জ্বলদর্চি

দেশান্তরী -২০/হিল্লোল রায়


দেশান্তরী -২০

হিল্লোল রায় 

কোন নতুনের প্রাণের টানেআসলো পুলক আমার পানে

নানারকম বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা সরগরম হয়ে উঠলো নিমেষেই। মাঝে মাঝে কোক এর গ্লাসটায় চুমুক দিয়ে গলা ভেজাচ্ছি ও গল্প করছি। প্লেন এর মধ্যে বসে লো্নলিনেস উবে গেলো এক নিমেষেই।

রোমের পথে এখনও উড়ে চলেছি। এখন বেশ সকাল হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে ব্রেকফাস্ট সীটে বসেই সেরে ফেললাম। খাবারের মধ্যে নকুল দানা না থাকলেও বেশ ভালই লাগছিল। প্যাটিসজেলীকমলালেবুনতুন জাতের কিছু ফলওমলেটকফি। এককথায় এটা খেলে বেশ ভালোভাবেই পেট ভরে যায়। এখনকার পরিবেশে চোখ দুটোকে পুরো বাইরের দিকে সেট করে রেখেছি। ভারতীয় সময় এখন সকাল ১০টা এবং রোমের সময় সকাল ৫-৩০ মিঃ।

যদিও এতক্ষণ বেশ স্বচ্ছ পরিবেশের মধ্যে দিয়ে উড়ে চলেছিলামএখন দেখছি আকাশে সাদাসাদা স্তূপীকৃত মেঘ। চারদিকের দৃশ্য তাই বেশ কিছুটা ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এইমাত্র ঘোষণা করা হল আমরা মাটি থেকে ৩৭০০০ ফুট উঁচু দিয়ে চলেছি। প্লেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৮০ মাইল। রোমে গিয়ে পৌঁছাব সকাল ৭-৩০ মিঃ। এখন রোম শহরের উপর দিয়ে যাচ্ছি। প্লেনের গতি কমতে শুরু করেছে। জানলা দিয়ে রোম শহরের ঘরবাড়ির অবস্থা দেখলাম। খুব ছোট ছোট দেখাচ্ছিল। কলকাতার ঘরবাড়ির সংগে রোমের পার্থক্য কিছু খুঁজে পেলাম না। মাটি এবং ঘাসের রং ভারতবর্ষের মতই। আমার প্লেন এয়ারপোর্টে ঢুকল। উপর থেকে রাস্তাঘাটগুলো সরু দড়ি বিছানো মনে হচ্ছে। গাছপালা গুলোকে ভীষণ ছোট লাগছে। তবে রোমের বাড়ীগুলো খুব পরিচ্ছন্ন লাগছে । সবুজ ঘাসের মাঠগুলো বাড়ীর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়েছে।

এইমাত্র আমার প্লেন এখানকার সময় সকাল ৭-১৬ মিঃ, (৪৫ডিগ্রী ফারেনহাইট বাইরের তাপমাত্রা)। এয়াপোর্টের মাটি স্পর্শ করে গতিকে স্থিতি করে নিচ্ছে। এখন শীতের তীব্রতা খুব্ একটা বোঝা যাচ্ছে না। রোমের বিমানবন্দর বেশ বড়পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে দমদমের মতই। যাত্রীরা অনেকেই নামতে শুরু করেছে। এখন চলার পথে ক্ষণিক বিশ্রাম।

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
আমার প্লেন এখন রোমের বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে । ইত্যবসরে হাত মুখ ধুয়ে কিছুটা ফ্রেস হলাম। এই প্রথম ভারতবর্ষ ছাড়ার পর রোমের বিমানবন্দরে পা দিলাম। প্লেনের মধ্যে এখানকার ঠান্ডা আঁচ করতে পারছিলাম না। তাই একাই সিঁড়ি দিয়ে রোমের বিমানবন্দরে মিনিট পাঁচেকের জন্য নেমে গেলাম। কিন্তু এত বেশী ঠান্ডা প্রথমে ভাবতেই পারি নি। নীচে গিয়ে মালুম হল। এয়ারপোর্টের বিশেষত্ব কিংবা নতুনত্ব বিশেষ কিছু চোখে পড়ল না। ভীষণ ঠান্ডা থাকায় বাইরে ঘোরাঘুরি করতে সাহস পেলাম না। আর এই ঠান্ডা এত বেশী যেন মনে হচ্ছে হাত পা জমে বরফ হয়ে যাবে এক্ষুণি। ভাগ্যিস সোয়েটার সংগে এনেছিলাম। পেনের কালি শুকিয়ে যাবার জোগাড় । এত বেশি ঠান্ডা । যাই হোকনতুন পরিবেশনতুন অভিজ্ঞতার সংগে নিজেকে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। ভীষণ ভালই লাগছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই রোম বিমানবন্দর ত্যাগ করব।

