জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১২৬

 ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১২৬
সম্পাদকীয়,
রাঙা হাসি রাশি রাশি... কোথায়? ঠিক বলেছো অশোকে পলাশে। কিন্তু তোমাদের বন্ধু অপ্রতিম বলছে রাশি রাশি হাসি শ্যামসুন্দর বাবুর মনে। সেটা কেমন করে হয় জানতে পড়তে হবে ওর গল্প। গল্প বলে গল্প। একদম গোলোক ধাঁধার গল্প। তপশ্রী আন্টির গল্প মানেই থ্রিল থাকবেই থাকবে। তবে সহজেই যাতে ধাঁধার সমাধান না হয় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী সংখ্যার জন্য। থ্রিলার যে তোমাদের খুব খুব প্রিয় তা কি আমঅরা জানি না ভেবেছো? জানি বলেই লাচুঙের নেকড়ে লিখে চলেছেন শ্রীকান্ত আঙ্কেল। আর এবার তো নেকড়ের দেখা পেয়েই যাবে...  না বাবা আর বলব না। তাহলে আঙ্কেল আমার খুব বকুনি দেবে। তার চেয়ে বরং রণথম্ভোরের বাঘের গল্প শুনি শ্রীছন্দা পিসির কাছ থেকে। রণথম্ভোর কোথায়? গুগুলে দেখে নাও কেমন! তারপর খুঁজে বার করো আসামের পবিতোরা অভয়ারণ্য। সেখানকার ছবি তুলে পাঠিয়েছে নীলাব্জ আঙ্কেল। কিসের ছবি বলতো? হ্যাঁ,  একশৃঙ্গ গন্ডার। ভারতের মধ্যে সর্বাধিক সেখানেই আছে। অনেক পশু নিয়ে গল্প হল এবারের সংখ্যায়। আনন্দের কথা তারাপ্রসাদ জেঠুর পাঠ সুন্দর প্রতিক্রিয়ার জন্য আমরা জেঠুকে প্রিয় পাঠকের ব্যাচ উপহার হিসেবে দিলাম ভার্চুয়ালি।যার কথা প্রতিদিন বলি, আজকেও বলব। সে হল তোমাদের দোলনচাঁপা আন্টি। এই সংখ্যায় বিশ্ব থিয়েটার দিবস নিয়ে লিখেছেন। আর তোমাদের দুই শিল্পী বন্ধু অরুণিমা আর মানালী সুন্দর দুটি ছবি এঁকে পাঠিয়েছে। সেই আনন্দে  এসো গাই, রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে...  - মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস

লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ৫

শ্রীকান্ত অধিকারী

রাস্তায় উপস্থিত জনা দশেক লোক। দোকানের ঘরে বাইরে যা দেখা গেছিল তাতে কচি বাচ্চা আর তাদের আত্মীয়স্বজন নিয়ে পাঁচেক ছিল। আর কিছু পুলিশ। সব মিলে জনা বিশেক। তবে এই ভয়ঙ্কর চিৎকারে দোকান থেকে কেউ না বেরিয়ে এলেও পুলিশ এসেছিল। তবে রামসি এবং ছোটমামা তখনো গাড়িতে ওঠে নি। ওঠেনি আর দুজন,-বড়মামি আর রামসির মা। এত দ্রুত দুটো ঘটনা ঘটে যাওয়াতে হয়তো ওরা ঘাবড়ে গেছিল কিংবা হতবাক হয়ে গেছিল। তাই গ্যাটসোর কথা গ্রাহ্য না করেই বাচ্চাটার কাছে দৌড়ে গেছিল। 
‘ফগি’র খোঁজে যে ভদ্রমহিলা বের হয়েছিলেন উনি ততক্ষণে বাচ্চাটার কাছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সবার আগে পৌঁছে গেছিল গ্যাটসো। ভদ্রমহিলা বা পুলিশ পৌঁছানোর আগেই গ্যাটসো ওই শিশুটার পা দুটো বুক বরাবর ওপরের দিকে তুলে ধরে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চাটা চোখ খুলেই ‘ফগি’ বলে আবার চিৎকার করে ওঠে। 
তারপর এই ভয়ঙকর ঘটনাটা বুঝে ওঠার আগেই ক্ষণিকের মধ্যে পুলিশ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করে। রামসি গাড়ির পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে আর একটাও গাড়ি সেখানে দাঁড়িয়ে নেই। রাস্তা ফাঁকা। এক বুক কৌতূহল আর কিছুটা আতঙ্ক নিয়ে রামসি ওপরের দিকে চলল। বড়মামাকেও দেখলাম ওই পুলিশগুলো আসা অব্দি কেমন তৎপর হয়ে ওঠে। 
বড়মামা প্রশাসনিক ব্যাপারগুলোতে বড্ড বেশি সিরিয়াস। এই সময় একমাত্র মামি ছাড়া কেউ কোনো কথা বলতে পারে না।  গ্যাটসো আর কতক্ষণ ?  
গ্যাটসো মাথা নাড়ে,-- যাদা নেহি। এখান থেকে নাইন্টি কিলোমিটার। 
বড়মামা বেশ গম্ভীর গলায় বলে, কেন যে বেড়াতে এসে ওই পেট ডগগুলো নিয়ে আসে এই পাহাড়ি জংলি এরিয়ায়। 
বড়মামি বলে বসে, নেপালি ড্রাইভার ভাইয়া উধার কেয়া হুয়া আমি ঠিক সামঝা নেহি। বেশ খোলসা করকে বাতাও না। 
গ্যাটসো কোনো কথা বলে না। বরঞ্চ ওই স্পট থেকে আসার পর থেকেই মুখ গোমড়া করে গাড়ি চালাচ্ছে। মাঝে দু বার ফোন করল কাকে যেন। ওদের ভাষায় এমন কিছু বোঝা না গেলেও কত গুলো শব্দ বেশ বোঝা গেল। ‘লেপচা’’ভোটা’ ‘কবি’ ব্লাড , ব্রাদার । তারপর চুপ। 
  শুনতে পায় নি ভেবে ছোটমামা আরো এক বার ড্রাইভারকে শুধোয়, গ্যাটসো ভাই উধার কা হুয়া? মেয়েটা ওরকম গাঙিয়ে চিৎপটাং হয়ে পড়ে গেল কেন? 
-ভেঁড়ে। বড় মামা বলে। 
-ভেড়া? মামি অবাক। 
রামসির মা মুচকি হেসে বলে, ভেড়া নয় বৌদি ভেঁড়ে। মানে নেকড়ে। 
ছোটমামা কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, এই সাওদার্ন হিমালয় রেঞ্জে কত ফরেষ্ট ব্লক আছে জানিস? গ্যাংটক থেকে লাচেন ও লাচুং এরিয়ায় মোটামুটি চারটে--মঙ্গন ফরেস্ট ব্লক, কবি ফরেস্ট ব্লক, চুংথাং ফরেস্ট ব্লক, নাগা ফরেস্ট ব্লক, লাচুং ফরেস্ট লাচেন ফরেস্ট এ রকম অনেক ফরেস্ট রেঞ্জ রয়েছে। এরা যে কত ভয়ঙ্কর দু’এক কদম না এগোলো বাইরে থেকে বোঝা যায় না।   
-আমি তো জানি সবটাই একটাই বন। 
