কালের অতলতলে কলোরাডো - ৯
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
রাত গভীর। চার পাশের পৃথিবী এখন সুপ্ত নিদ্রাদেবীর স্নেহের আঁচলে। অনিমেষে কেটে চলেছে আমার বিনিদ্র রাতের অগুনিত প্রহর। অধীর আশায় চঞ্চল মন , একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আকাশে অন্ধকারের বুকচিরে প্রথম আলোয় সূর্যোদয়ের আশায়। পাহাড়ের গা ছুঁয়ে ভেসে আসছে বৃষ্টির শীতল পরশ ,একটানা ঝিমঝিম শব্দের সাথে ক্লান্তিকর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। বুনো ঝোপে ঝাড়ে থোকায় থোকায় জোনাকের ডানায় মিটিমিটি নীল আলো। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে শ্রাবণের বর্ষা ধারায় ভেজা এ যেন আমার দেশেরই কোনো পরিচিত পাহাড়ি গ্রামে বেড়াতে এসেছি। ক্রমে আঁধার কাটলো। কালো আকাশ কমলা রাঙা হয়ে দিগন্ত রাঙিয়ে নতুন দিনের আত্ম প্রকাশের এই বিরল মূহুর্ত আমার দেখার চোখে চিরস্মরণীয় হয়ে রইলো। আশেপাশের পাহাড়ের চূড়ায় ,কাইবাবের জঙ্গলে কাঁপন তুলে দুরন্ত সূর্য্য নির্মল হাসির তুফান তুলে আঁকিবুকি কেটে যায় স্তব্ধ রিক্ত ধূসর মরুর তামাটে পাথরের গায়ে। আরিজোনার পথের ধারে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পার্কে কাইবাব গাছের সাথে ও এই প্রথম পরিচয় হলো। বৃষ্টি বুঝি বিদায় নিয়েছে। মনোরম শুকনো একটি দিনের পূর্বাভাস পেলাম ,মন অজানা খুশিতে ভরে উঠেছে। এই মরুঅঞ্চলে অসময়ে বৃষ্টি এলে Antelope Canyon দেখা বন্ধ হয়ে যেত।
গতকাল অসংখ্য গিরিখাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের অপরূপ সৌন্দর্য , হর্স শ্যু বেন্ড দেখে বাকরুদ্ধ বিস্মিত হয়ে যখন পেজ শহরের দিকে রওনা দিয়েছিলাম , যাবার মুখে পার্কিং জোনে হেঁটে পৌঁছতেই ঝমঝম করে মুষল ধারায় বৃষ্টি এলো। আমরা কোনোমতে গাড়িতে ঢুকে মাথা বাঁচালেও ,অতনু দূরে থাকায় সম্পূর্ণ ভিজে এলো। এবং ঠান্ডা লেগে শরীর খারাপ হয়ে ধুম জ্বর আসায় আমাদের প্ল্যান তড়িঘড়ি পাল্টে ফেলে কাছেই এক সস্তার মোটেল খুঁজে রাতের মত আশ্রয় নিলাম। ফাস্টেড বক্স থেকে ইয়ম ওষুধ বার করলো ,বন্ধুরা পালা করে ঠান্ডা জলে রুমাল ভিজিয়ে সারা রাত কপালে জল পট্টি দেবে ঠিক করায় আমি বেশ নিশ্চিন্ত হোলাম। ক্লান্তিতে আমার শরীর ও পা দুটো বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। শোবার জায়গা পেয়েই রাজ্যের ঘুম নেমে এলো চোখের পাতায়। ঘন্টা খানেক অসময়ে ঘুমিয়ে পড়ার ফল স্বরূপ সবাই যখন নিদ্রিত তখন আমার সারা রাত নিদ্রা হারা হয়ে প্রহর গোনা ।
