জ্বলদর্চি

মেদিনীপুরের কৃষিবিজ্ঞানী ড. রামচন্দ্র মণ্ডল-এর বর্ণময় জীবনের উত্থান-পতনের রোমহর্ষক কাহিনী/উপপর্ব — ১১/পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী — ৭৬

এগ্রিকালচারাল রেটুনিং

মেদিনীপুরের কৃষিবিজ্ঞানী ড. রামচন্দ্র মণ্ডল-এর বর্ণময় জীবনের উত্থান-পতনের রোমহর্ষক কাহিনী

উপপর্ব — ১১

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

(১)
'সরকারিভাবে চাষীদের এই অসময়ে আউস ধানের বীজ বিতরণ করলে ব্লকের দুর্নাম হবে। তাই আমি বীজ ধান বিতরণ বন্ধ রেখেছি এবং সেই ধান জেলা বা মহকুমার কোথায় ফেরত পাঠাবো, তার অনুমতি চাইছি।'
এ কথা শুনে সবাই থ বনে গেল। কী কথা বলে ছেলেটি? সামান্য একজন অধস্তন কর্মচারী। কী যেন পোস্ট? এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন অফিসার (A.E.O.)। নাম যেন কী? মিঃ রামচন্দ্র মণ্ডল। যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা! সবাই এ-ও-তার মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বেজায় অখুশি। ব্যাপারটা কী? 

সময়টা ১৯৫৮-৫৯ সাল। বর্ধমান জেলা কৃষি সম্মেলন চলছে। সম্মেলনে  উপস্থিত প্রশাসনের তৎকালীন একঝাঁক জাঁদরেল অফিসার। সেখানে সবাই কৃষি দফতরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেবল একজন ছাড়া। তিনি রামচন্দ্র মণ্ডল, A.E.O., পাটুলি ব্লক। তাঁর অসন্তোষের কারণ ভিন্ন। সেসময় পাটুলি ব্লকে উন্নত মানের আউস ধানের বীজ চাষীদের মধ্যে বিতরণের জন্য আসে। সমস্যা হল আউস ধানের বীজ যে সময় ব্লকে এসেছিল, তখন বীজতলা বোনা শেষ হয়ে ধানের শীষ বেরোবার সময়। এই অসময়ে বীজ ধান বিতরণ করলে শুধু শুধু নষ্ট হবে বই তো নয়। আবার, ব্লকে ফেলে রেখেও লাভ নেই।  অযথা পড়ে পড়ে নষ্ট হবে। সেজন্য উন্নত প্রযুক্তির বীজ বিতরণের প্রসঙ্গ উঠতেই রামচন্দ্র বাবু জানতে চাইলেন বীজ ফেরৎ পাঠানোর কী উপায়? কোথায় ফেরত পাঠালে বীজধানগুলো সুরক্ষিত থাকবে? একজন নিম্নস্তরের কর্মচারীর এ হেন স্পর্ধা! জেলা সম্মেলনে খোদ উচ্চ পদাধিকারী অফিসারদের এ ধরণের প্রশ্ন কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে, তা কল্পনার  অতীত। সভা গৃহে ফিসফাস শুরু হয়ে গেল। এ ঘটনার অব্যহতি পরে চা পানের বিরতি। বিরতিতে বেশ কয়েক জন ঘিরে ধরল রামবাবুকে। ভীড়ের মধ্যে থেকে একজন বলল — 'শিগগির তোমার হয় ট্রান্সফার হবে, নয় তো চাকুরী থেকে সাসপেন্ড।'
আরও একজন যোগ করল — 'একটা ভুয়ো মাস্টার রোল বানিয়ে পাঠিয়ে দিলে ঝামেলা মিটে যেত। খামোখা নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা কেন?' 
রামবাবুর মুখাবয়ব জুড়ে তখন বিষাদের ছায়া। মনের মধ্যে তীব্র টানাপোড়েন — 'সত্যিই কি সত্য ঘটনা বলে ভুল করলাম'। অযথা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অলীক ভীতিকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া অনুচিত। শুধু শুধু উত্তেজিত না হওয়াই শ্রেয়। অশান্ত মন ঠাণ্ডা করলেন তিনি। ইতিমধ্যে সভার আলোচনা আবার শুরু হয়ে গেছে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মিটিং-এ যোগ দিলেন তিনি। পরে জানা গিয়েছিল উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার গাফিলতি বুঝতে পারে।‌ সমস্যার শেকড়ে গিয়ে তার সমাধানে যথেষ্ট সজাগ ও তৎপর হয়েছিল প্রশাসন। আসলে প্রশাসনিক স্তরে কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে মোসাহেব হলে চলবে না। বরং সঠিক সময়ে যথাস্থানে মেসেজ পৌঁছানো খুব জরুরী। একমাত্র সেটাই সমাধানের আসল পথ।

