জ্বলদর্চি

কবিতাগুচ্ছ /স্বপন কুমার দে

কবিতাগুচ্ছ

স্বপন কুমার দে

বর্ষণসিক্ত

এসো না, বৃষ্টিতে ভিজি কিছুক্ষণ,
রোদেরা বরং জিরিয়ে নিক গাছতলায়,
পাখিরা ফিরুক নিজের বাসায়,
আমরা তখন দাঁড়াই বেশ মেঘছায়ায়।

দেখো,কেমন ছাদহীন খোলা আকাশ
দিনের আলো ছুটি নিয়েছে কিছুটা সময়।
আমরা বরং মাখি না মেঘের আদর,
ঢালি না মনের বেগ,বেশ রসময়।

যাক্ না মনের খেদ,উড়ে যাক্ দূরে
এসো এই অশান্ত উদ্বেল নেশায়,
শূন্যতা ঘোচাও প্রাপ্তির আগুনে,
না পাওয়ার বেদনাটা বাঁধা থাক খাঁচায়।


 অধরা

তুমি তো ছুঁয়েছো সাত রং,
তুমি তো মেখেছো কত সোনালি আদর,
রজনীগন্ধার ঘ্রাণ, আরও কত কিছু।
অফুরান ঐশ্বর্যের ভার
খুলেছে ভোগের গুহাদ্বার।
তাও কি পেয়েছো সুখ?
পরিতৃপ্ত হাসিমুখ?
তবে কেন এই অভিনয়?
ভালো নয়,ভালো নয়।ভালো থাকা নয়।
তবুও ভালো।
সে যে ভালো থাকার মিথ্যে অভিনয়।

আমি তো দেখেছি অনেক খাদ,
দেখেছি অনেক বাধা, কষ্ট;
জীবনের সুখ শান্তি হয়েছে বরবাদ।
তবুও প্রত্যহ বাঁচি সুখের আশায়।
যে স্বপ্ন তোমায় নিয়ে, ছিল ভোরবেলা;
তার থেকে অনেকটা সরে এসে
জীবনের স্রোতে ভাসিয়েছি ভেলা।
এখন মাটিতে চরণ রাখি,
এখন হিসাব মেলাই চেয়ে চেয়ে,
এখনো ভোরের কুয়াশা গায়ে মাখি।
এখনও বাঁচার আশায় বাঁচি প্রতিদিন।


 প্রেমহীন

আজকাল সবকিছুই খুব বেশি ঠুনকো,
সম্পর্কের বাঁধন ছিন্ন হয় প্রতিদিন।
পূর্ণের পরশে যার অভিষেক,
স্বার্থের আঘাতে সে তো শেষ হয়।

প্রেমহীন মোহ।তাই এত রূপটান,
ভালোবাসা উড়ে যায়।
লাশটাকে বয়ে চলি,অথবা,-
নরম হাঁসের পালকে চোখ রাখি।

প্রেম ছিল। একদিন
অনাবৃত অরূপের রূপে
একাকী গোপন পথে প্রবেশের টান;
করুণ দুঃখের রূপে--
কখনো বা স্নিগ্ধ স্নেহের পরশ।

আজ পাটি গণিতের শর্ত মেনে
কিংবা ব্যভিচারী রক্তের তাড়নে প্রেম;
প্রেম নয়,অন্য কিছু খেলা করে।
লাভ ক্ষতির হিসাব ব্যবসায়ীর। প্রেমিকের নয়।
স্বার্থের আঘাতে ভেঙে যায় ভালোবাসা।
মাটির তলায় জাগে কঙ্কাল।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

 আমি

জ্বলন্ত আগুনের মাঝে আমি--
নিষ্পন্দ শরীরে প্রাত্যহিক লাঞ্ছনা--
আকাশে মুক্তির স্বাদ।
অপারগ চাহিদার চাপ
ক্লান্ত করে শরীর ও মন।
তুমি কী পারো?
মানুষের বাসভূমি তার বধ্যভূমি,
কেননা, যন্ত্রনা অনেক।
না পারার বেদনা-
রক্ত স্রোতের অশান্ত বেগ
সহিষ্ণুতাকে টলিয়ে দেয়।
আমি,আমার, আমাকে--
ক্রমশঃ ছোটো হয় পৃথিবী।
বামনের দেশ থেকে বহুদূরে-
আজ মানুষই বামন।
ছোটো ছোটো চোখ,মুখ-
ছোটো ভাবনা-ছোটো গতি।

কর্মের সাধনা ক্ষুদ্র তাই।
তুমি নেই, তিনি নেই
বৈঠকখানার রসালো গল্প নেই,
বন্ধুর পাগলামি,-সাহিত্যের আঁকিবুকি-
নেই ,নেই, নেই.....।

হয়তো ঢের জন্ম আগে
মানুষ ছিল,
মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছিল।
স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ ছিল।

এখন কেবলই টাকার গন্ধ,
উদ্দেশ্য, বিধেয় - কারণে অকারণে ।
যতটা তুমি তোমার,
তার চেয়েও বেশি অন্যের ।
থাক তবে সব চাওয়া ,
আনন্দ থাক, দুঃখ থাক।
পুতুলের নাচ দেখা যায়,
কিন্ত নাচানো দেখা যায় না।


কন্যাদায়

কন্যা কি দায়? এ প্রশ্ন আমারও।
সমাজটা কে চালায়? প্রশ্ন তো হাজারও।
কার আয়ে কে যে খায়?
কে যে কার পাশে যায়?
হিসাবটা তোলা থাকে রাজারও।

সন্তান উভয়েই, মেয়ে কিম্বা ছেলে,
তবু দেখো,মাপা হয় বাটখারা ফেলে।
ছেলে বংশের দীপ,
মেয়ে হলে বিপরীত,
ছেলে ঘর করে আলো দীপটুকু জ্বেলে।

কোনো গুণ না থাকলেও ছেলে কিন্ত বেশ,
মেয়েদের বিয়ে দিলে ঝামেলার শেষ।
জ্ঞানে,কর্মে,চিন্তায় মানুষই সেরা,
সেই মানুষ কেন ধরে হীন চিন্তাধারা?
এ ব্যাপারে শিক্ষিত-মূর্খ গায়ে গায়ে ঠেস।

বিজ্ঞান দিয়েছে জ্ঞান, যুক্তিবাদী মন
পায়নি চেতনা তবু কিছু হীনজন।
লড়াইটা জারি করি তাদেরই সামনে,
দূর করো মনেরই কালিমা আপনি।
পায়ে পায়ে সমাজটা এগোবে তখনই।

Post a Comment

0 Comments