জ্বলদর্চি

কথাকার সন্মাত্রানন্দ-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্বলদর্চি-র পক্ষে মৌসুমী ঘোষ


“অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে আমি আমার প্রিয় লেখকদের নাম বলেও একথা স্বীকার করছি, যদি প্রিয় লেখকদের কাছ থেকে আমি আমার কাক্ষিত লেখাটি পেয়ে যেতাম তাহলে আমি কিন্তু কলম ধরতাম না”

কথাকার সন্মাত্রানন্দ-এর সাক্ষাৎকার  
নিয়েছেন জ্বলদর্চি-র পক্ষে 
মৌসুমী ঘোষ 

মৌসুমীঃ  ত্রিপুরার মনুনদী আপনার ভালোবাসা – মনুনদীকে কেন্দ্র করে আপনার ত্রিপুরায় অতিক্রান্ত করা সময়ের কথা শুনতে আগ্রহী আমরা। 

সন্মাত্রানন্দঃ  মনুনদী ভৌগোলিক ভাবে উত্তর ত্রিপুরার একটি নদী, যেটি ত্রিপুরার মাটি ধুয়ে বাংলাদেশে ঢুকে তারপর সাগরে গিয়ে পড়েছে। এই নদীটি অত্যন্ত প্রাচীন। আমাদের দেশে যেসব প্রাচীন পুরাণ তাতেও এই মনুনদীর উল্লেখ আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই নদীর সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না, কারণ আমি তো ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় থাকতাম। সেখানকার কাছাকাছি নদী গোমতী আর হাওড়া নদী, যেটা বাংলাদেশে ঢুকে হয়ে গেছে তিতাস। মনুনদীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় আমি যখন উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহর, ধর্মনগর — ঐদিকে যাই। আসলে ততদিন অবধি আমি আমার লেখালেখি প্রকাশ করবার কথা ভাবিনি। কিন্তু সেই প্রথম মনুনদীর ধারে বসে থাকতে থাকতে আমার অনুভব হয় যে, আমি যা কিছু লিখছি সেই লেখালেখিগুলি অপ্রকাশিত রাখা ঠিক হবে না। আমি যেমন করে ভাবছি তেমন করে নিশ্চয়ই অন্য কেউও ভাবেন। তাঁদের জন্য এই লেখাকে বই-এর আকারে প্রকাশ করা দরকার। এই কারণেই মনুনদী, তার তীরবর্তী মানুষজন, গাছপালা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য — এইসবকিছুর প্রতি আকর্ষণ গড়ে ওঠে। 
কোনো বই যখন কোনো লেখক উৎসর্গ করেন, তখন কোনো আত্মীয়স্বজন বা প্রিয়জনকে তা উৎসর্গ করেন। আমি যেহেতু খুব কম বয়স থেকে ঘরছাড়া জীবন যাপন করেছি, তার ফলে আমার সাথে অন্য কোনো মানুষের খুব নিবিড় সম্পর্ক নেই। সেই জন্য আমি আমার প্রিয় মনুনদীকে আমার বই উৎসর্গ করেছি। 

মৌসুমীঃ  আপনার শিক্ষক-জীবন, লেখক-জীবন, সেবাব্রতী জীবন, গ্রন্থাগারিক-জীবন – কোনটি আপনার বেশি প্রিয়? 

সন্মাত্রানন্দঃ  আমি আসলে জীবনকে খণ্ড খণ্ড করে দেখিনি। আমার কাছে জীবন একটাই। সেটা কখনো গ্রন্থাগারিকের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল, কখনো সেবাব্রতীদের সঙ্গে, কখনো সংঘভুক্ত সন্ন্যাসী জীবনের সঙ্গে বা এখন যে লেখালেখি করি, এই লেখালেখির সঙ্গে আমার জীবন যুক্ত হয়ে আছে। একটাই জীবন, কিন্তু সেই জীবনের বিভিন্ন প্রকাশ। আমি এখন যে অবস্থায় আছি, সেই অবস্থানটাকেই আমার ভাল লাগে। আগে আমি কোন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম সেটা আমার কাছে এখনকার থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ সবসময়ই। 

মৌসুমীঃ  একটি উপন্যাস শেষ করে তবে কি আপনি পরেরটির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন, নাকি একসঙ্গে দু-তিনটি উপন্যাস লিখে চলেন মনে মনে? 

