জ্বলদর্চি

আর্কিমিডিস ও লবণ সত্যাগ্রহ /সৌমেন রায়


আর্কিমিডিস ও লবণ সত্যাগ্রহ

সৌমেন রায়      

                 

শৈশব সকলের কাছেই কম বেশি আনন্দদায়ক। সে জীবনে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নেই, নেই কোন স্বপ্ন পূরণের টার্গেট। যেন বড়দের বাৎসল্য রসে নিমজ্জিত হয়ে তা হয়ে উঠে নির্ভার। এই যে (স্নেহ সুধায়) নিমজ্জিত থাকার ফলে নির্ভার হয়ে ওঠা( আপাত ওজন কমে যাওয়া) কিন্তু বস্তুজগতেও সত্য। কোন বস্তুকে জলে ডোবালে (যে কোন তরলে, প্রকৃত অর্থে যে কোন প্রবাহীতে)জলের মধ্যে সেটাকে হালকা মনে হয় তার কারণ নিমজ্জিত বস্তুর ওপর তরল ঊর্ধ্বমুখী একটি বল প্রয়োগ করে। এটা হল প্লবতা,আর এই কারণেই হালকা লাগে।তরল কতটা বল প্রয়োগ করবে মানে বস্তুটাকে কতটা হালকা মনে হবে সেটার নিয়মই বের করেছিলেন আর্কিমিডিস। ওজনের আপত হ্রাস অপসারিত তরলে ওজনের সঙ্গে সমান। আর এই কারণেই তিনি আমাদের মতো সাধারণ বিজ্ঞান শিশিক্ষুর কাছে পরিচিত। তিনি আরো পরিচিত তার ‘ ইউরেকা, ইউরেকা’ গল্পের জন্য। সিরাকাউস এর রাজা তার রাজ মুকুটের সোনাতে খাদ বের করতে হুকুম দিয়েছেন। এ আর এমনকি, মুকুট গলিয়ে নিলেই তো হল। কিন্তু শর্ত কঠিন- রাজমুকুট গলানো যাবে না। চিন্তিত আর্কিমিডিস স্নান করতে নামলেন জলভরা চৌবাচ্চায় ( বাথটাব?)। উপচে পড়লো খানিকটা জল। বিজ্ঞানী পেয়ে গেলেন তার তত্ব। অবিন্যস্ত পোশাকে ,' ইউরেকা, ইউরেকা’( পেয়েছি পেয়েছি) বলতে বলতে ছুটলেন রাজসভায়। যদিও তিনি আরো বহু ধরনের কাজ করেছেন কিন্তু সেগুলি আমরা জানি কম।

                     আর্কিমিডিসের কোন প্রামাণ্য জীবনী পাওয়া যায় না। সব তথ্যই সমসাময়িক নথি থেকে সংগৃহীত। জন্ম আনুমানিক 287 খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইতালির নিকট সিসিলি দ্বীপের সিরাকাউস এ। পড়াশোনা মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায়। উদস্থিতিবিদ্যা(স্থির তরলের বিদ্যা) ছাড়াও গণিতে সমতল, উপবৃত্ত, পরাবৃত্ত, গোলক , স্ফেরোএড ইত্যাদির উপর তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।  নিঃশেষিকরন পদ্ধতিতে( theory of exhaution) তিনি পাই(π) এর মান এবং বৃত্ত ,গোলক, উপবৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করেন।এই তত্ত্বের জনক ইউডক্সাস(খ্রিস্ট পূর্ব 408-355)। সেটি পূর্ণতা লাভ করে আর্কিমিডিসের হাতে। আর এই পদ্ধতি সমাকলন বিদ্যার (ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসের) পূর্বপুরুষ। তিনিই প্রথম গণিত ও ফলিত বিদ্যার সমন্বয় সাধন করেন। স্ক্রু পাম্পের সাহায্যে (দীঘা সায়েন্স সেন্টারে মডেল আছে) জল সেচের সুবিধা করেন। সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবীর পরিক্রমণ বোঝাতে প্লানেটরিয়াম বানান। সে প্লাটোরিয়ামে গ্রহণ পর্যন্ত দেখা যেত সময় মেনে। বহুবার তিনি রোমের আক্রমণ থেকে বাঁচান ছোটো দ্বীপ টিকে। কখনো অবতল দর্পণ ফোকাস করে জাহাজের পাল পুড়িয়ে, আবার কখনো ক্যাটাপল্ট নামে পাথর ছোড়ার যন্ত্র বানিয়ে। কিন্তু  তিনি নিজে এই সমস্ত ব্যবহারিক প্রয়োগ করার যন্ত্র গুলিকে অবসর বিনোদনের খেলনা বলে মনে করতেন। তার ভালোবাসার জায়গা ছিল তাত্ত্বিক গণিত ও পদার্থবিদ্যা।



জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


 মাতৃভূমিকে বহুবার রক্ষা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। দীর্ঘদিন অবরোধের পর সিরাকাউসের দখল নেয় রোমান সৈন্যরা। কথিত আছে সেই সময়  আর্কিমিডিসকে হত্যা করা হয়। কেউ বলেন তিনি বৃত্ত সংক্রান্ত কোনো সমস্যার সমাধানে নিমগ্ন ছিলেন। রোমান সৈন্যরা তাকে  সেনানায়ক এর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। তিনি শুনতে পাননি। সৈন্যদের কাছে এটি অবজ্ঞা ।তাই তারা আর্কিমিডিসের গাণিতিক মস্তিষ্ক ধড় থেকে আলাদা করে দেয় তরবারি দিয়ে।বয়স তখন পঁচাত্তর। অনেকে বলেন দখল কালে তিনি জ্যামিতিক যন্ত্রপাতি গুলি এমন লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন যে সৈন্যরা মনে করে তিনি সোনা দানা নিয়ে যাচ্ছেন।ফলে যা হওয়ার তাই হয়।তাদের জানার অবশ্য কথা নয় ঐ মাথা , ঐ যন্ত্র সোনার থেকে কতো দামী!ঠিক এমনটি না হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গিয়েছিলেন আরেক বিজ্ঞানী।তিনি হেনরি মোজেল(1888 -1915)।

