জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা -১/গুরুপদ মুখোপাধ্যায়

গুচ্ছ কবিতা -১
গুরুপদ মুখোপাধ্যায় 


নন্দিনী হাত বাড়াও তোমার 


এই তো! 
হাঁটু পেতে বসেছি আমি ;- ক্রান্তিকাল! 
হাতে তুলে নিয়েছি তির ধনুক- লক্ষ্যভেদ
তুলে আনতে হবে ফোয়ারা ; নন্দিনী 
রক্তকরবী ছিঁড়ে ছড়িয়েছি অশান্ত ভোর
তির নিক্ষেপের সময় হয়েছে এখন!  

আমার চোখের উপর দিয়ে চলে যায় 
মালবাজারে রক্তাক্ত মোমবাতি কার্নিভাল 
কাপালিক খড়্গহাতে ত্রিকাল অসুর 
হাত ধরো নন্দিনী ; পাতালের বন্ধ দরজা 
খুলে দিতে চাই ;- চাই সূর্যাসুর! 
খড়্গ জয় করে উঠে এস জয়সিংহ! 

চিত্রাঙ্গদা জানি জানি ;সব জানি
মোহিনীবেশ; মোহনজার্নি
রেখেছিলে পা প্রেমাশ্রু দোয়াবে
তৃতীয় পান্ডব ডুবেছিল পঞ্চসায়রে
খুলে ফেল ছদ্মবেশ তোমার ; 
আর কতদূর হাঁটতে হবে লালন?  
একটা রক্তের মোহনা দেখব বলে।

যেখানে ধর্ম নেই ; জাত নেই ; আছে মহম্মদ মানিক 
হাঁটু পেতে বসেছি আবার; লক্ষ্যভেদ! 
নন্দিনী হাত বাড়াও তোমার! 
সূর্যাস্ত হতে দেরি আছে এখনও।


অশ্বমেধ 

থেমে থাকতে নেই 
উড়ুক্কু হাওয়া থেকে নেমে আসে স্বর
উতল উঠোন ; দুরন্ত আলপথ
খোলামকুচি নিয়ে চু কিত কিত
বন্দী শৈশব কৈশোরের সন্ধিতালা।

সন্ধিকালে লোমকূপ ছুঁয়ে থাকে 
দুরন্ত উঠোন ;- অনিকেত ব্রহ্মচারী
বেলতলায় ধুপ জাগে ; দীপের রোশনাই 
আলোর কোলাকুলিতে বান্ধব শয্যায়
যে ঋষি শুয়ে থাকে ; নিরন্ন অঙ্গীরা  আলথাল।

জেগে থাকে পাখিচোখ
শৈশবের দানাগুলি
ছড়িয়ে পড়ে প্রান্তরের প্রান্তসীমায় 
ভাঙছে চৌকাঠ ; ভাসন্ত চিল
ছোঁ এর ঝলক; নামতে থাকে প্রান্তসীমায়।

ফেলে যায় সন্ধ্যার পায়ের দাগ
এক এক করে ভাঙে শৈশব থেকে যৌবন
নিরালায় একাকী বসে অশান্ত বিকেল
কবিতার স্বর ভাঙে;- কেঁপে ওঠে বাতাসের শিরা
নেমে আসে অগ্নিপথ; এক ঈশ্বর 
ছুটছে অশ্বারূঢ় ; অশ্বমেধ যজ্ঞ এবার।


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

নষ্ট অভিসার 

বিশ্রম্ভালাপের ছড়গুলি ঢেঁকির গুঁতো খেতে খেতে 
গড়ে নেমে আসে সোমরসে স্নান সেরে 
সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে গঙ্গোত্রীমুখ
স্নান সেরে উঠে আসছে রাধার আঁখিরা
চিবুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে পেরিয়ে যায় একেকটি সকাল। 

ঝাড়বাতি জ্বলেনা আজকাল। 
নেই বাইজি আসর,তবু্ও বিশ্বম্ভর রায়ের 
' পিয়ারী কা বাত' ঝলসে দিচ্ছে পিশিত 
ছুঁয়ে আছে চৈতীবাসর,সিংহদুয়ার 
নিরন্তর ভেঙে চলে অশ্ব সংসার, পিঞ্জন। 

থেমে নেই চৌকাঠ, এগিয়ে চলে এক পা এক পা 
ধুয়ে ফেলি ময়লা সময়,সেই কবে
সংক্রান্তির দিনে ময়না ফেলে গেছে  গান
স্পর্শ হাতের ভাঁজে, গান বাঁধে রামী চণ্ডীদাস 
ঐশ্বর্য বাসর,'ঐছন'রূপ দেখা দেয় বারবার। 

শূন্য থেকে শূন্যে, মহাশূন্যযান, ঘুড়িতে উড়িয়ে 
ভোকাট্টা নিশান,রাধা হাট সেরে চলে গেছে কবে
যমুনার চোখে তবু জাগিয়ে বাউল 
নেমে এস 'নইরামনী',বাঁধো এ সংসার
যাপনকাল,কৃষ্ণের বাঁশি, নষ্ট অভিসার।


আমি ও আমরা

সাগরের ঢেউয়ের ডানা ভেঙে উঠে  আসা
কলাবতী শষ্যের ফোঁটাগুলি ফুটে ওঠা, 
যেন কোন নারীর হাতের স্পর্শ পেয়ে 
উতল যমুনা, অঙ্কুরিত ধানবীজ কাদা মেখে
লুটোপুটি খায় উঠোন ঘাসে, শিশির মাখে,
মাখে সোহাগজল,ভোরাই, সূর্যপ্রপাত।

এ এক আত্মখনন,
আমির ভেতরে খুঁজি অসংখ্য আমরা, 
আমি নিঃসঙ্গ, একাকী,চাই সমানুভূতির নির্যাস
ছুঁয়ে আছি উঠোন আঁচল,প্রান্তিক রশি,
নেমে আসে শ'য়ে শ'য়ে ঢেউয়ে ভেঙে যাওয়া
অসংখ্য আমি,ছুঁয়ে থাকে তুমির স্বর।

খুঁজি আমির নির্বিকল্প সমাধি 
বিন্দু বিন্দু ঘামগুলি বলিরেখার 
ভাঁজ পড়ে নেয়, পড়ে থাক অনন্ত গোধূলি, 
শরের বাগান থেকে শালিক খড়কুটো 
বয়ে এনে ঘর বানায়,বাবুইদের ঝুলন্ত সংসার, 
আমি সেই পেন্ডুলাম, 
আমি আমিত্বে নড়ে গেলেই সমূহ বিপদ, 
তখন শূন্য দোতারা হাতে নিঃসঙ্গ আমরা।

Post a Comment

0 Comments