সন্মাত্রানন্দঃ  আমার উপন্যাস সাধারণত চিন্তা-নির্ভর। আমার কাছে কখনোই কোনো উপন্যাস তার কাহিনি বা চরিত্র বা পরিবেশ এইসবের মধ্যে দিয়ে আসেনি। আমাকে প্রথমে একটা চিন্তা দংশন করে। কোনো একটা ঘটনার মধ্যে ফেলে সেই চিন্তাটা বোঝার প্রবণতা আমার মধ্যে রয়েছে। আমি যা যা লিখছি তার চিন্তাগুলো, যেমন সময়ের কোপ্ল্যানার বা সামতলিক মডেল ভাবছি, কিংবা ধরা যাক আমাদের জীবনের সম্ভাবনার বিকল্প সম্ভাবনা কোথাও ঘটে চলেছে – এটা নিয়ে ভাবছি। এই ভাবনাগুলো আমার মধ্যে এক সঙ্গেই আছে। এবার কোনো একটা ভাবনা মনের উপরিতলে ভেসে উঠল, তখন সেই চিন্তাটাকে আস্তে আস্তে কোনো একটা ঘটনার মধ্যে ফেলে বোঝার চেষ্টা করি। তার জন্য যা যা পড়াশোনা করার দরকার, করি। আমি একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ করতে পারি না। যতক্ষণ না একটা শেষ হয়, অন্যটা করিনা। এই কারণে আমি খুব বেশি লিখতে পারি না। 

মৌসুমীঃ  ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’ বা ‘তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি’ — এই উপন্যাস দুটির সৃজনে কল্পনা যোগ করতে গিয়ে কি তথ্যকে কখনো পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন নাকি ইতিহাসের ঘটনা, সাল পুরোপুরি অবিকৃত রেখেই লিখেছেন? চাইলে প্রবন্ধকারও কি এটিকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে? 

সন্মাত্রানন্দঃ  প্রথমত, কোনো উপন্যাসকে কোনো প্রবন্ধের তথ্যসূত্র হিসেবে ডকুমেন্টেশান করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। কারণ উপন্যাসের মধ্যে অনেক সৃজনশীল কল্পনা মিশে থাকে। ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’ আর ‘তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি’ দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। ‘নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা’ উপন্যাসের আশ্রয় অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জীবন। অতীশ দীপঙ্কর একজন ঐতিহাসিক চরিত্র। তিনি আমাদের থেকে আটশো-নয়শো বছরের পুরোনো মানুষ। অন্যদিকে ‘তোমাকে আমি ছুঁতে পারিনি’ উপন্যাস সিদ্ধার্থের বুদ্ধ হয়ে ওঠার যে আখ্যান সেটাকে ঠিক ঐতিহাসিক বলা চলে না। সেটা অনেক বেশি বুদ্ধিস্ট মাইথোলজির সঙ্গে মিশে একরকম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি ‘নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা’ লেখার সময় অতীশ দীপঙ্করের জীবন সম্পর্কে যা তথ্য পেয়েছি সেই তথ্যের ব্যাপারে জ্ঞানতঃ কোথাও বিকৃতি ঘটাইনি। কিন্তু সেটাকে পরিবেশন করার সময়, যেমন অতীশ দীপঙ্করের বাল্যজীবনে তার এক বাল্যপ্রেমিকাকে কল্পনা করেছি। এরকম কোনো চরিত্র কিন্তু অতীশের জীবনের সঙ্গে যুক্ত নয়। উপন্যাস একটি ক্রিয়েটিভ ইমাজিনেশানের ফল। সেখানে অতীশ দীপঙ্করের জীবনের সঙ্গে কিছু যোগ করা হয়েছে, কিন্তু কোনো কিছুকে জোর করে ধরে পাল্টানো হয়নি। এ সত্ত্বেও কোনো উপন্যাসকে কোনো ইতিহাস-আশ্রয়ী গবেষণার তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। 

