জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৩২

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৩২
সম্পাদক -মৌসুমী ঘোষ 
চিত্রগ্রাহক - সুদীপ পাত্র

সম্পাদকীয়,
বন্ধুরা, গল্প করতে কে না ভালোবাসে? আমিও ভালোবাসি। তাই তো তোমাদের সঙ্গে প্রতি রবিবার গল্প করি। কিন্তু প্রতি রবিবার ছোটোবেলা প্রকাশের পর মনে হয়, কত গল্প তো করা হল না তোমাদের সঙ্গে? এই যেমন লাচুঙ আর মহাবালেশ্বর দুটো জায়গার বেড়ানোর গল্প পড়তে পড়তে বলে রাখি শ্রীকান্ত আঙ্কেলের উপন্যাসের প্রচ্ছদ এঁকেছে সুদীপ্তা দিদি। খুব ব্যস্ত সুদীপ্তা দিদি ১৩১ তম  ছোটোবেলার পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখেছে। সুদীপ্তা দিদিকে ভার্চুয়ালি দিলাম টপ ফ্যান ব্যাচ। গল্পে গল্পে বেড়ানোর কথা বলে নিলাম। কারণ আমি জানি আমার মতো তোমরাও বেড়াতে ভালোবাসি। শুধু আমরাই না গণাও গরমের চোটে দেশ ছেড়ে বেড়াতে বেরোচ্ছে। গণা কে? জানতে হলে পড়ে নাও সুব্রত আঙ্কেলের কবিতা। দেশ বিদেশ ঘুরতে পাখি হয়ে যেতে ইচ্ছে হয় আমার।   আমার ইচ্ছে হবার সঙ্গে সঙ্গে সুদীপ আঙ্কেল একটা পাখির ছবি তুলে পাঠিয়েছে প্রচ্ছদের জন্য আর  গৌরাঙ্গ জেঠু হলুদ পাখির মিষ্টি একটা গল্প লিখে পাঠিয়েছে। আমি তো সঙ্গে সঙ্গে হলুদ পাখিদের সঙ্গে ঘুরতে বেড়িয়ে পরলাম। তোমরা আমার সঙ্গে গেলে কত কী জানতে পারবে। যেমন, দোলনচাঁপা আন্টি জানিয়েছে আজ রেডক্রস দিবস। ঘুরতে গেলে শ্রেয়া আর অভিজিতের মতো ছবি আঁকতে পারবে। তোমাদের বন্ধু রাহুল রবি ঠাকুরকে নিয়ে কবিতা লিখে পাঠিয়েছে। কাল বাদ পরশু রবি ঠাকুরের জন্মদিন মনে আছে তো? কেমন কাটালে রবীন্দ্র জয়ন্তী লিখে পাঠাও বন্ধুরা ছোটোবেলার দপ্তরে। - মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ১১

