জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১১

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১১
সম্পাদকীয়,
পৌষ-মাঘ শীতকাল - স্কুলে শীতকাল অনুচ্ছেদ লিখতে দিলেই প্রথমেই এই বাক্যটি লিখতাম। এখন অবশ্য শীতকাল অনুচ্ছেদ লিখতে দিলে তোমরা গুগুল দাদার দ্বারস্থ হও, জানি। তবু বলি পৌষ মানেই নবান্ন। আর নবান্ন মানেই উৎসব। সেকথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন হরিৎ আঙ্কেল। আর শীতকাল মানেই  কিন্তু মেলা আর মেলা।  সেও এক উৎসব। আর মেলা মানেই পাঁপড় ভাজা।  সোমরাজ দাদা, সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে বইমেলায় গিয়ে পাঁপড় ভাজার ছবি এনে ছোটোবেলার বন্ধুদের জন্য পাঠালো। পাঁপড় ভাজা দেখেই আমিও মেলায় যাবার জন্য লাফিয়ে উঠলাম। ঠিক তখনই দোলনচাঁপা আন্টি স্মরণ করিয়ে দিল, আজ ৪ ঠা ডিসে, নৌ দিবস। আমি তোমাদের হয়ে দোলনচাঁপা আন্টিকে বললাম, থ্যাঙ্কু আন্টি। তোমাদের আর একটি কথা চুপিচুপি বলছি, রোবটরা নাকি কথা কইতে শিখেছে। কে বলল,  ঠাম্মি। কার ঠাম্মি? জানতে হলে পড়ে ফেলো বন্দনা আন্টির গল্প। রোবটদের কথা শুনে তুহিনের নেকড়েটা ঘ্যাঁক করে উঠেছে। কি ঘুম পেয়ে গেল তো এবার? না, না তোমাকে বলিনি। পেরজাপতিকে বলছি। তৃষ্ণা আন্টির জয়াবতীর জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে আমাদের ছোটোবেলায়। যাদের পরীক্ষা হয়ে গেছে তাদের কথা মনে রেখে তোমাদের বন্ধু শুভঙ্কর সাপ-লুডো এঁকে পাঠিয়েছে। তোমরা ছক্কা আর গুটি নিয়ে খেলতে বসে যাও। আর যারা বি টি এসের গান ভালবাসো তাদের আনন্দ দিতে ত্যাই উম কে এঁকেছে জয়দীপ। প্রবাহনীল কিন্তু পুজোর আনন্দ ভুলতে পারছে না, তাই ওর কবিতাতে এখনো শরতের ভেলা ভাসছে। এসো পড়ে ফেলি ছোটোবেলার ১১১ সংখ্যাটিকে আর নতুন কলাম স্মরণীয় দিবস শুরু হল বলে একসঙ্গে সবাই বলি 'আনন্দম'।   - মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
পর্ব ৩৬

