জ্বলদর্চি

কালের অতল তলে কলোরাডো (ভ্রমণ কাহিনী)/দ্বিতীয় পর্ব /চিত্রা ভট্টাচার্য্য

কালের অতল তলে কলোরাডো (ভ্রমণ কাহিনী)

দ্বিতীয় পর্ব

চিত্রা ভট্টাচার্য্য

সকাল সাড়ে সাত টা বাজে , ধোঁয়াসায় ভরা চারদিক ছায়া ঢাকা। রাতের  আয়েশি ঘুম ভাঙলো অতনুর ডাকে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিয়ে ডাইনিং হলে এসে দেখি মোটেলের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট সার্ভ করা শুরু হয়ে গিয়েছে। বহু রকম খাবার কুকিজ কেক ব্রেড ওমলেট বার্গার ইত্যাদি  খাবারের সাথে নানা রকম ফলে কাউন্টার টেবিল সাজানো।       জমিয়ে ব্রেকফাস্ট পর্ব সারা হলে ছোট্ট সুন্দর মনোরম ইলাই শহরের সিংহ দুয়ার পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে কলোরাডোর দিকে।

  ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম দেখি ,জুঁই ফুলের মত তুষার কণা মেঘে মেদুর আকাশ থেকে ঝরছে। সে এক খেয়ালী প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ,চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না। এই সকালেই মাইনাস 2, digree .তাপাঙ্ক। কুয়াশার আবছায়ায় ঢাকা চারদিক। পায়ে হেঁটে বেড়িয়ে ছবি তুলে আশেপাশে  ঘুরে দেখার ইচ্ছে তে প্রতিকূল আবহাওয়া বাদ সাধলো।  অগত্যা গাড়ি তে স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পড়ে হামবোল্ড ন্যাশানাল ফরেষ্টে ঘন অরণ্যের মধ্য দিয়ে চলেছি । বিস্মিত হয়ে দেখি এখানে স্নোফলের চিহ্ন মাত্র নেই। এক নির্জন জনপ্রাণী হীন অঞ্চলে প্রবেশ করলাম। গাড়ির জানলার ঝাপসা কাঁচ পারভীন আগেই মুছে পরিষ্কার করে দেওয়াতে কখোনো সেখান থেকে চোখ সরাই নি। ক্ষণে ক্ষণে দেখেছি  প্রকৃতির দৃশ্য পট পাল্টে যাচ্ছে। যেন খেয়ালী  সুন্দরী আদুরে রাজকন্যা বারে বারে তার মর্জি অনুযায়ী সাজ পরিবর্তনের খেলায় মেতেছে।                  