শ্রীকান্ত অধিকারী


খবরের কাগজ পড়া ছোট মামার বাতিক। একটা পেপারকে মিনিমাম তিন বার পড়বেই। বললে বলে, -তোমরা বোঝ না, আজ যা ঘটনা কাল তা ইতিহাস। অতএব কোনো কিছুই যেন মিস না হয়।গ্যাংটকে এসে এসেই তাই বাংলা পেপার খুঁজে কিনে আনে ছোটমামা। রাস্তাতে অবশ্য একবার পড়েছে। তবু হঠাৎ ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কেন যে পেপারের বাই উঠল। শুধু উঠল নয় রুমের ভিতরে গিয়ে ব্যাগ-ব্যাগরা উলটে একশেষ করে দেবার জোগার করে। 
শেষে বড়মামি থাকতে না পেরে বেশ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শুধায়, কী খুঁজছ বলবে তো। 
-বাংলা পেপার। 
-কেন,এত রাতে কী দরকার?  
-আবহাওয়ার খবরটা দেখা হয় নি। কাল কেমন থাকবে সকালটা। আকাশ যা মুখ করেছে!  
রামসি পিছনেই ছিল।বলে,-ছোটমামা সে তো মোবাইলেই পাবে।আপডেট খবরাখবর।তাজা সমাচার! 
-তুই থামবি এঁচড়ে পক্ক একটা। জিনিসপত্র ঠিক ঠাক রাখতে পারিস না? 
-এই তো পেপারটা দাদা। ডাইনিং টেবিলে পড়ে ছিল। রামসির মায়ের হাতে একটা বাংলা পেপার।  
-দাওতো,বলেই এক গাল হেসে বাইরে আবার যেখানে বসে ছিল সেই গোল চেয়ারে বসে পড়ে। বসে বসেই শুরু করে দেয় ‘ওম মণি পদ্মে হুম’! যেন কিছুই হয় নি। 
ততক্ষণে বাকী চেয়ারে গ্যাটসো,সঙ্গে আরো দু’জন বেশ তরতাজা যুবক।পাহাড়িরা যেমন হয়, হাট্টাকাট্টা।নিশ্চয় অন্য কারো ড্রাইভার। আর বাংলাদেশী ফ্যামিলির বড় ছেলেকে দেখা গেল গল্প করতে।
বাংলাদেশী লোকটা ছোটমামাকে দেখেই হাত বাড়িয়ে দেয়,-বসেন বসেন দাদা। 
আগামী কালকের আবহাওয়া পরিবেশ নিয়ে গ্যাটসোকে জিজ্ঞাসা করবে ভাবছিল ঠিক তখনই গ্যাটসো জানিয়ে দেয়, কালকে খুব সকালে উঠতে হবে। দুটো কারণ-সান রাইজিং এবং  যেহেতু ইয়ুম্থাং বা জিরো পয়েন্ট যেতে সময় লেগে যাবে। কাজেই সকাল সকাল বেরোনোয় ভালো। 
-কিন্তু গ্যাটসো, যা ওয়েদার! যদি বৃষ্টি হয়? ধ্বস নামে? 
-ও তো হোগা হি।গ্যাটসো মিটি মিটি হাসে। 
-ধ্বস নামবে? সিওর! 
- ইঁহা হোতা হ্যায়। আপ কারে যাচ্ছেন আচনাক উপর সে পাত্থর গির যায়েগি।সায়েদ নেহি হোগা।লেকিন ও ভগবান হি জানে।বলেই গ্যাটসোর পরিচিত যুবক যে গ্যাটসোর খুব কাছে ঘেঁষে বসে আছে সে দুদিকে ক্রশ চিহ্ন করে চোখ বন্ধ করে দেয়।  
-আপনি কী বলেন চুঙা মল্লিক?  
বাংলাদেশী ভদ্রলোকটি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে থেমে থেমে বলে,-চুঙা মল্লিক না আমি কুতুব আহম্মদ। চুয়াডাঙা আমার দ্যাশ! 
আলিবর্দী খাঁর আমলে মুর্শিদাবাদ থেকে মাথাভাঙা নদী পেরিয়ে চুয়াডাঙার উত্তরে চলে আসে চুঙা মল্লিক।শোনা যায় সেখান থেকেই ওই জায়গার নাম হয় চুঙাডাঙা।পরে চুয়াডাঙা। ছোটমামা চেয়ারে হেলান দিয়ে বেশ গুছিয়ে বসে।-তারও আগে শশাঙ্কের রাজ্য,তারপরে বল্লাল সেনের রাজ্য,ত্রয়োদশ শতকে বাংলার শাসনকর্তা মুঘীসউদ্দিন তোঘরীর হাত থেকে দিল্লীর সুলতান গিয়াস বলবন এই চুয়াডাঙা হাতিয়ে নেয়। আপনাদের ইতিহাসই আলাদা। কি বলেন?