--ঠিক। তবে জায়গা অনুসারে নাম। কি নাই এই জঙ্গলে ! হরিণ, বন বিড়াল উদবিড়াল, লোমশ খরগোস, পাহাড়ি ইঁদুর, কখনো কখনো ভালুক ও নানা জাতের বিষধর সাপ,অন্ধ সাপ সব আছে। এমন কি ঝগরুটে দাঁড় কাক,লেঙ্গুড়, আর নানা রকমের ল্মবা লেজওলা লালমুখো কালোমুখো বাঁদর! 
-পান্ডা? রেড পাণ্ডা। 
-সে তো ঘাকবেই। তবে আরো গভীরে , আরো ওপরে। মাঝে মাঝে দার্জিলিঙেও দেখা যায়। 
--তাহলে চিতা বাঘ ! 
--ভারতের সবচেয়ে বিপন্ন প্রাণী। আগে ছিল এখন সংখ্যায় নগণ্য, হাতে গোনা। যদি বা থাকে সেটা তিব্বতের দিকে এখন অবশ্য চীনের মানুষেরা অনেকটা এগিয়ে এসে ওদেরও থাকা কঠিন করে দিয়েছে। তবে বিষাক্ত ব্যাঙ পাওয়া যায় শুনেছি। 
--পয়েজন ডার্ট ফগ! রামসি অবাক। মামা আমাজনের জঙ্গলে বিষাক্ত ব্যাঙের কথা শুনেছি। 
--ডেনড্রোবেটস অরাটাস! সাইন্টিফিক নেম। রামসির মা উত্তর দেয়। ওর মা একটা স্কুলের জুলজির দিদিমণি। জীবজন্তু নিয়েই পড়াশুনা। বছর দুয়েক আগে কুমায়ুন রেঞ্জের জীবজন্তুর জীবন  চর্চা নিয়ে থিসিস জমা দিয়েছে। 
-বড়মামা বেশ খুশি হয়ে বলে, এই না হলে ম্যাডাম! 
-মামু আমি গিরগিটি দেখেছি বিশাল।লাল মাথাওলা গিরগিটি।এতক্ষণ চুপ করে মায়ের কাছে বসে ছিল সিঙি। তেমন কথা বলে নি। তবে ওখানে যখন দাঁড়িয়েছিল তখনই ছোট ঝর্নার ধারে হয়তো বিশাল আকারের গিরগিটি দেখেছিল। 
-ইয়েস সেটা আছে। আমি সেটাও দেখেছি। বড়মামা বলে,সমতলে যেমন থাকে তার চেয়েও অনেক বড়।কিন্তু উলফ! মানে নেকড়ে! কোনোমতেই এখানে এত নিচে থাকার কথা নয়। তিস্তা তো তিস্তাতেই আছে। কোথাও কোনো বড় আকারের কুকুর টুকুর কেউ দেখে থাকতে পারে। কিন্তু এখানে এই বাকচা নদীর ধারে কাছে নেকড়ের খবর পায় নি। বড় মামা নিজের সিটেই একটু হাল্কা করে বসে।  
 রামসির মা বলে,-তবে এই লোল্যান্ডে পাইথনও হতে পারে। ওরা বিশাল বিশাল কালোমুখো হনুদেরো গিলে ফেলতে পারে। 
--মামা, বুনো কুকুর! 
-না এখানে ওরা আসে না। আরো গভীর জঙ্গলে থাকে।  
-ওই দ্যাখ সেভেন সিস্টার্স! ছোটমামা বলে, ভাই গ্যাটসো এখানে এট্টুকু নিশ্চয়ই দাঁড়াবে। 
গ্যাটসো কোনো কথা না বলে গাড়িটাকে আরো অন্যান্য গাড়ির কাছে দাঁড় করিয়ে গেট খুলে দেয়। 
--নাহ অপূর্ব। জীবন সার্থক হয়ে গেল রে। বড় মামি বলে। শিঙিও কেমন ঘাড় উঁচু করে সাদা জলের অবতরণ দেখে। বইয়ে ঊস্রি নদীর ঝর্নার কথা শুনেছিল। কোনোদিন দেখেনি। পাথরের গায়ে নাচতে নাচতে নেমে যাচ্ছে কয়েকটা ধারায়। 
শাদুলমামা, অল টোটাল চারটে দেখা যাচ্ছে যে। তবে সেভেন কেন? মাঝে মাঝে রামসি একটু গদগদ হলে ছোটমামাকে শাদুল মামা বলেই ডাকে। 
শাদুলমামা ভ্রু কুঁচকে বলে, তাই তো রে। ব্যাপারটা ভেবে দেখি নি তো। গ্যাটসো ভাইয়া,--ওহ ! তার তো আবার মুখ গোমরা হো গেয়া। আমার মনে হয় বাকি তিনটের জল শেষ! বর্ষাকালে ওপর থেকে পড়লে ছড়িয়ে যায় সাত দিকে। তাই সেভেন। ‘দশম ফলস’ দেখেছিস? ছোটমামা জিজ্ঞেস করে। 
-হুড্রু দেখেছি, দশমটা আবার কোথায়? 
-ওটাও রাঁচির জঙ্গলের ভেতর। আমাদের ওখানে সমতলে রাঁচির জলপ্রপাত দেখলে মন ভরে যায়। এখানে এই সিকিমে দু’শর বেশি জলপ্রপাত! সব কটাই চোখ জুড়ানো। বীভৎস সুন্দর!  
-তাহলে এখানে নেকড়ে নেই বলছ? কিন্তু ওদের ফগির কী হল? পাইথন না বুনো কুকুর? না কালো ভালুক। শাদুল মামা? কী দেখছ? রামসি ওর মামার কাছ ঘেঁষে দাঁড়ায়। 
--সামনে দ্যাখ। 

