দেশান্তরী পর্ব -১৩/হিল্লোল রায়
প্যাসেজ “তোষা” -লাগবে খাসা
পরদিন অর্থাৎ নভেম্বর ১৯, ১৯৭৪ মঙ্গলবার শয্যাত্যাগ করলাম ৭-০৫ মিনিটে। তারপর স্নানাহার সেরে ৮-৩৬ এর হাবড়া লোকাল ধরে শিয়ালদা হয়ে সঞ্চয়ের অফিসে এলাম ১০-২৫। সঞ্চয়ের ছুটীর দরখাস্থ ও টাকা-পয়সার প্রয়োজনীয়তা ওদের অফিসে জানালাম। ওখান থেকে আয়কর ভবনে শান্তিমামার সংগে দেখা করে ১১-২০ নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম । পায়ে হেঁটে চাইল্ড এ্যান্ড কোং ৮ চৌ্রঙ্গী রোড, কলকাতা -১৩ গিয়ে কয়েকটা সার্টিফিকেটের ফটো স্ট্যাট কপি করতে দিলাম। তারপর সোজা আমার অফিসে ঠিক বারোটায় পৌঁছালাম। অফিসের কাজকর্ম সেরে বিকাল ৫-১৯ বেরিয়ে শিয়ালদা থেকে ৬-১০ এর ট্রেণ পেলাম।
হাবড়ায় পৌঁছাতে ৭-৪০। সঞ্চয় আমার জন্য আর্গোসিতে অপেক্ষা করছিল। সমস্ত বিষয় ওকে বল্লাম। গল্পগুজব ও গতানুগতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে রাতটা কেটে গেল। এরপর কয়েকটা দিন গতানুগতিক অর্থাৎ অফিস যাওয়া, কাজকর্ম করা, আবার আর্গোসি ফিরে আসা। অফিসে বসে শান্তিমামার উপর চাপানো কাজের কতদূর এগুলো তার খোঁজখবর নেওয়া- এ সবের মধ্যেই কেটে গেল। মানসিক চিন্তা ও রইল কাজগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ২১ নভেম্বর '৭৪ শান্তিমামা আয়কর ভবন থেকে আমাকে ফোন করে জানালেন,
-Who will bear my passage money – এই সম্পর্কে একটা সার্টিফিকেট প্রয়োজন। .
-এটা যে কোন relative এর কাছ থেকে দিলেই চলবে”-বল্লেন।
শনিবার নভেম্বর ২৩, ১৯৭৪ বেশ সকালেই উঠলাম ৬-০৫ নাগাদ। কিন্তু সকাল থেকেই ট্রেণের গোলমাল, অনিয়মে চলচল করছে। আজ একটু সকাল সকাল যাব ঠিক করেছিলাম। মাঝে ভাবলাম বাসেই যাব । কিন্তু হঠাৎ ৯-০৫ নাগাদ একটা ট্রেণ শিয়ালদা মুখী হল হাবড়া থেকে। ওটাতেই চেপে বসলাম। শিয়ালদা পৌঁছালাম ১০-৪৫ । ওখান থেকে শিয়ালদা কোর্টে পায়ে হেঁটেই চলে গেলাম এফিডেভিট সংক্রান্ত ব্যাপারে খোঁজ নিতে। কোর্টে আমার এই প্রথম আগমন। চারিদিক থেকে কালো কোটধারী উকিলেরা আমাকে ছেঁকে ধরলো। আমিও কোন রকমে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে এলাম।
পয়সা দিলেই বার্থ সার্টিফিকেটের এফিডেভিট পাওয়া যেতে পারে। দুর্নীতির চূড়ান্ত বুঝলাম কোর্ট কাছারীতে। একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম শিয়ালদহ পুলিশ কোর্ট গিয়ে। একটা ছবি মনের মধ্যে এঁকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। ট্রামে চেপে আমার অফিসে এসে পৌঁছালাম ১১-৪৫ নাগাদ। অফিস থেকে শান্তিমামাকে আয়কর ভবনে ফোন করলাম কিন্তু উনি অনুপস্থিত। গতানুগতিক কাজ সেরে শিয়ালদা থেকে ৩-১৭ (বিকাল) ট্রেণে চেপে হাবড়া পৌঁছালাম ৪-৩৫ নাগাদ। তারপর বিশ্রাম নিয়ে শনিবার দিনটা কেটে গেল। রাত ১০-৩০ বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