-আপনি তো সাঙ্ঘাতিক মশায়।আমাদের এলাকা আমরায় জানতি পাইরলাম না। আর আপনি এত্তসবের খোঁজ রাখেন!-কুতুবুদ্দিনের থলথলে শরীরটা খুশির জোরে দুলে উঠে।কুতুবউদ্দিন স্থূল দেহী। কিন্তু অত্যধিক ফরসা। কপালের নীচ অব্দি ঝাঁকা চুলের গোছা থাকায় সামনে থেকে বোঝা যায় না মাঝে বিশাল টাক পড়েছে। হাসতে হাসতে মাথা নীচু করলে টাকটা স্পষ্ট দেখা যায়। বলে,-তাহলে কালকে দেখা হবে মশায়।ওহ কি খুশি লাইগসে!এই যে হেইডা আমাদের গাড়ির ড্রাইভার।এই দাদা চেনে। কী জানেন বিদেশে আইস্যা বাঙালি ফ্যামিলি সঙ্গে পাওয়া কম ভাইগ্যের না। খাবার সময় একডা স্যুপ দিল না সেইডা পা‍ন কইর‍্যা মুখডাই নষ্ট হয়ে গেসিল। এই কথাডাই উনাকে কইসিলাম। আপনাকে দেইখ্যা কথা কইয়া প্রাণডা হালকা হইল। 
-কিন্তু আমার প্রাণটা হালকা হল না কুতুববাবু।ছোটমামা বলে,-আপনার ওখানে ধান আখ  ডাল সবই তো হয় প্রচুর।সে আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়।এক সময় চিনির কল ‘কেরু এণ্ড কোং’ তো বিশ্ববিখ্যাত ছিল। কিন্তু এত মাটির মানুষ হয়ে কী করে আপনারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অদ্ভুত আপনাদের প্রাণশক্তি!  
কুতুবউদ্দিন আবার হেসে হেসে সম্মতি জানায়।  
 -আপনাদের মানুষরা বহু যুদ্ধ করেছে। তা ‘আট কবর’ ব্যাপারটা কী বলবেন?   
  হঠাৎ ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামে।সঙ্গে হালকা হাওয়া।দোচালার নীচে ছোট বাল্বটা দুলে ওঠে। মাঝে মাঝে গায়ে জলের ছিটে এসে লাগছে।
বাড়ির মালকিন মানে অতি বৃদ্ধা মহিলা একবার এসে কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করে গেছে। আর সাবধান করে গেছে যেন ঘরের বাইরে পা না দিই।
ওরা সবাই বিশেষ করে কুতুবউদ্দিন আর রামসি যেভাবে গোল গোল চোখে বৃদ্ধার দিকে তাকায় তাতে মনে হয় বেশ ভয় পেয়েছে কিংবা কী ব্যাপার এইটা জানার জন্য খুব উদগ্রীব হয়ে পড়েছে।
ছোট মামা অবশ্য প্রশ্নটা করে ফেলে,-কীস লিয়ে? বাহার মে ক্যায়া হ্যায়? 
তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধার চোখগুলো ভয়ঙ্করভাবে স্থির হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তার পরেই কোঁচকানো চামড়ায় ঢাকা মুখে বৃদ্ধা ঠোট আলগা করে বলে,-কুছ নেহি! পহেচানবালা এলাকা নেহি হ্যা না। জন্তু জানোয়ার ইধার উধার ঘুমতি হ্যায়। আপ বাবু লোগ আছেন,শো যাইয়ে। 
বাড়ির মালকিন ওদের সামনে একটা বেতের বাঁকানো চেয়ারে আধশোয়া করে শুয়ে পড়ে।
গ্যাটসো ফিসফিস করে বলে,-কুত্তা হ্যায় বহত।পাহাড়ি কুত্তা।দিন মে নেহি নিকালতি। লেকিন রাত হি উসকি … 
-আই মীন জংলী কুত্তা?  
লাচুং নদীর পতনের শব্দ আরো জোরালো ও ভয়ঙ্করভাবে ওদের কানে এসে লাগল। রামসির মনে হল বাইরে বেরিয়ে একবার দেখবে নাকি? নীচে পাহাড়ের কোলে কোলে টিমটিমে আলো দিয়ে কারা যেন মালা পরিয়েছে। ঘন অন্ধকারে গাঁথা মালার আলোয় সারা এলাকাটা এমন সুন্দর সেজে উঠেছে, দুর্গা পুজোর সময়ও কলকাতা তেমন সাজে না। আহা শিঙি যদি দেখতো! 
একদিকে বাইরে বেরোবার হাতছানি অন্যদিকে বুড়িমার নিষেধ রামসি বুঝে উঠতে পারে না। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক তখনই ওর কাঁধটা কে যেন জোরে চেপে ধরে। রামসি চমকে ওঠে। পেছন ফিরে দেখে সেই বাংলাদেশী দাড়িওয়ালা লোকটা। 
(ক্রমশ)