(ক্রমশ)

মানালী সরকার 
বেথুয়াডহরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বেথুয়াডহরি, নদিয়া, সপ্তম শ্রেণি


তপশ্রী পালের বড়ো গল্প
গুগল ম্যাপের চক্করে
প্রথম পর্ব

দুপুরে মন দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিলো রায়ান। মা একটা চিঠি নিয়ে ঘরে ঢুকলেন “তোর একটা চিঠি এসেছে মনে হচ্ছে। দেখ তো কিসের চিঠি”। রায়ান ব্যস্ততার মধ্যে বললো “রেখে দাও টেবিলে, কাজ করছি।“ খেতে যাবে বলে যখন উঠলো, তখনি চিঠিটা চোখে পড়লো রায়ানের! আরে! এ তো কম্পিটিটিভ পরীক্ষার চিঠি!
ইঞ্জিনীয়ারিং পাশ করে সবে চাকরীতে ঢুকেছে রায়ান। বছরখানেক পুণেতেই ছিলো। তারপর শুরু হলো লক-ডাউন আর রায়ানও ফিরে এলো কলকাতায় নিজের বাড়িতে। ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছে সেই থেকে। এখনো কোম্পানী পুণে ফেরত পাঠায়নি। ল্যাপটপে নটা থেকে কাজ করে আর তার মাঝে মাঝে মায়ের হাতের ভালো ভালো খাবারদাবার। অবসর সময়ে তেড়ে ইংরাজী আর বাংলা থ্রিলার পড়া! হেব্বি ভালোবাসে রায়ান থ্রিলার পড়তে। দিনগুলো খারাপ কাটছিলো না, যদিও পুণের বন্ধুবান্ধবদের একটু মিস করে মাঝে মাঝে।
কিন্তু শুধু তো চাকরী করলে হবে না। রায়ানের ইচ্ছে আরো পড়াশোনা করার জন্য বিদেশ যাওয়ার আর তা যেতে গেলে কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিতে হবে। গত বছর অন লাইনে ফর্ম ফিল-আপ করে রেখেছিলো । তবে কি পরীক্ষা অ্যানাউন্সড হয়ে গেলো? তাড়াতাড়ি চিঠি খুলে রায়ান দেখে যা ভেবেছে তাই! পরীক্ষার ডেট পড়ে গেছে। কলকাতা সেন্টার থেকেই পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু জায়গাটা তো চেনে না রায়ান! সেই টালিগঞ্জের ভিতর দিকে কোথায় একটা স্কুলে পরীক্ষা হবে। ওদিকটা ভাল চেনে না রায়ান। উবেরেই যাবে ঠিক করল। তাহলে আর চেনার অসুবিধা হবে না। জানুয়ারীর ২৭ তারিখ পরীক্ষা। মা চিন্তিত মুখে বললো “জায়গাটা চিনিস না, সাবধানে যাস।“
বেলা এগারোটা থেকে পরীক্ষা। ঠিক সময়ে একটা অ্যাপ-ক্যাব বুক করে নিলো রায়ান। একটু টেনশন যে হচ্ছিলো না তা নয়। গাড়িটা আসতেই উঠে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলো “আপনি চেনেন তো জায়গাটা?” ড্রাইভার অম্লান বদনে বললো “না, আমার বাড়ি তো কাঁচড়াপাড়া। আমি এদিকটা তেমন চিনি না।“ রায়ানের বুক ধক করে উঠলো। বললো “আপনি উবের চালাচ্ছেন, আর রাস্তা চেনেন না?” ড্রাইভার পান চিবোতে চিবোতে বললো “চেনার কী দরকার? গুগল আছে তো!” অবাক হয়ে গেলো রায়ান! গুগল ম্যাপ এতো স্মার্ট করে দিয়েছে সবাইকে! অতএব ম্যাপ ভরসা করেই চলতে হবে। নিজের মোবাইলেও ম্যাপটা অন করে নিলো রায়ান।   
“টালিগঞ্জ মাধবমঞ্জরী হাই স্কুল” গুগলে দিতেই টুঁই করে একটা বেলুন বাবল এসে বসলো টালিগঞ্জের একটা রাস্তায়। তারপর ডিরেকশন দিতেই রায়ানের কসবার লোকেশন থেকে এঁকেবেঁকে একটা লাইন এসে মিশলো সেই বেলুনে। এগারোটা থেকে পরীক্ষা। প্রায় দেড়ঘন্টা আগে বেরিয়েছে রায়ান। গাড়িটা টালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে একটু এগিয়ে যখন একটা রাস্তায় ঢুকে গেলো তখন ঘড়িতে দশটা পনেরো। হেসে খেলে পৌঁছে যাবে। খানিক দূর যেতেই গুগলের মেয়েটির গলা “এইট হান্ড্রেড মিটার অ্যাহেড, টেক রাইট, দেন প্রসিড ফর ওয়ান কিলোমিটার।“ কে বাপু এইট হানড্রেড মিটার মাপছে? ড্রাইভার ছেলেটি কনফিডেন্টলি একটা ডানদিকের গলিতে ঢুকিয়ে দিলো গাড়ি! ও মা! সেখানে ঢুকতেই গলা বলে উঠলো “অন দ্য নেক্সট ক্রসিং টার্ন লেফট টু টেক নন্দকিশোর বাই লেন”। আর ম্যাপের লাইনটাও টুঁই করে বেঁকে চুরে দ হয়ে আবার সেই বেলুনে গিয়ে মিশলো! সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভার বাঁ দিকে গাড়িটা দিলো ঢুকিয়ে! ও মা! এ যে ভীষণ    