   মোজেল ও তার আনুষঙ্গিক কথা বলতে গেলে অনেকটা ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে যাবে। সে গীত কারো না- পসন্দ হলে তিনি অনায়াসে উল্লম্ফন দিয়ে পরের অনুচ্ছেদে চলে যেতে পারেন। মোজেল কাজ করেছেন রাদারফোর্ডের অধীনে। তিনিই প্রথম অ্যাটমিক ব্যাটারির সন্ধান পান তেজস্ক্রিয় রেডিয়াম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে। তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত রশ্মি ও তাপের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তড়িৎ প্রবাহ  পাওয়ার ব্যাবস্থাকে বলে অ্যাটমিক ব্যাটারি। যেখানে নিরবিচ্ছিন্ন তড়িৎ এর প্রয়োজন হয় সেখানে অ্যাটমিক ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। যেমন মহাকাশযান, পেসমেকার। তবে তার সবচেয়ে বড় কাজ হলো পর্যায় সারণী সংশোধন। রুশ বিজ্ঞানী মেন্ডলেফ(1834-1907) বিভিন্ন মৌলকে পারমাণবিক ভরের ক্রমে সাজান কাজের সুবিধার জন্য। তখনো পরমাণু ক্রমাঙ্ক এর সঠিক ধারণা ছিল না। মোজেল্ বিভিন্ন  ধাতুর উপর ক্যাথোড রশ্মি ফেলে দেখেন বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের এক্স রশ্মি বেরোচ্ছে।ঠিক যেমন আমাদের মনের গভীর থেকে একই ঘটনার ভিন্ন প্রতিক্রিয়া বেরিয়ে আসে । পরমাণুর হৃদয় বার্তা পর্যবেক্ষণ করে দেখান উৎপন্ন এক্স রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সঙ্গে নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যার সম্পর্ক আছে।অর্থাৎ হস্তগত হলো পরমাণুর অন্তস্থলের ( নিউক্লিয়াসের) ঠিকুঞ্জি। বিজ্ঞানী আন্তোনিয়াম ব্রুক ও একই কথা বলেছিলেন কিছুদিন আগে। কিন্তু মোজেল প্রমাণ করে দেখালেন। তারই আবিষ্কার পরমাণুর গঠন সম্পর্কে রাদারফোর্ডের তত্ত্বকে পোক্ত ভিত্তি দান করে।সমসাময়িক কালে অনেকেই কাজ করছিলেন এক্স রশ্মি নিয়ে। বিজ্ঞানী রন্টজেন (1845-1923) হঠাৎ করেই আবিষ্কার করেছিলেন এক্স রশ্মি(1895)।আবিষ্কারের কয়েকমাস পরেই চিকিৎসায় ব্যাবহার হতে শুরু করে তার স্ত্রীর দৌলতে।তিনি হঠাৎ করেই হাতটি রেখেছিলেন রশ্মির গতিপথে। হাড়ের ছবি উঠার পর চারিদিকে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।কিন্তু  রন্টজেন পেটেন্ট নেননি, নিলে কোটি কোটিপতি হতে পারতেন।এমনকি নোবেল পুরস্কারে প্রাপ্ত অর্থ ( 1901) দিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।এই এক্স রশ্মি ব্যাবহার করে ভন লাউ দেখলেন পথার্থের ক্রিস্টাল গুলিতে অপবর্তন ঘটানো যায়।আলো( তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ) তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের প্রায় সমান মাপের কোনো বাধার সম্মুখীন হলে বেঁকে গিয়ে আলো ছায়া সৃষ্টি করে,ঠিক যেমন আমাদের চেতন মনে কোনো অনুভূতি ধাক্কা খেয়ে অবচেতনে আলো আঁধারের সমাবেশ ঘটায়। এটাই হলো অপবর্তন। সেই অপবর্তনের সাহায্যে ক্রিস্টালের গঠন বলে ব্র্যাগ রা বাপ-বেটা দুজনে নোবেল পান(1915)।ভন লাউ আর ফ্রাঙ্ক ( ফ্রাঙ্ক – হার্টজ পরীক্ষা) দুজনেই নাৎসি বিরোধী ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রাঙ্ক স্বেচ্ছাসেবক হয়ে যোগ দিয়েছিলেন জার্মান বাহিনীতে। আইরন ক্রসও পান পুরস্কার হিসাবে।কিন্তু পরে নাৎসিরা ক্ষমতায় এলে তাদের সমালোচক হয়ে উঠেন।   পাচ্ছে কোনো সমস্যা হয় ভেবে তারা দুজনেই তাদের নোবেল পুরস্কারের মেডেল গুলি  ডেনমার্কের বোর ইনস্টিটিউট এ রেখে দিয়ে ছিলেন।ডেনমার্কে নাৎসি অভিযান শুরু হলে রসায়নবিদ জর্জ হেবসে মেডেল দুটি আকোয়া রিজিয়া তে ডুবিয়ে গলিয়ে দেন। নিরীহ ভাবে সেলফ এ পড়ে থাকা  সে তরলের দিকে সেনাবাহিনী ফিরে তাকায় নি।যুদ্ধ শেষে তার থেকে বের করা সোনা থেকে নোবেল কমিটি আবার মেডেল বানিয়ে দেয় লাউ আর ফ্রাঙ্ক কে।এই  হেভসে  আবার নোবেল পপেয়েছিলেন(1943)।  না অভিনব উপায়ে নোবেল বাঁচানোর জন্য নয়, প্রথম তেজস্ক্রিয় মার্কার তৈরি করার জন্য। তা এই মোজেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়াটাকে পবিত্র কর্তব্য মনে করেন এবং অক্সফোর্ডের গবেষণা ছেড়ে গোলন্দাজ বাহিনীতে নাম লেখান। তুরস্কের গাল্লিপলি  উপদ্বীপে   বাহিনীর যোগাযোগ বিভাগে কাজ করার সময় একটি গুলি তার সাতাশ বছরের জীবনে ইতি ঘটায়।যুদ্ধে যে শুধু বিজ্ঞানী গণ যোগ দিতেন তা না,  রোমান্টিক যুগের কবি বায়রন(1788-1824) অটোমান শাসন থেকে মুক্তির জন্য গ্রিসের যুদ্ধকে শুধু সমর্থনই করেননি ব্যারন হিসেবে তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। যদিও অজানা জ্বরে( ম্যালেরিয়া?) তার মৃত্যু হয়। বন্ধু শেলী মারা গেছিলেন জলে ডুবে তিনি মরলেন জ্বরে ভুগে। তাহলে আদর্শের জন্য সেই সময় কবি( বায়রন) সর্বস্য দিয়েছেন। এখন ক্ষমতার চেয়ার মুছে দেন।অবশ্য যদি বলেন ওটাই এখন তাদের আদর্শ তাহলে আর কথা বাড়ানোর উপায় থাকেনা।