অভিজিৎ ভঞ্জ শ্রেনী:- নবম। জওহর নবোদয় বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুর।


গরমে গণা

সুব্রত দেব   

গরমেতে হাঁসফাস
     ওপাড়ার গণা, বলে -
     কিছুতেই দেশে আর 
     থাকা যায় না।

  গাছপালা  কেটে সাফ
       বহুতল বাড়ি,
    বিষ ধোঁয়া  রাস্তায় 
          গাড়ি কাড়ি কাড়ি ।

   বাজার অগ্নিমূল্য 
          চড়ে নাকো হাড়ি
    হাওয়া নেই, জল নেই
           চলে মারামারি।

 তাই গণা ঠিক করে-
      দেশ ছেড়ে বহু দূরে 
   যাবে সে পাহাড়পুরে,
   হাওয়া খেতে ফুরফুরে।


অণুগল্প
হলুদ টিয়া

গৌরাঙ্গ দাস

হলুদ টিয়ার সঙ্গে চোখের দেখাতেই ভাব হয়েছে অত্রিকার। প্রশ্ন  করেছে - তোমার বাড়ি কোথায় বন্ধু?
    হলুদ টিয়া বলল - সেই অনেক দূর। দু ' দিন ওড়া শেষে, যেখানে দেখা যাবে - সারি সারি তাল গাছ। খেজুর গাছ। নারকেল গাছ। চাষের জমি। ফসল ভরা মাঠ। ওটাই আমার গ্রাম।
    আত্রিকা আবার  প্রশ্ন      করল - তা - তুমি অত সুন্দর পরিবেশ ছেড়ে, এই ইট - কাট - পাথরের আধা শহরে এলে কেন?
     হলুদ টিয়া বলল - দুঃখের কথা কী আর বলব বন্ধু!আমাদের গ্রামে পাখিরা এখনো - কুসংস্কারে ডুবে আছে। আমার গায়ের রঙ হলুদ বলে - সবুজ টিয়ারা আমাকে সমাজচুতো করেছে।
      অত্রিকা বলল - আমাদের এখানে পাখিদের মধ্যে বড্ড মিল, ভীষণ আন্তরিক ওরা।
      হলুদ টিয়া বলল - তাহলে তো আমি এখানে বিন্দাস থাকতে পারি।
      অত্রিকা বলল - অবশ্যই। তুমি বিন্দাস এখানে আজ রাত কাটাও, সকাল হলেই দেখতে পাবে - আমাদের বাড়িতে কত পাখি আসবে। বাবা রোজ সকালে উঠেই পাখিদের খাবার দেয়। দেখবে, পাখিরা কত সুন্দর ভাবে, সকলে মিলে - মিশে খাবার খায়। দেখবে, তুমি নতুন বলে - তোমার সঙ্গে কী অমায়িক ব্যবহার করবে। তোমার মনে হবে তুমি ওদের অনেক দিনের চেনা।
     হলুদ টিয়া বলল - বন্ধু , আমি অপেক্ষায় রইলাম, আমার নতুন  পৃথিবীর          জন্য।