মৌসুমীঃ  ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’ উপন্যাসের, তিনটি যুগের তিন নারী চরিত্র, কুন্তলা, বজ্রডাকিনী স্বয়ংবিদা, জাহ্নবী — উপন্যাসে বেশ প্রভাবশালী স্বাধীন চরিত্র। অতীতের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সত্যিই কি এতটা স্বাধীনতা ছিল? 

সন্মাত্রানন্দঃ  কুন্তলা যে সময়ের, সেটা পাল-যুগ। বজ্রডাকিনী স্বয়ংবিদার সময় সেন-যুগ চলছে। সবচেয়ে উদারতা ছিল পাল-যুগে। কারণ সেই সময় ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ভাব-আন্দোলনের বিস্তারের ফলে রক্ষণশীল হিন্দুধর্ম কিছুটা পিছিয়ে যায়। এই দেশটা খুব অদ্ভুত। এখানে সমাজের সকল অংশে একই নিয়ম প্রযোজ্য হয়না। মানে মেয়েদের যে চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিক বন্ধন সেটা তো ছিলই। কিন্তু সেই একই সমাজে যে কিনা সন্ন্যাসিনী, বা যারা ভৈরবী, বা উচ্চবিত্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা ছিল। সাধারণভাবে মধ্যবিত্ত স্তরে রক্ষণশীলতা বা পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাবটা বেশি। কিন্তু যারা সমাজপরিত্যক্তা বা যাঁরা প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছেন, যাঁরা সন্ন্যাসিনী, তাঁরা অনেক স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারতেন। উপন্যাসে কুন্তলা সতেরো আঠারো বছর বয়সের মেয়ে। রাজপুত্রের সঙ্গে কুন্তলার সম্পর্ক নিয়ে কানাকানি হওয়ায় সে তান্ত্রিক অদ্বয়বজ্রের সঙ্গে গোপনে গৃহ ত্যাগ করে ও ভৈরবী হয়ে যায়। পরে তাকে একটি গণচক্রের অনুষ্ঠানে আবিষ্কার করা হয়, যে-অনুষ্ঠানে রাজপুত্র দীপঙ্কর গুহ্যজ্ঞানবজ্র নামে অংশগ্রহণ করছেন। অন্যদিকে স্বয়ংবিদা নিজের পুরুষসঙ্গী নির্বাচনে সম্পূর্ণ স্বাধীনা ছিলেন। এমনটা কিন্তু নয় যে সমাজ তখন খুব উদার ছিল। কিন্তু যত আমরা পরের দিকে আসছি পনেরো থেকে আঠারো শতাব্দীতে, মেয়েদের ওপর নির্যাতন, মেয়েদের স্বাধীনতা খর্ব করা, মেয়েদের অধিকার ক্রমশ সঙ্কুচিত হতে থাকছে। অতীতে তুলনায় এটা কম ছিল, অন্তত পাল-যুগে। তাছাড়া কুন্তলা বা স্বয়ংবিদা সমাজের যেকোনো মেয়ের প্রতিভূ নয়। এদের সামাজিক অবস্থানটা ব্যতিক্রমী। জাহ্নবী কিন্তু এখনকার মেয়ে, সে পুরুষশাসিত। তার বিয়ে কার সঙ্গে হবে সেটা তার বাবা ঠিক করছে। অন্যদিকে স্বয়ংবিদা উগ্র ব্যক্তিত্বসম্পন্নাই শুধু নন তিনি পণ্ডিতও।  

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

মৌসুমীঃ ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’য় তিনটি যুগে আপনার অনায়াস যাতায়াত। সেক্ষেত্রে তিন যুগের ঘটনায় ভাষার প্রয়োগ আপনি কীভাবে সামলেছেন, এ যুগের পাঠকদের কথা ভেবে? 