ওই পারের ওই বাঁশির সুরেনিকট এখন নয় যে দূরে

রোম থেকে প্যারিসের পথে

রোম বিমানবন্দরকে বিদায় জানাতে হচ্ছে আর কয়েকমিনিটের মধ্যেই। রোম ত্যাগ করে আমরা প্যারিসের দিকে এগুব। এবার রোম থেকে প্যারিস পরিক্রমা করতে দেড় ঘন্টা সময় লাগবে। রোমের সময় সকাল ৮-২০ মিঃ এয়ারপোর্ট ছাড়ছি। একটু উপরে এত বেশি কুয়াশা যে চারিদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেঘগুলোকে পাহাড়ের মত লাগছে। সূর্য্য উঠছেঅল্প অল্প আলো ঠিকরে পড়ছে। মনে হচ্ছে সাদা তুলো সারা আকাশ ছেয়ে রয়েছে। এবার নীল আকাশ দেখতে পাচ্ছি। প্যারিস বিমানবন্দরে পৌঁছালাম ৯-৫১ সকাল। বাইরের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড৪১ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

এখন ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করব। প্যারিসের মাটিঘাস ভারতবর্ষের মতই। তবে এয়ারপোর্ট বড় সুন্দর। প্যারিসের মাটি আমাদের প্লেন স্পর্শ করে ছুটছে। প্রচন্ড জোরে কাঁপছে। “হিল্টন ওরলি”বিমানবন্দরে পৌঁছালাম সকাল ৯-৫১ মিঃ (স্থানীয় সময়)। রোম থেকে প্যারিসে আসতে ঠিক দেড় ঘন্টাই লাগল। এখানকার ঠান্ডা এখনও টের পাই নি। বাইরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। এখান থেকে কিছুই আঁচ করা যাচ্ছে না। প্লেনের দরজাটা একটু বেশিক্ষণ খোলা থাকার পর বাইরে থেকে যেটুকু ঠান্ডা আসছে তাতেই বুঝতে পারছি ঠান্ডার তীব্রতা। নতুন প্যাসেঞ্জার আসছে। লাঞ্চ খাবার কথা লিখতেই ভুলে গেছি। এবারের খাবারগুলোর মধ্যে স্যান্ডুইচ একটু খেয়েছি। চা-কিংবা কফির পরিবর্তে দুধ খেলাম। অন্যান্য খাবার বিশেষ ভক্তি করে খেলাম না পাছে আবার পৈ্টিক গোলযোগ দেখা যায়। যাই হোক রোম থেকে প্যারিস আসতে আসতেই একটা 'মিনিঘুম হয়ে গেল। আমার কোনই অসুবিধা হচ্ছে না। সম্পূর্ণ “হেল অ্যান্ড হার্টি” আছি। নাঃ প্যারিসেও বেশ ঠান্ডা আছে। কানগুলো কট কট করছে। যাই হোক নির্ভয়ে আমার গন্তব্যস্থলের দিকে এগুচ্ছি। এতখানি যাত্রা করে আসার পর প্লেনে চড়ার থ্রিল মিটে গিয়েছে। এমনকি এর মধ্যে বেশ বোরিং লাগছে। কিন্তু উপায় নেই । স্থির লক্ষ্যে তো পৌঁছাতেই হবে।

