জ্বলদর্চি

বৈঠা /সন্দীপ দত্ত

গল্প

বৈঠা
সন্দীপ দত্ত


দরিয়ায় হাল বাইতে বাইতে জীবন যাওয়া মরণের বাপ তার মরণকালে মরণকে ডেকে বৈঠাখানা হাতে দিয়ে যে কথা নিয়েছিল,সে কথার দাম রাখতে রাখতেই যৌবন পার করল মরণ।জোয়ান হাতের কারসাজিতে প্লাবন এলে তার এখন পরাণ নাচে। রাসু,পিলু,কুচনদের চুপ করিয়ে দিয়ে সে যখন বৈঠা বায়,নৌকো যেন তরতরিয়ে এগোয়। নিচু গাঁয়ের মাটির গর্তে ঢুকে আসা কুঁড়েগুলো যখন ডুবুডুবু,এই মরণই তখন জীবনপাড়ে নিয়ে যায় তার জলযান।
       এতদিন রাসু'রা কথা বলত পেছনে। মাঝিবংশের ছেলে প্লাবনকালে যেন জাদুদন্ড পায়। বাপেরকালের ব‍্যবসা। ঘাটে নৌকো নামালে লোকজন সব তার যানেই ওঠে। কেউ একজন বলেছিল,মরণ নাকি আকাশনক্ষত্র গুনতে পারে। আকাশনক্ষত্র গুনতে জানলেই নাকি মেঘের কান্না বোঝা যায়।
          ফি বছর বান আসার আগে তিরিশ গাঁয়ের গরামথানে মুঠোবাতাসার মানত করে মরণ। প্লাবন মানেই তেপান্তরের বিল ডুববে,ভূতুমমাঠের বেঁটেমানুষ সমান গাছ,তবেই না মরণের যান হবে ময়ূরপঙ্খী! গ্রামের মানুষের কাছে ওটাই হল কাল। রটে গেল,মরণ নাকি প্লাবন পোষে।
          এবছর তাই নৌকোখানা বিক্রি দিল মরণ। আষাঢ় আসার আগেই তার বৈঠা জলের দরে নিল মনসিজ।
         বউ-ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সদরের পথে মরণ যখন পা বাড়াল,মাঝিবংশের গন্ধটা তখনও তার শরীরজুড়ে। তবে মোমের মতো গলতে শুরু করছিল বুকটাকে পুড়িয়ে।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇



Post a Comment

0 Comments