সন্মাত্রানন্দঃ  যাঁরা ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’ পড়েছেন, তাঁরা অনেকেই বলেছেন, ভাষাটা কঠিন। আমি ভেবে দেখেছি, কঠিন যে লেগেছে, সেটা আসলে ভাষার কাঠিন্য নয়। সেটা চিন্তার কাঠিন্য। ভাবনার কঠিনতা। মাঝে মাঝে যে দার্শনিক কথাবার্তা আসছে, সেগুলো গ্র্যাস্প করতে কষ্ট হচ্ছে। আমি একটা গল্প বলছি একটা পার্টিকুলার টাইম ফ্রেমে, এখন যদি গল্পটাকে একবার হাজার বছর পিছিয়ে, একবার হাজার বছর এগিয়ে যাই তাহলে পাঠকের মনের যে জড়তা, সেটা বাধা পায়। সেই বাধাটাকে সবাই ভাবছে ভাষার কাঠিন্য। যেমন, 'কলন্দক' ( কাঠবিড়ালি) শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে, কলন্দকের যে বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে--সেটা এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফ দিয়ে যাচ্ছে। আকারে ছোটো, তার গায়ে রোঁয়া ও দাগ আছে। লম্বা পুচ্ছ। তাই 'কলন্দক' মানে না জানলেও পাঠক চাইলেই কলন্দক মানে কাঠবিড়ালি এটা বুঝতে পারবে প্রসঙ্গ থেকে। ফলে মানে না জানলেও কাহিনিকে অনুসরণ করতে কোনো অসুবিধা হবার কথা নয়। কলন্দক - এই শব্দটা ব্যবহার করেছি সময়টাকে পুনর্নির্মাণ করার জন্য। অতীতকালের ঘটনা বলার জন্য লেখককে কালোপোযোগী ভাষা-সরিৎ নির্মাণ করতে হবে। অনেকে অবশ্য বলেন এখনকার ভাষাতেই সেটা নির্মাণ করা যাবে। আমি অবশ্য তা ভাবি না। পিছনে একটা শব্দপঞ্জী যোগ করার কথা ভেবেছিলাম একসময়… পরে মনে হয়েছে যাঁরা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক সমগ্র পড়ে বুঝতে পারছেন, তাঁরা এটাও বুঝবেন। 

মৌসুমীঃ ‘ছায়াচরাচর’ উপন্যাসে চারটি সমান্তরাল বিশ্বে একটি জীবন প্রবাহ — এই শৈলী কি পশ্চিমী কোনো সাহিত্যের অনুপ্রেরণা থেকে এসেছে? 

সন্মাত্রানন্দঃ  না, না, ছায়াচরাচরের জন্য পশ্চিমা সাহিত্যের কাছে কোনো ঋণ নেই। এটা এসেছে পুরোপুরি যোগবাশিষ্ঠ থেকে। যোগবাশিষ্ঠ আমাদের একটি প্রাচীন বেদান্ত-গ্রন্থ। সেখানেও কাহিনির আশ্রয়ে দার্শনিক চিন্তা পরিবেশন করবার রীতি লক্ষ করা যায়। এটা ঠিক সমান্তরাল বিশ্ব নয়। কারণ সমান্তরাল বিশ্ব তো এই পৃথিবীর মধ্যে থাকে না, আলাদা আলাদা ভুবন। এখানে কিন্তু কমলনয়ন, পদ্মাক্ষ, রাজীবলোচন — এরা সকলেই একই সঙ্গে এই পৃথিবীতেই আছে। কমলনয়ন চরিত্রটি মধুসূদন সরস্বতীর জীবনী, বাকিগুলি আমার কল্পনাশ্রিত।   

মৌসুমীঃ ‘ধুলামাটির বাউল’ – আপনার আত্মজীবনী। সন্ন্যাস জীবনে পূর্বাশ্রমের কথা নাকি বলা চলে না। সেক্ষেত্রে এটি রচনাকালে আপনাকে কিছু কি গোপন রেখে লিখতে হয়েছে? 