      অত্রিকা বলল - বন্ধু, সন্ধ্যা লেগেছে, আমি নিশ্চিত , অতটা পথ উড়ে এসে তুমি ক্লান্ত, এখন বিশ্রাম নাও, সকালে দেখা হবে, কথা হবে।
       হলুদ টিয়া বলল - তা - আমি কি আজ রাতটা তোমাদের কাঁঠাল গাছ টাতে আশ্রয় নিতে পারি? অত্রিকা বলল - কেন নয়। ইচ্ছা থাকলে সারা জীবন এই গাছ টাতে থেকে যাও।
        হলুদ টিয়া - আনন্দে আটখানা হয়ে - অত্রিকাকে শুভ সন্ধ্যা জানিয়ে উড়ে গেলো।
*       *          *           *
        সকাল হয়েছে, পাখিদের কথা - বার্তার শব্দে হলুদ টিয়ার ঘুম ভাঙলো। কাঁঠাল গাছ থেকে এক লাফে নেমে এলো মাটিতে।
        হলুদ টিয়াকে দেখে পাখিরা কয়েক মুহূর্তের জন্য নির্বাক হল। তাকিয়ে রইল অবাক আনন্দে। এগিয়ে গেলো দু 'এক জন করে, হলুদ টিয়ার কাছে। আন্তরিকতার রঙ মেখে ফিরে এলো। সব শেষে অত্রিকা জানালো হলুদ টিয়ার ইতিবৃত্ত।
        হলুদ টিয়া বাদে সকলে খাবার খাচ্ছে। দোয়েল হলুদ টিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল - কি বন্ধু খিদে নেই? কাক বলল - এসো, খেয়েনাও। টুনটুনি বলল - লজ্জা পেওনা রাজপুত্তুর।
       হলুদ টিয়া এবার ঠোঁট চালালো। সবার সঙ্গে মিলে - মিশে খেতে খেতে বলল - তোমরা সকলে আমাকে বন্ধু করে নিও।
         ঝুটি শালিক বলল - তা হলে খাওয়া শেষে আমার সঙ্গে চলো। এ দিকের পথ - ঘাট তোমাকে চিনিয়ে দিই। হলুদ টিয়া আনন্দে আত্মহারা হয়ে মধুর সুরে ডেকে উঠল।
        ওদের খাওয়া শেষ হতেই, ডগ - মগ আনন্দে ঝুটি শালিকের সঙ্গে উড়ে গেলো হলুদ টিয়া।
        ওদের উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে - অত্রিকা করুণাময়ের কাছে  প্রার্থনা করলো - আগামী জন্মে আমি যেন পাখি হয়ে জন্মলাভ করতে পারি।
   
     শ্রেয়া বিষয়ী, সপ্তম শ্রেণী, বাগাটী শিব চন্দ্র ব্যানার্জী গার্লস হাই স্কুল, হুগলি

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇

স্মরণীয় দিবস
বিশ্ব রেডক্রস দিবস 
(৮ ই মে)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