রবিবার, নভেম্বর ২৪, ১৯৭৪ ঘুম থেকে উঠলাম ৬-৪৪। হাত মুখ ধুয়ে চা-খেয়ে আটটা নাগাদ গেলাম আমার স্কুলের বন্ধু অনুপ বিশ্বাসের বাবা শ্রীযুক্ত হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস মহাশয়ের কাছে। উনি বারাসাত কোর্টের এ্যাডভোকেট। বার্থ সার্টিফিকেটের একটা স্যাম্পল ওঁনার সংগে বসে ঠিক করলাম। সকাল ৯টায় ওঁনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর্গোসিতে ফিরে এলাম। বাড়ী এসে টুকটাক কয়েকটা সাংসারিক জিনিষ বাজার করতে বেরুলাম একাই। ঘ্ন্টাখানেক পরে ফিরে এলাম। সমস্ত কিছুই গতানুগতিক ভাবে। বিকালে লোড -শেডিং, কারও সংগে দেখা হয়নি। আলসেমিতেই দিনটা কেটে গেল। শুয়ে পড়লাম দশটায়।
নভেম্বর ২৫, ১৯৭৪ সোমবার কর্মব্যস্ততার মধ্যেই কাটবে বলেই ঠিক করে নিয়েছি। তাড়াহুড়ো করে সকাল ৮-৩৬ এর হাবড়া লোক্যালে করে এসে শিয়ালদা পৌঁছাতে ১০-০৫ হল। গুঁতোগুঁতি করে ৩০ বি, বাসে চেপে এ্সপ্ল্যানেডস্থ আয়কর ভবনে পৌঁছাই ১০-৩৫। মিনিট ৪৫ অপেক্ষা করেও শান্তিমামার দেখা পেলাম না। সেখান থেকে ভারতীয় মানক সংস্থা থেকে ১১-৫০ বেরিয়ে আমার অফিস এ পৌঁছালাম ১২-২০ নাগাদ।
স্বাভাবিক কাজকর্মের ফাঁকে শান্তিমামাকে আয়কর ভবনে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম কিন্তু কোনবারই পেলাম না। নিজের অফিস থেকে বেরুলাম বিকাল ৫-২০ তে । এরপর কয়েকটা দিন অফিস যাওয়া ছাড়া আর কোন কাজ রইল না।
কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে শান্তিমামাকে টেলিফোন করি। নভেম্বর ২৮, ১৯৭৪ বৃহস্পতিবার আয়কর ভবন থেকে শান্তিমামা আমায় ফোন এ জানালেন আমার ইঙ্কাম ট্যাক্স ক্লীয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈ্রী হয়ে গিয়েছে। সুবিধামত নিয়ে আসতে বল্লেন। মনটা একটু আশ্বস্ত হল। অন্ততঃ একটা কাজ এগিয়ে রইল। অফিসের কাজ সেরে বিকাল ৬-৫২ হাবড়া লোকাল ধরে বাড়ী ফিরলাম রাত ৮-৩০। একটু ক্লান্ত বোধ হচ্ছিল।
নভেম্বর ২৯, ১৯৭৪ গুরুনানকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে অফিস , স্কুল -কলেজ সমস্ত কিছুই ছুটী। আর্গোসিতে বসে ছুটীর আমেজ উপভোগ করছি। এর মধ্যে DSL 869 এর জন্য প্রয়োজনীয় Sponsorship Certificate সংক্রান্ত ব্যাপারে details মেজমামা প্রদ্যোৎ নিয়োগীকে লিখলাম। ২৫০ বেভার্লি বুলেভার্ড, E102 , আপার ডার্বি, পেনসিলভ্যানিয়া- ১৯০৮২, USA এর ঠিকানায়। বিকা্লে “ মেরা গাঁও, মেরা দেশ “ সিনেমা দেখে সময়টা কেটে গেল। রাত্রে খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পড়লাম ১০-৪৫ নাগাদ। দিনটা বেশ ভালই কাটল।
নভেম্বর ৩০, ১৯৭৪ শনিবার সকাল ৮-৩৬ এর হাবড়া লোক্যালে চেপে শিয়ালদা হয়ে আয়কর ভবনে পৌঁছাই ১০-৪০, শান্তিমামার সংগে দেখা হল। আমার ইনকাম ট্যাক্স ক্লীয়ারেন্স সার্টিফিকেট টা ওঁর কাছ থেকে নিলাম। এ ব্যাপারে শান্তিমামা সত্যিই ভীষণ সাহায্য করেছেন। কখনই ভুলব না শান্তিমামার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আমার আমেরিকা আসার ব্যাপারে।