সরু একটা গলি! কেমন নিঃঝুম মতো! রাস্তাটা ইঁট বাঁধানো! একটু এগোতেই আবার গুগলের গলা বললো “অন নেক্সট ক্রসিং টার্ন রাইট! সে রাস্তা এতো সরু যে বহু কষ্টে ঘুরলো গাড়ি! এবার কাদের রান্নাঘরের সামনে এসে পড়েছে! একেবারে পায়ে চলা রাস্তা । আর এগোনোই মুশকিল! ঘড়িতে প্রায় সকাল সাড়ে দশটা! বেশ ভয় লাগতে শুরু করলো রায়ানের! সময়ে পৌঁছতে পারবে তো! বেশ রেগে গিয়ে ড্রাইভারকে বললো “আপনি কিচ্ছু চেনেন না! নিশ্চই কোন ভুল রাস্তা ধরেছেন! এখন কাউকে জিজ্ঞাসা করুন মাধবমঞ্জরী হাই স্কুল কোথায়!” ড্রাইভারের কোন হেলদোল নেই। সে বললো “ভুল হতেই পারে না! গুগল একেবারে সরাসরি দেখাচ্ছে! ঐ আগে কোথাও হবে! ইশকুলের নামটা কী – মাধব – কী?” রায়ান বুঝলো এর দ্বারা হবে না। এক মহিলা একটা টিউব ওয়েল পাম্প করছিলেন। রায়ান তাঁকে জিজ্ঞাসা করলো “আচ্ছা, মাধবমঞ্জরী হাই স্কুলটা কোথায় হবে?” তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন “অই ত্তো! ডানদিকে উঁচু পাঁচিল দ্যাখতেসেন অর ঐধারে! ইদিকে তো পিছন দিক, ইদিকে আইসেন ক্যান? ব্যাক কইরা যান! অ্যাক্কারে ফাইস্যা যাইবেন আগে গ্যালে!” রায়ানের মাথায় হাত! অতঃপর ড্রাইভার সেই রাস্তা দিয়ে ব্যাক করে বেরোতেই গুগল টুঁই করে লাইনটা আবার দ বানিয়ে আরেকদিক দিয়ে বেলুনে জুড়ে দিলো! চটপট বলে উঠলো “ইন নেক্সট থ্রি হানড্রেড মিটার টার্ন লেফট, দেন প্রসিড ফর ফাইভ হানড্রেড মিটার্স টু টার্ন লেফট এগেন টু টেক নন্দকিশোর বাই লেন!” এবার রায়ানের হেড টার্ন করতে শুরু করেছে! ঘড়িতে এগারোটা বাজতে দশ! পাঁচিলের ঐ পারেই স্কুল, কিন্তু সে তো ঘুরেই চলেছে! ওপারে পৌছবে কী করে! 
ড্রাইভারও এতোক্ষণে বুঝেছে যে সে কী চক্কোরে পড়েছে! সে এবার অ্যাপ-ক্যাবের অফিসে ফোন করে যা বলতে লাগলো তার মানে দাঁড়ায় যে ক্লায়েন্ট কী এক বিকট জায়গায় আসতে চেয়েছে। সে সেখানে এসে ফেঁসে গেছে। গুগল ম্যাপ কাজ করছে না। ডেস্টিনেশন কাছেই। এখানেই ডেস্টিনেশন দেখিয়ে সে বিল দিয়ে পার্টিকে নামিয়ে দিচ্ছে।
রায়ান দেখলো এভাবে গোল হয়ে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে পায়ে হেঁটে চেষ্টা করা ভালো । হাতে কোন সময় নেই। যতই তার গা জ্বলে যাক, সে নেমে যাবে ঠিক করলো। ঠিক এমন সময় বাঁ পাশের বাড়িটা থেকে একটি বাচ্চা মেয়ের আর্ত চিৎকার ভেসে এলো এবং একটা লোক দৌড়ে বেরিয়ে গলি দিয়ে সামনে দৌড়ে নন্দকিশোর বাই লেনের দিকে গেলো! রায়ান এক সেকেন্ড ঘাবড়ে গেলেও তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে টাকা দিয়ে খুচরো না নিয়ে লোকটার পিছনে দৌড়োল। এরকম কান্ড দেখলে রায়ান একেবারে স্থির থাকতে পারে না। তখন তার স্থান কাল পাত্র জ্ঞান থাকে না। ঐ তো আগে আগেই দৌড়োচ্ছে লোকটা! রায়ান তাড়াতাড়ি মোবাইল বার করে লোকটার পালানোর ছবি তুলে নিলো একটা। লোকটা মোড়ের মাথায় একটা বাইকে উঠছে! বাইকের একটা ছবি তুলে নিলো রায়ান! আর কিছু করতে গেলে আজ আর পরীক্ষা দেওয়া হবে না! ইতিমধ্যে রায়ান দেখে সে মেন রাস্তায় এসে গেছে! এবার সামনের পানের দোকানে স্কুলের নাম আর পরীক্ষার কথা বলতেই দোকানদার একটা বাচ্চা ছেলেকে বললো “মুন্না, দাদাকো ইশকুল দিখা!” বাচ্চাটার সঙ্গে গিয়ে পাঁচ মিনিটে স্কুলে পৌঁছে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো রায়ান! ইশ এতো সহজ আর একবার ভুল টার্ন নিয়েই কী গোলোকধাঁধায় গিয়ে পড়েছিলো! 

