গুচ্ছ কবিতা
শ্রীতনু চৌধুরী
ভগবান ভিক্ষা
প্রণত প্রণয়
ধুলোয় ঢেলে দেবার আগে
দৃষ্টি রাখো দারুব্রহ্মে
কেউ একেশ্বর নয়
অন্তর নিবেদনের আগে
তুমি কি হওনি যুগল অনুভূত?
দ্বৈত শিখা অন্তরে
জোড়া শালিকের স্বর্গবাস
তোমার বামদিকের ছায়াকে
জিজ্ঞাসা করো - সে কে?
একলা দর্শনে চলে গেলেও
আমার মনস্কাম
তোমার হাত ধরেই
করেছে তাঁর দর্শন
তোমার পরাভূতে সে'ই তো অবিনশ্বর
লোনা জলে পিচ্ছিল পথ
রাধে,
কৃপা করে একটি ভগবান ভিক্ষা দাও
মীমাংসা
শব্দ ও শ্বাসের বৈতরণী রেখার ভিতর
তার প্রবাহ
সেই পদ্মবারি মহার্ঘ অনুভবের
একান্ত জিজ্ঞাসা - কে ব্রহ্ম !
কূলের এপ্রান্তে
নিকটতম মায়াঅঞ্জন রেখায়
বিভ্রান্ত দিনাতিপাত
বসন্ত বাউল নাকি অমলতাস
কে বেশি তোমার প্রিয়
এই মীমাংসায়
একটি নৌকোবতি ঘাটের সন্ধান নিয়ত
ওপারে যাব
শুনেছি
সকল সমাধান নিয়ে
শূন্যর মাঝে বসে আছো তুমি।
বৃষ্টিনামা
সম্মতিপত্রর বাম দিকে
হেঁয়ালির মত ঝুলে আছে
প্রথম আষাঢ়
বৃষ্টি হবে কি হবে না
তা যদি জেনে যেতাম রাই
তাহলে রামধনুটি
আমার নিজস্ব হত
স্লেটে লুকিয়ে ফেলার আগে
একটি পুষ্পসর তোমার দিকে
নিক্ষেপ করে দেখতাম
ধ্যানস্থ অন্তরে
যে বিগ্রহ রচনা করে রেখেছ
কতটা চন্দন চর্চিত করে এ মালা
পরাও তার গলায়
মেঘ ও বৃষ্টির মাঝে
চুরাশি লক্ষ ভ্রমণ
তবু এখনো জানা হল না
আজ ঠিক কতখানি বৃষ্টি হবে
বা আদৌ হবে কিনা ?
অতৃপ্ত বৈতরণী
বন্ধু স্বভাবের নিকট মাঝে মাঝে
খুলে ফেলতে হয় পঞ্চপল্লব
তার নবপত্রিকা নববিধা
আয়না সম্মুখ
অচেনা মানুষকে প্রশ্ন করি - কে?
কী চাও?
খন্ডিত আত্মার তরবারির নাম প্রেম
তার কাছেই একটি নামের যাচঞা নিয়ে
মোহন মাধুকরি,
নিজেকে জানার জাহ্নবী জিজ্ঞাসা
স্রোত-সরিৎ অন্তরতম গাঙে
শুভ্র কাশ
বুকের মান্দাসে সহযাত্রী হলে
তাকে রাধা নামে ডাকি
কোন গন্তব্যই নির্দিষ্ট নয়
তবুও যৌথ যাত্রার
এই যে আনন্দ লহরী
সেই সুরেই
পার হয়ে যেতে পারি
অতৃপ্ত বৈতরণী
আয়ু ও আনন্দ
লুপ্তপ্রায় অনভ্যাস
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মত
জেগে উঠে মধ্যরাতে
জলের ঠিকানা তখন বহুদূর
অজানা অন্ধকার গাঢ়তর হতে হতে
সবুজ আভাষ রোপন করেছি মণিপুরে
কিশলয় সহবাসে সংযম সংহতি
ভুলে গেছি
খাতের খতিয়ানে নদীর উল্লেখ
সময় পেরিয়ে গেলে
চাষের চৌহদ্দিতে শুধু আফসোস
এখনো কতটা সে শস্যবতী
অথবা লাঙল এখনো
খুঁজে পায় কি না সীতা সমাচার
এসবই রাত পাখির নিকট গুঢ় সংকেত
রাতের জন্মদ্বার প্রসব করে দুঃখ ও সুখ
ভেজা ঘাস কখনো ঘুমায় না
আয়ু ও আনন্দ
শিশির হয়ে
ঝুলে থাকে শীর্ষে শীর্ষে
0 Comments