আয়কর ভবন থেকে ১২-১০ এ বেরিয়ে আমার অফিস পৌঁছালাম ১২-৩০ নাগাদ। অফিসের কাজকর্ম সেরে হাবড়া ফিরে এলাম সন্ধ্যা ৬-৪৫ নাগাদ।
কয়েকটা দিন গতানুগতিক পদ্ধতি অর্থাৎ অফিস যাওয়া, ফোনে গল্প করা ও হাবড়া ফিরে আসা -এভাবেই কেটে গেল। এরপর ডিসেম্বর ৫, ১৯৭৪ বৃহস্পতি্বার মেজমামার চিঠি পেলাম Sponsorship সার্টিফিকেট এর ব্যাপারে। এটা হল আমার নভেম্বর ১২, ১৯৭৪ এর চিঠির উত্তর যেটা G.P.O. Cal-1 এ পোস্ট করেছিলাম।
জ্যোৎস্না হল শুরু, বুক দুরুদুরু
শুক্রবার অর্থাৎ ডিসেম্বর ২০, ১৯৭৪ সকাল ৮-৩৬ এর হাবড়া লোক্যালে এসে শিয়ালদা হয়ে মিঃ সিনহার আয়োনা ট্র্যাভেলস অফিসে পৌঁছালাম ১০-৪৫ নাগাদ। ওর সংগে Sponsorship Certificates এর Notarized Copy নিয়ে আলোচনা করলাম প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে। কারণ গতকাল কন্সোলেট অফিস থেকে বলেছে- Sponsorhship Certificates গুলো Notarized Copy না হলে ওরা গ্রহণ করতে রাজী নয়। এ প্রসংগে বেশ কয়েকটা মজার কথা শুনতে হয়েছিল আমাকে। সংক্ষেপে বলছি মিঃ সিনহার-র ভাষায়ঃ
-You may have these certificates, staying here. You may request your relative to snatch a letter-head from his office and he will send it to you. You type on it as you desire....ইত্যাদি। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। পরক্ষণেই ভাবলাম কথাগুলো তো ১০০% ভাগই খাঁটি।
আমাদের দেশে attested Copy কিংবা অফিসিয়াল প্যাডের পাতা থাকলেই হল। খুঁটিয়ে কেউ বিচার করে না। ফলে আমার sponsorship এর certificate গুলো বাতিল হয়ে গেল Notarized copy না হওয়ার ফলে। মনতা আবার ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। মেজমামাকে লিখলাম ওগুলোকে Notorize copy করে পাঠাতে। আবার ধৈর্য্যের পালা শুরু হল। এইভাবে কয়েকদিন কেটে গেল। বেশ মনে আছে ডিসেম্বর ২৬, ১৯৭৪ বৃহস্পতিবার আমার মাকে নিয়ে সকাল ৯-২৪ এর ট্রেণে বারাসাত গিয়েছিলাম আমার বার্থ সার্টিফিকেট এফিডেভিট করাবার জন্য। অফিস টাইমে শিয়ালদা -বনগাঁ লাইনে ট্রেণে ওঠা- নামা করাই কষ্টকর। তার উপর মাকে নিয়ে অনেক কষ্টে ঠেলে উঠলাম নং -২৪ এর ট্রেণে। আমাদের সংগে ছিলেন শ্রীযুক্ত হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, এ্যাডভোকেট, বারাসাত -কোর্ট। ভদ্রলোক মাকে ট্রেণে উঠবার সময় যথেষ্ট সাহায্য করেছেন সন্দেহ নেই।
বারাসাত কোর্টে গিয়ে পৌঁছালাম সওয়া দশটায়। এফিডেভিটের Specimen তৈ্রী করাই ছিল। হরেন বাবুর পরামর্শমত সমস্ত কাজ সম্পন্ন হল। দুখানা দলিলের কাগজ ছ টাকা (প্রত্যেকটা তিন টাকা করে) দিয়ে কিনলাম। টাইপিস্টকে দু টাকা (প্রতি কপি এক টাকা হিসাবে) দিয়ে ঐ কাগজগুলো সমস্তটা টাইপ করানো হল। হরেন বাবু সমস্ত সময় টাইপিস্টের পাশে বসে ছিলেন। টাইপ করা হয়ে যাবার পর এ্যাডভোকেট হিসাবে