   এবার আমরা আমাদের বিষয়ে ফিরি। যে কোন বস্তুকে পৃথিবী অভিকর্ষ বলে তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। এটাই বস্তুর ওজন যা সর্বদা নিচের দিকে কাজ করে। আবার বস্তুকে তরলে নিমজ্জিত করলে অপসারিত তরলের সমান ওজনের একটি বল উপরের দিকে কাজ করে। এর নাম প্লবক বল। বিষয়টি আমরা আগেও বলেছি। এখন কোন বস্তুকে ভেসে থাকতে হলে এই প্লবক বল কে বস্তুর ওজনের সমান হতে হবে।সুতরাং যে বস্তু যত বেশি তরল অপসারণ করবে তার ভেসে থাকার সম্ভাবনা তত বেশি। তাই লোহার টুকরো ডুবে গেলেও জাহাজ জলে ভাসে। তবে সাম্যবস্থায় ভাসতে গেলে ভারকেন্দ্র (যে বিন্দু থেকে ওজন কাজ করে) ও প্লবতা কেন্দ্র (যে বিন্দু দিয়ে  প্লবক বল কাজ করে) এই দুটিকে একই উলম্ব রেখা বরাবর থাকতে হবে। তা না হলে দুটি বিপরীত বলের প্রভাবে সাম্য বিঘ্নিত হবে। সাম্য আবার দু’রকম অস্থির সাম্য ও সুস্থির সাম্য।  সাম্যবস্থা কিছুটা  বিঘ্নিত করে দিলেও তা যদি পুনরায় পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে তাহলে সেটি সুস্থির সাম্য। আর যদি ফিরে না আসে তাহলে অস্থির সাম্য। যেমন জলে ভাসতে থাকা একটি বল কে  নাড়িয়ে দিলও সে ভাসতেই থাকে, এটি সুস্থির সাম্য। জলযানের ক্ষেত্রে সাম্য বিঘ্নিত হওয়া (নড়াচড়া করা) খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাঁকানো অবস্থায় প্লবতা কেন্দ্রগামী উল্লম্ব রেখা কেন্দ্রীয় রেখাকে যে বিন্দুতে ছেদ করে তাকে বলা হয় মেটা কেন্দ্র। মেটা কেন্দ্র ভরকেন্দ্র থেকে উপরে থাকলে উৎপন্ন টর্ক  (বিপরীতমুখী বলের প্রভাবে ঘূর্ণন প্রবণতা) বস্তুটিকে পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু মেটা কেন্দ্র ভর কেন্দ্র থেকে নিচে থাকলে উৎপন্ন টর্ক বস্তুটিকে আরও বাকিয়ে দেয়।মেটা কেন্দ্র ও ভর কেন্দ্রের দূরত্ব যত বেশি হয় বস্তুটি ততই সুস্থির হয়। সেই কারণে দুটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রথমত জলযানের  উপরের থেকে নিচের দিক সরু করা হয়। এর ফলে মেটা কেন্দ্র উপরের দিকে থাকে। দ্বিতীয়ত ভরকেন্দ্র কে যতটা সম্ভব নিচে নামানোর জন্য খালি জাহাজে কিছু অপ্রয়োজনীয় ভর চাপানো হয়। হেডিং এ থাকা বিষয় দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে এই কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