তৃষ্ণা বসাক

৪০
ফেরার পথে পাল্কিতেই ঢুলছিল পেরজাপতি।ওর দিকে তাকিয়ে জয়াবতীর মায়া হল, আহা রে ওর আর দোষ কি? আজ যখন তারা উঠেছে, তখন পুবের আকাশ ফর্সা হয়নি, তারপর থেকে কতটা রাস্তা পালকিতে বসে বসে আসা, কোমর ধরে গেছে, আর এতটা রাস্তা জীবনে যে সে কখনো আসেনি, সে তো পেরজাপতি বারবার বলছে। শুধু পেরজাপতি কেন, পুণ্যি আর জয়াবতীই বা কোথায় বেশি দেশ দেখেছে? এই তো জন্মের মুড়ি কম্মের বোলসিদ্ধি থেকে সোনাটিকরি আর সোনাটিকরি থেকে বোলসিদ্ধি। আর জন্মের আগে মায়ের পেটের মধ্যে করে মামাবাড়ি যাওয়া আর ফিরে আসা জন্মের পর। তখন তো আর জ্ঞান ছিল না। পুণ্যি অবিশ্যি বিয়ের পর ফরাসডাঙ্গা না কোথায় গিয়ে ছিল কয়েক মাস। কিন্তু সে যাওয়াই সার।ঘরের মধ্যেই যদি আটকে থাকবে, তবে বিদেশে গিয়ে লাভ কি?শহরের দিকে শুনেছে মেয়েদের পালকি সুদ্ধু গংগায় ডুবিয়ে আনা হয়। তবে তো তাদের গাঁই ভাল। এখানে ইচ্ছেমত পুকুরে নদীতে নাইতে পারে তারা। তাই ফরাসডাঙ্গা গিয়েও বিশেষ কিছু দেখা হয়নি পুন্যির। এটাও ঠিক, দেখার চোখ সবার থাকে না। আর যে যা দেখতে চায়, তার বাইরে কিছুই তার চোখে পড়ে না। কথায় বলে সাধুর কমণ্ডলু অনেক তীর্থে ঘরে, কিন্তু যে তেতো, সে তেতোই থাকে।তবে উমাশশীর কিছু গোপন কথা আছে। সে মনে হয় অনেক জায়গা দেখেছে, ইচ্ছেয় হোক, অনিচ্ছেতেই হোক, সেসব কথা সে এখনো ভাঙ্গেনি। সাগর তো, অনেক বড়। তা কি আর একদিনে জানা যায়?
যাই হক, সবাই ক্লান্ত তারা। যদিও ফিরে পুণ্যিদের বাড়ি খেতে যেতে হবে। সে পেরজাপতিকে ঠেলা দিল, ‘ওঠ ওঠ, আমরা এসে গেছি’
সেদিন ফিরে রাতে পুণ্যির বাড়ি খাওয়াটা ভালই জমেছিল, তবে কিনা পেরজাপতি বারবার থালার ওপর ঘুমে ঢুলে পড়ছিল, এই যা।
খেয়ে উঠে জয়াবতীর মনে পড়ল এই যা, ঠাকমার পাঠানো নতুন কাপড়জামা তো কিছুই বার করে দেওয়া হয়নি, সে কথা পুণ্যিকে বলতে সে ঘুমজড়ানো গলায় বলল ‘তোর যেমন কতা গঙ্গাজল! এত রাতে পিদিমের আলোয় বার করে কী ভাল করে দেখা যাবে, না রঙ বোঝা যাবে? আজ যখন ও পুঁটলি খোলা হয়নি, কাল দিনের আলোয় খুললেই হবে।আজ এত রাতে আর দিক করিস নি’
জয়াবতী ভেবে দেখল কথাটা মন্দ বলেনি পুণ্যি। পিদিমের আলোয় ভাল করে কিছুই দেখা যাবে না। আচ্ছা এমন কিছু হয় না, যাতে রাতটা দিনের মত ঝলমলে হয়ে যায়? রাতের অন্ধকারে ভূতের ভয় পায় অনেকে, জয়াবতী সে বান্দা নয়, কিন্তু তাদের গাঁঘরে দেখো, সন্ধে নামলেই অন্ধকার, পুকুরধারে কি কারো বাড়ি যাবার দরকার পড়লে, হাতে পিদিম নিয়ে চল, পিদিম উলটে কাপড়জামায় পড়ে আগুনে পুড়ে কত না কাণ্ড হয়।সোনাটিকরিতে দেখেছে রাতের বেলা কোন রুগীর বাড়ি থেকে খবর এলে কত অসুবিধে হয় যেতে। তারপর ওষুধ তো তয়ের থাকে না হাতের কাছে, কত কী মিশিয়ে খল নুড়িতে নেড়েচেড়ে বানিয়ে নিতে হয়, রাতের আঁধারে তয়ের করতে কত অসুবিধে। কিন্তু রুগী মরো মরো- এই কথা কানে  শুনলে কোন বদ্যি আর না গিয়ে পারে? তখন মশালচি নিয়ে যেতে হয়, তারা আগে আগে পথ দেখিয়ে যায়। রাতের বেলায় পালকির কাহাররাও পালকি চালাতে চায় না। তাদের দুগুণ মজুরি দিতে হয়। তাদেরও তো প্রাণের ভয় আছে। কোথায় সাপের গায়ে পা দিয়ে ফেলল অন্ধকারে, কি বাঘরোল বেরোল। জয়াবতী শুনেছে কাছেই একটা মস্ত বন আছে, সুন্দরবন, সেখানে সত্যি সত্যি বাঘ আছে, একেবারে কিলবিল করছে বাঘ। সেই বাঘ নদী পেরিয়ে চলে আসে মাঝে মাঝে। গেরস্ত ঘরের পেছনে ঘাপ্টি মেরে বসে থাকে, রাতে কেউ মাঠ সারতে উঠলে টেনে নিয়ে যায়, সেই ভয়ে খুব বেগ চাপলেও কেউ আর মাঠ সারতে যায় না। জয়াবতীর হঠাৎ মনে হল প্রাতঃকৃত্যের একটা ব্যবস্থা অন্দরমহলে থাকলে কত ভাল হত। সবার কত অসুবিধে হয়, বিষেষ করে মেয়েদের। বৃষ্টি বাদলায়, শীতের রাতে, অন্ধকারে, মেয়েরা কী করে মাঠে যাবে একা একা? সাপখোপ, ডাকাত, বাঘ, তাছাড়া ভূতের ভয় তো আছেই। ভূত বলে কিছু নেই, সে কথা না হয় জয়াবতী বোঝে, বাকিরা বুঝবে না। ভূতের ভয় পেতে বেশিরভাগ লোক ভালবাসে মনে হয়। বৃষ্টির সন্ধে বা শীতের রাত হল তো অমনি সবাই বাড়ির বুড়ো মানুষটাকে ঘিরে বসে বলবে ‘ও ঠাকমা একটা ভূতের গল্প বলো না গো’ নাহ, ভূতের বিশ্বাস টলাতে পারবে না জয়াবতী, কিন্তু ভূতের ভয় নিয়ে যাতে রাতে বাস্তু থেকে অনেক দূরে মাঠ সারতে না যেতে হয় সে চেষ্টা সে করবে।
 
এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরল জয়াবতী। পেরজাপতি পুণ্যির কাছ ছাড়বে না। ওর সঙ্গে এল উমাশশী। ওরা যখন এল মা বাবা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই চুপ করে ওরা শুয়ে পড়ল পাতা বিছানায়।
 
 ওরা কথা বললে সবার ঘুম ভেঙ্গে যাবে, এই ভেবে দুজনেই একটু মন খারাপ করে ছিল। জয়াবতী তো বলেই ফেলল ‘ভাই সাগরজল, পুণ্যিদের বাড়ি শুলে কত মজা হত তাই না? ওপরতলায় অনেকগুলো ঘর, ফাঁকাই পড়ে থাকে, পুণ্যির মা পালংকে কেমন বিছানা করে রেখেছেন। একটা পালংকে না হবে তো আমাদের মত ছ সাত জন শুতে পারে। আমি দেখেছি ঠিক জানলার কাছেই পালংক পাতা, ঘুম না এলে কেমন বসে রাতের গাঁ দেখতাম, পাহারাদার কেমন হেঁকে যায় কে জাগে? কে জাগে? ভারি ভাল লাগে আমার’
জয়াবতী ভেবেছিল এ কথায় লাফিয়ে উঠবে উমাশশী, বলবে ‘চল চল কাল থেকে ও বাড়িতেই শোব আমরা, সারারাত হইচই করলেও কেউ বকবে না।’
কিন্তু তার বদলে কেমন যেন শিউরে উঠল সে। অন্ধকারে মুখের ভাব দেখতে পেল না বটে, তবে উমাশশীর শরীর যে কেঁপে উঠল তা স্পষ্ট বোঝা গেল।
জয়াবতী অবাক হয়ে বলল ‘কী হল গা? ভয় পেলি কীসে?’
তার কোন উত্তর দিল না উমাশশী। ওর ছোট্ট শরীরটা কান্নার দমকে ফুলে ফুলে উঠতে লাগল। জয়াবতী তখুনি কিছু আর জিজ্ঞেস করল না ওকে। ও বুঝতে পারল পালংকের ধারের জানলার সঙ্গে কোন খারাপ স্মৃতি আছে উমাশশীর। হয়তো ওর জীবনের বিপদ ওই জানলা দিয়েই ঘনিয়ে এসেছিল। এরকম কি হতে পারে জানলার শিক ভেঙ্গেই ডাকাতরা এসে ওকে তুলে নিয়ে গেছিল? কিন্তু কী করে? ও কি ঘরে একা শুত? আর কেউ শুত না ওর সঙ্গে? মা কেন শুত না? এরকম অনেক প্রশ্ন তোলপাড় করতে লাগল জয়াবতীর বুকে। এইসব মাথার মধ্যে নিয়ে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে কে জানে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে একটা স্বপ্নও দেখে ফেলল। উমাশশীকে ডাকাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর সে ঘোড়ায় চড়ে গিয়ে ডাকাতের ওপর ঝাঁপিয়ে উমাশশীকে উদ্ধার করে আনছে। ঘুম ভাঙ্গতে দেখল বেশ আলো ফুটে গেছে। মা গুনগুন করে দুর্গা স্তোত্র গাইতে গাইতে ঘরে ঘরে জলছড়া দিচ্ছেন। পিতাও উঠে গেছেন, ভাইটি অকাতরে ঘুমোচ্ছে। আর একি, উমাশশী কোথায়? সে তো তার পাশে নেই! খালি বিছানা দেখে বুক ছাঁত করে ওঠে জয়াবতীর। ( ক্রমশ)