হরেন বাবু সই করে দিলেন। অনেক সময় ধৈর্য্য ধরে হরেন বাবু আমাদের সংগেই ছিলেন। তারপর ওঁর সংগে গিয়ে দু টাকা ( প্রতি ফর্মে ১ টাকা হিসাবে) দিয়ে বড়বাবুর খাতায় এন্ট্রি করালাম। বড়বাবু ও সংগে সংগে Executive Magistrate এর কাছে আমার ওগুলো জমা দিয়ে এলেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর মাকে নিয়ে আবার ফিরে এলাম। প্রায় ১২-২০ তে আমার এফিডেভিট রেডী হয়ে গেল। ওটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। হরেন বাবুকে বিদায় জানালাম। তারপর কিছু জলযোগ করে মা ও আমি বারাসাত স্টেশনে এলাম ১২-৩৮ মিনিট নাগাদ। ট্রেণের গোলমাল থাকায় ১২-৩৮ নাগাদ হাবড়াগামী একখানা ট্রেণ পেলাম এবং ওটাতেই চেপে বসলাম। হাবড়ায় ফিরে এলাম ২-১০ নাগাদ। আজও আমার অফিসে অনুপস্থিতি হয়ে গেল। ভেবেছিলাম এফিডেভিট টা হয়ে গেলে বারাসাত থেকে সোজা অফিস যাব। কিন্তু মা-কে একা ছেড়ে দিতে মন চাইছিল না। তাই হাবড়াতে ফিরলাম মা -এর সাথেই। তারপর বিশ্রাম, খাওয়া-দাওয়া, গল্পগুজব করে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ DSL 869 জমা দেবার আগে প্রয়োজনীয় documents গুলো গুছিয়ে নিলাম। সমস্ত documents ফাইনাল চেকিং সেরে লেবেল এঁটে ঠিক করে রাখলাম। গল্পগুজব , চা-টা ইত্যাদি করে দিনটা কেটে গেল।
পরদিন অর্থাৎ ডিসেম্বর ২৭, ১৯৭৪ শুক্রবার সকাল ৮-০৮ এর ট্রেণ (লেটে ৮-৩০ ছেড়েছিল) চেপে শিয়ালদায় আসতেই ৯-৪০। ওখান থেকে পায়ে হেঁটে মিঃ সিনহার আয়োনা ট্র্যাভেলস এ চলে এলাম। মিঃ সিনহার সংগে এক ঘন্টা ধরে আলোচনা করলাম আমার ডকুমেন্টস ঠিক হয়েছে কিনা। DSL 869 ফর্মের কিছু অংশ ওঁর পরামর্শ মত পূরণ করলাম কারণ কোনো কারণে ভিসা না পেলে শেষ মুহূর্ত্তে ভরাডুবি হয়ে যাবে। DSL 869 ফর্মটা সম্পূর্ণ করে সিনহাকে বিদায় জানিয়ে আয়োনা ট্র্যাভেলস থেকে বেরুলাম ১১টায়।
আয়োনা ট্র্যাভেলস থেকে বেরুতেই সামনেই ১৪নং ট্রাম (হাইকোর্টমুখী) পেয়ে গেলাম। ট্রামে চেপে সি.এম.পি.ও. র ১নং গার্সটিন প্লেস অফিসে পনেরো মিনিটের মধ্যেই পৌঁছালাম। বড়মামা শিশির নিয়োগীর সংগে দেখা করে DSL 869 সংক্রান্ত কাগজপত্র 'ভেরিফাই' করলাম। ১নং গার্সটিন প্লেস থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে সোজা এসপ্ল্যানেড। ঘড়িতে তখন ১২-৪৫ । ওখান থেকে সামনেই ২৪ নং ট্রাম পেলাম। সময় নষ্ট কিংবা ইতঃস্তত না করে ওটাতেই চেপে বসলাম। এই সময়টায় অফিস টাইমের ভিড় থাকে না।
তাই বসবার জায়গা পেতে কিংবা ট্রামে উঠতে কোন কসরতেরই প্রয়োজন হয় নি। আমেরিকান কনস্যুলেট অফিস, ৩ এ শেক্সপীয়ার সরণী, কলকাতা -১৬ গিয়ে দুপুর ১-৩০ নাগাদ জমা দিলাম DSL 869। কিন্তু ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত এই অফিসের লাঞ্চ টাইম। কাজেই কর্মচারীদের চেয়ারগুলো ফাঁকা, রিসেপ্সানিস্ট ভদ্রমহিলাও লাঞ্চে গিয়েছেন। সামনেও কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, যার সংগে পরামর্শ করে DSL 869 ফর্মখানা জমা দেব। কনস্যুলেট অফিসের সামনে পায়চারী করছি। হঠাৎ এক ভদ্রলোক -কে পেলাম। উনি ওখানেই কাজ করেন।