প্যারিস থেকে লন্ডন

এবার বিদায় জানাচ্ছি প্যারিসের “ওরলি” বিমানবন্দরকে। এখানে রোমের চেয়ে ও বেশি ঠান্ডা। আমার সর্দ্দি থাকায় ঠান্ডা আরও বেশি মালুম হচ্ছে। আমাদের গন্তব্যস্থল এবার লন্ডন অভিমুখে। প্যারিসে ৪৫ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে আমাদের প্লেন এবার যাত্রা শুরু করবে লন্ডন আভিমুখে। ৫০ মিনিটে লন্ডনে পৌঁছালো। এখান থেকে লন্ডনের দূরত্ব ৮০ মাইল। স্থানীয় সময় ১০-৫৭ মিনিটে প্যারিস ছাড়লাম। এখ প্যারিসের কোনো এক শহরের উপর দিয়ে উড়ে চলেছি। প্লেন এবার অনেকখানি উঁচুতে উঠে গেল। প্যারিসের মাটি ও ঘাস ভারতবর্ষের মতই। প্লেনের মধ্যে থেকে বাড়ি ঘরগুলোকে খেলনা বাড়ির মতই মনে হচ্ছিল। এখন আর কিছু দেখতেই পাচ্ছি না। চারিদিকে সাদা মেঘ ও কুয়াশায় ঢাকা। এখান থেকে ঠিক বাইরের অবস্থাটা বোঝা যাচ্ছে না তবুও সূর্য্য ওঠার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। রোদের তীব্রতা নেই বল্লেই চলে। আমাদের প্লেন এখন উঁচুনীচু করছে। আর কয়েক মুহূর্ত্তের মধ্যেই লন্ডন গিয়ে পৌঁছাবে। লন্ডনের কোন এক শহরের উপর দিয়ে উড়ে চলেছি। বাড়িগুলোগাছপালামাটি সমস্ত কিছুই ভারবর্ষের মত। নতুনত্ব বিশেষ কিছুই চোখে পড়ল না। এখন প্লেন অনেক নীচুতে নেমে গিয়েছে । বিমানবন্দরে রানওয়ে স্পর্শ করতে আর বেশি বাকী নেই। স্থানীয় সময় ১১-৫৫ মিঃ ৪৬ ডেগ্রি ফারেনহাইট৮ ডেগ্রি সেন্টিগ্রেড। এখানে ২ ঘন্টা ১০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে। স্থানীয় সময় ১১-৫৫ মিনিটে “ওরলি” বিমানবন্দর থেকে “হিথরো” বিমানবন্দর। লন্ডনের মাটি -ঘাস-পরিবেশ পুরোপুরি ভারতবর্ষের মতই।

মনের সুর বাজে বীণাতেসংগে থেকো আপন হাতে

'হিথ্রোবিমানববন্দরে 'ট্রানজিট পারমিটনিয়ে এই দুঘন্টা সময় কাটাতে বেরিয়েছিলাম। আমার পাশের সিটে বসা ভদ্রলোক (যিনি আমার এই যাত্রাপথের বিবরণীর কপি চেয়েছেনএর সংগে গিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরকার স্টলগুলির চারদিকে ঘুরে জিনিষপত্র কেনা দেখছিলাম। উনি চার বোতল “হট ড্রিংকস” কিনেছেন। কেনাকাটা সেরে একটু গল্প করে লন্ডনের সময় দুপুর ১-৩০ মিঃ আবার সিকিউরিটি চেকিং হবার পর আবার প্লেনে চাপলাম। সেই একই প্লেন যেটাতে চেপে মুম্বাই থেকে রওনা হয়েছিলাম অর্থাৎ Boeing 747 and Flight AI 115 at 14-10 hrs at London. নিউইয়র্কের পথে এবার যাত্রীসংখ্যা অনেক।

লন্ডনে ঠান্ডা আছে তবে রোম কিংবা প্যারিসের মত অতটা নয়। তবুও একটু জড়সড় হয়ে বসে গরম হবার চেষ্টা করছি। লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরকে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাড়তে হবে। তাই জানলা দিয়ে লণ্ডন শহরের রূপটাকে যতটা সম্ভব উপলব্ধি করার চেষ্টা করছি। লন্ডন মোটামুটি পরিছন্ন আছে। ভালোই লাগল। মন সম্পূর্ণ সুস্থ এবং উদ্বেগমুক্ত। চিন্তাহী মনে এবার নতুন করে পাড়ি জমাতে হবে।