 এইতো খানিক আগেই, আকাশ স্পর্শী ঘন সবুজের মাথার ওপর সাদা ভেলায় চেপে মেঘেরা ভাসলো এখানে পৌঁছে দেখি  গোমড়া মুখো অভিমানী আকাশের নীচে শুধুই শুখনো মরা হলুদ ঘাসে ভরা জমি মাইলের পর মাইল ধুধু পড়ে আছে। লোকালয় বা ঘর বাড়ির চিহ্ন মাত্র নেই। পাথুরে জমিনের গা বেয়ে গাড়ি উঁচু থেকে উঁচুর দিকে এগিয়ে চলেছে। ব্রতীন বলে ,এই অঞ্চলটা আমেরিকার সবচেয়ে নির্জন ভূমি।  Loneliest  place of America.                                                                                                                    ট্যাকোমার চাকায় বিরতি নেই। Lehman cave পিছনে ফেলে Nevada র  Great Besin ন্যাশানাল পার্কের পথে পৌঁছলাম। এখানের তাপমাত্রা 1,5,digree  কিন্তু স্নোফল হচ্ছে না। রোড ম্যাপ দেখে একটা সরু পথ ধরে অনেকটা এগিয়ে পার্কিং লটে গাড়ি থামলে দরজা খুলে নামতেই প্রচন্ড ঠান্ডা গিলে ধরলো। প্রায় জমে যাওয়ার অবস্থায় দাঁতেদাঁত লেগে হিঃহিঃ করে কাঁপছি। অতনু বলে ,সমুদ্র তল থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফুট উঁচুতে এসে গিয়েছি। এটি উষ্ণ ,শুষ্কগ্রীষ্ম এবং তুষারাবৃত শীতল মরুভুমি।       কিন্তু  হায় ! রে,এত কষ্ট করে প্ল্যান সাজিয়ে এসে আশাহত হয়ে সবার মুড অফ হয়ে গেল। গেটের সামনে খোলা বাউন্ডারি ওয়ালের বাইরে থেকেই দেখলাম গ্রেটবেসিন পার্ক বন্ধ যেদিকে তাকাই নিস্তব্ধ নির্জন পুরি । যতদূর দেখা যায় শুধু সাদা নোনা  বালির মরু প্রান্তর। সহস্র সহস্র বছরের ও বেশী সময় ধরে প্রবল বৃষ্টির জলে ধুয়ে এদিকের পাহাড় গুলোর উপত্যকায় জিপসাম জমা হয়ে আছে। ওখানকার উষ্ণতা ও শুষ্কতাই পরে এই মরু অঞ্চল গুলোর সৃষ্টি করেছে। তবে এখানে যে শুধুই সাদা বালি দেখছি সে ঐ জিপসাম --ক্যালসিয়ামের যৌগ--ক্যালসিয়াম সালফেট। ছায়াময় গাঢ় কুয়াশা ঢাকা পার্কে হালকা বরফের চাদর বিছিয়ে রয়েছে।     
                                                                                   পার্কের বাইরে একটু দূরেই বহু বহু শতাব্দী আগের আদি আমেরিকান সমাজের মাটির প্রলেপ দিয়ে বানানো নীচু নীচু কটেজ টাইপ কিছু বস্তির ঘর চোখে পড়লো। টানা লম্বা এক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ঘর গুলো দেখে ইয়ম বলে,ঐ পুরোনো বাড়ি গুলো নির্ঘাৎ 'নাবা হো ' সম্প্রদায়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর। পারভীনের সোসিওলজি নিয়ে গবেষণা চলছে। ওর মতে এরাই নিঃসন্দেহে আমেরিকার আদিম অধিবাসী দের বংশ উদ্ভুত। কোন প্রাচীন যুগে যাযাবরের মত এরা ভেসে  এসে ছড়িয়ে পরে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের অনেক জায়গার মত আরিজোনা ,নিউ মেক্সিকো ও ইউটা এই তিনটে প্রদেশের বেশ কিছু জায়গায়। এবং সেই প্রাচীন কাল থেকেই  'নাবাহো 'সম্প্রদায়  আদি আমেরিকান গোষ্ঠী  ছিল যারা মূলত আমেরিকান ইন্ডিয়ান এলাকার উপজাতীয়। বহু  শতাব্দী আগে আমেরিকার জন্মের প্রথম লগ্নে কিভাবে এদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল তা নিয়ে  নানা মুনির নানা মত। পারভীনের কাছে এখনো সব রহস্যাবৃত হয়ে আছে। সে সময়ে আদিম মানব পাহাড়ে পর্বতে গুহা কন্দরে বনে বাদাড়ে  পাথর সাজিয়ে গাছের ডালপালা ইত্যাদির সাহায্যে গৃহ নির্মান করতো। তাদের পশু শিকার ছিল প্রধান জীবিকা। এখানের বসবাস কারী দুই জন ভিন্ন ধারার আদিবাসী শ্রেণী কে দেখলাম। ওরা একজন তামাটে বর্ণের একটু লম্বা ধরনের তারা দল বেঁধে বনে জঙ্গলে ঘোরে।  