দুটি কবিতা
মৌমিতা চ্যাটার্জী
ঋষি দত্তাত্রেয় কথা
মঙ্গলময় পরমাত্মা সর্বশক্তিমান,
শুদ্ধমতী চিত্তে গাহি তাঁহার জয়গান।
যুগে-যুগে অবতীর্ণ ভিন্ন অবতারে,
জনম লন মনুষ্যরূপে জগত সংসারে।।
অদ্য রচিব এক অপূর্ব রচন।
মহর্ষি দত্তাত্রেয় কথা করিব বর্ণন।।
সপ্তঋষির অন্যতম অত্রি মহাঋষি,
ব্রহ্মরসনেন্দ্রিয় জাত-ব্রহ্মার অংশী।
কর্দমসূতা অনুসূয়া-সতী অঙ্গনা,
পতি-পদে নিবেদিতা,অতি ধর্মপ্রাণা।
একদা ত্রিমূর্তিরে পুত্ররূপে লভিতে,
হইল নিমগ্না সতী তপস্যা নিমিত্তে।
ঘোর তপস্যায় অভিনিবেশ মনন,
ইহাতে হইল ত্রিদেবীর ঈর্ষার কারন।
দেবীগণ প্ররোচনা দেন পতিগনে,
পাঠাইলেন মর্ত্যে সাধ্বীর ধর্ম পরীক্ষণে।
প্ররোচিত ত্রিমূর্তি,মর্ত্যে মহাত্যাগী রূপে,
আসিয়া দাঁড়াইলেন অনুসূয়া সম্মুখে।।
কহেন-"ভিক্ষার লাগি আসিনু এ গেহে,
করিতে হইবে দান,অনাবৃত দেহে!
আপনারে নগ্ন করি ,করহ ভিক্ষা দান,
তাহাতেই বাড়িবে তব ভিক্ষার সম্মান"।
যোগীত্রয়ের বাক্য দেবী শ্রবণ করিয়া,
সেইক্ষণে ভ্রান্ত চিত্তে উঠিল চকিয়া।
অতঃপর ঋষিপত্নী করিয়া কৌশল,
যোগীগণে নিক্ষেপিলেন মন্ত্রপূত জল।
ত্রিনাথ হইল 'শিশু'মন্ত্রের প্রভাবে,
শিশুগণে স্তন্যপান করাইলেন মাতৃভাবে।
অত্রিমুনি ধ্যানযোগে হইলেন জ্ঞাত,
ক্রোড়ে লন শিশুত্রয়ে হইয়া উল্লাসিত।
একরূপে -শিশুত্রয়ের হইল সমাহার,
ত্রি-শিরের অধিকারী,ষড়ভুজ তাঁহার।
ত্রিদেবীগণ চিন্তাভারে হইয়া মগন,
আসিলেন নামি,অত্রি মুনির আশ্রম।
দেখিয়া শিশুরূপে আপন পতিগণে,
মাগিলেন ক্ষমা অশ্রুসজল নয়নে।
যাচিলেন পতিগণে মাতার নিকটে,
হইলেন সম্মত মাতা তাঁহাদের ফিরাইতে।।
হেনকালে,ত্রিদেব লন আপন মুরতি,
সকল আঁধার কাটি,ছাইল পূর্ণজ্যোতি।
ঋষিজায়া লভেন বরে পুত্র 'দত্তাত্রেয়',
ত্রিমূর্তির প্রতিরূপ জগতে অজেয়।
মতান্তরে তিনি দেব বিষ্ণু অবতার,
চন্দ্র,ঋষি দুর্বাসা ভ্রাতৃদ্বয় তাঁহার।
প্রতি অগ্রহায়নের পূর্ণচন্দ্র তিথি,
দত্তাত্রেয় পূজাপাঠে-প্রচলিত রীতি।
ধূপ,দ্বীপ জ্বালাইয়া সঙ্গে লও কর্পূর,
তাঁহার পূজায় হয় সঙ্কট দূর।
পশ্চিমে,মধ্যে,তথা দক্ষিন ভাগে,
পূজিত মহান ঋষি অতি সমারোহে।
এইরূপে তাঁহার কথা করিয়া বর্ণনা,
কুশলে রাখিও প্রভু-করি এ প্রার্থনা।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
আকাঙ্ক্ষারা
আমি চাইনি,
তোমার গন্ডী শুধু ছায়াঋণেই সীমিত থাক, চেয়েছি, তুমি হয়ে ওঠো আমার আস্থার মহীরুহ।
যার প্রশস্হ বুকে ,
জমিয়ে রাখব আমার জন্মজন্মান্তরের এক পাহাড় ঋণ,
জগৎ সংসার প্রায়বিস্মৃত,আত্মমগ্ন আমি সূদুর জ্যোৎস্নাসমুদ্রে ভেসে উপভোগ করব অপার্থিব সৌন্দর্য্যের সম্পদ।
এক-দুই করে কেটে যাবে চার-চারটে প্রহর।
আমি নিস্পলক,মায়াঘেরা চোখে,
লেপ্টে থাকব তোমার বুকে, আর সাক্ষী হব রাতপরীদের গোপন অভিসারের।
আচ্ছা,কলঙ্কে কিসের ভয় বলো তো? রাধা তো শ্যাম কালিমায় কলঙ্কিনী।
তাতে কি তার পবিত্র রূপের জৌলুসে এতটুকু আঁচড় পড়েছে!
চাঁদ ও তো লক্ষ যুগ ধরে ,কলঙ্কের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে বুকের নরম পাঁজর,
কই, তার নান্দনিক রূপ এতটুকুও ঝলসায় নি?
কলঙ্কিত কৌমুদিই আচ্ছন্ন রজনীকে বারবার শিল্পী হতে উৎসাহিত করেছে, কখনও প্রত্যাখ্যাত দয়িত বুকে তুলেছে মদিরার নেশার আলোড়ন,
কবিকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে কালজয়ী সৃষ্টির।
প্রিয়,
তুমি স্বেচ্ছায় হও আমার কলঙ্কিত কন্ঠহার,
আমি তোমায় গলায় জড়াবো।
যাবতীয় পার্থিব যন্ত্রনাকে উপেক্ষা করে এসো, আমরা কলঙ্কিত মিলন বাসর সাজাই উপসংহারে।
0 Comments