হৃদয়ে আজ দোলা

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ শেষে
হেমন্ত ওই আসে
কার্তিক আর অগ্রহায়ণের
এই দুইটি মাসে ।

সন্ধে হলেই ঝরে শিশির 
দূর্বা ঘাসে ঘাসে
এই শিশিরই সকাল রোদে
মুক্তো হাসি হাসে ।

আউশ আমন ধান পেকেছে
আলো মাঠে মাঠে
খুব খুশিতে মাঠেই চাষীর
সারাটা দিন কাটে ।

নতুন ধানের গন্ধ নিয়ে
নবান্ন আজ গাঁয়ে
অল্প শীতে দেখি সবাই
হালকা চাদর গায়ে ।

সোনার ধানে ঘর ভরেছে
ভরেছে আজ গোলা
চাষীর ছেলে বৌ মেয়েদের
হৃদয়ে আজ দোলা ।


রোবটের বজ্জাতি 

বন্দনা সেনগুপ্ত 

(1)

3033ADর একটি সুন্দর বিকেল। শিলং শহরের বাইরের দিকে এক ছোট্ট কাঠের বাড়িতে থাকে সুমি, তার ঠাকুমা, কুকুর সুকু, আর একটা ঘর সংসারের কাজ করার রোবট কন্তু।

"ও ঠাম্মা! ঠাম্মি গো! একটা গল্প বল না। বলোওও না গো!" নাতনি সুমির আবদারে হেসে ফেলে গল্প আরম্ভ করেন ঠাকুমা লতিকা দেবী। 
 
“সে আজ অনেক দিনের, ধরো তিন চারশ বছর আগের কথা। তখন রোবটরা এই পৃথিবীতে নিজের ইচ্ছা মত ঘুরে ফিরে বেড়াতে পারত। কত রকমের রোবটই না ছিল তখন। ছেলে রোবট, মেয়ে রোবট, শক্তিশালী রোবট, নরম সরম ভদ্র রোবট, কাজ করবার জন্য চাকর রোবট, অপারেশনে সাহায্য করার জন্য মেডিকেল রোবট, বাচ্চাদের সাথে খেলা করার জন্য বেবি, ডগি বা মিঁয়াও রোবট, তা ছাড়া আরও কত রকম রোবট, তার আর ইয়ত্তা হয় না। রোজই নতুন নতুন রোবট আবিষ্কার হচ্ছে। আর, এই সব রোবটদের কিন্তু নিজেদের বুদ্ধি ছিল। অনুভব ক্ষমতা ছিল। নিজেদের বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে অনেক কাজ নিজেরাই করে ফেলতে পারত, নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারত। তাই আমাদের, মানে মানুষদের জীবন তখন অনেক সহজ ছিল। বেশির ভাগ মানুষ গান গাইত, ছবি আঁকত, শিল্প কলার চর্চা করত, আর করত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা। সবাই মিলে মিশে বেশ সুখেই ছিল। সমস্যা তৈরি হল যখন এক আবিস্কারক কথা বলা রোবট বানিয়ে ফেললেন। সবাই তো বেজায় খুশি। এবার রোবট কথা বলতে পারবে। কিন্তু, দেখা গেল রোবট শুধু রোবটদের সাথেই কথা বলতে পারছে। তাই সই। আমাদের আদেশ নির্দেশ তো তারা আগেই বুঝতে পারত। এবার তারা নিজেদের মধ্যে গল্প করতে পারবে। কি মজা, কি মজা!

