জ্বলদর্চি

এক গুচ্ছ কবিতা/ মৌমিতা চ্যাটার্জী

এক গুচ্ছ কবিতা 
মৌমিতা চ্যাটার্জী


বিরহ বৈভব

সেদিন আনমনা ছিলাম।
দিনটা ছিল তপ্ত,বেখেয়ালী,মদমত্ত বেলা।
তুমি হঠাৎ ক্লান্ত,নিঃসঙ্গ ডানায় ভর দিয়ে
আমার ঝলমলে আকাশ ছুঁয়ে,
নিটোল মনে এসে বাসা বাঁধলে।
কোনো প্রশ্ন করতে পারিনি।
মাত্র চার থেকে ছটা অন্ত্যমিল, কেড়ে নিয়েছিল আমার আদ্যোপান্ত অন্তঃপুর।
আমিও যেন চেয়েইছিলাম-সর্বনাশের খেলা।
ক্ষণিকের অধোগামী ধারাস্রোতে, একমূহুর্তের জন্য অমোঘ সত্যকে গুঁড়ো গুঁড়ো ছাই হয়ে মৃত্যুলোকে অধিষ্ঠিত হতে,
চেয়েছিলাম দেখতে।
তোমার মায়ালোকের যাদুকরী ইন্দ্রজালে থমকে গেছিল আমার অপরাজিত অবকাশ।
তারপর, কেটে গেছে বেশ কিছু শব্দহীন যাপন।
কত আলো এল,গেল।
কত রবিচ্ছায়া, মায়াকাননের অতলগর্ভে তলিয়ে গেল।
 আচ্ছা, যদি কোনোদিন ফিরি, ধানসিঁড়ির তীরে, তুমি শঙ্খচিল হয়ে আদ্র ডানা ঝাপটে জলকেলির উন্মাদনায় মাতবে আমার সাথে?
শিথিল অথচ পরিপাটি নিশীথে, আমার সঙ্গে বাঁধবে প্রাণ, নৈসর্গিক সুরের বন্ধনে?
তুমি চাওনা? বহমান দুই পথ মগ্ন হোক নিবিড় আলিঙ্গনে!
সব ভাবনা, সব যাতনা কি হাওয়ার তোড়ে উড়িয়ে দেওয়া যায়?
আমি জানতাম সব মৌনতার ভাষার পরশ পায়, একমাত্র কবির কলম।
ভুল জানতাম।

আজ জ্যোৎস্না দেখে মুখ ফিরিয়ে নিই,পাছে চাঁদের নজর লাগে আমার নিভৃত অন্তর্দহনের সুখে।
প্রিয়, বিরহের অন্ধকার মহাসিন্ধুর ওপারে কত আলো, কত প্রশান্তি! তুমি পারবে না উপলব্ধি করতে।
অতৃপ্ত প্রণয়বেদনার নরম বিষাদ জ্বালায় কি সুতীব্র সুখানুভূতি !
আমি আর নগন্য ন‌ই।
রিক্ত করপুটে, বিরহের অপার্থিব বৈভবে, আমি সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী।



কাল্পনিক

বৃষ্টিহীন আকাশে এক উচ্ছ্বসিত,নির্মোহ মেঘের দল স্বস্তির পাল তুলেছে।
শর্তহীন আবদ্ধতায় বোবা প্রতিশ্রুতিরা নিশ্চুপ।
কালযাপনের মায়াময় নাগপাশ কেটে ওঠা হয়নি এখন‌ও।
পঞ্জরাস্থির ধারালো অস্ত্রে রক্তাক্ত আপন বৈরী সত্তা। 
স্বার্থহীন আত্মসমর্পনের প্রতিদানটুকুর উপহার হিসেবে গ্রহন করেছি এক নিঃশেষিত,ধূলিধূসর মৌনতা।
করুন রাগ-রাগিনীরা মন্দ্রসপ্তক ছুঁয়ে,ঘোলাটে দীর্ঘশ্বাসে বাঁচে।
কখন‌ও মধ্যরাতের আকাশ তাকে আত্মস্থ করে নিজের বুকে।
তখন মেঘের দল নিদ্রা সমুদ্রে ভাসমান।
বিন্দু-বিন্দু বাষ্পকণা জমা হয় চাঁদের চোখের কার্নিশে।
চাঁদ বুকে, এক কাল্পনিক উপন্যাস লিখে চলে অনন্ত রাত্রির কালি-কলমে।
সে উপন্যাস,তোমার আমার।
যেখানে বিচ্ছেদ নেই,বিরহ নেই, বিষাদ নেই,নেই মিথ্যে অজুহাতের দিব্যি‌।
আছে,কাল্পনিক ভাবনা মাধুরী সজ্জিত শেষ রাতের মধুময় বাসর।
যখন, নির্জনতা,নির্মীলিত চোখে আবেশের সুঘ্রানটুকু শুষে নেওয়ার প্রয়াসে লিপ্ত,
ঠিক,তখন‌ই বাস্তব নির্মমতায় খোয়া যায় কাল্পনিক চাঁদ আর মেঘেদের উচ্ছ্বাস।


নির্বাক

নীরবতার ঘেরাটোপে মোড়া ভালোবাসার সরব  সুখ।
ভরা পূর্ণিমার চাঁদের অকাল বিসর্জনের পর,
আদিম কুয়াশার অন্তরালে,শান্ত ভোরের মসৃণ আলোয়-
ঘন,গরম নিঃশ্বাসের আবহে,
তৈরী হচ্ছিল দাবানলের পটভূমি।
কিন্তু অনাহুত জলজ মেঘের হঠাৎ উপস্থিতির আলতো জলের স্পর্শে, আগুনের সবটুকু অবাধ্যতা তলিয়ে গেল অপ্রাপ্তির নদীগর্ভে।
নির্লিপ্ত মন স্মৃতির গভীরে হাতড়ায় আর ভেবে চলে,
 সব‌ই কি মিথ্যে?
শুধুই অনুভূতিহীন মোহ? 
ভাবনার প্রতিফলিত, নির্বাক তরঙ্গ মিলিয়ে যায় জলজ মেঘেদের হিমভেজা ব্যর্থ বিষাদে।


বৈপরীত্য

যাপনের পোড়া জমিতে কখন‌ও মুষলধারে বৃষ্টি নামে।
অজান্তে ছোঁয় ঊষর মাটি।
ঢেলে দেয়, ভালোবাসার আদিম ও অকৃত্রিম বন্যার স্রোত।
দু-একটা চারাঘাস থেকে মহীরুহ -মন দেয় বংশবিস্তারে।
চিরসম্ভাবনাহীন বুক‌ ই হয়ে যায়, পারিজাতের ভরসার অটল আশ্রয়।

মাঝে মাঝে, প্রচলিত আকাশ আকাশ ছেয়ে যায়, অসময়ের আগন্তুক দীর্ঘশ্বাসে।
পূর্ণসম্ভাবনার স্পষ্ট চিত্রপটে জমতে থাকে ধূলোর অনাদর
দিন রাত্রির, বাহারী পালাবদলের এই খেলা চলতেই থাকে।
অজান্তে… খুব গোপনে।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇



Post a Comment

1 Comments

  1. ভালো লাগলো ধন্যবাদ কবি

    ReplyDelete