কোনটা বেশি লাভজনক — চিরাচরিত চাষ প্রথা, নাকি উন্নত কৃষি পদ্ধতি? মুখের কথায় চিড়ে ভিজে না। কাগজে কলমে নয়, বাস্তব প্রমাণ চাই। কীভাবে? একটা সার্ভে করলে কেমন হয়? চাষী ভাইদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য রেজাল্ট ডেমনস্ট্রেশনের প্রচেষ্টা করলে কেমন হয়? সার্ভের ফলাফল সবাই বিশ্বাস করতে বাধ্য। চাষীদের মন জিততে অভিনব এই আইডিয়ার আমদানি একান্তই রামবাবুর নিজস্ব ভাবনা। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। বিভিন্ন স্থানে ধান চাষ কিংবা পাট চাষের জন্য অন্ততপক্ষে দশ কাঠা চাষ জমি বেছে নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট জমিকে সমান দুটি ভাগে ভাগ করা হল। প্রতিটি ভাগে জমির পরিমাণ পাঁচ কাঠা। জমির এক ভাগে চিরাচরিত পদ্ধতি মেনে ধান বা পাট চাষ করা হবে। অন্যদিকে, বাকি অর্ধেক অংশে উন্নত প্রযুক্তির বীজ ব্যবহার করে আধুনিক প্রথায় চাষ করা হবে ধান অথবা পাট। দেখা গেল শেষোক্ত পদ্ধতির ফলনের পরিমাণ কমপক্ষে দ্বিগুণ হয়েছে। ধান পাকার সময় অথবা পাট কাটার আগে থেকে আগে থেকে নির্বাচিত চাষী ভাইদের ডেকে এনে ফার্মার্স ভিজিট সিটে রেজাল্ট ডেমনস্ট্রেশন দেখানো হল। ব্যাস! কেল্লা ফতে।‌ সবাই একবাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য হল উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বেশি লাভজনক। শুরু হয়ে গেল উন্নত প্রযুক্তির বীজ ব্যবহার করে চাষাবাদ। প্রচার হয়ে গেল উন্নত প্রথায় চাষ বাসের প্রয়োজনীয়তার কথা। 

এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন অফিসার হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন রামচন্দ্র বাবু। কিন্তু জীবনে একটা আক্ষেপ থেকে গেল। কৃষি বিষয়ে গবেষণা করতে না পারার আফসোস। খুব আশা ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীন গবেষণার কাজে নিযুক্ত হওয়া। তা যখন ফলপ্রসূ হল না, তখন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর আপ্রাণ চেষ্টা। ভারত সরকারের বৃহত্তম কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ছিল কোয়েমবাটুরে। নাম – ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার রিসার্চ। 
      
১৯৬০ সাল। জুলাই মাস।  কোয়েমবাটুরে কটন তৈলবীজ আর মিলেটের উপর রিসার্চের মাত্রা/তীব্রতার জন্য একটা প্রোজেক্টের (PIRCOM বা Project for Intensification of Research on Cotton Oilseeds & Millets) কাজে যোগ দিলেন তিনি। এখানে থাকাকালে আমেরিকা থেকে অনেক গ্র্যান্ট আসত। এমন একটি প্রোজেক্ট ছিল জোয়ার ও বাজরার সংকরায়ণের (Hybridization) প্রচেষ্টা। অবশ্যই আমেরিকার সাহচর্যে। জোয়ার ও বাজরার হাইব্রিড বীজ উৎপাদনে বেশ কয়েক দফা কাজ হাতে নিয়েছিলেন রামচন্দ্র। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এগ্রিকালচারাল রেটুনিং।

এগ্রিকালচারাল রেটুনিং কী? এর কী সুবিধা?

কৃষিতে হাইব্রিডাইজেশন বা সংকরায়ণ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জীববিজ্ঞান মতে, দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আন্তঃপ্রজননের ফলে উদ্ভূত নূতন প্রজন্মকে বলা হয় সংকর বা হাইব্রিড। সংকর তৈরি করার প্রক্রিয়ার নাম সংকরায়ণ। সংকর জীব তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। অনেক সময় হাইব্রিড প্রজাতি তার পিতামাতা থেকে ভিন্ন এবং উন্নত মানের হয়। প্রাণীকূল আর উদ্ভিদ জগতে হাইব্রিডের ধরন অবশ্য আলাদা। কৃষিতে ধান, গম, বাজরা, জোয়ার ইত্যাদি শষ্যের হাইব্রিডাইজেশন অনেক বেশি লাভজনক একটা পদক্ষেপ। ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি তার ভিত্তি। অথচ, স্বাধীনতার পরে এক দশকের বেশি সময় অতিক্রান্ত। অথচ, দেশে শষ্যের উৎপাদন আশানুরূপ না। এর একটা বড় কারণ হয়তো দেশজ বীজশষ্যের ব্যবহার। দেশীয় বীজশষ্যের ফলন যথেষ্ট কম। তায় দেশ জুড়ে খাদ্যশস্যের তীব্র সংকট। কৃষিতে কম ফলন সেই সংকটকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। ওদিকে, দেশের কোটি কোটি মানুষের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। জোগান কম থাকায় উদর পূর্তির জন্য উৎপাদিত শষ্য যথেষ্ট নয়। মানুষের অনাহার, অর্ধাহার নিত্যসঙ্গী। সেজন্য চাই বিকল্প কৃষি নীতি। শস্যের হাইব্রিডাইজেশন সেই বিকল্প পথের দিকে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
         