সন্মাত্রানন্দঃ  না ওই বইতে, না অন্য কোনো রচনায় আমি আত্মজীবনী লিখিনি। ‘ধুলামাটির বাউল’কে আমি আত্মজীবনীমূলক রচনা বলছি না। এটি মূলত জার্নাল। ওই বইতে আমার ভূমিকা, তা একজন দ্রষ্টার। আমার চারপাশে যা ঘটেছে, তার থেকে কিছু কিছু আকর্ষণীয় ঘটনা আমি গদ্যাকারে লিখেছি। আমি নিজেকে সেখানে কোথাও জড়াইনি। আমার জীবনে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে সেগুলো আমি ওখানে কিছুই উল্লেখ করিনি। আমি এমন কেউ নই, যার আত্মজীবনী লেখার দরকার আছে। 

মৌসুমীঃ  আপনার প্রিয় লেখক? 

সন্মাত্রানন্দঃ  এটি খুব কঠিন প্রশ্ন। আমার প্রিয় লেখকরা হচ্ছেন, অবশ্যই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, গ্রীক লেখক নিকোস কাজানজাকিস, খলিল জিব্রান… আমাদের অগ্রজদের মধ্যে বাণী বসু, রবিশঙ্কর বল, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস… এছাড়া চার বন্দ্যোপাধ্যায়--সবাই আমার প্রিয় কথাকার। 
তবে পাঠক যেদিন অনুভব করে তার পাঠ্যবস্তু তাকে নিজেকেই নির্মাণ করে নিতে হবে, চারপাশের তার প্রিয় লেখকরাও তাকে তার উপযোগী পাঠ্যবস্তু দিতে পারছেন না, তার মনে হচ্ছে, আগে যা যা লেখা হয়েছে তার থেকে আরো ভিন্নতর কোনো লেখাকে সে আস্বাদ করতে চায়, অথচ সেরকম কোনো লেখা পাচ্ছে না, ঠিক তখনই একমাত্র সেই পাঠক লেখক হয়ে ওঠে। অর্থাৎ সে নিজেই নিজের পাঠ্যবস্তু নির্মাণ করতে শুরু করে। অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে আমি আমার প্রিয় লেখকদের নাম উল্লেখ করেও একথা স্বীকার করছি, যদি প্রিয় লেখকদের কাছ থেকে আমি আমার কাক্ষিত লেখাটি পেয়ে যেতাম তাহলে আমি কিন্তু আর কলম ধরতাম না।


Post a Comment

5 Comments

  1. অনেক কথা জানলাম। ভালো লাগল এই সাক্ষাৎকার । শুভেচ্ছা।

    ReplyDelete
  2. ভীষণ ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  3. আনন্দম🙏

    ReplyDelete
  4. পুরোটা পড়লাম এক নিঃশ্বাসে। এই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন লেখক তাঁর লেখক সত্তার অনেকটা আকাশ ধারণ করে রেখেছে এই সাক্ষাৎকার। তিনি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি আমার বড়ো প্রিয় একজন মানুষ এবং লেখিকা। প্রতিটি প্রশ্নের অন্তরালে তাঁর গভীর অনুধ্যান সহজেই ধরা পড়ে।এই সাক্ষাৎকার একজন লেখকের প্রতি আর এক লেখকের শ্রদ্ধা নিবেদন।

    ReplyDelete