।।
অনিন্দিতা শাসমল
পিঠ পুড়ে যায়
শরৎ এলেই কাশের মেলা রেললাইনের ধারে ,
ফ্রক পরা সেই মেয়েটির মন, যারে উড়ে যারে..
ছোট্ট মেয়ের বেড়ে ওঠা স্নেহের অন্তপুরে,
বড় হলেই পিঠ পুড়ে যায় ঝলসানো রোদ্দুরে !
মনের ভুলে
বৃষ্টিভেজা অলস দুপুরে একলা শুয়ে খুব মন খারাপ করছিল বলে, গত হেমন্তে আমাদের শেষ একসাথে সাগরে বেড়াতে যাওয়ার ছবিগুলো আপনমনে দেখতে দেখতে; কয়েকটা পাঠিয়েছিলাম মনের ভুলে।
ডিলিট করে দিও প্লিজ।
সুমিত্রা ঘোষ
মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা
১.
বিশ্ব জুড়ে যায় রে শোনা
কল্পনা চাওলার নাম
সোনার ভারত হরিয়ানা রাজ্যে
কারনালে তাঁর ধাম।
২
ছোটোবেলায় স্বপ্ন ছিল
বৈমানিক হওয়া
মহাকাশচারী যানে চড়ে
মহাশূন্যে পাড়ি দেওয়া।
সুব্রত দাস
সময়ের কথা
১.
মিথ্যার আশ্রয়ে আর কতকাল!
সত্য মিথ্যাকে যায় কি মাখানো,
বাহুবলে অর্থবলে যায় না ঢাকা
ইতিহাস কি পড়নি কখনো?
২.
জলন্ত আগুনের নীচে আছে সব
এতো লোভ কেন সম্পদের প্রতি,
নিশ্চিত মরণ জেনেও জীবনটাকে
অকারণে দাও কেন আহুতি!
রাজর্ষি রায়
সুরলোক
১.
ধর্ম কিংবা মানুষ নিয়ে
চলছে ব্যবসা রমরমিয়ে
এদেশ তোমার-আমার বলে
হাত-পা ছোড় বেহাগ সুরে।
২.
এ যে বাজিগরের খেলা রে ভাই !
রাম রহিমের খেলা,
দিদি কিংবা দাদুর হাতে
চলছে হোলি-খেলা।
শ্যামলশুভা ভঞ্জ পণ্ডিত
অধোগতি
নামছি। নেমেই চলেছি। অবিরাম।
গভীর থেকে গভীরতর অন্ধকারে
কিংবা তল থেকে অতলের খোঁজে।
অনাবৃত দুটি চোখ ঢেকে নেব বলে।
ফেরা
ফিরতে চাইলেই কি ফেরা যায় !
ডানায় ক্লান্তি মেখে তবু ফিরে আসে
পাখিদের দল। রাত নামে দিগন্ত রেখায়
আসলে ফিরতে চাইলেই ফেরা যায়।
নারায়ণ প্রসাদ জানা
পথ ও শশী
১.
সেদিন রাতে তুমি চাঁদ দেখেছিলে
ঠিক চাঁদ নয়; চাঁদের মতো
নির্মল মুখ; ভেসে উঠেছিল
তোমার হৃদয় সরসী মাঝে।
২.
পথ জানে পথের শেষ কোথায় ?
পথিক জানে হাঁটতে হয় কোনদিক,
শশীর আলোয় রাঙা সরণখানি
তবুও আমি হারিয়ে ফেলি পথ।
বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
অসুখ
সুখ না থাকার অসুখে ভুগছো কত দিন ধরে তুমি,
মনে করো সদা এ বিশ্ব শুধু ধু ধু এক মরুভূমি ।
কতো ডাক্তার ফেল মেরে গেলো চলে গেলো তারা ঘুরে,
সাঁই এসে যেই দাঁড়ালেন পাশে অসুখ পালালো দূরে ।
সুখ
সুখ যেন এক মধু শুক পাখি দূর হতে শোনায় গান,
যে গান শুনতে আকুল হয় সবে প্রসারিত করে কান ।
অনেকেই ভাবে খাঁচায় বাঁধবে এই সুখ পাখিটিকে,
ধরা তো দেয় না সোনা সুখ পাখি পালায় সে কোন দিকে।
রূপক কুমার হাতী
সম্মোহন
১.
রেশন থেকে মর্গ কিংবা শিক্ষা থেকে সার্কাস --
সর্বত্র লাইন, কখনও নিজের তো কখনও
প্রিয়জনের জন্য।
আমৃত্যু লাইন দেওয়ায় কোনো ছেদ পড়ে না।
২.