-মে আই হেল্প ইউ?”- বলতেই আমিও আমার প্রয়োজনটা বলে দিলাম। DSL 869 ফর্মটাও জমা দিলাম ১-৩৫ মিনিটে।
আমার ভান্ডার গেল রাজার দরবারে
লোকটা আমাদের দেশীয়। ভাবছিলাম আর একটু দেরী করে রিসেপ্সানিস্ট এর হাতে জমা দেব। কারণ যদি উক্ত ভদ্রলোক ফর্মখানা নিয়ে অন্য কোথাও ফেলে রাখেন তাহলেই তো মুস্কিল। যাই হোক মনস্থির করতে পারলাম না মুহূর্ত্তের মধ্যে। ওঁর হাতেই জমা দিলাম। কোনো রিসেপ্সানিস্ট নেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা জিজ্ঞাসা করতেই উনি বল্লেন, “ Not necessary”। তারপর সৌজন্য বিনিময় করে কনস্যুলেট থেকে বেরুলাম ২ টোর কাছাকাছি। ট্রামে চেপে এসপ্ল্যানেড। চাইল্ড এন্ড কোং, ৮ চৌ্রঙ্গী রোড, কলকাতা -১৩ এ গিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট এফিডেভিটের ফটোস্ট্যাট কপি করতে অর্ডার দিলাম।
দু টাকা এ্যাডভ্যান্স দিয়ে 'ভাউচার' নিয়ে বেরিয়ে এলাম ২-৩০ টেয়। ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছিল। একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে কিছু মিস্টি ও চা খেয়ে সুস্থ হলাম। বিশ্রাম নিলাম আনন্দবাজারের হেডীংগুলোতে চোখ বুলিয়ে। কারণ সকালে আর্গোসি থেকে বেরুবার সময় মানসিক ব্যস্ততা ও সময় সংক্ষিপ্ততায় ঠিকমত কাগজ পড়া হয় না। তাই দিনের কাজকর্ম সেরে আর্গোসিতে ফিরে কাগজের উপর চোখ বোলাতে হয়। কিন্তু সমস্ত দিনের খাটুনি ও ট্রেণের ধকল চোখ দুটোকে খুলে রাখতে দিতে চায় না। বলে- “আমায় বিশ্রাম দাও। ওভারটাইম করতে রাজী নই...ইত্যাদি।” পাকস্থলীতে কিছু জলযোগ হবার পর শরীরটাও সুস্থ বোধ হল। চাইল্ড এ্যন্ড কোং থেকে বেরিয়ে হেঁটেই চলে এলাম ভারতীয় মানক সংস্থার অফিসে।
মানক সংস্থায় কর্মরত আমার বন্ধু সঞ্চয় ঘোষের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলাম। আকর্ণ-বিস্তৃত হাসি, গল্প-গুজব করে কিছুটা সময় কেটে গেল। সঞ্চয়ের প্রশ্নের ফাঁকে ফাঁকে জবাবও দিচ্ছি মাঝে মাঝে। DSL 869 ফর্ম আজ জমা দিলাম -সেটা ও জানালাম। সমস্ত শরীরটা বেশ হালকা লাগছে।
-হাউ ডু য়্যু ফিল নাউ, হিরে? সঞ্চয় ঘোষের প্রশ্নের উত্তরে বেশ হালকা মেজাজে বলে উঠলাম,
-এ থাউজ্যান্ড পাউন্ড লোড ফ্রম মাই সোল্ডার হ্যাজ বিন লিফটেড অফ। আই থিংক, আই উইল হ্যাভ এ সাউন্ড স্লিপ টুনাইট।
-সিওর , সারটেনলি...। সঞ্চয়ও উৎসাহ দিল। সঞ্চয়ের অফিস পাঁচটায় ছুটী। ছুটীর পর আমরা দুজনেই বেরিয়ে পড়লাম। শিয়ালদা থেকে সন্ধ্যা ৬-০৬ এর ট্রেণে চেপে হাবড়ায় আসতেই ৭-৩০ হল। একটা ভীষণ কর্মব্যস্ত দিন অতিবাহিত হয়ে গেল এমনি করে।
DSL 869 জমা দেবার পর আমার আর কিছু করণীয় নেই। যতক্ষণ পর্য্যন্ত কনস্যুলেট অফিস থেকে কোনো উত্তর না পাচ্ছি। কাজেই গতানুগতিক অফিস যাওয়া-ও হাবড়া ফিরে আসা, গল্পগুজব, বিশ্রাম ছাড়া আর কিছু করণীয় নেই।