আরেক জন খর্বাকৃতির পীতাভ বর্ণ। মাথার  টুপি টি তে  বড়োপাখির পালক গুঁজেছে পীঠে তীর ধনুক হাতে পাকা বাঁশের সরু লাঠি মজবুত শরীরে শীত নিবারণের জন্য গরম বস্ত্র টি থেকে পায়ে মোজা জুতো সবটাই মনে হলো মৃত পশুর চামড়া দিয়ে নিজের হাতে   সেলাই করে বানিয়েছে। সে যুগে শিকার করেই জীবন ধারণ চলতো এখন অবশ্য  পশুপালন করে। গম যব বাদাম ভুট্টা নানা ধরণের ফসলের চাষ ও করে।  এ ছাড়া নানা রকম হাতের কাজ করে ট্যুরিস্ট দের কাছে বিক্রি ও করে।            
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
পারভীনের তর সয় না। খোঁজ নিয়ে  সরজমিনে তদন্ত করতে এক ছুট লাগালে জল কাদায় পা পিছলে সাংঘাতিক জোরে  আছড়ে পরে। অতর্কিতে আঘাত পেয়ে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে  গিয়েছে । নরম বালির ওপর পড়ায় নিজেই এক গাল হেসে উঠে দাঁড়ায়। প্রবল ঠান্ডা হাওয়ার দাপট থেকে বাঁচতে গাড়িতে উঠে বসলাম হিটারের উষ্ণতায় প্রাণে আরাম এলো ।                                                                                                           পথের দুই ধারে হাত ধরাধরি  করে  সটান দাঁড়িয়ে আছে এলপাইনের জঙ্গল। রাশিরাশি জমে থাকা কুয়াশায় ফগ লাইটের আলো জ্বালিয়ে খুব সাবধানে গাড়ি চলেছে। বেকার টাউনের মধ্য দিয়ে চলার সময় ব্রতীন বলে এখানে কিন্তু মিউল ,ডিয়ার ,এল্ক --জাতীয় প্রচুর বন্য প্রাণী আছে যারা অসতর্ক ভাবে রাস্তায় হঠাৎ ছুটে এসে যে কোনো সময় আক্সিডেন্ট ঘটাতে পারে। ওর মুখের কথা তখন ও শেষ হয় নি দেখি বিশাল শিঙওয়ালা সোনালী গায়ের চামড়া এক কালো চোখের  হরিণ তড়িৎ গতিতে ছুটে আসছে  রাস্তার মাঝখানে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এবার ঘ্যাচ করে বেশ ঝাঁকুনি দিয়ে সশব্দে ব্রেক কষলো ব্রতীন। দক্ষ হাতে গাড়ি টি কে সাইডে সরিয়ে নিলো এবং আগে থেকেই সতর্ক থাকায় কোনোমতে বড়ো সরো এক দুর্ঘটনা এড়ানো গেল। আমি বলি কেমন সোনার হরিণ নিরীহ চোখে তাকিয়ে আছে। ব্রতীন বলে  না এটি আসলে একটি Prong horn. ভয় ভাবনা হীন তৃণভোজী প্রাণীটি রাজার মত গটগট করে পাশের বনে আত্মগোপন করলো। ক্যামেরায় ফোকাস করার অবকাশ টুকু ও পেলাম না। ''সে যে চমকে বেড়ায় দৃষ্টি এড়ায় যায় না তারে বাঁধা '’।একেবারে চোখের  নিমেষে সোনার হরিণ উধাও।                                                                                                                                  স্টেট রুট 50ধরে takoma  ইউটা স্টেটে পৌঁছলো। ‘’Salt flats of Utah ‘' এখানেও বিশাল মরু অঞ্চল রয়েছে। পারভীন এতক্ষণ চোখ বুজে ব্যথা সহ্য করছিল এবার চোখ খুলে চেয়ে করুণ স্বরে বলে বহু কাল আগে উটে বলে এখানে এক উপজাতির বসবাস ছিল সেখান থেকেই এই জায়গাটির নাম ইউটা হয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই এখানে  আদিবাসী ''উটে দের '' দেখা  পাবো। ওর বলার ভঙ্গিমায় ইয়ম এবং আমি সজোরে হেসে উঠি। অতনু সামনে থেকেই মুখ ঘুরিয়ে বলে, চল যাই আমরা এখানে উটে ,উপজাতির ঘর খুঁজে বেরিয়ে বন্ধুত্ব করে আসি,ওদের সাথে খানা পিনা সেরে তামাকের ধোয়া উড়িয়ে গাঁজা সেবন করে আড্ডা মেরে কিছুটা সময় কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ লাগবে না বল ? হাসি খুশি স্বভাবের পারভীন জোরে বকুনি লাগিয়ে বলে ধ্যাৎ! ভালো লাগেনা তোদের ইয়ার্কি, আর ফাজলামো।                                                                                                             