লন্ডনের হিথ্রো এয়াপোর্টকে 'টা -টাজানিয়ে এবার রওনা হচ্ছি বহুদিনে্র স্বপ্ন নিউইয়র্ক শহরকে দেখতে। লন্ডন থেকে ৫৬০০ কি মি ৩৫০০ মাইল দূরে। এই নিউইয়র্ক-এ ৬ ঘন্টা ৩৫ মিনিটে আমরা পৌঁছাব। এখন নিউইয়র্ক-এর ঘড়িতে ৯ ঘন্টা ৩৫ মিঃ। লেবুর রস খেয়ে গলা ভিজিয়ে লজেন্স সদ্গতি করছি। যাত্রীরা সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত। এর মধ্যেই এয়ার হোস্টেস এসে “আর ইউ এ ভেজিটেরিয়ান অর নন-ভেজিটেরিয়ান” শুরু করেছে। প্লেনের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। গোঁ গোঁ শব্দ ও শুরু হয়েছে। হিথ্রো বিমানবন্দরে আমার প্লেন দৌড়ঝাঁপ শুরু করল এইমাত্র। লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুর ২-১০ মিনিট।

প্লেন আকাশে উড়ল। চারিদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ। মেঘ ভেদ করে সূর্য্যের আলো বেশ তীব্রভাবে প্লেনের কাঁচের জানলার মধ্য দিয়ে ভিতরে আসছে। প্লেন ক্রমশ:ই উপরে উঠছে। তাই মাঝে মাঝে একটু ঝাঁকুনী পাচ্ছি। লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক হচ্ছে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের পথপরিক্রমা। কানের মধ্যে কটকট আওয়াজ শুরু হয়েছে যতই প্লেন উপরে উঠছে ততই শব্দটা বেশি হচ্ছে। আমার মন সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত।

ভীষণ ভালো লাগছে এই ভেবে যে আর কয়েক ঘণ্টা পরেই নিউইয়র্ক এয়ার পোর্টে মেজমামামেজমামাইমাসেজমামা রিসিভ করতে আসবে। বেশ অনেকদিন পর আবার ওদের সংগে দেখা হবে ভাবতেই আনন্দটা বেশি হচ্ছে। একটা অভিজ্ঞতা প্লেনে চড়ে হয়েছেযে দেশের বিমানবন্দর ছেড়ে প্লেন অন্য দেশের এয়ারপোর্টে যাবে -যেমন প্যারিস থেকে লন্ডন -আসার সময় যে সমস্ত খাবার সার্ভ করা হয়েছিল তার সমস্তই প্যারিসের কায়দায় তৈ্রী। আবার লন্ডন ছেড়ে নিউইয়র্ক যাবার পথে লাঞ্চ খেলাম সমস্তই আমেরিকায় তৈরী।

আগের দুবার লাঞ্চ খাবার সময় নন-ভেজিটেরিয়ান হয়েছিলাম আর এবার পুরোপুরি হলাম ভেজিটেরিয়ান। মুম্বাই থেকে লন্ডন পর্য্যন্ত এয়ার হোস্টেস মোটামুটি একই ছিল। এমন কি ঐ 'এয়ার হোস্টেসআমাকে পরের বার খাবার দিতে এসে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে পুরো নন-ভেজিটেরিয়ান খাবার দিয়েছিল। এবার নতুন এয়ার হোস্টেস আসায় লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক যাবার পথটুকুতে ভেজিটেরিয়ান হলাম। এটাই নামবার আগে এয়ার ইন্ডিয়ার শেষ লাঞ্চ। এই লাঞ্চে পোলাও-মাংস-সবজীপুডিংকেকক্রীম চীজ সবই ছিল। গোগ্রাসে গিলে ফেললাম। খাওয়া শেষ করলাম কফি খেয়ে। তবে কফির কোন স্বাদ পেলাম না।

লন্ডনের আবহাওয়া খুবই ভালোরোদ ঝলমলে । নীচের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে মাটিতে এত তূলো সমস্ত জায়গায় কারা যেন ছড়িয়ে রেখেছে। অবাক হয়ে দেখছি।