আসলে লাইনে থাকা মানেই সুযোগে থাকা।
জীবন এই অভ্যাসে সম্মোহিত, তাই প্রতিবাদহীন,
প্রতিকারহীন ব্যবস্থার পায়ে মাথা ঠুকে বলে ----
'দাদা আমি লাইনে আছি'।
শ্রীচেতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কালচক্র
বিধুর সময় এসে হাত পাতে
ভিখিরির মত। প্রব্রজ্যা তবে
আজ পলাতকা হবে? উপেক্ষা
আকাশেরও সীমানা ছাড়াবে?
তা কি করে হয়?
জীবনের চাবিকাঠি গচ্ছিত রাখে
অহং সময়, এতকাল তাই জানা
ছিল তবে হিসেবে দানের ভুল
কেন দেওয়া তুচ্ছ মানুষ?
হেরে যেতে শেখেনি সেনানী
তাই বিদায় সম্ভাষণে মোছ
সব বিম্বিত রাগ। সময়ই ফিরিয়ে
দেবে অপ্রাপ্য অনুভূতি, শুধু
স্মৃতি বিজড়িত থেকো আজন্ম
সতত।
অমর সাহা
মৃত্যু
উঁচু শালবৃক্ষের পতন হয় ঝড়ে
মানুষের লোভ, ঘৃৃৃৃণা, ক্রোধ জমা হয়
মিথ্যাচারী মিথ্যাবাদী মানুষ দশ বছর আগে
যারা ছিল; তারাও মৃত্যুমুখে পতিত।
ত্যাগ
ত্যাগ মায়াময় জগতের এক
অবিচ্ছেদ্য রূপ ৷ ভোগ তা নয়
ত্যাগী জীবনের প্রতি নির্বাক নয়: সবাক
ভোগী জীবনের প্রতি সবাক নয়: নির্বাক ৷
রীতা দেব (বেরা)
অলীক
মুদ্রিত চোখ মেলে দেখো --
হাজার ঘোড় সওয়ারীর দৌড়ে এক পদাতিকও আছে
যার পায়ের তলায় দলিত হয়নি কোনও তৃণ
যার গতিতে পরাস্ত হয়েছে কেবল অহং ।
ইচ্ছে
আমি চাইনি মমতাজ হতে,
তাজমহল হয়ে হাজার উৎসুক চোখের আকর্ষণ হতে
আমি চেয়েছিলাম ---
শাজাহানের প্রিয় বেগম হতে
উদয়ন চন্দ্র
আমার আমি
১.
তোমার জন্য আমার কলম- ছোটে একা একা
বর্তমানকে দেখে দেখে— ভবিষ্যতের লেখা।
সন্তানের পিছুটানে —অসমাপ্ত জীবনের গানে
লিখে চলি আমার মনে।
২.
ভাবি- আমার লেখনীর অস্ত্রের ভার—
দেবো কারে-? চাই খুঁজিবার।
দেখো! সবার চোখে ভাসবে আমার লেখা
যখন, আমি যাবো — তুমি থাকবে একা।
সুভাষ জানা
ভালোবাসা
মনের মধ্যে রাধা আছে, আমি
পরকীয়া করি বিলক্ষণ
ভালোবাসাটুকু জেগে আছে,
তাই ভালোবাসি সবে অনুক্ষণ।
রাজনীতির রাজপুত্তুর
বয়েস টয়েস কত হল, আর
লেখা পড়া ঘটে কতদূর!
দ্যাখ সই তুই, আমি শুধু চাই
রাজনীতি করা রাজপুত্তুর।
পুষ্পেন্দু বিকাশ বাগ
এবং আমি
১.
অনেকগুলো তুমি যুক্ত হয়ে
যখন আস্ত একটা আমি সৃষ্টি হই
বুঝতে পারি, কোনটা তুমি
আর কোনটা অর্বাচীন আমি।
২.
আলো আঁধারের খেলায়
মৃত্যুর আলপনা এঁকে
আমি এবং আমার ইচ্ছেপূরণ
আস্ত একটা পরকীয়া হাইফেন।
বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী
মুখোশ
আমরা যে মুখোশ'গুলো পরে থাকি
সেগুলো আড়াল করে রাখে আমাদের স্নিগ্ধ চোখ;
এভাবেই বোধহয় ঢেকে রাখি আমাদের
স্তাবকতার দলিল—চাপা দিয়ে রাখি আমাদের
ক্ষত- বিক্ষত অন্তঃকরণ।
অতি চালাকির এই বিশাল দুনিয়ায়
শুধুই চোখের জল আর দীর্ঘশ্বাসের উদযাপন।
কখনও সাহস করে কাউকে ডেকে দ্যাখাতে পারি না
আমাদের গ্লানি- ক্লেদ- দ্বেষ আর স্তিমিত হয়ে যাওয়া হাসি।
বিভাস মণ্ডল
সময়ের অপেক্ষায়
পারোতো ধার করে নিও সময়টা ---
সেবার যখন চাইতে গেলাম এক ফালি সবুজ
রোদ বৃষ্টি বাতাস হয়ে জুড়াবে প্রাণ
দাওনি তুমি সময় করে সহযোগিতার হাত ।
চক্রবৎ
সত্যকে আঁকড়ে থেকেও মাঝে মধ্যে মিথ্যেকেও সমঝে নিতে হয়
কেন না ভগবানকে বাঁধা পড়তে হয় সম্পর্কের বাঁধনে মাটির পৃথিবীতে
দিবা নিশি দুঃখ-সুখ ধনী-দরিদ্র এ সব চক্রবৎ
কচি সূর্যের মিষ্টি আলোয় প্রমাদ হয় ক্ষয়।
বিপুল কুমার দে
পদযাত্রা
১.