এই পাহাড়ের উপতক্যায় আদিবাসী নাভাহো বয়স্কা তিন মহিলা দ্বারা পরিচালিত এই ''মাম্মিস কেয়ার '' লজটি । আমি সেখানেই কাঁচ ঢাকা বারান্দায় বসে আছি রাত শেষের অপেক্ষায়। পাহাড়ের সমতলে বহু পুরোনো লম্বা মত ছিমছাম এক কাঠের দোতলা বাড়ি। যা হোক ডর্মিটরির মত হল ঘরে পাঁচটা বেডের সুন্দর ব্যাবস্থা পাওয়া গেল । এক সত্তর উর্দ্ধা বয়স্কা ভদ্র মহিলার মাতৃ স্নেহের আন্তরিক উষ্ণস্পর্শ পেয়ে ধন্য হলাম। রাতের খাবারের ও ওরাই ব্যাবস্থা করলেন ডিম স্প্রিং মাশরুম আর সব সব্জি মিশিয়ে ভেজিটেবিল ফ্রাইড রাইসের সাথে বুনো টার্কির ঝোল বেশ সুস্বাদুই লাগলো।। এবং অসুস্থ অতনুর জন্য টার্কির স্যুপ। পারভীনের মহা আনন্দ। আদিবাসী আমেরিকান দের নিয়ে ওর যে পেপার টা যথাযথ তথ্যের অভাবে এতদিন অর্দ্ধ সমাপ্ত হয়ে আছে এবার বুঝি তা সমাপ্ত হবে। ও রাতেই ওদের সাথে আলাপ জমিয়ে চটপট ইন্টারভিউ নেওয়া ও ছবি সংগ্রহের কাজে মন দিয়েছিল।
🍂 গভীর রাতে ঘুম না এলেও অসুবিধা নেই ভোর হয়ে গিয়েছে। আমার ইয়ংপার্টনারের দল সবাই যদিও নিদ্রিত। অতনুর জ্বর কমেছে। লাষ্ট দেখেছি ৯৮ টেম্পারেচার। অবশ্যই গতকাল বেশ চিন্তায় ফেলেছিলো। এখোনো ঘন্টা দুই সময় আছে। আমি একান্তে সময় কাটাতে কাগজ কলম আর এই চতুর্দিকে পরিবেষ্টিত ছোট বড় ক্যানিয়ন সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহের জন্য ম্যাগাজিন খুলে বসেছি।
পড়ায় তেমন মন নেই। শুধু গত কালের হর্স শ্যু বেন্ড এবং গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে দেখা অপার্থিব সেই প্রাকৃতিক দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভাসছে। সে সৌন্দর্য তাকে ভাষায় ব্যাখ্যা করতে আমি অক্ষম। হাজার হাজার মাইলের পর মাইল এই রকি পর্বত শ্রেণী কলোরাডোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কে অনুপম ও বর্ণময় করে তুলেছে। তারওপর এই গিরিখাতের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ফুট ওপরে সু গভীর পাহাড়ের খাদ গুলো। ,ক্যানিয়নের নীচের দিকে তাকালে মনে হবে এক বিশাল নদীর স্বচ্ছ জলধারা তার ঋতু পরিবর্তনের সাথে একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে বয়ে চলেছে । ভূতত্ত্ব বিদদের মতে কয়েক কোটি বছর ধরে এসব ক্যানিয়ন সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিত ,সুপ্ত ছিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্রমশ এই গিরিখাত গুলো ভূপৃষ্ঠের ওপরে দেখা দিয়েছে। বহু প্রাচীন যুগের সেই নিশ্চল প্রাণহীন বৃহদাকার প্রাণী ডাইনোসেরাসের মত দেখতে স্থবির পাহাড় গুলো ;যুগ যুগান্তর ধরে তার অসাধারণ ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য্যের নির্বাক ধারক হয়ে পৃথিবীর মাটির ওপর আপন আভিজাত্যে বিরাজ করছে। আমার চোখের সামনে এখোনো ভাসছে ,হর্স শু বেন্ড' ক্যানিয়নের নয়ন ভোলানো সেই দৃশ্য --বিশাল গিরিখাতের ভিতরে জলপ্রবাহের মাঝে হঠাৎ জেগে ওঠা শৈলপর্ব্বত। স্বচক্ষে না দেখলে সেই সৌন্দর্য মোটেই অনুমান করা যায়না।
ইতিমধ্যে দেখি ইয়ংষ্টার দের সাজো সাজো রব চলছে। অতনুকে বলি এতো শরীরের অসুস্থতা নিয়ে আর বেড়ানোয় কাজ নেই। ঘরে ফিরে চল। সে হাউমাউ করে চেঁচিয়ে ওঠে। বলে ''প্যারাসিটামল সঙ্গে আছে। জ্বর আসতেই দেবো না। কিন্তু Antelope Canyon না গেলে , শরীর ততোধিক খারাপ হবে। আর ইয়ম ,পারভীন কে তো চেনো না ? ওরা সাংঘাতিক ! সারাজীবন কথা শোনাবে। ইয়াম পারভীন রাগত স্বরে অতনু কে তাড়া লাগায় ,ও হেসে বলে , please friends let's go ! আন্টি তুমি চিন্তা করবে না। আমি বেশ আছি জ্বর নেই ,বরং তুমি রেডি হয়ে নাও। ''
চললাম পেজ শহরে --Antelope Canyon এর উদ্দেশ্যে। নাভাহো দের লজ ছেড়ে। আমাদের যাত্রা আজ বেলায় শুরু হলো। ঘড়ির কাঁটা তখন প্রায় সকাল ৯টার ঘরে। ''মাম্মিস কেয়ার '' লজের ম্যাডাম লুডো ব্রতীন কে বলে, তোমাদের গাড়ি ওখানে রেখে , শহরের গাইড ও ট্রাক ভাড়া নিয়ে যেতে হবে এ ছাড়া যাওয়া এলাউ নয়। আমরা নেটে দেখেছিলাম , এই ট্যুর গুলোতে প্রচুর ভীড় হয়। এবং সময় শুরু হয় সকাল ১০,টা / ১টা / দুপুর ৩টে/ আবার বিকেল ৫টায়। ম্যাডাম লুডোর কাছে দুপুর ১টার বেশ কিছু টিকিট ছিল। টিকিট কিনে আমরা গাড়ি স্টার্ট করলাম। কিছুটা সময় লাগলো পেজ শহরে পৌঁছতে। দুপুরের লাঞ্চ এক ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁয় সারা হলো ভেজ বিরিয়ানী চিঙড়ির মালাইকারী ,শাহী পণির দিয়ে। পারভীন , ইয়ম দু জনেই খুশিতে ভারতীয় রান্নার স্বাদে মন দিলো ।
নাভাহো ট্রাক ড্রাইভারের পিকআপ ট্রাকে আমরা চলেছি , সঙ্গে আছে ,স্বর্ণকেশী শ্বেতাঙ্গ সুন্দরী আমেরিকান গাইড জেসমিন। খোলা জীপে কিছুটা এগিয়েছি দেখি বাঁধানো মোলায়েম রাস্তাটির সেখানেই শেষ। লালমাটির ওপর দিয়ে লাল ধুলো উড়ছে। গত রাতের বৃষ্টিতে মাটিতে ভেজা দাগ স্পষ্ট হয়ে আছে। কর্দমাক্ত খোয়া বিছানো উঁচু নীচু পথে ঝাঁকুনি খেয়ে দুলতে দুলতে ট্রাকে চলেছি । পথের ধারে কোনো লাল টুকটুকে ফুলের গাছ থাকলেই মনে হতো এ যেন আমাদের বাঁকুড়া বীরভূম পুরুলিয়ার লাল পাহাড়ের রাঙা মাটির পথ । আমি বলি বাপ্ রে কি ধূলো ! চারদিক লাল হয়ে যাচ্ছে। জেসমিন বললো এতো এমন কিছু নয়। গত রাতে বৃষ্টি হওয়াতে ধুলোর পরিমান কম উড়ছে। চলার পথের পাশে ঢপলি বাজার শব্দে সচকিত হয়ে পিছন ফিরে তাকাই। মানুষ জন নিজেদের মধ্যে কেমন অঙ্গ ভঙ্গি করে নাচছে। ব্রতীন বলে নাভাহো গোষ্ঠীর কোনো উৎসব চলছে ওরা তাই হুপ ড্যান্স নাচছে।
ব্রতীনের হাতে এখন স্টিয়ারিং নেই। ও খুব ফ্রী মুডে আন্টিলোপ ক্যানিয়ন নামাকরণের গল্প শুরু করে।বহু প্রাচীনকালে এখানে আন্টিলোপ মানে গাছের ডালের মত বড়ো বাঁকা শিঙ ওয়ালা হরিণের এক প্রজাতির আস্তানা ছিল। ১৯৪১ সালে স্যুস্সি নামে এক ব্যক্তি প্রথম আরিজোনার পেজ অঞ্চলের উত্তরে কলোরাডো নদীর ওপরে বেড়াতে এসে এই শুষ্ক গিরিখাত ও তার ওপর বিচরণ কারী একদল আন্টিলোপ হরিণ জাতীয় প্রাণী দেখতে পায়। আন্টিলোপ প্রাণীরা এখানে নির্ভাবনায় দলবদ্ধ হয়ে বেড়াতো বলে এই গিরিখাদের নাম আন্টিলোপ ক্যানিয়ন হয়েছিল। তবে হরিণের দল ছাড়াও আরো অনেক প্রজাতির বিভিন্ন পশু পাখি প্রাণীর দল এখানে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াতো। এখন সারা বছর ভ্রমণার্থী মানুষের ভীড় লেগে থাকায় সেই অবলা প্রাণীর দল কে আর তেমন দেখা যায় না। সুন্দরী জেসমিন খিলখিল করে হেসে ব্রতীনে কে বলে ; এবার দেখছি তোমার জন্য আমার গাইডের চাকরিটা হাত ছাড়া হবে।
জেসমিন বলে বন্ধু গণ , আন্টিলোপ ক্যানিয়ানে তোমাদের স্বাগত। - তোমরা জানো , নদীর উচ্চ গতিতে তীব্র নিম্ন ক্ষয়ের ফলে যে সুগভীর উপত্যকার সৃষ্টি হয় তাকে গিরিখাদ বলে। এবং শুস্ক পার্বত্য অঞ্চলে নদীর নিম্ন ক্ষয়ের ফলে সুগভীর ও দীর্ঘ্য নদী উপত্যকাকে ক্যানিয়ন বলে। গিরিখাদ হচ্ছে পাহাড়ের গায়ে বিশালাকারের ফাটল যা দেখেছি আরিজোনা প্রদেশের কলোরাডো নদীর ওপর অতুলনীয় সুন্দর গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে। এ ছাড়াও সেখান থেকে প্রায় ৭৩ মাইল দূরে আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমে আরিজোনার এই পেজ শহরে নাভাহো এলাকায় যে অতীব সৌন্দর্যের প্রতীক এক অবর্ণনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে সেটি আন্টিলোপ ক্যানিয়ন নামে পরিচিত। একটি অত্যাশ্চর্য্য সুন্দর গিরিখাদ। পারভীন বলে শুনেছি এই বিখ্যাত ক্যানিয়নটি খুবই সরু ও সর্পিলাকার।
জেসমিন বলে ঠিক , এই গিরিখাত টি আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত একটি স্লট গিরিখাদ। আরিজোনার এই পেজ অঞ্চলে আদি আমেরিকান ,নাভাজো জাতিদের বসবাস। এখানেই বেলেপাথরের কিছু সুবিশাল স্তম্ভ আর তার চার পাশের অপরূপ দৃশ্যে ভরা এই গিরিখাদটি।পৃথিবীর অন্যতম ভৌগোলিক বিস্ময় Antelope Canyon টি রয়েছে । নাভাজো দের ভাষায় এই অপরূপ গিরিখাদ টিকে দুটি আলাদা দর্শনীয় ক্যানিয়ন করে ভাগ করা আছে। তার একটি ''স্লট ক্যানিয়ন'' যার মানে পাথরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলধারা। আর একটি ভাগ হলো lower Antelope Canyon বা সর্পিল শীলা খিলান।
এসেছি একেবারে Antelope Canyon এর সামনে।এখানে টুকটুকে লাল বেলে পাথরের পাহাড় । হাজার হাজার বছর ধরে জল ও বায়ুর মিলিত কার্য্যের ফলে এই সুগভীর গিরিখাদ টির সৃষ্টি হয়েছে। এর গভীরতা ১২০ ফুট.,এবং চওড়া মাত্র ৩ মিটার। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ানের তুলনায় একেবারে খুবই ছোট। এ ছাড়াও পাহাড়ের এই অঞ্চলে গিরিখাদের সরু অংশের মাধ্যমে উদ্দাম গতিতে বালুকা মিশ্রিত জলের প্রবাহের ফলে বিপজ্জনক ভাবে বিধ্বংসী হড়কাবান ঘন ঘন দেখা দেয়। ফল স্বরূপ প্রবল বেগে বালি মিশ্রিত জল গিরিখাদে র শুষ্ক সরু অংশের মধ্য দিয়ে দুর্বার বেগে ভেঙে চুরে সব ভাসিয়ে নিয়ে বইতে থাকে।
আমরা মনোসংযোগ করে খাদের ভিতরে প্রবেশ করতেই চারদিক দেখে একেবারে মুগ্ধ ,হতবাক হয়ে যাই । ক্যামেরায় ছবি উঠছে। কিন্তু স্বচক্ষে দেখছি আর ভাবছি কী নিখুঁত শিল্প সম্ভার প্রকৃতি দেবী যার স্রষ্টা। মনে হলো ছাদ হীন এক সরু গুহা দেখছি। এই রহস্য ময় শুষ্ক গিরিখাদটি দুই পাহাড়ের দেওয়াল ঘেঁষে সাপের মত এঁকেবেঁকে চলার ভঙ্গিতে বয়ে গিয়েছে । তার দেওয়ালের বিভিন্ন স্তরের ঢেউ খেলানো দাগ রয়েছে। পাহাড়ের দুটো খাড়া দেওয়াল পরস্পরের খুব কাছাকাছি আসলেও তারা ঠিকমত অবশেষে না মেলায় মাঝে সরু ফাঁকের সৃষ্টি হয়েছে। বেলে পাথরে গায়ে জল বালির ঘর্ষণে কত যে চেহারা ও বিভিন্ন আকৃতির রূপের মিল খুঁজে পেলাম তার হিসাব নেই।
মাথার ওপর সূর্য্যের দ্বিপ্রাহরিক আলো তীর্যক ভাবে গুহার লাল পাথরের দেওয়ালে পড়েছে। ঠিক মনে হবে রূপ কথার রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি। জাদুকরের হাতে হঠাৎ কোথা থেকে সোনার দন্ড এলো। আসলে সেই সরু গুহার গায়ে সূর্যের আলো পড়লে এমনি অপরূপ রূপের প্রতিফলন গুহার দেওয়ালে সৃষ্টি হয়। সবাই এমন দৃশ্যে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম । এমন সুন্দর আলো ছায়ার খেলা ও সংমিশ্রণ পৃথিবীর আর কোনো গিরি কন্দরে কোথাও দেখেছি বলে মনে পরে না। পাহাড়ের শৈল্পিক সৌন্দর্যে ভরা গুহায় আলো ছায়ার যে কী বিচিত্র বর্ণময় সাজ তাকে কেমন করে বর্ণনা করি। প্রকৃতি যেন নিজের পরিকল্পনায় গড়েছে এক অনন্য স্বর্গ লোকের সাম্রাজ্য। আমরা দেখতে দেখতে গুহার বাইরে বেরিয়ে এলাম। আমি বলি জেসমিন যা বলছে সব তো ম্যাগাজিনে আজ সকালেই পড়লাম। ইয়াম হেসে ফেলে বলে ,ওরা যারা পড়েনা তাদের জন্য বলছে। আসলে এটা ট্যুর গাইডদের রোজগার। ক্রমশঃ
0 Comments