জানলা দিয়ে রোদ বেশি আসার ফলে জানলা বন্ধ করে দিলাম। প্লেনের ভিতরকার আলো জ্বেলে ডাইরী লিখছি। নিশ্চিন্ত মনেনির্ভয়ে এই ডাইরীর পাতায় কলমের আঁচড় কাটছি । দিদিমাদের কাছে শুনেছিলামপ্লেনের খাবার খাওয়া যায় নাগন্ধ লাগে। কৈআমি তো প্রত্যেকবার গো-গ্রাসে গিলে খাচ্ছি। কি করে একদিনে বিদেশি খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম ভাবতে আশ্চর্য্য লাগছে।

বাইরে রোদের তীব্রতা থাকায় জানলা সব এখনও বন্ধ রয়েছে। আমার পাশের যাত্রী দুজনে 'মুভিদেখতে গেছে। কাজেই আমার সীট পুরোপুরি ফাঁকা। নিউইয়র্ক নেমে ডলারের প্রয়োজন হতে পারে বলে আমার সম্বল তিন ডলার দমদম থেকে মানি ব্যাগে আটকা পড়েই আছে। এত দূর জার্নি করে এসেও এক পয়সা এখনও খরচ করা হয় নি কিংবা দরকারই হয়নি। এখন একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। বেলা পড়লে রোদের তেজ কমলে জানলা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখব ইচ্ছা রইল। আপাততঃ আমার সীটের লাইট নিভিয়ে দিয়ে চোখ বুজলাম। যখন চোখ খুললামতখন দেখি বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। ঘুম ঘুম চোখে কফি ও আনুসঙ্গিক টোস্ট ইত্যাদি খেয়ে পেটটাকে বেশ কিছুটা ভর্ত্তি করে নিলাম। প্লেনে চড়লে সীটে বসে থেকে প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়ে যায়ঘুম এখনও চোখে রয়েছে । তবুও কষ্ট করে ডাইরীর পাতায় আঁচড় কাটছি। নামবার একটু আগে 'মিনি লাঞ্চসেরে ল্যাভেটরী থেকে ঘুরে এলাম। হাত-মুখ ধুয়ে কিছুটা ফ্রেস হয়ে নিলাম। আর বেশি সময় নেই। নিউইয়র্ক জে.এফকেএয়ারপোর্ট আসবে। এক গ্লাস ঠান্ডা জল খেয়ে শরীরটা কিছুটা চাঙ্গা করে নিলাম অবশ্য মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা বা অস্বস্তি আমার এখনও প্রকাশ পায় নি। আমার প্লেন এখন মেঘের এত বেশি উপর দিয়ে যাচ্ছে যে নীচের কিছুই বিশেষ বোঝা যাচ্ছে না। আমার এটা হোল বোয়িং ৭৪৭ সম্রাট অশোক। সীট নং ৩৭ থেকে বদল করে ১৪হয়েছে অর্থাৎ আমার এ পর্য্যন্ত সমস্ত বর্ণনা(মুম্বাই থেকেএই সীটে বসেই লেখা। প্লেন এবার মেঘ কাটাবার জন্য ভীষণ উঁচুনীচু হচ্ছে। তবে ভয় পাচ্ছি না বিশেষ। আটলান্টিক মহাসাগর কে এখান থেকে কিছুই বুঝতে পারছি না। চারদিকের আবহাওয়া বেশ পরিষ্কারস্বচ্ছ নীলাকাশ। কিছুক্ষণ আগে লিখেছিলাম নীচের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এখন অবশ্য অবস্থাটা সম্পূর্ণ উল্টো। স্মভবতঃ নিউইয়র্কের কোন শহরের উপর দিয়ে উড়ে চলেছি বাড়ী ঘরগুলো খেলনাঘরের মতই মনে হচ্ছে। রাস্তাগুলো সরু সূতোর আকার ধারণ করেছে। মাটি ও ঘাসের রং ধূসর এবং সবুজ অর্থাৎ ভারতবর্ষের মতোই। প্লেন John F. Kennedy (JFK) বিমানবন্দর স্পর্শ করল। লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক আসার রাস্তা এইসংগে শেষ হল। নিউইয়র্ক পৌঁছালাম স্থানীয় সময় বিকাল ৪-২০ মিঃ

ক্রমশঃ

কবিতা ম্যাজিক




Post a Comment

0 Comments