জ্বলদর্চি

বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত /নির্মল বর্মন

বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত

নির্মল বর্মন

স্বামী বিবেকানন্দের অনুজ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত। বাবা বিশ্বনাথ দত্ত। ৪ সেপ্টেম্বর ১৮৮০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। এন্ট্রান্স পাস করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিদেশ যাত্রা করেন। তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ , ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন ও University of Hamburg থেকে 'সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বে'র উপর গবেষণা করে "ডক্টরেট' উপাধি পান।  সেই সময়ে  মাৎসিনি ও  গ্যারিবল্ডির আদর্শ তাঁর জীবনে গভীর রেখা পাত ঘটে। সমাজতত্ত্ব , নৃতত্ত্ব  , ইতিহাস , সাহিত্য ও  দর্শন ইত্যাদিতে ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত সুপন্ডিত ছিলেন। বাংলা, হিন্দি, জার্মান ও ইংরেজিতে অনেক প্রবন্ধ নিবন্ধ রচনা করে বিশ্ব সাহিত্যে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন অথচ চর্চা নেই বললেই চলে।মহান ব্যক্তিত্ব ২৫ শেষ ডিসেম্বর ১৯৬১ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে নিয়মিত : জ্বলদর্চি। 
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
🍂
প্রাবন্ধিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯০৬ সালে অরবিন্দ ঘোষের সাহায্যে  'সাপ্তাহিক যুগান্তর' এর সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯০৭ এ "সোনার বাঙলা" নামে বেআইনি ইস্তাহার প্রকাশ করে  এক মাসের কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য বার্লিনে সমবেত হয়েছিলেন। ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ঐতিহাসিক বার্লিন কমিটির সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছিলেন। বিপ্লবী বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মস্কতে গিয়েছিলেন। প্রাবন্ধিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, সোভিয়েত নেতা লেলিনের কাছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা পত্র প্রদান করেছিলেন। তিনি শ্রমিক কৃষক আন্দোলনের প্রায় নেতৃত্ব দিতেন। ১৯৩০ এ করাচি কংগ্রেস অধিবেশনে শ্রমিক ও কৃষকদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত প্রস্তাব জহরলাল নেহেরু কে দিয়ে গ্রহণ করান। আইন অমান্য আন্দোলনে কারারুদ্ধ হয়েছিলেন ‌।
  প্রাবন্ধিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত মহোদয়ের প্রকাশিত গ্রন্থ গুলি হল ঃ -  "অপ্রকাশিত রাজনীতিক ইতিহাস"; "যুগসমস্যা"; "তরুণের অভিযান" ;  "জাতিসংগঠন" ;  "যৌবনের সাধনা"; "সাহিত্য প্রগতি"; " ভারতীয় সমাজ পদ্ধতি"( তৃতীয় খন্ড ); "আমার আমেরিকার অভিজ্ঞতা" ; ( তৃতীয় খন্ড ) ; "বৈষ্ণব সাহিত্যে  সমাজতত্ত্ব" ও "বাংলার ইতিহাস"।    
     প্রাবন্ধিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত প্রবন্ধের বিষয় বৈচিত্র্য লক্ষণীয় । সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, বৈষ্ণবসাহিত্য ও শাস্ত্র, মার্কসীয় ভাবনা, নৃতত্ত্ব প্রভৃতি তার প্রবন্ধের মর্মকথা। ১৯৮৩ সালে "দেশ" পত্রিকা ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের "সুবর্ণজয়ন্তী" প্রবন্ধ সংকলনের 'কিংকর্তব্যম' প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছিলেন। ঐতিহ্যবাহী সুচিন্তিত এই প্রবন্ধে
         " 'ভারতীয় জীবনের দ্বন্দ্বভাব'; 'গোলাম মনোবৃত্তি'; বুর্জোয়া দলের আদর্শ' 'বিজ্ঞানের শ্রেণী- স্বার্থ'; ভারতীয় 'বুর্জোয়াদের স্বার্থ' ; "চরমপন্থার আদর্শ", "গান্ধী আন্দোলন"; "গণ - আন্দোলন" ; " কংগ্রেস মনস্তত্ত্ব"; "সাম্যবাদী আন্দোলন" ; "কংগ্রেসি আদর্শ" ;  "সাম্যবাদী দর্শন"; "নতুন প্রভাব" ;  "উপস্থিত প্রয়োজন";  "ততঃ কিম" এভাবেই বিশ্লেষণ করা হয়েছে!
       "কিংকর্তব্যম"প্রবন্ধে সমকালীন পরিস্থিতির  বিচার বিশ্লেষণ করে শূদ্রের উত্থানে ভারত পুনর্জীবন লাভ করবে এই আশা পোষণ করতেন। প্রাবন্ধিক ভূপেন্দ্রনাথ  দত্ত দেশ বিদেশের 'সমাজ ও রাষ্ট্রকে গতিশীল' করার জন্য; ভারতের জাতীয় জীবনে নতুন আলোক প্রাপ্ত কর্মীর প্রয়োজনে ও 'নতুন মৌলিক গবেষকের প্রয়োজনে' তিনি কলম ধরেছিলেন।
      প্রাবন্ধিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত উপযোগবাদীর মতো প্রবন্ধ রচনা করে জাতির ও দেশের উন্নতিতে দর্শন ও ইতিহাসকে কাজে লাগিয়ে পরাধীন ভারতবর্ষের মঙ্গলের জন্য কি করণীয় তা বারবার ভেবেছিলেন। এই গূঢ় ভাবনা চিন্তা ও মনের প্রতিফলন আমরা তাঁর প্রবন্ধ গুলোর মধ্যে পেয়ে থাকি। এক কথায় প্রাবন্ধিক  ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধে যুক্তিনিষ্ঠ মন ,স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি ও সাবলীল ভাষারীতি বিশেষ সম্পদ।

Post a Comment

0 Comments