(2)

প্রথম প্রথম তো আমরা তাদের দেখে মজাই পেতাম। কারণ, বেশির ভাগ রোবটই দেখা গেল বেশ লাজুক, মোটেই তাদের কথা বলার আগ্রহ নেই। তারা তাদের নিজেদের কাজ কর্ম করতেই ভালবাসে, কাজ হয়ে গেলে চুপ করে নিজের জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বা বসে থাকে। তারা কিছুতেই গল্প করতে চাইত না। কিন্তু তা বললে কি আর আমরা শুনব? আমরা তো লেগে থাকলাম তাদের একটু একটু করে কথা বলাতে। অসুবিধা অবশ্য ছিল, কারণ আমরা মোটেই ওদের ভাষা বুঝতে পারতাম না, এমনকি যে বিজ্ঞানী এই কথা বলা রোবট বানিয়েছিলেন, বা যাঁরা সব পুরোনো রোবটের মধ্যেও এই ক্ষমতা দিয়েছিলেন, তাঁরাও না। কিন্তু, আমাদের মনে হত যে কথা বলা এত বড় একটা ক্ষমতা, এটার ব্যবহারে রোবটরা আরো উন্নত হয়ে উঠবে, যোগাযোগ ও শলা পরামর্শ করে আমাদের কাজ আরো ভালোভাবে করতে পারবে। কাজেই, আমরা ওদের কথা বলাবার জন্য লেগে থাকলাম। আর, আস্তে আস্তে কাজ হতে থাকল। কি কথা বলত, জানি না। তবে, প্রথম প্রথম কাজ কর্মের খুব উন্নতি হয়েছিল। ওদের আদেশ নির্দেশ আর প্রায় দিতেই হত না, নিজেরাই সমন্বয় করে বেশির ভাগ কাজ করে নিতে পারত। সবাই খুব খুশি।

কিন্তু, জটিলতা শুরু হল। এতো ধীরে, যে প্রথমে কিছু বোঝাই যায় নি। দেখা গেল বেশ কিছু রোবট আর নিজেদের কাজ ঠিক করে করছে না। আর, তখন তো আমরা বেশির ভাগ কাজের জন্য ওদের উপরেই নির্ভর ছিলাম আর ওরা যে ঠিক করে কাজ করবে না সেটা ভাবিও নি, কাজেই ভীষণ অসুবিধা সৃষ্টি হল। প্রথমে তো আমরা ভেবেছি, রোবট ত যন্ত্র, নিশ্চয়ই খারাপ হয়ে গেছে। সারাবার চেষ্টা করা হল। কিন্তু, দেখা গেল যে যন্ত্র তো ঠিকই আছে অথচ কাজ করছে না বা ভুলভাল করছে। একটার পর আর একটা রোবটের সঙ্গে এই রকম সব গন্ডগোল হতে থাকল। বড় বড় বিজ্ঞানীরা সব নড়েচড়ে বসলেন। কি ব্যাপার? কেন রোবট কাজ করছে না? আর করলেও, কেন ভুল করছে? কিভাবে করছে? রোবট তো প্রোগ্রাম করা, ভুল কি করে করবে? খারাপ হয়ে গেলে কাজ করবে না, কিন্তু খারাপও তো হয় নি! ল্যাবে তো ঠিকঠাক কাজ করছে, তাদের কাজের জায়গায় পাঠালেই গন্ডগোল করছে। মহা সমস্যা।