      এবার আসা যাক লবণ সত্যাগ্রহের কথায়।মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় নুন এর ব্যবসায় ইংরেজরা মনোপলি চালাচ্ছিল ভারতবর্ষ দখলের পর থেকে। সেটাই পূর্ণতা লাভ করে 1882 সালে লবণ আইন তৈরির মধ্য দিয়ে। এই আইন বলে নুনের ওপর কর চাপিয়ে আমদানিকৃত লবণ অধিক মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা হলো।  সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত করে লবণ তৈরি হয়। সে নোংরা জল দেখে যতই গা ঘিন ঘিন করুক, বিত্তবান থেকে হতদরিদ্র সবার পাতে সেই লবণ ই পড়ে। বিভিন্ন কোম্পানি একটু পরিশ্রুত করে দেয় এই যা,সঙ্গে একটু আয়োডিন ও মেশায় অবশ্য।তিনদিক সমুদ্র বেষ্টিত ভারতে নুন সহজলভ্য হলেও আমাদের উচ্চমূল্যে আমদানীকৃত লবণ কিনতে বাধ্য করা হতো।আরো বড়ো কথা লবণ আমদানি করা হতো।গান্ধীজি এই লবন আইন অমান্য করা কে বেছে নেন আন্দোলনের জন্য। নুন আপামর জনসাধারণের প্রয়োজন। তাই বিষয়টি বেশ সাড়া ফেলে। গুজরাটের সবরমতি আশ্রম থেকে তিনি আটাত্তর জন অনুরাগী নিয়ে যাত্রা শুরু করেন (12 মার্চ 1930) ডান্ডিতে (385 কিমি, 6 এপ্রিল 1930)  পৌঁছান। ধারসানা সত্যাগ্রহের আগের দিন গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর প্রায় এক বছর ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে ইংরেজরা তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং গান্ধী আরউইন চুক্তি সম্পাদিত হয়।

     এখন প্রশ্ন হল এ দুটির মধ্যে সম্পর্ক কি? সম্পর্কটি খুব সূক্ষ কিন্তু শক্তিশালী। ভারত থেকে জামা কাপড় তৈরির জন্য তুলো যেত ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। যতসংখ্যক জাহাজ তুলা নিয়ে যেত তার থেকে কম সংখ্যক জাহাজ লাগতো তৈরি করা জামা কাপড় বা অন্যান্য দ্রব্য নিয়ে আসতে। স্বভাবতই কিছু খালি জাহাজ আসতে হতো। এই জাহাজগুলির ভর কেন্দ্র নিচে নামানোর জন্য জাহাজের খোলে তুলে দেওয়া হতো নুনের বস্তা। সে নুনের বস্তা ফেলে না দিয়ে বিক্রি করার ব্যবস্থা করেছিল তারা। মনোপলি কায়েম করেছিল ব্যবসার উপর।  বাড়তি ট্যাক্স বসিয়েছিল এই আমদানিকৃত লবণ বিক্রির জন্য। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে লবণ সত্যাগ্রহের সঙ্গে কিভাবে যুক্ত বস্তুর ভাসান ও নিমজ্জন নিয়ম। আর ডোবা ভাসার গল্প এলে তো আর্কিমিডিস আসবেনই।


Post a Comment

5 Comments

  1. অসাধারণ! লেখক এবং সম্পাদককে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ।বিচ্যুতি চোখে পড়লে ধরিয়ে দেবার অনুরোধ রইলো

      Delete
  2. আপনার লেখনর খননকার্য অসাধারণ ! বিষয়ের রকম ফেরে আপনার রচনা বেশ ভালো লাগে।

    ReplyDelete
  3. পাঠকের সংখ্যা কম তাই পাঠকদের অসংখ্য ধন্যবাদ। কোনো বিচ্যুতি নজরে এলে জানানোর অনুরোধ রইলো।

    ReplyDelete