রাস্তার দুই পাশে  শুধু অন্তহীন বালির মরুভুমি শেষ হলে দুই পাহাড়ের বুক চিরে কালো ঝকঝকে পথ টি এসে থামলো হিঙ্কলি ভেসরেট হয়ে হোল্ডেন টাউনে। আমরা ও বসে থেকে অধৈর্য্য হয়ে নামলাম। লাঞ্চের জন্য অতনু এখানেই এক পছন্দ সই চাইনিজ রেস্তোরাঁ খুঁজে পেয়েছে। মিক্সড ভেজিটেবল রাইস চিলি চিকেন ,চিংড়ি মালাইকারি ছাড়াও মাহিমাহি মাছ ভাপা।মানে কাঁটা বিহীন সেদ্ধ মাছ টিকে নুন ,গোল মরিচ মাখন আর চিলি সস দিয়ে উপাদেয় করে পরিবেশন করা। তবে চিলি সসের বদলে একটু কাসুন্দী হলে আরো ভালো জমে যেতো ।                                                                                                                                                                         এবারে সল্টলেক সিটিতে এসেছি।  চারদিকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি শহর টিকে ঘিরে প্রহরায় রত। আকাশ জোড়া মুক্ত মেঘের নীলাভ ঝালর দেওয়া সামিয়ানা।                  ইউটা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী সল্টলেক সিটি ও একটি বৃহত্তম মেট্রো সিটি তার পূর্বদিকেই কলোরাডোতে আমরা চলেছি। গ্রেটবেসিনের প্রধান দুইটি শহরের মধ্যে সল্ট লেক সিটি শহরটি ও অন্যতম  সুন্দর  সাজানো।                                                                                                                                             
 বিশাল লবণের লেকের পাশ দিয়ে  যত দূরে চোখ যায় ধবধবে সাদা জমাট ঢিবি। এখানেও সেই জিপসামের গল্প ,ঝুরঝুরে সাদা বালিময় মরুপ্রান্তর। মার্চের সবে মাত্র শুরু,শীত বুড়ির প্রভাব বেশ জোরালো হয়ে গায়ে বিঁধছে  । শহর থেকে প্রায় ১৬ মাইল দূরে ১৭০০ বর্গ মাইল জুড়ে এই বিশাল লবণের হ্রদ যার ঘনত্ব যে কোনো সমুদ্রের থেকে প্রায় দশ গুন বেশী। যতদূর চোখে পরে শুধু শ্বেত শুভ্র মরু প্রান্তরে স্লেট রঙা আকাশ টা দিগন্ত রেখার সাথে মিশে গিয়েছে। মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যের চিকন আলোর রেখা সাদা বালির ওপর ছড়িয়ে পড়েছে। স্তরে স্তরে সাজানো ধবধবে সাদা বরফের স্তূপ নোনা পাহাড়ের বুকের ওপর। একটু দূরেই রয়েছে টলটলে স্বচ্ছ জলের লেক ,অপূর্ব মনোমুগ্ধ কর দৃশ্য। মনে হলো শান্ত স্নিগ্ধ পবিত্র স্বর্গ লোকের প্রবেশ দ্বারে অপেক্ষারত আমরা।  বেশ খানিকটা ওপরে পরিষ্কার রাস্তা ধরে আমার ইয়ং দল টি তরতর করে এগিয়ে চলেছে। পায়ে অসম্ভব ব্যথা হওয়ায় একটি সাবেকী কফি শপে কফির মগ  নিয়ে  ফায়ার প্লেসের টকটকে লাল আগুনের সামনে ওদের ফেরার প্রতিক্ষায় বসে রইলাম। আবহাওয়া রিপোর্টে ঠান্ডা ২,বা ৩ ডিগ্রী মত হলে ও এই সল্টলেক সিটি পাহাড়ে ঘেরা বলে কনকনে তীব্র হিমেল হাওয়ার উপদ্রব বিশেষ কাবু করছে না।                                                                                                                                           ওরা ফিরলে ওদের কফি ব্রেক শেষে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কিছুটা এগিয়ে চললাম সিটি দেখতে ।  