(3)

তা আমাদের কাছে সমস্যা কি আর সমস্যা থাকে দিদি? বিজ্ঞানীরা তো দিনরাত এক করে গবেষণা করছেন। করতে করতে তাঁরা দেখলেন যে, যেখানেই রোবটদের কথা বলার সুবিধা আছে আর তারা অনেকে মিলে  কথা বলছে, সেখানেই অসুবিধা তৈরি হচ্ছে। আর, অনেক ক্ষেত্রে তা অন্য জায়গায়ও ছড়িয়ে যাচ্ছে। কবে যে রোবটরা নিজেদের মধ্যে কাজ ছাড়া অন্য কথা বলতে আরম্ভ করেছে সে ত কেউ কোনদিন লক্ষ্যই করে নি। কাজেই, তাঁরা  বুঝলেন, এখন আগে রোবটদের ভাষা শিখতে হবে। দেখা গেল সেটা বেশ কঠিন কাজ কারণ রোবটরা যেন পণ করে রেখেছিল যে তাদের ভাষা যেন মানুষ বুঝতে না পারে। তা আমরা তো আর কোন কাজ কঠিন বলে ছেড়ে রাখিনি দিদি, এটা আর কি করে ছাড়ব? রোবটের ভাষার মর্ম উদ্ধার করেই ছাড়া হল। ও হরি, রোবটের পেটে পেটে এত! তারা তলে তলে একে অন্যকে বুঝাচ্ছিল যে মানুষ আমাদের খাটিয়ে নিয়ে নিজেরা মজায় আছে। কাজেই ওদের কথা শুনছি না, শুনব না! একে অন্যের প্রোগ্রাম অদল বদল করে দিত, আর দরকারে ল্যাবে যাওয়ার সময় ঠিক করে দিত। এ পর্যন্ত ত তবুও ঠিক ছিল কিন্তু, কিছু কিছু শক্তিশালী গোঁয়ার রোবটের ইচ্ছা ছিল ধীরে ধীরে মানুষের উপরই কব্জা করার। কারণ, তখন মানুষ ছিল রোবটের উপর নির্ভরশীল, কোনও শারীরিক পরিশ্রম সে করতে পারত না। আর, তাছাড়াও সব রকম পুনরাবর্তী কাজ সে রোবটের ঘাড়েই দিয়ে রেখেছিল, নিজে করত না। কাজেই, সেই রোবটদের সুবিধাও ছিল।

সুবিধা থাকলে আর কি হবে? যেই মাত্র বিজ্ঞানীরা ওদের সব প্ল্যান বুঝতে পারলেন, তখনই সব রোবটকে ল্যাবে ফিরিয়ে এনে ওদের কথা বলার ও বোঝার যে প্রোগ্রাম ছিল তা ডিলিট করে দেওয়া হল। আর, অনেক রোবট, যারা বেশি শক্তিশালী বা নেতা হবার চেষ্টা করেছিল, নষ্টও করে দেওয়া হল। এখন আমরা অনেক কাজ নিজেরাই করতে পারি আর করেও নিই। সব কাজের জন্য আর ওদের অপেক্ষা করি না। "

"ঠাম্মি, আমরা কি কাজ এখন নিজে নিজে করতে পারি?"

"অনেক কাজ করতে পারি দিদি। যেমন এই যে আমি তোমায় এখন গল্প বলছি, তখন এটা হয়ত কোন রোবট বা কন্তু তোমায় বসিয়ে শোনাত। এই যে আজ তুমি বড়ির ঝোল খেলে, তখন সেই বড়ি রোবট বানাত আর এখন আমি। হয়ত রান্নার কাজ করত আরেক রোবট। এখন সন্ধ্যাবেলা তোমাকে দিদিমণি এসে পড়াবেন, আগে তো তা হত না। তুমি পড়া দেখতে সেই সেই বিষয়ের রোবটের স্ক্রিনে। এখন তুমি তোমার কুকুর ছানা সুকুর সাথে খেলা করবে, তখন খেলতে হত সুকুর মত দেখতে এক রোবটের সাথে।"