(শেষাংশ আগামী সংখ্যায়)



রণথম্ভোর অভয়ারণ্য
কলমে - শ্রীছন্দা বোস

একবার আমরা পরিবারের কয়েকজন মিলে, গ্রীষ্মে রাজস্থানের   আইকনিক রণথম্ভোর ন্যাশনাল পার্কে দুর্দান্ত সফরে গিয়েছিলাম।
গ্রীষ্ম কালে গেলে বাঘেদের দেখা সহজেই  মেলে তাই ওই সময়টা আমরা পছন্দ করেছিলাম।
শীতকালেও ভালো, এসময় পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা চলে।
এছাড়া ফ্ল্যামিঙ্গ, ফ্লাইক্যাচার, ওয়াটারফাউল, সারস ক্রেন,
গ্রে হর্নবিল,সর্পেন্ট ঈগল, ব্রোঞ্জ, ডানাওয়ালা জাকানা, পেইন্টেড স্পারফাউল, এবং নাইটজারের মতন সুন্দর সুন্দর পাখির দেখা মেলে।
এই জঙ্গলে সাফারি করার সময় খুব সামনে থেকে বাঘ কিংবা চিতাবাঘ দেখার সুযোগ মেলে। এই অভয়ারণ্যে  রয়েছে  বেশি সংখ্যক বাঘ। এছাড়া রয়েছে নীলগাই বুনোশুয়োর, সাম্বার, লেজযুক্ত খরগোশ, স্লথ বিয়ার, হরিণ, ময়ূর, কুমির প্রভৃতি।
আমরা তিনদিন সফর করেছিলাম বড়ো জিপ নিয়ে।
আমাদেরই ভাগ্য এতো ভালো ছিল যে প্রথম দিনই আমাদের সামনে দিয়ে বিশাল একটি বাঘকে বিচরণ করতে দেখলাম। বাঘটির নাম অ্যারো হেড। মাথার কাছে একটা তীরের চিহ্ন, আছে তাই এই নাম। সেইসময় অ্যারো হেড ছিল জঙ্গলের রানী। কী দাপটে চেহারা বটে।
একে ১১টা নাগাদ দেখলাম আবার ১টা নাগাদ তাকে একটা জলাশয়ে নামতে দেখলাম। এর পর  একসাথে কয়েকটা ময়ূর দেখা গেলো যার মধ্যে একটা দুটো পেখম মেলে দাঁড়িয়েছিল।কয়েকটা হরিণ একসাথে দৌড়ে চলে গেলো কী অপূর্ব দৃশ্য।
গাছের  ওপর নজর উঠতেই দেখা গেলো দুচারটে ফ্লাইক্যাচার আর গ্রেহর্নবিল পাখি বসে আছে।
একটু রোদ পড়তেই একটা বিরাট জলাশয়ে দেখা গেলো
নানান অজানা পাখি, হরিণ প্রভৃতি জন্তু  এসে জল  খাচ্ছে। সেখানে  সেইসময়  নাকি বাঘ ও এসে জল খায়।
কী রোমাঞ্চকর  পরিবেশ!
অরণ্যের চারিদিকে রয়েছে,আরাবল্লী ও বিন্ধ পর্বতের রেঞ্জ।
এখানে একটা বিশাল বট বৃক্ষ
রয়েছে। এই বিশাল বট গাছ  ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম 
বটগাছ  হিসেবে পরিচিত।
গভীর অরণ্যের মধ্যিখানে রয়েছে  রণথম্ভোর  দুর্গ।
অভয়ারণ্যের নামকরণ হয়েছে
১০ শতকের তৈরী রণথম্ভোর দুর্গের নামে।
এখন এটা ধ্বংসাবশেষে  পরিণত হয়েছে। চৌহানদের নেতৃত্বে এই দুর্গটি তৈরী হয়েছিল। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আমাদের ফিরে যাওয়া শুরু হোলো। এই সময়ে হটাৎ গাড়িটির একটু
যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলো, তখন অনেককেই নেমে দাঁড়াতে হোলো, আমি ভয়ে গাড়িতে বসে রইলাম,
গা ছম ছম করছিলো। তবে
বেশি সময় লাগলোনা। গাড়ি আবার ঠিকমতন চলতে শুরু
করলো।ফিরে গেলাম আমাদের হোটেলে।
অরণ্যের সেই রোমাঞ্চকর স্মৃতি জীবনের পদ্মপাতায় আঁকা হয়ে রইলো।।

তরুণিমা সরকার 
বেথুয়াডহরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ষষ্ঠ শ্রেণী।


রাশি রাশি হাসি
অপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়
ষষ্ঠ শ্রেণী,সাউথ পয়েন্ট স্কুল,কলকাতা

শ্যামসুন্দর দত্তের মনে বড় দুঃখ। তার বাড়ি, গাড়ি, টাকাপয়সা… সবই আছে, কিন্তু মনে আনন্দ নেই। কেন নেই, তা তিনি জানেন না। অথচ আনন্দ পাবার জন্য তিনি কম চেষ্টা করেননি। হাসির বই পড়েছেন, হাসির সিনেমা দেখেছেন, এমনকি নিজেই নিজেকে কাতুকুতু দিয়ে হাসাবার চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু তার সমস্ত চেষ্টাকে বিফল করে দিয়ে, তার মন সবসময় বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকে। মনে হয় এক চাপা দুঃখ যেন দলা পাকিয়ে গলার কাছে উঠে এসেছে। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে আসবে। শ্যামসুন্দর বাবু একাই থাকেন ঢাকুরিয়ায়। 

একদিন সন্ধ্যেবেলা শ্যামসুন্দরবাবুর বাড়িতে একটা ছোট গেট টুগেদার হল। সেখানে নিমন্ত্রিত ছিলেন শ্যামসুন্দর বাবুর স্কুল কলেজের সহপাঠীরা। তাদের সঙ্গে গল্প করতে করতে তিনি ফস করে নিজের সমস্যার কথা বলে ফেললেন।  কয়েক সেকেন্ডের নিস্তব্ধতা । তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সবাই। ভারী অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন শ্যাম সুন্দর বাবু। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। বাকিদের কাছে যেটা হাসির খোরাক, তার কাছে সেটা জীবন-মরণ সমস্যা ! 

সেদিন রাত্রিবেলা শ্যামসুন্দর বাবু তার অভ্যাস মত টিভি দেখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ বেজে উঠল তার মোবাইলটা। স্ক্রিনে নাম ফুটে উঠলো ' অরিন্দম'। অরিন্দম মানে অরিন্দম বসু, শ্যামসুন্দরের কলেজের সহপাঠী এবং সবচেয়ে অন্তরঙ্গ বন্ধু। আজকের আড্ডা
তে অরিন্দম ছিল কিন্তু সে শ্যামসুন্দরের কথা শুনে অন্যদের মতো হাসেনি। বরং গম্ভীর হয়ে কি যেন ভাবছিল। সেই ভাবনার ফলশ্রুতি কি এই ফোন ? শ্যামসুন্দর ফোনটা তুললেন।

 " হ্যালো" "

“হ্যালো শ্যাম। 

আমি অরিন্দম।"

 "বল।"

 " তোর সাথে একটু কথা আছে।"

 " সেটা কি আমার সমস্যার ব্যাপারে?"