প্রতিবছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু না কিছু গুরুত্বপূর্ণ  দিবস পালিত হয়। সেই সমস্ত দিবসের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য দিবস হল রেডক্রস দিবস,যা সারা বিশ্বে ৮ই মে পালিত হয়।
১৮২৮ সালের ৮ই মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্ব রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের প্রথম প্রাপক জেন হেনরী ডুনান্ট। তাঁর জন্মদিন(৮ই মে) কে স্মরণ করেই বিশ্ব রেড ক্রিসেন্ট বা রেডক্রস দিবসটি পালিত হয়।
১৯৮৪ সালে এটি বিশ্ব রেড ক্রস দিবস বা নিউ রেড মুন ডে হিসেবে পালিত হতো।
প্রত্যেক সংস্থার মতো এটিও একটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯৭ মিলিয়ন স্বেচ্ছাসেবী সদস্য এবং কর্মীসহ একটি আন্তর্জাতিক মানবিক আন্দোলন যা মানুষের জীবন,স্বাস্থ্য রক্ষা, সব মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করা এবং মানুষের দুর্ভোগ ও প্রতিরোধ লাঘব করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
রেডক্রসের তিনটি প্রতীক আছে।জেনেভা কনভেনশন এবং তাদের অতিরিক্ত প্রোটোকল তাদের তিনটি স্বতন্ত্র প্রতীককে স্বীকৃতি দেয়, সেগুলি হল - রেডক্রস, রেড ক্রিসেন্ট ও রেড ক্রিস্টাল। এর প্রতীকগুলি ICRC এর পক্ষ থেকে অপ্রতিকূল ও নিরপেক্ষ হিসেবে চিহ্নিত মেডিকেল স্টাফ, অন্যান্য ব্যক্তি, যানবাহন ও কাঠামো রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। জাতীয় রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই অবস্থিত। জাতীয় স্বাস্থ্য, জরুরি চিকিৎসা এবং সেবার ক্ষেত্রে এই সংস্থাগুলি ত্রাণ সহায়তা ও নানান ধরনের সাহায্য করে থাকে। রেডক্রসের নিজস্ব একটি প্রতিক রয়েছে তা হলো সাদার উপরে লাল ক্রস চিহ্ন।
১৮৫৯ সালে ফ্রান্স- অস্ট্রিয়া যুদ্ধের পর ইতালির সালফারিনো মাঠে প্রায় চল্লিশ হাজার সৈন্য আহত ও নিহত অবস্থায় পড়েছিল। হেনরি ডুরান্ড ওই সময় ঐ স্থান পেরোছিলেন, তখন ঐ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে তিনি গ্রামবাসীদের নিয়ে উভয়পক্ষের আহত সেনাদের সেবায় নিয়োজিত হন। এর ফলে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বহু সৈন্য বেঁচে যান। এই ঘটনার পরবর্তীকালে হেনরী ডুনান্ট 'রেডক্রস' নামক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আজীবন মানব সেবার কাজ করে গেছেন। বর্তমানে এই সংস্থা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠান। রেড ক্রস তার কর্মকাণ্ডের জন্য ১৯১৭,১৯৪৪ ও ১৯৬৩ সালে এই তিনবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছে।
প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরও একটা থিম আছে, তার হলো -"আমরা যাই করি না কেন তা হৃদয় থেকে করব"।
প্রতিবছর ৮ই মে বিশ্ব রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট দিনটি পালিত হয়। সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মানবতাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদের এই দিনে সম্মান জানানো হয়।

ধারাবাহিক ভ্রমণ
মহাবালেশ্বরের পথে

বাসবদত্তা কদম

(দ্বিতীয় পর্ব) উঠে তো বসলাম বাসে, কিন্তু সে বাস দেখি, সব স্টপেজে দাঁড়ায় আর লোক তোলে। কি মুশকিল! কখন পৌঁছাবো? দিন কাবার করে দিলে যে। এভাবে বেড়ানো হয়! 
ঝাঁকা মাথায় বুড়ো উঠলো। বুড়োর পিছনে ঘাসের বোঝা নিয়ে বুড়ি। ঝুড়িতে মুরগি নিয়ে উঠল আরেক ছোকরা। এরকম কত লোক যে উঠল আর নামলো! তারা সবাই উঠে দুখানা সুটকেস আর সুটকেসের মালিককে দেখে। ঠিক যেন সার্কাসের জোড়া ক্লাউন। তবে তারা কেউ এতটুকু বিরক্ত করলে না। কিছু জিজ্ঞাসাও করলে না অতি কৌতূহলী হয়ে। থাকে বোধহয় এমন দু-চারজন মাঝে মধ্যেই। 
বসার জায়গা যখন ফুরিয়ে গেল, তখন বাসের মেঝেতেও বসে পড়ল কেউ কেউ।
বেজার মুখে বসে থেকেও মাঝে মাঝেই দেখতে পাচ্ছি পাহাড়ের ওপর পাহাড় ঢলে পড়েছে। আকাশ আবার তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। দূরে একখানা লেক। আহা কি সুন্দর নীল জল তার। মনে হলো বাস থেকে নেমে একবারটি ছুঁইয়ে আসি। লেকের ধার ঘেঁষে পাহাড়েরা পাহারা জমিয়েছে। লেক পাহাড় আর আকাশের যেন ভারি বন্ধুত্ব।
বাস একটু থেমে আবার চললো। চলছে আর চলছে। মাঝে মাঝে গোঁ, গোঁ শব্দ করে আবার একটা বাঁক পেরোয়। একশো কুড়ি কিলোমিটার পেরোতে দিন কাবার করে দিলে গো।

ঘচ ঘচাং ঘ্যাং শব্দ করে দাঁড়িয়ে পড়লো বাস।
-এবাবা বাস খারাপ হয়ে গেছে! আমি আর্তনাদ করে উঠলাম। 
-না গো এটাই লাস্ট স্টপ বলে ঝাঁকা মাথায় ছেলেটা মুরগি নিয়ে নেমে পড়ল। 
-এসে গেছি! এসে গেছি! হুড়মুড়িয়ে নামলাম আমরা। হুড়োহুড়ির কোনো দরকারই ছিল না, বাস তো দাঁড়িয়েই আছে। কিন্তু স্বভাব যাবে কোথায়।
-এসে তো পড়লাম! থাকবো কোথায়? 
-দৌড়াও আর খোঁজো। এভাবে খুঁজে পেতে, একখানা কলোনিয়াল গেস্ট হাউস পাওয়া গেল। কলোনিয়াল পিরিয়েডে প্রচুর ব্রিটিশ সাহেবদের বাড়ি ছিল এখানে এও তেমনই একখানা বাড়ি। এখন হোটেল হয়েছে। সে বাড়ির সামনের দিকে হোটেলের অফিস। পিছনদিকের একখানা ঘর মিলল।
আমাদের সুটকেস দুখানা রেখে ঘর খুলে দিয়ে চলে গেল হোটেলের ছেলেটি। 
হাতে মুখে জল দিয়ে এসে দেখি, এ ঘর কোথায়? এ তো ফুটবল খেলার মাঠ। পুরনো দিনের সব বিশাল বিশাল আসবাবপত্রে ঘর সাজানো। মনে হলো আমাদেরকে কেউ এক ধাক্কায় একশো বছর পিছনে নিয়ে এসেছে। লাইটের শেড গুলোও একেবারে পুরনো দিনের মতন আর আলোগুলো হোলদে। একমাত্র বাথরুমে ছাড়া নিয়ন লাইট নেই কোথাও। গা ছম ছম করছে। এতটুকু আওয়াজ নেই কোথাও নিজেদের গলা ছাড়া। কি জানি বাবা এ কি ভুত বাংলো নাকি! ঘরের বিশাল আয়নাটায় একবার ভালো করে দেখে নিলাম নিজেদেরকে। আমরা আমরাই আছি তো, নাকি বদলে গেছি? বলা যায়!
খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লাম সেদিন। পরদিন ভোর থেকেই শুরু করতে হবে মহাবালেশ্বর সফর।

সকাল সকাল হোটেলের চা, টোস্ট আর ডিম, সঙ্গে স্ট্রবেরির স্যালাড। খেয়ে ক্যামেরা কাঁধে বেরিয়ে পড়লাম দুজনে।
খাবার দাবার ভালোই ছিল। বেশ ফ্রেশ। আমার ভয় ছিল, ঘরের মত খাবারও পুরনো দেয় নাকি!
ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে কথা বলে গাড়ি ঠিক করে বেরিয়ে পড়া গেল।
ট্যাক্সিওলাকে বলা হলো হাতে তিনদিন সময়, সেইমতো ঘোরাবে সে। আর চতুর্থ দিনে আমাদের পুনে পৌঁছে দিয়ে তার ছুটি। 
(ক্রমশ)


পাঠ প্রতিক্রিয়া
( ১৩১ তম ছোটোবেলা পড়ে সুদীপ্তা আদিত্য যা লিখল)

যখন সময় থমকে দাঁড়ায়...না সময় থমকে দাঁড়ায় না।হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতা থেকে অনেক এগিয়ে এসে আজ মান্ধাতার আমলের ইতিহাস বইতে পড়ছি।হ্যঁ এতটাই এগিয়েছে আমাদের জীবনের মহারথ।সূর্যাস্তগামী চেহারা কে ঢাল বানিয়ে দুই পাহাড়িয়া সুখসারীর স্বপ্ন ছেলেটা এগিয়ে যাক।দুর্নিবার,অজেয় হোক। জঙ্গলমহলের মানুষদের এমন ঘোড় দৌড় জীবনখাতে রোজ রোজ বয়ে নিয়ে যায় সুবর্ণরেখা নদীর মত স্রোত। জানি না এই দৌড়ে আমরা কতটা এগিয়েছি কতটা পিছিয়েছি। আট ঘণ্টা হাসপাতালের ডিউটি অ্যাসাইনমেন্ট আর না ঘুম হওয়া মুখে চোখে কালি ছাপ নিয়ে এই জীবন টা বিশ্লেষণ করা হয়ে ওঠে না।তোড়পাড় হয়ে যাওয়া জীবনে জ্বলদর্চি একমাত্র সুবর্ণরেখা হতে পারে। কিন্তু তাকে আপন করার যোগ্যতা আমার নেই।তাও আরো গভীরে যেতেই হবে। জঙ্গলের গভীরে মৃত্যু ভয়। মৃত্যু অবধি না পৌঁছানো অবধি তল্লাশি থামাচ্ছি না।শ্রেয়া বোনের হাতি নিয়ে নকশার নিদারুণ চিন্তা ভাবনা তে এতটুকুই বলতে চাই যে কখনোও তোমার তুলিতে যেন অন্ধকার না নামে। আলো ছড়ানোর সাথে সাথে অন্ধকারের সামঞ্জস্য থাক। নয়তো এই চড়াই উতরাই তুলির টান তোমার সড়গড় হবে না। শুভঙ্কর ভাইয়ের যমুনার কূলে রাসলীলার একটা পট দেখার জন্য বোধ হয় আজ আমার অনেক মাস পর জ্বলদর্চির পাতা খোলা সার্থক হলো। শনিবার রাতে এই পত্রিকার সাথে সামিল হয়ে দিনটা সম্পূর্ণ লাগছে।বিহানের প্রথম বন্ধু থেকে পরপর সমস্ত লেখা আমার ভীষন পছন্দের।শব্দে শব্দে প্রকাশ করার মতন শব্দটাই অন্তহীন। জ্বলদর্চির সাথে যোগাযোগ বহুদিনের। হয়তো আরো অতলে ঢুবে গিয়ে নিজেকে স্নাত করলে শান্তি পেতাম আরো তবে শরীরের ক্লান্তিকে হারিয়ে আমি জিততে পারলাম না। অবসন্নতার কাছে পরাজিত আমি। এতটুকুই বলবো আমি কতটুকু রেখাপাত টেনেছি জানি না,হয়তো আমার প্রতিক্রিয়া আরো আরোও সুগভীর সমুদ্রে ডুবে যেতে চায় কিন্তু পারল না... ক্ষমাপ্রার্থী।
------
সুদীপ্তা আদিত্যApollo college of Nursingতৃতীয় বর্ষ

Post a Comment

0 Comments