জ্বলদর্চি

তিনটি কবিতা /স্বপন কুমার দে

তিনটি কবিতা 
স্বপন কুমার দে

এখনো দুঃশাসন
      

মহাভারতের দ্যূতসভা,
প্রকাশ্য লাম্পট্যের এক ঘৃণিত অধ্যায়।
নারীদেহ কামনার এক নির্লজ্জ নগ্নতা।
ক্ষমতার আস্ফালনে
কৌরবের পাপাচারের গরল উদ্গীরণ।
পদানত গুরু,পিতা,পিতামহ
বলবীর্যহীন, নপুংসক, মৃতপ্রায়।
কৌশলে হস্তগত পাণ্ডবের রাজ্য।
অতএব, ---এই তো সময়---
এখন তো পাণ্ডবজায়া দ্রৌপদী
বিজয়ীর লুণ্ঠিত সম্পত্তি।
পরাভূত, ক্রীতদাস পাণ্ডুপুত্রগণ
অস্ত্রহীন,নতজানু,অসহায়।
নির্লজ্জ অট্টহাস্যে মুখরিত
কৌরবের রাজ্সভা।

প্রকাশ্য সভায়,---
চুলের মুঠি ধরে
দ্রৌপদীকে নিয়ে আসা হল।
দুঃশাসনের পায়ের তলায়
লুণ্ঠিতা,অপমানিতা পাঞ্চালি।
দুই বিকৃত কামনার কামার্ত পুরুষ,
সামনে এক অসহায়া যুবতী।
উপস্থিত সভাজন,--
কেউ বা লজ্জায় নতশির
কেউ বা উপভোগে মগ্ন ।

লালসা ভরা দু'জোড়া চোখ
যুবতীর সর্বাঙ্গ লেহন করছে।
ইঙ্গিতে,ইশারায়, অট্টহাস্যে
ভয়ংকর সভাস্থল।
পাণ্ডবেরা হতবাক
বুঝতে পারছে না --
কী ঘটতে চলেছে ?
দুর্যোধন আহ্বান করছে দ্রৌপদীকে
তার ঊরুদেশে বসার জন্য।
ভীম হঠাৎ নিজের জঙ্ঘাতে আঘাত করলেন।
দুর্যোধন প্রকাশ্যে আদেশ করল দুঃশাসনকে
দ্রৌপদীকে নগ্ন করার জন্য।
দুঃশাসনের নোংরা হাত
স্পর্শ করল দ্রৌপদীর শাড়ি।
ক্ষাত্রতেজ জ্বলে উঠতে চাইল পাণ্ডবদের --
দেহের সমস্ত পেশী শক্ত হয়ে উঠল,
উত্তপ্ত রক্ত প্রবাহিত হল আগ্নেয়গিরির মতো,
অর্জুনের হাত এগিয়ে গেল গাণ্ডীবের দিকে,
ভীম প্রচণ্ড হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন,
নকল,সহদেব আস্ফালন করলেন।
শুধুমাত্র চুপ করে বসে থাকলেন
নতমস্তক অপরাধী,অসহায় যুধিষ্ঠির--
সত্যের সেবক--কৌরবের দাস।
অসহায়া দ্রৌপদী --
কৃষ্ণের কৌশলে
চরম অপমানের হাত থেকে রক্ষা পেলেন।

দুঃশাসনেরা এখনো মরেনি।
এখনো তারা রক্ত বীজের বংশের মতো
ছড়িয়ে রয়েছে এখানে-ওখানে
পথে,ঘাটে ,ট্রেনে,বাসে
পুবে, পশ্চিমে ,উত্তরে,দক্ষিণে ।
নির্জন পথে অথবা গলির অন্ধকারে
ওৎ পেতে রয়েছে
হিংস্র হায়নার মতো।
তাদের রক্তে মায়ের অস্তিত্ব নেই।
দয়ামায়াহীন মাংসলোভী ,বুনো কুকুরের দল।

কেন হয় না প্রতিবাদ?
সভ্য সমাজ কেন থাকে নির্বাক ?
তাই তো ধর্ষকেরা আজও বেপরোয়া ।
গ্রাম থেকে শহরে
তাদের উন্মত্ত উল্লাস ।
প্রতিবাদ চাই ,প্রতিবাদ।
গ্রাম, গঞ্জ, শহর ,মফস্বল-সর্বত্র ।
প্রতিবাদের ঢেউ উঠুক
পুবে ,পশ্চিমে ,উত্তরে,দক্ষিণে
ভীষণ একটা গর্জন উঠুক ,
যেমন হয়েছিল দিল্লির রাজপথে
নির্ভয়ার সুবিচার চেয়ে।
ভেঙে যাক ধর্ষকের মেরুদন্ড ,
গুঁড়িয়ে যাক আশ্রয় এবং প্রশ্রয়ের ছাদ।
জেগে উঠুন আইনের রক্ষকেরা,
অনুভব করুন রাজশক্তি।
ঝড় উঠুক, কারণ-
দুঃশাসনেরা আজও জীবিত।



পাশাপাশি
     
হাজার লোকের ভিড়ে
আমি চিনতে পারি তোমায়
একটি চেনা ডাকে ।
ঝড়ের মাঝেও দাঁড়িয়ে একা
শক্ত করে ধরতে পারি হাত
যদি ভরসাটুকু থাকে ।

তুমি যখন পথ চলতে গিয়ে
মুখ ফিরিয়ে থাকো,
পথে হারিয়ে যাওয়ার ভয়_
তখন আমার দৃষ্টি কেবল
দু'টি চোখের ওপর,
পথের শেষে দেখব তোমার জয়।

তোমার চোখের পাতা যখন ভেজা,
অনেক দুঃখ-সহন আঁখি যখন খোঁজে
একটু শান্তি,নীরবতা, আরাম_
আমার সকল শান্তি ,নির্মলতা
তোমায় ঢেলে দিয়ে ,তখন
আবার ফিরে এলাম।



 মাতৃভূমি

এ আমার দেশ-
সোনালি স্বপ্নের দেশ। 
এখানে রামধনু আঁকা ছায়াপথ 
স্বপ্নের আলপনা আঁকে।

উদীচীর পথে আকাশ উন্নত গিরিশির, 
অবশিষ্ট নীল পরিখার বেড়া সমুদ্রের। 
আসমুদ্র হিমাচল নত হয় যার নামে
সে আমার মাতৃভূমি ভারতবর্ষ। 

আমার শরীর রোমাঞ্চিত হয় 
তার ত্যাগে, বীরত্বে,গৌরবে। 
আমার বিস্ময়, বিবিধের সুর নিয়ে 
এক অখণ্ড সত্তা,ভারতবর্ষ। 

দারুণ দুঃসময়ে--
রহিমের চাচা হাত বাড়িয়ে দেয় 
নীলেশের বাবার দিকে।
এ ভারতবর্ষকে তোমরা চেনো কি?

চলো না,সবাই মিলে হাঁটি,
শপথের গর্জনে, কিংবা 
ব্যথাতুর মনে শান্তির প্রলেপ। 
এসো না সকলে ,সকালের রোদ গায়ে মাখি।

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

3 Comments

  1. সুন্দর। তিনটি কবিতাই। 🌹

    ReplyDelete
  2. পড়লাম তিনটি কবিতা, খুব বাস্তবিক লেখনী Sir, ভালো লাগলো 👌👌👌

    ReplyDelete