জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/বনশ্রী রায় চক্রবর্ত্তী

গুচ্ছ কবিতা 

বনশ্রী রায় চক্রবর্ত্তী

হকার
                      
হয়তো তুমি লোকাল ট্রেনে যাচ্ছো কোনো কাজে, 
ভাবছো কোনো খরচ তুমি করবে নাকো বাজে। 
পেপারওয়ালা আসছে দেখো একটুখানি দূরে, মশলা মুড়ি ডাকছে দেখো কেমন সুরে সুরে। 
ডাঁসা পেয়ারা হাতে নিয়ে ঘুরছে তোমার কাছে; 
কচি ডাবের মিষ্টি জল, সেটাও হেথা আছে। 
সেদ্ধ ডিমের ঝুড়ি নিয়ে কেউ বা হাঁকে-ডাকে, 
কেউ বা আবার 'ঘুগনি গরম' বলতে শুধু থাকে।
দশ টাকা তে শোন পাপড়ি পাবে তুমি ট্রেনে ; 
পাঁচ টাকাতে আমলকি হয়, এটা রেখো জেনে। 
চপ, সিঙ্গাড়া, ঠান্ডা জল -- এসব পাবে হেথা ; 
চানায় থাকে ভিটামিন সি,  সারাবে দাঁতের ব্যথা। 
এ তো গেল খাবার-দাবার, অন্য জিনিসও আছে ; 
সেসব নিয়ে অনেক হকার ঘুরছে তোমার কাছে।
মোজা, রুমাল, সেফটিপিন, আছে নেল কাটার ; 
ছুরি, কাঁচি, হেডফোন আর মোবাইল কভার। 
গামছা ওয়ালা আসছে দেখো গামছা নিয়ে কাঁধে ; 
এরা তোমায় ঠকাবে না, ফেলবে না কো ফাঁদে।  
এদের কাছে অপ্রয়োজনেও যদি কিছু কেনো, 
তাতেই এদের হাঁড়ি চড়ে, এই কথাটি জেনো। 
ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলো রাস্তার পানে চেয়ে, 
বাবার আসার পথের দিকে যায় যে তারা ধেয়ে। 
এরা সবাই পরিশ্রমী, 
আছে এদের শিক্ষা ; 
তাই তো এরা দিচ্ছে যে শ্রম, করছে না কো ভিক্ষা। 

🍂

            
চাপ
           
ছোটো থেকেই এখন সবাই ভীষণ চাপে থাকে,
বাবা মায়েরা তাদের এখন অন্য চাপেও রাখে। 
ফার্স্ট যে তোমায় হতেই হবে পড়াশুনা করে,
টিভির থেকে থাকতে হবে এখন থেকে দূরে। 
করবে না তো ছোটাছুটি, করবে না তো খেলা ; 
সারা বছর ধরে শুধু পড়বে সারা বেলা। 
মোবাইলটা নিচ্ছো কেন, ভীষণ ধমক দেয় ; পরক্ষণেই মোবাইলটা নিজেরাই নেয়। 
সকাল - বিকেল টিউশন আর ইস্কুলেতে যায়, 
এর মধ্যেই তারা তাদের খুশি খুঁজে পায়। 
আঁকার ক্লাস, গানের ক্লাস, নাচের দিদিমণি ; সাঁতারটাও শিখতে হবে- এই কথাটাই জানি। কম্পিউটার না শিখলে শিখলে তুমি কি? 
কোডিং তোমায় শিখতে হবে, আগেই বলেছি। 
নাইন থেকে হয়ে যায় সকল কিছু বন্ধ, 
পড়ার চোটে থেমে যায় জীবনেরই ছন্দ।  
পড়ার জ্বালায় নাজেহাল সকল ছেলে-মেয়ে, 
সবাই চায় সেরা হতে সকলের চেয়ে। 

        
বঙ্গপ্রকৃতি
                        
ওরে আমার মন, আকুল পারা মন ; 
সুদূরপানে না তাকিয়ে ঘরের কথা শোন। 
নাই বা গেলি সাহারা, কিংবা চেরাপুঞ্জি ; 
মন ভোলানো, সুর জাগানো, শিউলি ঝরা, শিশির পড়া ; 
রক্তিম এক সূর্যে ঘেরা, অপূর্ব যে তখন ধরা ; 
তার কথাটি শোন, ওরে আমার মন। 
মিষ্টি সুরে দোয়েল পাখি করছিল যে গান, 
সাতভায়ারা ঝগড়া করে করেছে যে মান। 
মৌটুসিটা সকাল থেকে ফেরে ডালে ডালে, 
শালিকেরা সব ঝগড়া করে পাশের বাড়ির চালে। 
মাছরাঙারই রূপের বাহার দেখতে লাগে খাসা, 
নানান রকম পাখি দিয়ে প্রকৃতি যে ঠাসা। 
গোধূলি বেলায় দিগন্ত রেখায় সূর্য যখন অস্ত যায়, 
কী অপূর্ব রূপে তখন প্রকৃতিকে আমরা পাই! 
বৃষ্টিস্নাত আকাশেতে রামধনুটি ফোটে,
এসব দৃশ্য দেখা কি আর সুদূরপানে জোটে? 

       
সফলতার চাবি
                         
হয়তো তুমি কোনো ক্ষেত্রে হওনি সফল আজ, 
তাই বলে কি মুখটি ঢেকে লুকাবে তোমার লাজ? 
সবাই তোমায় সান্ত্বনা দেয়, দেখায় সমবেদনা ; 
জানি এসব তোমার কাছে ভীষণ রকম যন্ত্রণা। 
আরও অনেক ক্ষেত্রে আছে তোমার কাছে খোলা, 
সেসব ক্ষেত্রে শুরু হোক আজ তোমার পথ চলা। 
পারদর্শিতা দেখাও তুমি ক্ষেত্র বেছে নিয়ে, 
এতেই তুমি সফল হবে তোমার সবটা দিয়ে। 
যাদের কাছে লাজে তুমি লুকাও তোমার মুখ ; 
তাদের কাছে আসবে তুমি, ফুলিয়ে তোমার বুক। 
এই আঘাতই তোমার কাছে সফলতার চাবি ; 
সফল তোমায় হতেই হবে, এটাই আমার দাবি। 
আঘাত কাউকে ঘুরে দাঁড়াতে শেখায় এটা জেনো ; 
এই আঘাতই হয়তো আশীর্বাদ, মানো কি না মানো। 
লোকের কথায় কান দিও না, কোরো না কোনো মান ; 
জেনো তাদের এসব কিছু ভালো মানুষের ভান।
লোকের কথায় কী আসে যায়, লুটছে তারা মজা ; 
জীবন খানা সাজিয়ে নাও, নইলে জীবন বোঝা।

Post a Comment

2 Comments

  1. Soumen RoyAugust 23, 2025

    বাঃ! সহজ ছন্দে গভীর কথা।

    ReplyDelete
  2. কমলিকা ভট্টাচার্যAugust 23, 2025

    ভাষার সরলতায়,
    কথা গুলো মনে দাগ কেটে যায়।


    ReplyDelete