গুচ্ছ কবিতা
বাসুদেব গুপ্ত
কবিতার দিন
কবিতার দিনটি যেতে যেতে
একবার ফিরে দাঁড়ালো।
সারাদিন সে দাঁড়িয়ে ছিল তার মৃৎপাত্র নিয়ে
তার গায়ে আঁকা ছিল আমাজনের জংগল
বুক ভর্তি ছিলো পদ্মা গংগা মেঘনার আকাশের মেঘ
কবিতার দিনটি দাঁড়ালো বেড়ায় হাত রেখে
মানুষ বড় যত্ন করে বেঁধেছে বেড়া
আলাদা হবার জন্য
এ দিনটি তার বলেছিল সকালের শালিকের দল
এদিনটি তার বলেছিল ঘুম ভেঙে ওঠা শিশুদূর্বাঘাস
এদিনটি তার লেখা ছিলো একতারা নিয়ে বেরিয়ে পড়া
বুড়ো নদীটির স্বরলিপিতে।
দিন ডুবে গেল জলে রাত ফণা তুলে দাঁড়িয়ে উঠল চারদিকে
কেউ তাকে আজ ডাকলো না।
কবিতার দিনটিকে বাঘে খেয়ে নিল।
ভালোবাসার পাঁচ কাহন।
ভালোবাসা ভালো বাসা নয়
কেউ ভালো থাকে না ভালোবেসে।
আমি দেখি ভালোবাসা উড়ছে হাওয়ায়
যদি বা কুড়োই কিছু, তাগা বেঁধে রাখি।
দুঃখ নিয়ে তৃষ্ণা নিয়ে ঘুরছে মানুষ
ভালোবাসা ভালো জব উঁচু বিলবোর্ডে
কি করে যে পাওয়া যায়? পেলেও হঠাৎ
ছাঁটাইএর চিঠি আসে মেলে।
আমি তো কুণ্ঠিত হয়ে উল্টো টুপি দিয়ে
মুখ ঢাকি, বড় বেশি ভালোবাসা পেয়ে গেছি বলে
যদি বলি হো হো করে হেসে ওঠে সব
এইটা একটা ফ্রড, ভাইরাল খবর ছড়ায়।
বলিনা কাউকে তবু কুন্ঠিত থাকি
যোগ্যতা নেই তাই নিয়োগ দুর্নীতি মনে হয়
চোখে চোখে দেখি তাও ভালোবাসা আমার জন্যেই
বেআইনী পারিজাত হয়ে ফুটে আছে।
শহরের দেওয়ালি হোলি ক্রীসমাস পার্টি
আমাকে ডাকে না আমি মেঠোপথে একলাই ঘুরি
ভালোবাসা রিমঝিম বৃষ্টি অঝোর
বন্য আমি, হাত ধরে দুকূলভাসানো বন্যারা।
জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇
এভাবেও
যেন লেখা ছিল বিদ্যুল্লেখায় নীল
দেখা হবে।
তুমি জানতে না, আমাকে টুইটুই
রেডউডের উদ্ধত মাথায় ঠোঁট দিয়ে বিলি কেটে দেবার সময়
গল্প বলেছিল প্রথম নারীর জন্মকথা
বলেছিল খেলা শেষ হলে
নক্ষত্রেরা মাঠ ছেড়ে পড়তে বসবে হাত ধুয়ে
তখন বারের নীচে সে তার খরগোসের পিঠে চেপে
অন্ধকারে খুঁজে নেবে আগামী ঘাসের শীষ
তাকে যে আবার জন্ম দিতে হবে
আবার জন্ম নিতে হবে।
লেখা ছিল বিদ্যুল্লেখায় দেখা হবে আঁধারে,
হঠাৎ বজ্রাঘাতে নিভে যাবে শহরের অজস্র নিওন
শেষ ম্যাক্সিমাম আকাশে উড়ে উড়ে
কে জানে কোথায় যাবে, কোন বাহুডোরে,
চেয়ে থাকবে ডিআরএস ঊর্ধ্ব মুখে
এ খেলার ফলাফল কেউ জানবে না
কেউ না।
আমাকে টুইটুই এসব কিছুই বলে নি।
তোমার ভুরুর টিপ ভেসে গেল চাঁদের ভেলায়
থাক।
এভাবেই ভুলে থাকা যাক।
সন্ধ্যায়
নদী কি নৌকোকে টানছে ?
নৌকোর কাছে তা অবান্তর -
যেখানে জল এসে জড়িয়ে ধরে হাল
সেখানে জীবন জন্মাচ্ছে।
হাঁটতে থাকি যত রাস্তায়
রাস্তা হাত ধরে হাঁটছে কচি পায়
উল্টো রাস্তা কি টানে পিছনে
সন্ধে ফেলে খুঁজে পায় ভোর?
তোমারও চোখ ঐ লোপাট ডাল খোঁজে
ডাল কি কাল ভেঙে দাঁড়াবে দুয়ারে ?
নয়ন পাখিরা ওড়ে দুপুরে এক ঝাঁক
বৃষ্টি কাজ ভুলে লোভী হয়।
এসব বাতচিত নিজেরই সংগে
আমার বসে বসে ভিখারী জানলায়
হাজার হারানো আমি কেঁদেই কুটিকুটি
নৌকো ভেসে যায় সন্ধ্যায় ….
অমলতাস
আমি তো অমলকে ভালোবাসতাম
অমলকে সবাই ভালো বাসতাম।
যেমন ভালোবাসি যুঁই, ঘাসের শরীর ছুঁয়ে ম্রিয়মাণ
বাজারে সাজানো তাকে রক্তহীন শুকনো জনগণ
ভালোবাসতাম কারণ জানা তো ছিলই
বেশিদিন এই ভার বইতে হবে না
এতদিন ধরে কেউ ভালবাসে না কী?
ভালেবাসা পরিশ্রম চায়
এই ভালো টি টোয়েন্টির ম্যাচ
রিভিউ চলছে শুধু অপেক্ষা কয়েক মিনিট
পর্দায় উড়ন্ত ফিল্ডার বাউন্ডারী থেকে উড়ে যাবে
লুফে নেবে ক্যাচ
আন্গুল উঠবে ঐশ্বরিক আকাশের দিকে
রাজার ঘোষণা হবে এবারে আউট
খেলা শেষ।
অমলের গল্প করতে করতে বাড়ী ফিরছি
দাঁতে আটকে পপকর্ন বা কাটলেটকুচি
আর বুকে আটকে ছোট্ট একটা কাঁটা
আমরা যাকে ভালোবাসা বলি।
সত্যি আমরা সবাইকেই ভালোবাসতাম না গো?
অনেক অনেক দিন আগে।
অমলতাসের বেলা শেষ, ডানা মেলে ওড়ে
শিশুর বিছানা ফাটা তুলো
বোমারু বিমান থেকে ঝরে,
রক্তজবা।
0 Comments