জোয়ার আসলে ভূট্টা জাতীয় এক ধরনের খাদ্য শস্য। দেশজ জোয়ারের ফলন ভীষণ রকম কম। তা, ফলন বৃদ্ধির উপায় কী? মূলত দুটি উপায়ে খাদ্য শস্যের দ্বিগুণ উৎপাদন ঘটানো সম্ভব। প্রথমত, জোয়ারের সংকরায়ণ ঘটিয়ে উন্নত মানের বীজ উৎপাদন করে চাষ করলে ফলন ভালো হয়। দ্বিতীয়ত, আরও বেশি ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে হাইব্রিড জোয়ার গাছে রেটুনিং করা হয়। রেটুনিং কী? প্রথম বার জোয়ার বীজ বোনার পর গাছ বড় হয়। তারপর গাছ কাটার পালা। গাছ কেটে নেওয়ার পর পাশ থেকে একধরনের পাশকাঠি বের হয়। এই পাশকাঠি গুলোকে রেটুন বলা হয়। পাশকাঠি গুলোকে উপযুক্ত খাদ্য আর জল সেচন করে যত্ন নিলে প্রথম বারের চেয়েও বেশি ফলন পাওয়া যায়। এ হেন পদ্ধতিকে এগ্রিকালচার রেটুনিং বলে। এই পদ্ধতির বিস্তর সুবিধা। দ্বিতীয় বারের ফসল ফলতে প্রথম বারের চাইতেও কম সময় লাগে। সুতরাং, একবার জোয়ার বীজ বুনে দুবার ফসল ঘরে তোলা যায়। উক্ত গবেষণা লব্ধ রেজাল্ট দেখে, নিবিড় রিসার্চ করে ও সংগৃহীত তথ্য বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করলেন রামচন্দ্র বাবু। কিন্তু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের কাহিনী বেশ জটিল এক অধ্যায়, যার পরতে পরতে অসফল হওয়ার হাতছানি। তবে কি রামচন্দ্র বাবু কৃষিতে তাঁর কাঙ্ক্ষিত পিএইচডি ডিগ্রি হাসিল করতে সফল হবেন? নাকি, ঘন কুয়াশায় ডুবে যাবে তাঁর সকল আশা।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
(২)
মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর তাঁর লক্ষ্য ছিল গবেষণা। ধ্যান জ্ঞান ছিল কৃষিতে রিসার্চ। সরকারি চাকরি তাঁর সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছিল। বিকল্প পথের সন্ধানে কত বিনিদ্র রজনী পার হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। মনের মধ্যে তীব্র দোলাচল। আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছে। এমন সময় অকস্মাৎ পড়ে পাওয়া এক সুযোগ এসে হাজির। বিশেষ সূত্র মারফৎ রামচন্দ্র বাবু অবগত হলেন কৃষিতে গবেষণা করতে গেলে আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইডের মাধ্যমে পিএইচডির সারসংক্ষেপ ইউনিভার্সিটিতে জমা করা ভীষণ জরুরি। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। সেজন্য  তাঁকে চাকরি ছাড়তে হবে। এখন তাঁর পক্ষে চাকুরীতে ইস্তফা দেওয়া কোনোমতেই সম্ভব নয়। শিশু কন্যা ভূমিষ্ঠ হয়েছে সদ্য। স্ত্রী ও শিশু কন্যা সহ তিনি ভিন রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। এমতাবস্থায় চাকরি ছাড়লে চলবে কীভাবে? খাবে কী? অপরিচিত জায়গায় স্ত্রী-মেয়েকে রেখে যাওয়ার মতো নিরাপদ আশ্রয় কোথায়? চাকুরী করতে করতে গবেষণার স্বপ্ন হয়তো অধরা থেকে যাবে! কোনোদিন বাস্তবায়ন হবে না। একটু একটু ভেঙে পড়ছে আত্মবিশ্বাস। হৃদয়ে আঘাত লাগছে। কোয়েমবাটুরে চাকরিতে মন বসছে না। দক্ষিণ ভারতে চাকরি করে উত্তর ভারতে আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ গাইড মেলা খুব দুষ্কর কাজ। মাথার মধ্যে সারাক্ষণ ঘুর ঘুর করে গবেষণা আর গবেষণা। ভাবতে ভাবতে একদিন আচমকা অফিসে দেখা হয়ে গেল ড. ভি. সান্তানম-এর সঙ্গে। সান্তানম স্যার PIRCOM-এর হেড। তাঁকে মনের কথা সব খুলে বললেন রামচন্দ্র বাবু। রামচন্দ্রের আগ্রহ দেখে অবাক হলেন ড. সান্তানম। 
       