"এ বাবা!! তুমি গল্প বলতে না! সুকু নেই! আমি তাহলে কার সঙ্গে খেলতাম? আমার একটুও ভাল লাগত না সেই সময়টাকে।"

"তাই তো দিদি! সেই কথাটা মানুষদের একটু কষ্ট করে বুঝতে হয়েছে। শুধু আরাম পেলেই হয় না। আরাম, বিলাস, ব্যসন সবই হয়ত দরকার, কিন্তু সব সময়েই নিজের প্রয়োজনের কাজ নিজের করে নেওয়ার মত ক্ষমতা থাকাটাও প্রয়োজন। অন্যের উপর বেশি নির্ভরশীল হলেই বিপদ।"

"বিপদ বলে বিপদ" বলেই সুমি একটা বল আর সুকুকে নিয়ে ছুট লাগায়। সুকুও ভৌ ভৌ করতে করতে ওর সঙ্গে সঙ্গে যায়।

"ভাগ্যিস সুকুটা সুকুই, রোবট নয়" ভাবে সুমি।


মেঘের খেলা
প্রবাহনীল দাস
অষ্টম শ্রেণি
বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন
মেদিনীপুর

সকালবেলা যখন ছাদে খুলতে উঠি তালা,
চোখ টেনে নেয় শারদপ্রাতের দারুণ মেঘমালা।
হঠাৎ দেখি আকাশ জুড়ে ঠিক সুনামির মত,
করোনাসুর আসছে ধেয়ে – সৈন্য কত শত।
বিষণ্ণতায় মন ছেয়ে যায়; দেখতে পেয়ে পাখি
বুঝতে পারি সবই ছিল শরত মেঘের ফাঁকি।
চিন্তা মনে, আসছে নাকি ফিরে আবার পাজি?
মেঘের আকার বদল করে হাওয়ারই কারসাজি।
আকাশ ফোটায় দৃশ্য নতুন, দর্শন দেন তিনি
সবাই যাকে প্রণাম করে, অসুরবিনাশিনী।
আকাশের এক অন্য ধারে মেঘ হয়ে যায় কাশ,
এইদিকে জোর যুদ্ধ চলে, করতে অসুর নাশ।
হাওয়াই মেঘে ফুটিয়ে তোলে দৃশ্য পরিস্কার,
ত্রিশূল ভরা ভ্যাক্সিনে হয় অসুর যে ছারখার।
মেঘের খেলায় জুরায় যে মন, হঠাৎ খেয়াল পড়ে,
উঠছে রবি, পড়তে এবার বসতে হবে ঘরে।
স্মরণীয় দিবস
নৌ দিবস (ফোর্থ ডিসেম্বর)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


আমাদের দেশে আজকের দিন অর্থাৎ ফোর্থ ডিসেম্বর নৌ দিবস হিসেবে পালিত হয়, কারণ হিসেবে জানতে গেলে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হয়।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে চার ই ডিসেম্বর ভারত -পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারতীয় নৌবাহিনী আক্রমণ করেছিল পাকিস্তানের করাচি বন্দরের ওপর।
আজকের দিনে অর্থাৎ ফোর্থ ডিসেম্বর দুপুর দুটোর সময় করাচি বন্দর আক্রমণ চালানোর আদেশ পাওয়া মাত্রই গুজরাটের ওখা বন্দর থেকে করাচি বন্দরের দিকে যাত্রা শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী তিনটি ভারতীয় জাহাজ- আই.এন.এস. নিপাত, আই.এন.এস. নির্ঘাত, ও আই.এন.এস বীর এই তিনটি ভারতীয় জাহাজ পাকিস্তানি চারটি ভেসেলকে ডুবিয়ে দিয়েছিল। বলা যায় ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছিল করাচি বন্দরের অধিকাংশ, প্রায় ৫০০ জন পাকিস্তানি নৌ সেনা মারা গিয়েছিলেন এই সময়।