 "ঠিক ধরেছিস।"

 " বল।"
" আমার মনে হয় এই সমস্যা থেকে বেরোনোর একটাই উপায়। তুই ফোনটা রেখে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়া। তারপর ভালো করে নিজেকে দেখ । আমার মনে হয় তুই বুঝতে পারবি তোর চাপা দুঃখের কারণ।"

কথাগুলো শ্যাম সুন্দরের খুব একটা মনে ধরল না। কিন্তু বন্ধুর কথা একেবারে ফেলেও দিতে পারলেন না। তাই ফোনটা রেখে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। পরমহুর্তেই চমকে উঠলেন তিনি। এ কি চেহারা হয়েছে তার ! মুখে গোঁফ দাড়ির জঙ্গল ! মাথায় চকচকে টাক ! যেটুকু চুল অবশিষ্ট আছে, তাতেও কতকাল শ্যাম্পু পড়েনি ! চোখের চশমার কাচ খানা যেন ধুলোদের পৃথিবী হয়ে উঠেছে। আর নখ ? তার কথা না বলাই ভালো। বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা নখের জন্য শ্যামসুন্দরের নাম গিনেস বুকে উঠল বলে ! 

পরদিন সকালে উঠে ,অফিস ছুটি নিয়ে, শ্যাম সুন্দর বাবু চললেন চশমার দোকানে। সেখানে গিয়ে অর্ডার দিলেন একটা ভালো চশমার ফ্রেমের। দোকানদার বলল যে তারা সন্ধ্যেবেলা চশমাটা বাড়িতে ডেলিভারি করে দিয়ে আসবে। বাড়ি ফিরে শ্যাম সুন্দর বাবু কেটে ফেললেন তার রাক্ষুসে নখ গুলো। তারপর নিষ্ঠুরভাবে কেটে ফেললেন জঙ্গল ! জঙ্গল কাটলেন অথচ পুলিশে ধরল না কেন ? কেন ধরবে ? এ জঙ্গল তো তার নিজের সম্পত্তি। গাছপালার নয়, গোঁফ দাড়ির জঙ্গল। এরপর
বাথরুমে ঢুকে ভালো করে সাবান মেখে স্নান করলেন শ্যামসুন্দর বাবু। চুলে শ্যাম্পু দিতেও ভুললেন না। দুপুরে নিজে রান্না করে ভাত আর পাঁঠার মাংস খেলেন। বিকেলে শ্যাম সুন্দর বাবু গাড়ি চালিয়ে প্রিন্সেপ্ট ঘাটে গেলেন । সেখানে ঘণ্টাখানেক গঙ্গার হাওয়া খেয়ে সাতটা নাগাদ বাড়ি ফিরলেন। এসেই দেখলেন যে নতুন চশমা এসে গিয়েছে। পোশাক বদলে, নতুন চশমাটা পরে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক প্রশান্তির হাসি হাসলেন শ্যাম সুন্দর দত্ত। কাজের চাপে এতদিন নিজের চেহারা এবং মনোরঞ্জনের দিকে তাকাতেই পারেননি তিনি। তারই ফল ওই চাপা দুঃখ। শ্যামসুন্দর বাবুর মনে হল যে তার গলার কাছে দলা পাকিয়ে থাকা জিনিসটা উঠে আসছে। সেটা দুঃখ নয়, এতদিন ধরে মনের ভাঁড়ারে জমে থাকা রাশি রাশি হাসি।।

স্মরণীয় দিবস
বিশ্ব থিয়েটার দিবস
( ২৭ শে মার্চ)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


একটা সময় ছিল যখন সিনেমা শুরু হয়নি তখন মানুষ বিনোদন পেতো থিয়েটার দেখে। আজ যখন হিন্দি সিনেমা তার শীর্ষে, প্রতি সপ্তাহে যখন কয়েক ডজন সিনেমা মুক্তি পায় কিন্তু এখনও অনেক মানুষ আছেন যারা বিনোদন বলতে থিয়েটারকেই বোঝেন।
থিয়েটার কে এত সম্মান দেওয়া হয় কারণ, অনেকেই মনে করেন থিয়েটার শুধু মাত্র বিনোদনের মাধ্যম নয় এর মাধ্যমে মানুষকে সামাজিক ও মানসিকভাবে জাগ্রত করা যায়। শিল্পী দর্শক উভয়ের মনেই থিয়েটার এক দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে যায়।
বিশ্ব থিয়েটার(WTD) দিবস একটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ২৭শে মার্চ পালিত হয়। এটি ১৯৬১ সালে আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট দ্বারা প্রথম শুরু হয়।
এই উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাট্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশ্ব থিয়েটার দিবসে আন্তর্জাতিক বার্তার প্রচলন যার মাধ্যমে আইটিআইয়ের আমন্ত্রণে বিশ্ব মানের একজন ব্যক্তিত্ব থিয়েটার এবং শান্তির ও সংস্কৃতির থিমে তার প্রতিচ্ছবি শেয়ার করেন।
প্রথম বিশ্ব থিয়েটার দিবসে আন্তর্জাতিক বার্তা লিখেছিলেন ফ্রান্সের মানুষ জিন কক্টো ১৯৬২ সালে। ২০০২ সালে এই বার্তাটি দিয়েছিলেন ভারতের নাট্যশিল্পী গিরিশ কারনাড্। জিন কক্টোর বার্তাটি প্রথমে সেলসিংকিতে এবং তারপর ভিয়েনায় প্রকাশিত হয়। ১৯৬১ সালের জুন মাসে আইটিআইয়ের নবমতম বিশ্ব কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি আরবি কিভিমা আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের ফিনিশ সেন্টারের পক্ষ থেকে একটি বিশ্ব থিয়েটার দিবস প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাবটি স্ক্যান্ডি নেভিয়ান কেন্দ্র গুলির দ্বারা সমর্থিত এবং যা প্রশংসার দাবি রাখে।
থিয়েটার দিবস পালিত হয় নাটকের সুন্দর শৈলী কে বাঁচিয়ে রাখতে এবং সামাজিকভাবে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।


পাঠ প্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি  ছোটবেলা বিশেষ সংখ্যা  - ১২৫ পড়ে কবি তারাপ্রসাদ সাঁতরা যা লিখলেন) 


 ১২৫ সংখ্যা বড় কম কথা নয়। সংখ‍্যার থেকেও বড় কথা হল পত্রিকার মান। মৌসুমী ঘোষ সম্পাদিত "জ্বলদর্চি " এ সময়কার একটি উল্লেখযোগ্য ছোটদের পত্রিকা। ছোটদের লেখা ও চিত্রসম্ভারে সমৃদ্ধ এই পত্রিকা ইতিমধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে।  আগামী প্রজন্মের লেখক ও শিল্পী  তৈরির আঁতুড় ঘর হয়ে উঠেছে। এ পত্রিকায় ছোটদের লেখাগুলি যেকোনো পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করবে। এখানে প্রতিটি লেখার মধ‍্যে শিশুমনের এক নরম চেতনার স্পর্শ পাওয়া যায়। তাদের কল্পনাশক্তি ও ভাষার মধ‍্যে তার তাদের শিল্প মনের পরিচয় ফুটে ওঠে। পত্রিকায়  ছোটদের জন‍্য বড়দের লেখাগুলি খুবই সুন্দর। এগুলি ছোটদের প্রেরণার উৎস। সব নিয়ে সার্থক একটি পত্রিকা। আর সম্পাদকের সম্পাদকীয়তে পত্রিকার একটি নির্যাস উঠে আসে। ছোটদের মনের রঙে রাঙানো অতুলনীয় সম্পাদকীয়।

        এবারের ছোটবেলা বিশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদ সুদীপ পাত্রের ফটো চিত্র। খুব সুন্দর। পত্রিকার উপযোগী। শ্রীকান্ত অধিকারীর ধারাবাহিক উপন‍্যাস - "লাচুঙের নেকড়ে " বেশ ভালো ভাবেই এগিয়ে চলেছে। যাত্রা পথের বর্ণনা, দৃশ‍্য নির্মাণের মধ‍্য দিয়ে পাঠকের মনকে নাড়িয়ে চলেছে। মলয় সরকারের "সাদা বালির খপ্পরে" ভ্রমণ বিষয়ক লেখাটির এটিই শেষ পর্ব। খুব সুন্দর  পরিসমাপ্তি পেয়েছে গল্পটি।  অনেক অজানা তথ‍্যে সমৃদ্ধ এই লেখাটি অবশ‍্যই পাঠককে তৃপ্তি দিয়েছে। এখানে উঠে এসেছে ইতিহাস বিজ্ঞান ও ভুগোলের জানা অজানা তথ‍্য। খুব উপভোগ‍্য একটি উপস্হাপনা।
            ছড়া লিখেছেন আসরফী খাতুন " একটু দে ভাই ঠাঁই"।চড়ুই দের বাসা সংকট খুব সুন্দর ভাবে ছন্দের মধ‍্যে ব‍্যক্ত করেছেন। বেশ সুখপাঠ‍্য। " মায়ের কোল বাবার আদর /আমরাও তো চাই। / ভাবরে তোরা সবার কথা  / একটু দে ভাই ঠাঁই ।
          অষ্টম শ্রেণির ছাত্র প্রবাহনীল দাস  দোল নিয়ে লিখেছে অনবদ‍্য একটি ছড়া। ছন্দের দোলায় খুব সুন্দর হয়েছে ছড়াটি । " ভাগের মাঝেই প্রাপ্তি আছে,নেই তো খুশির সীমা  / নতুন করে বুঝিয়ে গেল ফাল্গুনী পুর্ণিমা।'
              বিশ্ব কবিতা দিবস নিয়ে লেখা দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে  র লেখাটির মধ‍্যে বিশ্ব কবিতা দিবসের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। বেশ তথ‍্য সমৃদ্ধ। অনেক অজানাকে জানতে সাহায্য করেছে। 
      পত্রিকায় এবারের ছোট শিল্পী  অষ্টম শ্রেণির রুদ্রাংশু দাস ও নবম শ্রেণির সংগীতা রানা। দুটি ছবিতেই তারা তাদের দক্ষতাকে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
       পত্রিকায় আমাদের সকলের প্রিয় লিটল ম‍্যাগাজিনের প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্তকে শ্রদ্ধা অর্পণ করা হয়েছে।



জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇





Post a Comment

0 Comments