জ্বলদর্চি

দেশান্তরী -২৩ /হিল্লোল রায়


দেশান্তরী -২৩

হিল্লোল রায় 

একটা কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিআমার ফিলাডেলফিয়া ত্যাগের কারণ ও নর্থ -ডাকোটা অভিমুখে যাত্রার উদ্দেশ্যঃ

মাতৃভূমি ভারতবর্ষ থেকে বিগত মার্চ ২৩১৯৭৫ ফিলাডেলফিয়া এসে পৌঁছেছিলাম। আমার ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ছিল। নর্থ-ডাকোটায় ন্যাশনাল সায়েন্স ফাইন্ডেশান ফেলোশীপ(NSF) পেয়েছি Environmental Engineering এ এ্যানালিটিক্যাল রিসার্চ ও গ্র্যাজুয়েট স্টাডি করার জন্য। আমার ইচ্ছা Environmental Engg. এ উচ্চতর জ্ঞান লাভসেই উদ্দেশ্যেই নর্থ-ডাকোটা অভিমুখে যাত্রা।

প্লেনের কেবিন থেকে ঘোষণা করা হলএখন প্লেন ৩৯০০০ হাজার ফুট উঁচুতে রয়েছে। ফিলাডেলফিয়া থেকে ডেট্রয়েট আসার পথে আমরা ছিলাম ৩৩০০০ হাজার ফুট উঁচুতে। মিনিয়াপোলিশ এয়ারপোর্ট-এর কাছে প্রায় এসে পড়েছি। নীচের শহর দেখতে পাচ্ছি। ঘরবাড়ীগুলো খুব ছোট ছোট লাগছে। নীচে একটা নদীও দেখতে পাচ্ছি। নদীর জলের রং নীল মনে হচ্ছে ৩৯০০০ হাজার ফুট উঁচুতে বসে। ঘড়িতে এখন ১০-৩৯। আবা্র মেঘ এসে দৃশ্য বদলে দিল। এয়ার হোস্টেস এসে 'টীবা 'কফিজিজ্ঞাসা করতেই বল্লাম, 'কফি'। দুধ -চিনি মেশাচ্ছিকফিতে। ওয়াইন পান করলাম। উড়ছি-দৃশ্য দেখছি-ডাইরী লিখছি। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে এগিয়েই চলেছে।

বাইরের দৃশ্যপটে এখন কিছুটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। এতক্ষণ সাদা মেঘ দেখে চোখের ইচ্ছা মেটাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি রাশি রাশি নীলরঙা মেঘের আবির্ভাব। নীল মেঘের মধ্যে সাদা মেঘ এসে আরো সৌ্ন্দর্য্য বাড়িয়েছে।

একটু একটু তন্দ্রা আসছে। ঘুমাবার চেষ্টা করছি। এখন অবশ্য ঘুমিয়ে লাভ নেই কারণ আর একটু পরেই মিনিয়াপোলিশ বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হবে এক ঘণ্টার জন্য। আমার এতক্ষণ ফ্লাইট নম্বর ছিল 515. মিনিয়াপোলিশ থেকে আবার ফ্লাইট চেঞ্জ করতে হবে। নম্বর ৩০৯ -এ করে। এখন আমার ঘড়ির সময় অনুযায়ী সকাল ১০-৪৫। বাইরের ঘরবাড়িগুলো খুব কাছে । মেঘ ভীড় করেছে। রাস্তাগুলোকে সূতোর মত মনে হচ্ছে। প্লেনের মধ্যে বসে আছি বলে এর গতিবেগ উপলব্ধি করতে পারছি না। মনে হচ্ছে এখন যেন শূন্যে ভেসে রয়েছি।

🍂
যতই সময় যাচ্ছে নীচের দৃশ্য ততই পরিস্কার হচ্ছেমেঘের পরিমাণ ক্রমশঃই কমে যাচ্ছে। যাত্রীরা অনেকেই এখন রেস্ট রুমের দিকে এগুচ্ছে। জলত্যাগ ও জলগ্রহণের প্রয়োজনের তাগিদেই হয়তো। আমার হাতের আঙুলগুলো এখনও সুস্থ হতে পারে নি অত ভারী ভারী ব্যাগ বয়ে আনার পর। ডেট্রয়েট থেকে মিনিয়াপোলিশ আসার পথে কফি ও 7-up দিয়েই গলা ভিজিয়ে নিলাম। কোন কোন যাত্রী জানলা থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে বাইরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চেষ্টা করছেন। তার মধ্যে আমি একজন।

একটা মাছি এসে বিরক্ত করতে শুরু করল ১০-৫৫ নাগাদ। মাছের আকৃতি -প্রকৃতি ভারতবর্ষের মাছির মতই। তাই ডাইরি লিখতে মাঝে একটু ব্যাঘাত ঘটলো। এখন নীচের দৃশ্য আবার বদলে গেল। মনে হচ্ছেকোনো সমতল জায়গার উপর কেউ যেন শেওলা বিছিয়ে রেখেছে। ছোটবেলায় দেশে থাকতে ঝুলনযাত্রার দিনে মেঝের উপর শ্যাওলা এনে সাজাতাম। তারপর চূণ দিয়ে তার উপর ছবি আঁকতাম। বাইরের দৃশ্য কি ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে?

এখন ঘড়িতে ঠিক ১১টা । ঘোষণা হল “Fasten your seat belts”. আমার সিট বেল্ট বেঁধে নিলাম।

ক্রমশঃ


Post a Comment

0 Comments