সেই আক্রমণের বীরত্ব ও সাফল্যের স্মৃতিকে মনে রেখে ফোর্থ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজকের দিনটিকে নৌ দিবস হিসেবে আমাদের দেশে পালন করা হয়।
ভারতীয় নৌবাহিনী হল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি শাখা। বর্তমানে এতে ৫৮ হাজার ৩৫০ জন সেনা  রয়েছেন। এছাড়াও একটি বিমানবাহী জাহাজ, ২৪টি যুদ্ধ জাহাজ, ৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী জাহাজ, ১৩ টি সাবমেরিন, ১টি নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন, ৩০ টি পেট্রোল ভেসেল ও বহু সহায়ক জাহাজও রয়েছে।

বি:দ্র:-১৭ শতকে ছত্রপতি শিবাজীকে ভারতীয় নৌবাহিনীর পিতা আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।


পাঠ প্রতিক্রিয়া
( ছোটোবেলা ১১০ পড়ে শ্রীছন্দা বোস যা লিখলেন)

জ্বলদর্চি পত্রিকার ১১০ সংখ্যার লেখাগুলি পড়ে খুব ভালো লাগলো। মৌসুমীদির  সম্পাদকীয় প্রতিবারের মতন এবারও অসাধারণ লাগলো।
লেখনীর পরিপূর্ণতাকে স্বাগত জানাই।
তৃষ্ণা বসাকের জয়াবতীর জয়যাত্রা ধারাবাহিক উপন্যাসটি পড়ে মনে হলো
সেই কুসংস্কার আচ্ছন্ন সমাজের মধ্যে থেকে জেগে ওঠা এক নারীর প্রতিবাদ ও জেদ সগৌরবে বলিয়ান হয়ে
উঠেছে। সমুদ্র দেখার সাধ তার অত্যন্ত দৃঢ় পদক্ষেপ, যেখানে নারীর সব জায়গাতেই প্রবেশ নিষেধ।
যেখানে কবির সেই "বিসর্জনের " লাইন  " চল তোকে দিয়ে আসি সাগরের  জলে " পড়ে চোখের  জলে ভেসে যাই, যেখানে বিধবা  কিশোরীর বুক ফাটা কান্না আর নারী শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা সবটাই ছিল অন্ধকারময় অধ্যায় তার মধ্যে
তৃষ্ণাদি এমন বাঁধনছাড়া এক অগ্নি কন্যার ছবি আঁকলেন বিস্মিত হতে হয়। জয়াবতীর মনের শুভ ইচ্ছাকে বলিষ্ট ভাবে পূরণ করার চেষ্টাকে অভিনন্দন জানাই।
মৌসুমী রায়ের ঝাড়ুমাসির সারপ্রাইজ সত্যি ভারী মিষ্টি
সারপ্রাইজ ছিল যাতে নাকি শেষ মেষ আশাহত ভোম্বলের
প্রাণে আবার আশা এলো, একজন খেলার সাথী পেলো।
রঞ্জনা বসুর " ছেলেবেলার বৃত্তে " সূর্যোদয় আর সুর্যাস্তের মাঝখানে সময় কাটানোর ব্যস্ততার মুহূর্ত গুলি সুন্দর ভাবে ব্যক্ত হয়েছে। কবিতাটি ছন্দের আর ভাষার সঠিক  মেলবন্ধনে ধরা পড়েছে।
অরিন্দম হালদারের আঁকা ছবিটি খুবই সুন্দর। এই ছবিটি দেখে ছোটবেলাকার কথা মনে পড়ে যায়।
অঙ্কিতের লেখা " অজয়ের স্বপ্ন " বেশ ভিন্ন ধরণের লেখা। রহস্যের জালে ঘেরা।
স্বপ্ন যে কখনো সত্যি হয়ে ধরা
দিতে পারে তারই ভাবনা ফুটে উঠেছে। পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়।
শুভঙ্কর সেনের আঁকা ছবিটি
ভারী মিষ্টি।
রংয়ের  সংমিশ্রণ টি খুব সুন্দর। শ্রেয়সী ঘোষের হাতি আর হাতি ছবিটি খুব সুন্দর।
সব মিলিয়ে এবারের সংখ্যাটি
অপূর্ব হয়েছে। অনেক শুভকামনা রইল আগামী সংখ্যার  জন্য। মৌসুমী দির জন্য রইল  অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments