তিনটি কবিতা
গৌতম বাড়ই
কবিতা-১
ম্যাজিসিয়ান
আজকাল যে শূন্যতার ভিতর বাস করি
হয়ত তুমিও সেই শূন্যতায় প্রহর গোনো
যে ভাষা পেয়েছিলাম আমি
তুমিও পেয়েছ সেইভাষা
তবুও কেন
দ্বিখণ্ডিত হল আমাদের চিন্তা চেতনা ভাবনা
কেন পথ গেল পাল্টে
তারচেয়ে ভালো শোনো ম্যাজিসিয়ানের গল্প
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে চেয়ার এগিয়ে দিতেই
লোকটি আমূল বদলে গেল
প্রথমেই পাল্টালো চোখের ভাষা
এই ভাষাতেই প্রথমে সন্মোহিত হয় সকলে
তারপর পোশাকের রঙ
দেহের বর্ণে এলো রামধনু
আগুন ঝরছে মুখে
এত আগুন তো চাইনি ম্যাজিসিয়ানের
আমরা পুড়ছি হু হু এই অনলে
সেই ম্যাজিসিয়ানটা বলছে--
আমাদের কণিষ্ক মুন্ডুকাটা
আমাদের হর্ষবর্ধন দানধ্যান করেন
আমরা গাভীর পেছনে চরি অনবরত
আরও কঠিন সেই অজগরব্রত
ম্যাজিসিয়ানটা এখনও চেয়ার ছেড়ে উঠে বসেনি
শেষ খেলাটা দেখাবে বলে
তার পায়ের কাছে বসে কিছু বাঘ
কবুতররা রুমালের মতন নরম তুলতুলে
গ্রীবা তুলে বসে
সহকারী বারবার ঘোষণা করছেন--
আজকের এই ভয়ংকর খেলা দেখতে হলে
দর্শকদের ভয়ানক রকমের চুপ করে থাকতে হবে
কারণ
এই খেলার শেষে হয় ম্যাজিসিয়ান বাঘের পেটে
কিংবা বাঘগুলি বেড়াল হয়ে যাবে
ঘোষণার শেষে চারিদিক বিভিন্ন রঙের
আলোর খেলায় মেতে উঠল
ম্যাজিসিয়ানের রামধনু রঙ ঢেকে গেল
সূচপতনের নিঃশব্দতা
খেলা শুরুর পর
কবুতররা বকম বকম করে উঠলো
হঠাৎ সেই বিশ্বস্ত চেয়ার
ম্যাজিসিয়ানকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো
বাঘের মুখে
এখন সেই মঞ্চে হালুম করে দু-চারটি
বাঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে
দর্শকরা হাততালি দিলেন খুব জোরে-জোরে
ম্যাজিসিয়ান যাদুলাঠি নাড়তে নাড়তে
ছায়াপথ ধরে বর্ণহীন নিরুদ্দেশ হলেন
তারপর
চেয়ার অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার ছাড়লো
এ যাবৎকালের সমস্ত খেলার আসল কারিগর
আমি একমাত্র আমি
ম্যাজিসিয়ানরা পাল্টে যায় বারবার
সহজ মানুষের কাব্যকথা এবং দিনলিপি
বাবা গ্রামে থাকেন। আমি থাকি নগরে। সেটাও ভিনরাজ্যে। বাবা হতভাগা এবং অভ্যস্ত। দারিদ্র্য গায়ে মেখে সামান্য শাক- ভাত আর সামান্য চাষবাস নিয়ে বেঁচে আছেন। আমার একমুঠো স্বপ্ন আর বাবার স্বপ্নছাড়া জীবন। আমাদের এই জীবনের মাঝে মা একটি করুণরসের ধারা। বাবা তার তোবড়ানো গালে অনিশ্চিতের হাত বোলাতে থাকেন। আর আমাদের পঞ্চায়েত ঝড়- বৃষ্টি- মেঘ করে এলে গ্রামের লোকেদের দিকে হাসি-হাসি মুখ করে বলেন, "বুঝলে গো তোমরা, ভয়ানক এক ঝড় আসছে। আমার দোতলা বাড়ির ছাদ আর স্কুলের পাকা বিল্ডিং সাতদিন থাকা-খাওয়া ফ্রি তোমাদের।"
ঝড় আসে, বাবা আরও নিঃস্ব হয়। আমি আরও আঁকড়ে ধরি ভিনরাজ্য, বেঁচে থাকবার জন্য। মায়ের কোলটি নড়বড় করে। আমাদের গ্রামে দেখবার মতন একটি মাত্র জিনিস হয়েছে ব্রিটিশ যুগের পরে--- আমাদের পঞ্চায়েতের প্রাসাদোপম বাড়ি।
আগুন যখন বুকের ভেতর জ্বলে
তখন ফাগুন এনে লাভ কী?
বিষণ্ণ যখন মন
মেঘ করেছে বলিস
একটি দুটি ফুলকি উঠছে ফুটে আকাশে
আগুন নেভে হা-কপালের বাতাসে ?
আগুন যখন বুকের ভেতর জ্বলে
মৃত্যু তখন শিয়র ছুঁয়ে যায়
পুরো আকাশ জুড়ে হাসে চাঁদ আর তারায়
হাড়ির ভেতর ভাত
আমরা বাড়িয়ে রেখেছি দু-হাত
তাই
এখন রাস্তাও জলভাত
ব্রহ্ম সত্য জীবন সত্য আর সত্য কী !
কুরুক্ষেত্র ধ্রুবসত্য তার উপরে কী?
2 Comments
কবির সচেতনতা
ReplyDeleteকবিতার সচেতনতা
স্পষ্ট অক্ষরে
- রাজদীপ ভট্টাচার্য
দারুন লিখেছেন কবি।
ReplyDelete