ড. সান্তানম-এর অত্যন্ত পরিচিত ছিলেন ড. জে. তুলজারাম রাও। কোয়েমবাটুরে সুগারক্যান ব্রিডিং ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ড. রাও। রামচন্দ্রের ইচ্ছর কথা উল্লেখ করে ড. সান্তানম একখানা চিঠি লিখলেন। চিঠির প্রাপক ড. রাও। রামচন্দ্রের কাছে অভাবিত একখানা সুযোগ এসে গেল। ড. রাও তাঁর প্রতিষ্ঠানে কৃষি গবেষণায় আগ্রহী স্কলারদের জন্য আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইড হিসেবে নিজের নাম নথিভুক্ত করে রেখেছেন। আহা! কী প্রশান্তি। অন্ধকার কারার লৌহ কপাট উন্মোচিত হওয়ার মতো ঘটনা। শুরু হল অদম্য লড়াই। কঠিন সংগ্রাম। কৃষি বিদ্যা কিংবা চাষবাস সংক্রান্ত আলোচনার জন্য প্রিয় গাইড স্থিরীকৃত সময় ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। গবেষণা সম্পর্কে আলোচনার আদর্শ সময়। ওই সময়ে ড. রাও-এর বাসায় পৌঁছে যায় রামচন্দ্র। শুরু হয় নিবিড় আলোচনা। গবেষণার মূল বিষয়ে সবিশেষ আলোচনার পর সারমর্ম লেখার পালা। রামচন্দ্র খুব সুন্দর সারবত্তা লিখে পেশ করেন ড. রাও-এর নিকট। কাটাছেঁড়া করে তিনি সেটার আরও সংক্ষিপ্ত রূপ দেন। তথ্যাদি সংগ্রহ করার পর ঘন ঘন যোগাযোগের নির্দেশ দিলেন প্রিয় ছাত্রকে। সেই সঙ্গে আরও জানালেন — 'চাকুরী জীবনে এত কাজ হাতে নেওয়া যায় না।' কিন্তু উপায় কী? 

এরপর শুরু হল রামচন্দ্রের আসল সংগ্রাম। অমানুষিক পরিশ্রম। সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা পাঁচটা পর্যন্ত ফিল্ড ওয়ার্ক। ক্ষেত্র অনুসন্ধান। নিস্তার নেই সন্ধ্যার পরও। অফিসের কাজ শেষ করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে গবেষণার কাজ। গবেষণালব্ধ তথ্য লেখালেখি। এই সময়টা শেফালী দেবী উৎসাহ যুগিয়েছেন। নিঃশব্দে রাত জেগে বসে থেকেছেন স্বামীর পাশে। সারাদিন শিশু কন্যা ও সংসার সামলে রাত জাগতে জাগতে কখন যে নিদ্রা এসে কড়া নাড়ে, তার খবর কে রাখে! এক সময় ঘুমে দুচোখের পাতা খুলে রাখা দায়। অগত্যা শেফালী দেবী ঘুমাতে চলে যান। আর যেতে যেতে বলে ওঠেন – 
'শুতে গেলাম। তুমিও শুয়ে পড়ো। বাকিটা কাল করো।'
১৯৬৫ সালের শেষার্ধ পর্যন্ত ফিল্ডম্যান-এর সাহায্য নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন বছর ধরে রিসার্চের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু সংগৃহীত ডেটা বিশ্লেষণের কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেল। তার আগেই তাঁর বদলির কাগজ চলে এল। এরপর কী করণীয়? একূল ওকূল দুকূল সামলে কীভাবে ম্যানেজ করবেন তিনি? নাকি অথৈ জলে ভেসে গেল তাঁর স্বপ্ন? (ক্রমশ...)

তথ্য সূত্র :
• প্রণম্য বৈজ্ঞানিক ড. রামচন্দ্র মণ্ডল মহাশয়
• শ্রী সুদর্শন সেন বিশিষ্ট শিক্ষক ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক
• 'মনীষী ড. রামচন্দ্র মণ্ডল' – সম্পাদনা শ্রী জয়দেব মাইতি ও শ্রী সুব্রতকুমার মাঝি

Post a Comment

0 Comments