জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে -৭৭/রোশেনারা খান

যেতে যেতে পথে
রোশেনারা খান

পর্ব ৭৭

১৯ জানুয়ারি  খান সাহেবের ‘এম আর আই’ হল, খারাপ কিছু ধরা পড়েনি। টেকনিশিয়ান জানাল রিপোর্ট আগামিকাল দেবে। এখন আমি হাতে করে খাবার খাইয়ে দিচ্ছি বলে একটু বেশি খেতে পারছেন। আগের তুলনায় ভালও আছেন। নিজেই হাঁটছেন, কথাও বলছে্ন স্পষ্ট।

    রাতে খেয়াল হল ডাক্তার আরও একটা টেস্ট দিয়েছিলেন। আমি ভেবেছিলাম, এম আর আই করালে ওটা আর করতে হবে না। কিন্তু ফোন করে জানলাম, ওটাও করতে হবে, কাল করাব। দেখি কী হয়। এটার রিপোর্ট পেতে ৩/৪দিন দেরি হতে পারে, ডাক্তারের কাছে দেখাতে নিয়ে যেতে দেরি হবে, কী আর করা যাবে?

     আজ রবিবার, ওনাকে স্পন্দনে নিয়ে গিয়ে ‘ই ই জি’ করিয়ে আনলাম। ওরা বলল’ তেমন কিছু তো চোখে পড়ছে না। আজ অন্য দিনের তুলনায় ভাল  আছেন। সুচন্দ ডাঃ দাস ব্লাড টেস্টটা করাতে পারতেন, কেন করালেন না জানি না। দেখি, রিপোর্ট দেখে কী বলেন? ওনার ভাল থাকার কোনও গ্যারেন্টি নেই।

     পাগলামি দিনদিন বেড়েই চলেছে। অথচ টেস্টে কিছুই ধরা পড়ছে না।  ভুলভাল বকছে্ন, ভুল ওষুধ খেয়ে নিচ্ছেন। ওষুধ লুকিয়ে রাখলে রেগে যাচ্ছেন। আজ আবার সকাল থেকেই হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। রিপোর্ট নিয়ে আমাকেই যেতে  হবে, মনিকে পাঠালে কিছু বুঝবে না।

    আজ রাতে ইব্রাহিমের(প্রাক্তন বিধায়ক)সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হল। ওকে রানীর জন্য পাত্র দেখতে বলেছিলাম। ও বলছে, তিনমাস আগে বললে ও নিজেই বিয়ে করত। ওর বিয়ে ২৭/২৮ জানুয়ারি। আমাকে যাওয়ার জন্য অনেক করে  বলছে। কিন্তু ওনাকে একা রেখে যাব কী করে? দেখা যাক, কোন ব্যবস্থা করা যায় কী না।

    প্রতিদিন খুবই ব্যস্ততার মধ্যে কাটছে। বাজার করা, রান্না করা, খেতে দেওয়া, যাদের সময় দেওয়া আছে, তারা এলে কথা বলা, বোঝানো, তার ওপর ওনার সঙ্গে যুদ্ধ করা। কিছু বুঝতে চাইছেন না। আমাকে যা খুশি বলছেন। ভুল ওষুধ খেয়ে ফেলবে্ন বলে লুকিয়ে রেখেছি, তাই নিয়ে অশান্তি করছেন। উনি না ঘুমালে আমিও ঘুমাতে পারি না। কখন পড়ে টড়ে যাবেন, জানতেও পারব না।

     বাইরের জগতের সব খোঁজখবর রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কাজে ফুরসত পেলে তবেই না? এমনিতেই অনেকে বলেন, দিদি আপনি পারেন কী করে? এতদিক সামাল দিয়ে চলতে! আমি অন্য কোনও কিছুর সঙ্গে আমার স্বামীর বিষয়টিকে  একসারিতে বসাতে পারব না। আজ ওনাকে ডায়ালিসিসিসে নিয়ে গিয়ে ব্লাড টেস্ট করালাম। এখন আর ডাক্তারের বলার জন্য অপেক্ষা করি না। রিপোর্ট বলছে হিমোগ্লোবিন কমেছে, ইউরিয়া বেড়েছে। ডাক্তারকে বলতে, ইঞ্জেক্সনের পাওয়ার বাড়িয়ে দিতে বললেন।

     আজ ‘ই ই জি’ রিপোর্ট দিয়েছে। আগামিকালই  রিপোর্ট নিয়ে কলকাতা যাব। চন্দ্রিমা সঙ্গে যাবে বলেছে। ও পাশে না থাকলে জীবনটা আমার আরও কষ্টের হত। দেখি, রিপোর্ট দেখে ডাক্তার কী বলেন? হাঁটাচলাটা স্বাভাবিক হয়ে গেলে আর স্মৃতিশক্তিটা ফিরে পেলে অনেক কষ্ট কমবে।

     ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়লেও আমার একান্ত প্রার্থনা, ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু--’। আজ নিজেই অপটু হাতে ওনার দাড়ি সেভ করে দিলাম। দুপুরে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি’ থেকে ফোন করে ছিল, আমি ১ ফেব্রুয়ারি সেমিনারে যোগ দিতে পারব কি না জানতে। আমি সম্ভব নয় বলেছি। ওরা তখন ৮ ফেব্রুয়ারি ডেট ফ্যাইনাল করার কথা বলল। আমি রাজি হয়েছি। এগুলোতে  আমাকে যেতেই হবে।

    খান সাহেবের রিপোর্ট নিয়ে আমি চন্দ্রিমা গেছলাম। নিউরোলজিস্ট ডঃ অমিতাভ ঘোষ রিপোর্টে কিছু খুঁজে পেলেন না, তাই ব্লাড টেস্ট করতে বলেছেন। গত বারেই ব্লাড টেস্টটের কথা হয়ে ছিল। বলেছিলেন, খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। ৪০,০০০ টাকা লাগবে। তাছাড়া মেদিনীপুর থেকে ব্লাড সঠিকভাবে সংগ্রহ করা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। তাই বাবলি বলেছিল, মা, ডাক্তারদের সঙ্গে ভালভাবে আলোচনা করে তবেই ব্লাড টেস্টের সিদ্ধান্ত নেবে। অ্যাপোলো থেকে বের হয়ে ডঃ সুচন্দ দাসের ক্লিনিকে গেলাম। ওনার সঙ্গে আলোচনা করে সেকেন্ড ওপিনিওন নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওনাকে ডাক্তার সাজেস্ট করার কথা বললে, উনি মুকুন্দপুরের ডঃ জয়ন্ত  রায়ের ফোন নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বললেন। কী যে হবে? কী করব? ভেবে উঠতে পারছি না।

     বাড়ি ফিরে ফোনে জয়ন্ত রায়ের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিলাম। ৩১ জানুয়ারি দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে সময় দিয়েছেন। ৩০ মিনিট আগে পৌঁছাতে হবে। ৩ ঘণ্টা সময় হাতে রাখতে হবে। ১২০০ টাকা ভিজিট, একবছরের জন্য রেজিসট্রেশন ফি ১৫০ টাকা। বাবলি নটিংহামের ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ওঁরাও সেকেন্ড   ওপিনিওন নেওয়ার কথা বলেছেন। আরও বলেছেন, কিডনির পেসেন্টদের এরকম সমস্যা হতেই পারে। তাছাড়া ওদেশে ঠিকঠাক ডায়ালিসিস হয় না। ওসব নিয়ে মনখারাপ করে লাভ নেই। আজ আবার ডায়ালিসিস হল।

     আজ হাঁটতে পারছেন, মনি একটা বেতের লাঠি কিনে দিয়ে গেছে। ওসব ঠিক আছে, কিন্তু কবে কে কোথায় প্রাচীর ভেঙেছে বা ভাঙ্গছে জানি না, ওই কথাই বার বার বলে চলেছেন। বাবলি বলছে এখন বাপিকে কলকাতা নিয়ে  যাওয়ার দরকার নেই। উনি যেতেও চাইছেন না।

    শেষপর্যন্ত ইব্রাহিমের বিয়ের পার্টিতে  গেলাম। সঙ্গে সৌনক ও রানীকে নিলাম। বিশাল আয়োজন, লোকজনও প্রচুর। ওখানে ভাস্করের সঙ্গে দেখা হল। ও ইব্রাহিমের বন্ধু, ভাস্করের বাড়ি পাশের গ্রামে। খওয়ার সময় সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে  আলাপ হল, উনিও বললেন, আমাকে চেনেন। আমার লেখা পড়েছেন। ১০টায় বাড়ি ফিরলাম।

    আজ উনি বেশ ভাল আছেন, হাঁটতে পারছেন, নিজে হাতে করে খেয়েছেন, ব্যাঙ্কের কাজও করেছেন। প্রাচির ভাঙ্গার কথা একবারও বলেননি। পরেরদিন আবার অন্যরকম। বাধ্য হয়ে ডঃ দাসের সঙ্গে কথা বললাম। সব শুনে উনি বললেন, আর নিউরোলজিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই, এইরকমই চলুক। শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। ভুল বকাটা বন্ধ হলে আর হাঁটতে পারলে আমার পক্ষে সামলানো সহজ হয়।

     শুক্রবার বারাসত যাব, কিছু জিনিস গুছিয়ে নিতে হবে। আজ উনি অনেকটাই ভাল। আমি বারন করা স্বত্বেও ৪০০০ টাকা লস করে ক্যাশ সার্টিফিকেট দুটো ভাঙ্গিয়ে নিলেন। এখন ডায়ালিসিস ঠিকঠাক হচ্ছে। আর যাব না বলেন না। আসলে সকালবেলা ঠাণ্ডায় বিছানা ছেড়ে উঠতে কষ্ট হত। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক আচরণ করছেন। ভুল বকাটাও বন্ধ হয়েছে। ওঁর কষ্ট দেখতে দেখতে নিজের কষ্টগুলো তুচ্ছ হয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরেই একটা দাঁতের গোড়া ব্যথা করছিল। তাই ডেন্টিষ্টের কাছে গেছলাম। দুপুরে চন্দ্রিমা এসে মাথাটা খারাপ করে দিয়ে গেল।আমি এমনিতেই শুক্রবার ইউনিভার্সিটির লেকচারটা নিয়ে চিন্তায় আছি। সন্ধ্যায় সুদিন স্যার ফোন করে জানতে চাইলেন, পরশু কখন যাচ্ছি? আরও বললেন, আমি অপেক্ষায় থাকব।

    আজ বারাসত যাব বলে বোনকে আসতে বলেছিলাম। আমরা ৮টা ৩০ শে  রওনা হয়েছি, ছবি(বোন)তার আগেই এসে গেছে। ওকে সব বুঝিয়ে দিয়ে  বেরিয়েছি। আমি ওনার জন্য ছানা করে, ভাত বসিয়ে তবেই বেরিয়েছি। আমার  যাওয়াতে  উনি আপত্তি করেননি। ইউনিভার্সিটি পৌঁছাতে সাড়ে বারোটা বেজে গেল। ভার্সিটির পরিবেশটা বেশ মনোরম, দুপাশে দুটি মস্ত ঝিল রয়েছে, দেখে মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল। দারুণ অভ্যর্থনা পেলাম। আমার বক্তব্য ছিল দর্শন বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। বক্তব্য যে ওদের ভাল লেগেছে, তা ওদের আচরণে আগ্রহে বুঝলাম। আমাকে অনেক প্রশ্নও করেছে। আমার নিজের কথা কিছুটা বলতে বলা হয়েছিল। তাতে নাকি ছাত্রছাত্রীরা অনুপ্রাণিত হবে। ২/১ জন যে আমার নিজের কথাগুলি নিয়েছে, তা ওদের কথাতেই বুঝলাম। একটি মেয়ে এগিয়ে এসে বলল, ম্যাম কিছু করার ইচ্ছে থাকলে তা যে কোনও সময়েই শুরু করা যায়?-অবশ্যই যায়। ওরা আমাকে আবার  আসার জন্য বার বার বলতে লাগল। মেদিনীপুরের কৃতি ছাত্রী অদিতি দাসগুপ্ত , বাসুদেব দাসগুপ্তের ভাইজি এখানে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক। সবিতা সামন্ত বিভাগীয় প্রধান। ইনিও মেদিনীপুরের। তবে তারজন্য আমি এই ইউনিভার্সিটিতে ডাক পেয়েছি, তা কিন্তু নয়। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যাপয়ের বাসবী  চক্রবর্তীর থেকে এবং টিভিতে আমার টকশো দেখে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন। সবিতা আমার পূর্ব পরিচিত হলেই অদিতির সঙ্গে এখানেই প্রথম পরিচয়।  যাই হোক, অনুষ্ঠান শেষে  ওনাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে পড়লাম।

        দুঃখের বিষয় সময়াভাবে সুদিন স্যারের বাড়ি যাওয়া হল না। ৩ টের সময় ওনার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ছিল। কিন্তু এখানেই তিনটে বেজে গিয়েছিল। অনার সঙ্গে কথা বলে জানলাম উনি এখুনি বেরিয়ে যাবেন। আমাদের এখান থেকে বইমেলে  যাওয়ারও প্ল্যান ছিল।। সে তো আর এক প্রান্তে। সারাদিন  চুপচাপ থাকলেও বিকেল গড়াতেই উনি ফোন করতে শুরু করেছেন। আমরা ভয়ে বলিনি বইমেলা এসেছি বলে। কোনরকমে মেলায় একটুখানি ঘরলাম। ‘সহজপাঠ’ এর স্টলে গেলাম । প্রকাশক শুভাশিস বলল, দিদি ‘বাঙালি মুসলিম সমাজ ও নারী’ বইটিরই ১৫ কপি এনেছিলাম, সব শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের  ২ জন বই পেলেন না। ‘একালের রক্ত করবী’র স্টলে আর যাওয়া হলনা। উনি বার বার জানতে চাইছেন, আমরা কত দূরে?

        অদিতি আজ সোশাল মিডিয়াতে খুব সুন্দর করে পোস্ট দিয়েছে। সে যাই হোক, ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যেতে পেরে আমার খুব ভাল লাগছে। এইসব যায়গাতে আমার বক্তব্য, যুক্তি এতখানি গ্রহণ যোগ্যতা পাবে ভাবিনি।

    আজ সরস্বতী পুজো, বেশ কয়েক যায়গায় খিচুড়ি খাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল,  কোথাও যাওয়া হয়নি। চন্দ্রিমা অনেক খাবার পাঠিয়ে ছিল। তাই আর রান্না করিনি। ডায়ালিসিসের ডেটগুলো ওরা ওলটপালট করে দিচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে  ওদের সঙ্গে তাল মেলানো। একবার বলল আজ হবে না, আবার যেতে বলছে। কিছু করার নেই, যেতেই হবে। একদিক দিয়ে ভালই হল, কাল দুপুর ১২টায় একটা প্রোগ্রাম আছে বিদ্যাসাগর হলে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও যেতে পারব। ইয়াসিন ফোনে জানতে চায়ছিল অনুষ্ঠান কেমন হল?                                                                                                                  এই সপ্তাহে বেশ কয়েকবার বাইরে যেতে হবে। ওনাকে একা রেখে রেখে যাওয়া যাবে না। তাই ছবিকে আসতে বলেছি। আজ ডায়ালিসিস, ইঞ্জেক্সন দুটোই হয়েছে। নার্সিংহোম থেকে ফিরে দেখি, মেজদি আর তানি এসেছে।, আমি  নিশ্চিন্তে যেতে পারব। আজ দুপুর ১২ টায় তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক  অনন্যার মজুমদারের রুমে ঢুকে দেখি ভাদুতলার বিবেকানব্দ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী বসে আছেন। নিচে নির্মাল্যকে দেখে এলাম। আজ চুয়াডাঙ্গার কমিউনিটি হলে ‘আন্তর্জাতিক সামাজিক সংযোগ ও চলচিত্র সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে। ওখানেই যাব আমরা। আমি অমিতেশ কফির কাপ হাতে নিয়ে কথা বলছিলাম। অনন্যা সেই ফাঁকে ওর কাজ গুছিয়ে নিচ্ছিল। অমিতেশ বলল, দিদি একবর আমার স্কুলে পায়ের ধুলো দিতে হবে। এবারের মাতৃভাষা দিবসে আপনাকে   নিয়ে যাব। ম্যাডাও(অনন্যা) যাবেন।
অনুষ্ঠানে দুটি শিক্ষামূলক শর্টফিল্ম দেখানো হল। সেবিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন করলে পরিচালকরা উত্তর দিলেন। আমরাও যে যার মত বক্তব্য রাখলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহশিক্ষক সুদীপ খাঁড়া, মতুয়ার মল্লিক, ফিল্ম মেকার সুমন্ত সাহা, পার্থ শ্যাম ও আরও অনেকে।      

  ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটা আমার কাছে খুবই স্পেশাল। আজ আমার একমাত্র ছেলে  বকুলের জন্ম দিন। ও আসবে না জানি, তবুও ওর পছন্দের ছানার পায়েস  করলাম। যদি আসে! এই ভেবে। একটু বেরিয়ে ছিলাম, এক হাফ পাগলের সঙ্গে দেখা, ওকে ডেকে খেতে দিলাম। ও বলল, খুব খিদে পেয়েছিল। কাউকে বলতে পারিনি, ভগবান আপনাকে পাঠিয়েছেন।

🍂

    আজ মেদিনীপুর ‘আর এন কে মহিলা কলেজ’ ও নেহেরু যুব কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে একটি সেমিনার ছিল কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে। আমি বিষয়টা না জেনেই আধিকারিক নন্দিতা ভট্টাচার্যকে যাওয়ার সম্মতি দিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম বিষয় ‘সঙ্কল্প ও সিদ্ধি’। আমিই প্রধান অতিথি ও প্রধান বক্তা। আমি আমার মত করেই বক্তব্য রাখলাম। মাঝে মাঝে ছাত্রীরা হাততালি দিচ্ছে। আমি শেষ করতে চাইছিলাম, কিন্তু ছাত্রীরা আরও শুনতে চাইলে, প্রিন্সিপ্যাল বললেন, দিদি আপনি   বলে যান। আরও কিছুক্ষণ বলে যখন থামলাম, প্রিন্সিপ্যাল বললেন, খুব ভাল বলেছেন দিদি, আপনার বক্তব্য শুনব বলেই কাজ ফেলে এসেছি। নন্দিতাও খুব খুশি। আর ছাত্রীদের কথা কী বলব? ওরা এসে অটোগ্রাফ, ফোন নাম্বার নিল, প্রণাম করল, ছবি তুলল। মাঝে মাঝে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি আমি খুব ভাল বলি? অধ্যাপক ও শিক্ষকদের কথাতে আমার যেটা মনে হয়, আমি খুব বিষয়টি সম্মন্ধে গভীরভাবে ভাবি এবং কোনও গুরুগম্ভীর কথাবার্তা নয়, খুব সহজ  ভাবে বিষয়টি ওদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করি।  ওরা সেটা বুঝতে পা একটা কথা, আমি কাগজ দেখে বক্তব্য রাখি না। এটাই হয়ত ভাল লাগার কারণ।

                                      ক্রমশ।

Post a Comment

0 Comments