জ্বলদর্চি

আমি আমার মতো /পর্ব ৭ /সুকন্যা সাহা

আমি আমার মতো
পর্ব ৭
সুকন্যা সাহা 

দিদার আলো

"বাবু মশাই জিন্দেগী লম্বী নেহী বড়ী হোনী চাহিয়ে..."কোথা থেকে যে শুরু করব দিদার কথা জানি না ... সম্পর্কে ছিলেন মায়ের কাকিমা; কখন যে দিদা থেকে মা হয়ে  গেছেন  বুঝতেও পারি নি ... অসম্ভব ভালো একজন মানুষ, মানুষকে ভালোবাসা আর যত্ন যে কি হতে পারে তার প্রথম পাঠ শিখেছি দিদার কাছে ...মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে কোনোদিন আত্ম -পর  জ্ঞান করেননি। অপত্য স্নেহে  ভালোবেসেছেন সবাইকে ; নিজে অসুস্থ তাও ফোনে রেখেছেন যোগা্যোগ ... বার বার খোঁজ নিতেন কে  কেমন আছে ... নিজে  গিয়ে   দেখতে না পারার আক্ষেপ ঝরে পড়ত ফোনে ... কখনও বড় করে দেখেন নি নিজের কষ্ট ... নিজের শত অসুবিধাতেও কেউ বঞ্চিত হয় নিতার স্নেহচ্ছায়া থেকে ...  দাদু দিদার আদর ভালোবাসা যত্ন আত্তিতে   ছোটোবেলাটা আলো হয়েছিল , সল্টলেকের  ওই বাড়ি আর দাদু দিদা আমার কাছে ছিলেন সমার্থক ।কখনও দাদু দিদাকে  আলাদা সত্তা বলে ভাবিনি ... মা যতদিন ছিলেন  দিদাকে  এক রকম ভাবে   দেখেছি মা চলে যাওয়ার  পর  দিদা যেন আরো কাছাকাছি এসে গিয়েছিল , তিন বছর  আগে  এক জন্মদিনে  যখন জানালাম যাব তোমায় প্রণাম করতে ; তখনও ভাবি নি এত বড় আর্শীবাণী , উপহার অপেক্ষা করছে আমার জন্য ... নিজের হাতে করা পায়েস খাইয়ে , ধান দুব্বো দিয়ে আর্শীবাদ  করেছিলেন ,এই অকিঞ্চিতকর  জীবন আপ্লুত হয়েছিল, আনন্দে জল এসেছিল চোখে ... দাদু দিদার মধ্যে যে আশ্চর্য  bonding ছিল আজকাল কোনো দম্পতির মধ্যে চোখে   পড়ে না ... দাদু চা করলে দিদা  চিনি গুলিয়ে দিচ্ছেন,  এই লেভেলে ছিল bonding...খুব ভালো বন্ধু ছিলেন দুজনে । বিরাট পরিবার ,  নাতি নাতনিদের প্রাণ ছিলেন দিদা ।নিজের জীবনে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন অপরের জন্য feelings কি হতে পারে, কিভাবে  আজকের প্রজন্মের কাছেও নিজেদের দরকারী করে রাখা  যায় ... কতবার অসুস্থ হয়েছি ছুটে এসেছেন দেখতে  হাতে ফল , মিষ্টি ... যখনই কোনও পরামর্শ দরকার হয়েছে ছুটে গেছি , শান্ত মাথায় সব  শুনে   দিক নির্দেশ করেছেন ...

            "জন্মিলে  মরিতে  হবে / অমর কে কোথা  কবে" ... এ চিরসত্য ... তবু কিছু কিছু মানুষের  চলে যাওয়া মন  থেকে মেনে নেওয়া যায় না ...কাল থেকে মেয়েও খুব কাঁদছে দিদার  জন্য । দিদার চলে যাওয়া  একটা জেনারেশান শেষ  হয়ে  যাওয়ার ইঙ্গিত। মায়ের কাকিমার অকৃপণ মাতৃস্নেহ কিভাবে তিনটে জেনারেশানে ছড়িয়ে গিয়েছিল , না দেখলে  বিশ্বাস হয় না ... কাল থেকে মনে   হচ্ছে দ্বিতীয় বার  মাতৃহারা হলাম ...কত স্মৃতি ... সব ভেসে উঠছে মানসপটে ... এই একজন মানুষ ছিলেন যার ডাকে সব ফেলে বিনা প্রশ্নে ছুটে আসা যায় ... দাদুর খুব আদরের ডাক ছিল, বুলু ... কাল থেকে বার বার মনে হচ্ছে,

"তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে  কেউ তা জানে না ... " তোমার  মতো এমন টানে কেউ তো টানে  না ... তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে কেউ তা জানে না ...”

পুনশ্চঃ লেখালিখি করছি জেনে খুব খুশী হয়েছিলেন ... আসন্ন বইমেলার বইগুলো দিদার হাতে  তুলে   দিতে পারলাম না ; আক্ষেপ থেকে গেল ...
(ক্রমশঃ)

ক্লিক করে পড়ুন। পি সি সরকার জুনিয়রের সাক্ষাৎকার। 👇

Post a Comment

0 Comments