ডিসেম্বর ৩০, ১৯৭৪ সোমবার হাবড়া থেকেই সোজা অফিসে এলাম। অফিস ছুটীর পর পায়ে হেঁটে এসপ্ল্যানেড গিয়ে চাইল্ড এণ্ড কোং থেকে ফটোস্ট্যাট কপিগুলো ডেলিভারী নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। শিয়ালদা থেকে ট্রেণে চেপে হাবড়া পৌঁছাতে রাত ৯-১৫।
ইংরাজী ১৯৭৪ সাল-কে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর এল ১৯৭৫। অফিস ছুটী নূতনের আগমনে। চারিদিকেই ছুটীর আমেজ ১লা জানুয়ারী, ১৯৭৫। আর এই দিনেই ভারত ইডেন উদ্যানে ক্রিকেট খেলায় জয়লাভ করল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৮৫ রানে। চতুর্দিকে কর্ণভেদি পটকা-বাজির আওয়াজ, ছেলে -বুড়োর নাচানাচি, আনন্দোচ্ছ্বাস। বেশ উপভোগ করলাম আর্গোসির দোতলায় বসে। ১লা জানুয়ারী ১৯৭৫ বুধবার ভালই কাটল।
রাত পোহাতেই সকাল। আবার অফিস যাওয়ার হুড়োহুড়ি, গতানুগতিক জীবন।
জানুয়ারী ৩, ১৯৭৫ শুক্রবার আমার অফিস ছুটির পর চাইল্ড এন্ড কোং -এ চলে এলাম ভিসার জন্য ফটো (দেড় ইঞ্চি xদেড় ইঞ্চি সাইজ) অর্ডার দিতে। নেগেটিভখানা আমার সংগে ছিল। কোন অসুবিধা হল না।
চার কপি ফটো করতে মোট ৪x৩৫=১ .৪০ পয়সা বিল হল। এক টাকা এ্যাডভান্স দিয়ে ডেলিভারীর ডেটটা জেনে নিলাম। তারপর গতানুগতিক পদ্ধতিতে হাবড়ায় ফিরে এলাম রাত ৮-৩০। আপাততঃ কোনো কাজ নেই, অফিসে ও বিশেষ কাজের চাপ নেই। তাই অফিস যাওয়া -বাড়ী ফেরা এমনি করেই দিন কাটছিল। জানুয়ারী ৯, ১৯৭৫ বৃহস্পতিবার আমার অফিস ছুটীর পর চাইল্ড এন্ড কোং এ গিয়ে ফটোগুলো ডেলিভারী নিয়ে এলাম। আমার মনে একটা সন্দেহ ছিল DSL 869 ফর্মটা ঠিক যায়গায় পৌঁছেছে কিনা। সেটার খোঁজ নিতে কনস্যুলেট অফিস গেলাম জানুয়ারী ১৬, ১৯৭৫।
ভেবেছিলাম ফর্মখানা হয়তো জায়গামত ঠিক পৌঁছায় নি। কারণ লাঞ্চ টাইমে যার হাতে ফর্মখানা দিলাম, সে যদি জমা না দিয়ে থাকে! সেটা খোঁজ নিতে গেলাম জানুয়ারী ১৬, ১৯৭৫ বৃহস্পতিবার। মনে মনে একটা পরিকল্পনা এঁটে নিলাম-কিভাবে এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত হওয়া যায়।
কন্স্যুলেটের একতলায় মিঃ গ্যান্টি নামে জনৈক ভদ্রলোক বসেন। ওর সঙ্গে কথা বলাই মুস্কিল। লোকটা বিশেষ সুবিধার নয়। ওকেই আমার প্রয়োজন। অথচ ওকেই ম্যানেজ করতে হবে, 'লাইনে' আনতে হবে। তারই পরিকল্পনা মনে মনে ছক কেটে রেখেছিলাম।
-ইউ আর মিঃ গ্যান্ট?
-ইয়েস
-ডু ইউ নো মিঃ হিতব্রত রয় অফ থার্ড ফ্লোর?
-ইয়েস
-মিঃ রয় এ্যাডভাইজড মি টু মিট ইউথ ইউ- এ্যন্ড এ্যাস্ক হোয়েদার ইউ হ্যাড রিসিভড মাই DSL 869 ফর্ম অর নট।
হিতব্রত রয়-এর পরিচয় দেওয়াতে মিঃ গ্যান্টির মেজাজ মুহূর্ত্তেই নরম হয়ে গেল। কারণ হিতব্রত রয়(বাচ্চুদা) উঁচুপদে কর্মরত।
-মে আই হ্যাভ ইওর নেম, প্লীজ।
-হিল্লোল কে.রে
-হোয়েন ডিড ইউ সেন্ড দি DSL 869, বাই অর্ডিনারী অর রেজিস্টার্ড মেল?