স্টেডিয়ামটি দেখে সোজা পৌঁছলাম ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এবং বাইরে থেকেই বিশাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ঘুরে  সিটির কাছেই 'ক্যাপিটাল হাউস' এর  সভা কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করে অন্দর মহল ঘুরে দেখলাম। তবে পূর্ণ সরকারী কার্যালয়ের স্থান ঘুরে দেখতে কোনো বাঁধা নিষেধ ছিলো না।                শহরের ব্যস্ত রাস্তায় অসংখ্য প্রাইভেটকার পিঁপড়ের সারির মত চলেছে ,পাবলিক বাস ট্রামের ও কোনো কমতি নেই। রাস্তা গুলো বিশাল চওড়া আট দশ লেনের তো বটেই বেশ সুসজ্জিত সব রেস্তোরাঁ এমন কি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেণ্ট ও রয়েছে। পারভীন বলে তোমরা কি জানো যে পৃথিবীতে KFC রেস্টুরেন্ট টি প্রথম এখানে খোলা হয়েছিল?সেখানে কি আমরা যেতে পারি ? পারভীনের সাথে অতনুর ও ষোলোআনা আগ্রহ ,বলে চল আমরা KFC তেই  যাই। শুধুই কফিই খাওয়া হবে। এই শপ টি  প্রথমে 1952 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল  Harman's Cafe ,নামে। পরে বিখ্যাত হয়  KFC ,নামে।  ওদের সবার ইচ্ছে অনুসারে সেখানেই ঢুকলাম। কফি ও ফ্রেঞ্চফ্রাই নিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে দিতে। আসলে কোথায় স্মোকিংজোন আছে তা ও অতনু  ফ্রন্ট সীটে বসে বেশ দেখে নিয়েছে।                                                                                                                                  ইউটা তে জায়ন ন্যাশানল পার্ক ,হর্স শু বেন্ড ,ব্রাইচ ক্যানিয়ন ,আর্চেস ন্যাশানাল পার্ক সহ নানা প্রাকৃতিক আশ্চর্য্যে ভরা দৃশ্য আছে সে সব পার্ক গুলো কলোরাডোর এস্প্যান নগরী থেকে ফেরার পথে সময় নিয়ে দেখার প্ল্যান ঠিক হয়ে আছে।  কিন্তু ব্রতীন চলেছে আরো এক অজানা দ্বীপে ,ট্যাকোমার স্টীয়ারিং ঘুরিয়ে বলে ফ্রেন্ডস আমরা এখান থেকে টানা দুই ঘন্টা ড্রাইভ করে সোজা পৌঁছে যাবো Antelope island এ যেখানে অনেকটা গাছের বাহারি ডালের মত বাঁকা শিঙওয়ালা হরিণের মত দেখতে প্রচুর এন্টিলোপ ও অগণিত বাইসন দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। অতনু র খুব একটা ইচ্ছে না থাকলে ও ব্রতীন , ততক্ষণে ইয়মের উৎসাহে   আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।    
                                                                            ইয়ম খুশিতে আত্মহারা , ওর  কাজিন ভাই পাভলো Antelope island এর পার্কের তত্ত্বাবধানে কর্মরত। প্রায় ৫বছর বাদে ভাইয়ের সাথে দেখা  হবে। পাভলো ফোনে সাদরে আন্তরিক স্বাগত জানিয়ে বলে অসুবিধা নেই ওদের নিজস্ব গেস্টহাউস আছে সেখানে রাতে থাকার ব্যাবস্থা পাকা থাকবে। চলেছি রাশিয়ান ছেলে পাভলোর আমন্ত্রণে এন্টিলোপের দ্বীপে। ইয়ম ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করে মাউথর্গানে রাশিয়ান লোক সংগীতের সুর বাজায়। বেলা প্রায় শেষের দিকে। গোধূলির ধূসর আকাশে বিদায়ী সূর্যের এক ঝলক পিছন ফিরে তাকিয়ে পশ্চিম পাহাড়ের কোলে অস্ত যাওয়া  দেখলাম।  আমার সঙ্গের ঝোলা থেকে চকলেট বের হয়ে সবার মুখে পৌঁছে দিলাম।  পিকআপ ট্রাকে কিছুক্ষণ আগেই ফুল ট্রাঙ্ক পেট্রল ভরা হয়েছে,সে  নিজস্ব গতিতে ফাঁকা রাস্তায় ঝড় তুলেছে। গাড়িতে গান বাজছে " "ঐ আঁকাবাঁকা পথ যায় যায় সুদূরে"।

Post a Comment

0 Comments