জ্বলদর্চি

আমার অনুভূতিরা-৩ /সুবর্ণা নাগ

আমার অনুভূতিরা-৩
সুবর্ণা নাগ


তিস্তা

একটা পাহাড় একদৃষ্টে 
অন্য পাহাড় দেখে, 
মেঘ বাড়িতে কুটুম আসে
বৃষ্টি ভেজার সখে।
ঐ নদীটা স্রোতস্বিনী
খরস্রোতা মেয়ে, 
একলা হাসে, একলা কাঁদে
পাহাড়ি পথ বেয়ে। 
ডুয়ার্স- তরাই সবুজ পথে
হারিয়ে ফেলে খেই, 
সঙ্কোশ তার হড়কা বানে
ভাসিয়ে দিল যেই। 
দূরেই থাকে, বুকের ভিতর
অন্য স্বাদের রিস্তা, 
গভীর রাতের প্রেমালাপে
বালিশ ভেজায়  তিস্তা।।


সংলাপ

~ ধ্রুবতারা তার অবস্থান বদলাবে না ।
তার চেয়ে চলো, 
আবাসনের ছাদে দাড়িয়ে শুকতারা দেখি, 
কালের নিয়মে, কাল স্রোতে ভেসে যাওয়া স্মৃতিরা, 
আর ফিরে আসে না। 
ফসিলের অবয়ব থাকে, 
প্রাণ নয়।

~ চোখের সীমায় যেটুকু আকাশ, তারই তারা দেখো। 
সবটাই যেন মোহ, 
শুকতারা তো তারা নয়, 
সেও এক গ্রহ।।

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇

তিতিক্ষা

ভাগ্যে রোদ্দুর ছিল, 
ছায়াহীন পথে
অনন্ত অপেক্ষা ছিল, 
ট্রেনের টিকিট হাতে। 
তবু তো ছিলে কোথাও, 
 আর সময়ের হল ক্ষয়, 
প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারি, 
প্রত্যাহার নয়।

যাওয়া আসার স্রোতে
ছিল ভেসে যাওয়া, 
নেশা-পেশার মাঝে
যুক্তির ঝড়ো হাওয়া। 
তবুও সবটুকু দিয়ে দিই
পাই প্রত্যাশাকে ভয়, 
পরিশ্রমে প্রেম আছে
প্রয়োজনে নয়।। 


খুচরো দয়া

সব ভুলে যাও, মনে রেখে দাও
রাতের ঘুম আর ভাতের ঢেকুর। 
মানুষ মানুষ সাজতে তুমি 
পুষেছ বিড়াল ,পুষেছ কুকুর। 
ভিক্ষা দিলে ছবির বহর,
আর হাত পাতো যে টেবিল-তলায়। 
তেলা মাথায় তেল দাও আর, 
ভাবটা জমাও গলায় গলায়। 
পরিচারিকার মায়না দিতে
দশটা টাকাও দর করে যাও, 
বিদেশ বিভুঁই বেরিয়ে পড়ো, 
ছুটি ছাটা যেই হাতে পাও। 
আলু বেগুন কিনতে গিয়ে, 
লঙ্কাটা চাও মাগনা নিতে
লাইনে দাঁড়াও ,রেশনটা পাও
সরকারও যা দিচ্ছে ফ্রিতে।
রাত বিরেতে শ্বাসকষ্টে, 
টান পড়ে যেই অক্সিজেনে, 
পাড়ার বেকার ছোকড়া গুলো
এগিয়ে আসে সে প্রয়োজনে। 

মানি পার্সের খুচরো টাকায়
একটু রেখো দয়া মায়া, 
গরীব গুলোও  দেশ-নাগরিক
গনতন্ত্রের নিঃস্ব ছায়া।।


আপেক্ষিক

'সত্যি' আমায় ক্ষত দিয়ে যায়,
আমি সান্ত্বনা চাইনা। 
সাজানো বাক্য যত সুখই দেয়, 
পালাবার পথ পাইনা। 
লড়াই জারি বুকের ভিতর
শব্দ জব্দ খেলা। 
 ফুসফুসে জমে নিকোটিন, 
সারাদিন সারাবেলা। 
রক্তক্ষরণ এ মনেও ঘটে
শিরায় শিরায় ভয়, 
শুধু মিথ্যার পাহাড় জমে 
থ্রম্বসিসই হয়।


ভিন্ন প্রার্থনা

জীর্ণ সে এক মন্দিরেতে 
শ্যাওলা ধরা সিড়ি, 
দৃষ্টি তার দীর্ণ করা
 যেন বছর হাজার কুড়ি। 
ভাঙা বিশ্বাস বা অবিশ্বাসে
অবহেলার খেলায়, 
গর্ভগৃহে আঁধার নামে
কে ই বা প্রদীপ জ্বালায়? 
হঠাৎ এক  নূপুর-ছন্দ
দুয়ারে তার থামে, 
দীপের আলোয় গভীর রাতে
সন্ধ্যা যেন নামে। 
কে জানে কোন্ মায়াতে
দুই বাহু তার বাড়ালে, 
পাথর রূপে মহাদেব
ছিলেন তারই আড়ালে। 
বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয়
নিয়ম ছাড়া আনন্দে, 
ভূতনাথ সাজেন সেদিন
বুনো ফুল আর আকন্দে। 
মহেশ্বরের গন্ধ পেয়ে
 গ্রামের মানুষ মাতে, 
শাঁখ ,ঘন্টা, ধূপের ধোঁয়া
 সকাল সন্ধ্যা প্রাতে।  
পূজা ,প্রসাদ ,আরতিতে
জীর্ণতা যায় মুছে, 
আড়ম্বর আর জমজমাটে
মেয়েটি সবার পিছে। 
প্রার্থনা তার ভিন্ন রকম, 
'ঠাকুর, তোমারও ভালো হোক, 
আদর করে রাখুক তোমায়, 
গাঁয়ের যত লোক'। 
 হঠাৎ এক রাতের জ্বরে
চিরতরে চোখ বুজে, 
শূন্যতাতে তরী ভাসায়
মহাকালের মাঝে। 
আজও সেই মন্দিরেতে
কাঁসর ,ঘন্টা বাজে, 
সিংহাসনের ঈশ্বর যেন
ঐ মেয়েকেই  খোঁজে।

Post a Comment

0 Comments