-অর্ডিনারী , অন ডিসেম্বর ২৭, ১৯৭৪
- ইয়্যা, উই হ্যাভ রিসিভড ইট (ফাইল দেখে বললেন)।
আমার ভিতর ঘর আনল প্রাণে বড়
আমি সুনিশ্চিত হলাম DSL 869 ফর্ম ঠিক জায়গামত ফাইলেই জমা পড়েছে। Probable date of getting a rely of DSL 869 জিজ্ঞাসা করতে মিঃ গ্যান্টি জানালেন,
-ইট মে বি ওয়ান মান্থ অর টু অর মোর। ইউ ইউল রিসিভ দি রিপ্লাই মিঃ রে।” মনটা একটু আশ্বস্ত হল। আমার কর্মপদ্ধতি সঠিকভাবেই এগোচ্ছে ।
বেশ মনে আছে, Sponsorship Certificate গুলো মেজমামা আমাকে পাঠিয়েছিলেন ডিসেম্বর ১৮, ১৯৭৪। প্রত্যেকটার Duplicate Copy & Notarized. সেই সংগে ওর Income Tax Return Ceritificate পাঠায় নি। এই Income Tax সার্টিফিকেট পাঠানোর জন্য আবার চিঠি লিখলাম ডিসেম্বর ৩০, ১৯৭৪।
মেজমামা ওর ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট খানা পাঠিয়েছিলেন জানুয়ারী ১২, ১৯৭৫। সেগুলো আমি পেলাম জানুয়ারী ২০, ১৯৭৫ সোমবার। Sponsorship Cerificate সংক্রান্ত সমস্ত জিনিষ রেডি করে রাখলাম।
রোজই অফিস যাই, দিন গুনি DSL 869 এর উত্তর কবে আসবে। বেশী দিন অপেক্ষা করতে হল না। কনস্যুলেট অফিস থেকে উত্তর পেয়ে গেলাম ফেব্রুয়ারী ৩, ১৯৭৫ সোমবার। মানসিক অবস্থা ভাল না থাকায় আজ আর অফিস যাই নি। দুপুর একটায় DSL 871 এবং FS 510 এই দুখানা ফর্ম ও মেডিক্যাল এগজামিনেশান সংক্রান্ত ডাক্তারের ঠিকানা ইত্যাদি কাগজপত্র পেলাম।
মন ভাল হতে এক মুহূর্ত্ত ও দেরী হল না। বুঝলাম ভিসা পাবার দিকে এক পা এক পা এগুচ্ছি আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। মনের আনন্দে ঘুমই এল না। ছটপট করছি। আমেরিকা আসার স্বপ্ন দেখছি । এত আনন্দ কাউকে বোঝাতে পারছি না । ঐ ফর্মগুলো পড়ে বুঝলাম , আমার Interview (for Immigrant Visa)-র দিন ঠিক হয়েছে ফেব্রুয়ারীর ১৮, ১৯৭৫ মংগলবার। Interview at 11 A.M..এবং ঐ দিনই ভিসা দিয়ে দেবে। তবে এই ১৮ই ফেব্রুয়ারির আগে আমার মেডিক্যাল এগজামিনেসান রিপোর্ট রেডি করে রাখতে হবে।
একগাদা ডাক্তারের নাম, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর দিয়ে ওরা একটা লিস্ট পাঠিয়েছে। ওদের প্যানেলের অন্তর্ভূক্ত ডাক্তারের কাছে গিয়ে আমার মেডিক্যাল টেস্ট হবে। প্যানেলের লিস্টে গৌহাটি, জামশেদপুর, দিল্লী ইত্যাদি অঞ্চলের ডাক্তাররাও আছেন।। কলকাতার ডাক্তার দুজনের ফি সব মিলিয়ে (৫০+২৪+৩২=১০৬ টাকা)। অন্যান্য জায়গার ডাক্তারদের ফি ভীষণ কম ২৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। কিন্তু কলকাতার ডাক্তার ছাড়া অন্য অঞ্চলের ডাক্তারের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়, আর লাভজনকও নয়। কাজেই কলকাতার ডাক্তার দুজনের মধ্যে একজনকে ঠিক করতে হবে। একজন ভারতী্ অন্যজন ইউরোপীয়ান। ভারতীয় ডাক্তারকেই ঠিক করলাম।