সারি সারি পায়ের জঙ্গল,
মাথার উপর রঙিন পতাকা আকাশ।
হঠাৎ এক অদ্ভুত শব্দ,
পিচের মতো কালো ধোঁয়ার মেঘ।
২.
নিকড়ানো কান্নার বৃষ্টি,
ছড়িয়ে আছে মৃত শবের হাত-পা, ঢুঁকরে ঢু্ঁকরে কাঁদছে মা,
আমার সন্তান?
অরিজিৎ ভট্টাচার্য
শিরোনামহীন
১.
গভীর কালো মেঘ চতুর্দিক
শবের সামিয়ানা টাঙিয়ে
কারা যেন উত্তাল নদী পেরোয়
আমার স্থির দৃষ্টি বাস্তবিক চেয়ে থাকা।
২.
অক্ষিচেরা সীমন্ত ঘিরে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত
রঙিন খাম ঝলসে যাওয়া অভিজ্ঞতা
ফেলে আসা ক্লাসরুম ছুঁয়ে যাওয়া ঠোঁট
দু- দশক অতিক্রান্ত।
অরুণ দাস
কারো কাছে যা নিছক মজাই... কারো কাছে তা মৃত্যুই
ডানা আঁকি অস্থায়ী নৌকোয়
মোহনার টান
টুকরো আকাশ
আদর চাইলেই অন্ধকার ৷
নিঃসঙ্গ বাসায় ওড়ে,
পা-হীন চোখ ৷
শীর্ণরোদ
শরীর ভেজে লীন হরিণের খোঁজে।
পাশ ফিরলে ফিরলে মরা নদী,
শব্দহীন গাছের রোদ ৷
মাছরাঙার মতো তুমিও,
আলতো শূন্য মাখো ডানায় ৷
এই যে চেয়ে থাকা,
নিশ্চুপ গাছ
আসলে উজাড় বুক
নিঃসঙ্গ যা, অতীতও ৷
তাপস কুমার দত্ত
নিস্তব্ধতা
তখন, সবে বৃষ্টি ছুঁয়েছি, বাড়িয়েছে হাত নীল সীমান্ত
রামধনু তোমায় রাঙিয়েছে, আকাশ ছাড়িয়ে
অবাক দৃষ্টি পথ হারিয়ে বসন্ত খোঁজে, অদৃশ্য আলোকে
শূন্যতায় হারিয়ে যায় তোমার চলে যাওয়ার নিস্তব্ধতা।
একা হাঁটছি সপ্তর্ষি মণ্ডলের ঠিকানায়
নির্জতার অন্ধকারে তোমার অবয়বের প্রতিধ্বনি
বারংবার পথভ্রষ্টের দোলনায় আন্দোলিত করে
ফিরে ফিরে আসে নবজন্মের পূর্বাভাস।
বিবাগী বসন্ত হাত বাড়ায় অজানার ঠিকানায়
মুহূর্তে রচনা হয় তোমার ফেলে যাওয়া ইতিহাস।
বিকাশ দে
জীবন অভিধান
হৃদয়ের সূক্ষ্ম অনুভূতি বিষাদের সুরে নীরবতা ভাঙে।
একটা নির্ঘুম রাতের গায়ে
হৃদয় পাথরের মতো উবু হয়ে থাকে। একগুচ্ছ বেলি ফুলের মালা তোমার খোঁপায়,
হাতে দু গোছা রেসমি চুড়ি,
সময় থমকে দাঁড়ায় তোমার কাছে। জীবন শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয়,
সুখের উল্লাসও নয়..
জীবন হঠাৎ ভেঙে যাওয়া এক স্বপ্ন, যে অনায়াসে এগিয়ে চলে। ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমার দুঃখ মেঘে ধোয়া প্রেম, আমার অস্তিত্বকে। জীবন রঙ্গমঞ্চ ভেসে যায় গল্পের সমুদ্রে। বন্ধু তুমি রামধনু রং,বাকিটা.... অনাকাঙ্ক্ষিতের অভিধানে।
2 Comments
পড়লাম কবিতাগুলো। ভালো লাগল।
ReplyDelete👍👍👍
ReplyDelete