ফেব্রুয়ারী ৪, ১৯৭৫ মংগলবার DSL 871 এবং FS 510 ফর্ম দুখানা নিয়ে ৮-৩৬ এর হাবড়া লোক্যালে বেরিয়ে পড়লাম। শিয়ালদায় এসে ট্রামে চেপে আয়োনা ট্র্যাভেলস , ৪৫ বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রীট, কলকাতা -১২ এ এসে মিঃ সিনহার সংগে medical examination সংক্রান্ত ব্যাপারে details আলোচনা করলাম এবং আগামী কাল অর্থাৎ ফেব্রুয়ারী ৫, ১৯৭৫ medical examination এর দিন ঠিক করলাম। সিনহার অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা আমার অফিসে। গতানুগতিক কাজ করে বাড়ী ফিরে গেলাম রাত ৮-৩০।
আগেই বলেছি, ভারতীয় ডাক্তার বিজয় মেহতা, ৬৭ পার্ক স্ট্রীট, কলকাতা-১৬ র কাছেই আমার মেডিক্যাল একজামিনেশান হবে। ফেব্রুয়ারি ৫, ১৯৭৫ বুধবার ৮-৩৬ এর হাবড়া লোক্যালে এসে সঞ্চয়ের অফিস (ভারতীয় মানক সংস্থা, কলকাতা -১৩) গিয়ে আমার ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ওর হেফাজতে রেখে আমার অফিস চলে গেলাম। সঞ্চয়কে বল্লাম ডঃ মেহতার সংগে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে। আজই দিনক্ষণ ঠিক হল অর্থাৎ ফেব্রুয়ারী ৫, ১৯৭৫ , বুধবার সন্ধ্যা ৬-৩০ এ আমার medical exam হবে। আমার অফিসের কাজকর্ম সেরে সোজা সঞ্চয়ের অফিসে চলে এলাম বিকাল ৫-৩৫। তারপর দুজনে গল্প করতে করতে পায়ে হেঁটে ডঃ মেহতার ৬৭ পার্ক স্ট্রীট অফিসে চলে এলাম।
মেডিক্যাল টেস্টের ব্যাপারে একটু ভয় ছিল। কারণ ১৯৭৩ সালের পুরো এপ্রিল মাসটা জনডিস (Jaundice) রোগে ভুগেছিলাম। শরীরটাও বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এই ভিসা সংক্রান্ত ব্যাপারে হুড়োহুড়ি করে। এক্স-রে রিপোর্টএ যদি কিছু খারাপ আসে এই সব চিন্তা করে মন খারাপ করছিলাম নিজেই। যাই হোক, ডঃ মেহতার চেম্বারে গিয়ে ঠিক ৬-৩০ এ পৌঁছালাম। আমাদের পরিচয় দিতেই পারস্পরিক সৌজন্য বিনিময় হল। সঞ্চয় ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছিল। আমি চলে গেলাম ডঃ মেহতার চেম্বারে।
আমার নাম, ঠিকানা, পাসপোর্ট নাম্বার- আগে কোনো কঠিন রোগে ভুগছেন কিনা ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করলেন ডঃ মেহতা।
-হ্যাভ ইউ সাফারস ফ্রম টিউবার কুলোসিস , স্কিন ডিজিজ, টাইফয়েড , কলেরা?
-নো, নেভার
-ওকে, আই উইল চেক ইওর পালস রেট। গো টু দি চেম্বার, লে ডাউন, টেক অফ ইওর গারমেন্টস।
আমিও সমস্তই খুলে শুয়ে পড়লাম ইতঃস্তত না করে।
পাঁচ মিনিট ধরে আমার সমস্ত কিছু চেক করলেন ডঃ মেহতা।
-এভ্রিথিং ইজ ওকে, মিঃ রে। ডোন্ট ওরি।
তারপর একটা স্লিপ দিলেন x-ray করার জন্য। ডঃ মেহতার কাছে আমার মেডিক্যাল টেস্ট হয়ে গেল।
সমস্ত কিছুই স্বাভাবিক, চিন্তার কিছু নেই বল্লেন। সব মিলিয়ে ওকে ১০৬ টাকা ফি দিতে হল। গা টা বেশ খচখচ করছিল অতগুলো টাকা এক সংগে দিতে কারণ ফালতু ছোটখাট ডাক্তারের কাছে পাঁচটা টাকা দিলেই রিপোর্ট পাওয়া যায়।
যাই হোক, ভিসা পাবার আগে এগুলো ভ্রুক্ষেপ করব না, আর করেও কোন লাভ নেই।
(চলবে)
0 Comments