জ্বলদর্চি

মেঘ সরিয়ে/ স্বপন কুমার দে

মেঘ সরিয়ে
     
স্বপন কুমার দে

আজ নিয়ে পরপর সাতদিন কলেজে আসেনি মানসী। ইতিহাস অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত কলেজে আসা ছাত্রীর এ হেন আচরণে অবাক হতে হয় বৈকি।তবু কারণটা যে কী এবং সেটা কি তাকে নিয়েই তা বুঝতে পারে না অলক।গত ৭ই এপ্রিল তাকে কলেজে শেষবার দেখা গিয়েছিল। ফিজ জমা দিয়ে সটান বাড়ি ফিরবার পথেই অলকের সঙ্গে দেখা।চোখের ইশারায় কাছে ডাকতেই মানসীর চোখ জানিয়ে দিয়েছিল, "প্লিজ অলকদা,আমাকে বিরক্ত করো না।" সবার মাঝে সিন ক্রিয়েট করার মত নির্বোধ নয় অলক। ফিরে গিয়েছিল নিজের ক্লাসে।তারপর মাঝখানে কেটে গেছে কয়েকটা দিন। অনেক চিন্তা করেছে সে,কেনই বা এমন ঘটল। যন্ত্রণা কাতর মনকে বারে বারে বিদ্ধ করেছে সে।কোনও উত্তর পায়নি। আজ তো লজ্জার মাথা খেয়ে থার্ড ইয়ার বাংলা অনার্সের ছাত্র হয়েও সেকেন্ড ইয়ার হিস্ট্রি অনার্সের রুমে গিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফিরে আসতে হল। সেখান থেকে আচ্ছন্নের মতো বেরিয়ে এসে কলেজের মেইন বিল্ডিংসের পিছনের দিকে যেখানে ক্যান্টিন আছে ঠিক তার পূর্ব পাশেই একটা শাল গাছে ঠেস দিয়ে সাত পাঁচ ভাবতে থাকে।--মানুষের জীবনে কেন এমন ঘটে?আট দশ দিন আগেও যে ছিল তার প্রাণের সঙ্গিনী আজ তার এই ব্যবহার কেন? সে কি তাহলে কোনো আঘাত পেয়েছে? যদি পেয়ে থাকে,তবে কার কাছ থেকে এবং কীভাবে? নিজেদের মধ্যে যদি কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে (যদিও তার উপযুক্ত কারণ অলকের জানা নেই),তার কি কোনো সংশোধন নেই? সহসা অলকের মনে হয়,কী নিষ্ঠুর এরা! কীরকম সহজেই সাজানো সম্পর্ককে ভেঙে দিতে পারে।--"অথচ আমি আমার সমস্ত সত্তা দিয়ে মানসীকে ভালোবেসেছিলাম। তার কী মর্যাদা পেলাম আমি?"--সহসা সমবেত নারীকণ্ঠের উচ্চকিত হাস্যধ্বনিতে তার ধ্যান ভাঙে।

অলক ভাবে,তাহলে ওরা কি তাকে দেখেই হাসছে? ওই মেয়েদের মধ্যে কি মানসীর পরিচিত কেউ আছে? হতে পারে। আজ সে সকলের উপহাসের পাত্র। মানসীই তাকে এরকম বানিয়েছে।অথচ তাদের প্রেমের প্রথমটা শুরু হয় আকস্মিকতা দিয়ে।মনে করতে চায় অলক সেসব ঘটনা।

এক বৃষ্টি ভেজা দুপুরে ক্যান্টিনে যাবার জন্য অলক একটি ছাতা মেলে পা বাড়িয়েছে, অমনি একটি মেয়ে বলল,"দাদা,আপনার ছাতায় আমাকে একটু নেবেন?" উত্তরে অলক বলল,"হোয়াই নট্?"
"আমি কিন্তু আপনার ছাতাতেই ফিরে আসবো,"মানসী বলল।
"সে তো আমার সৌভাগ্য ম্যাডাম।"
ব্যস, তারপর পরিচয়, ঘনিষ্টতা, প্রেম।
মনে মনে বলতে থাকে সে," তাহলে আমাদের ভালোবাসার মধ্যে কি কোনো ফাঁকি ছিল?"
"কি গুরু,ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কী ভাবছো?" কতকগুলো ছেলে এসে দাঁড়ায়।
"কে? মা...." কথাটা বলতে গিয়ে থমকে যায় অলক। লজ্জায় আনত চোখে বলে,"ওঃ তোরা। তোরা এখানে?"
"সরি গুরু,আমাদের কারো নামের আদ্যক্ষর 'মা' নয়,--তপন, সুদীপ্ত আর দীপক।আসলে তুই, --" ওদের মধ্যে তপনই কথা বলে। 'থাক্' বাধা দিয়ে অলক বলে,"কিসের ক্লাস ছিল রে?"
"তোর সবচেয়ে প্রিয় বিষয় 'ফোনেটিক্সের'।"
'যাঃ' একটা দীর্ঘনিশ্বাস পড়ে অলকের। "এমন একটা ক্লাস মিস করলাম!"
"কী করেছিস আর কী করিসনি তা নিয়ে ভাবার সময় নেই। এখন কী করবি বল?"তপন বলে।
"কী করবো মানে?"
"মানে,বাড়ি যাবি,না এখানে বসে হায় মানসী,আয় মানসী, বলে ডাক ছাড়বি? সব ক্লাস তো হয়ে গেছে।"
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
সাইকেল স্ট্যান্ড থেকে সাইকেল নিয়ে ওরা উঠে বসল।ওদের মধ্যে অলক আর তপনের একই রাস্তা। সুতরাং ওরা একই সাথে চলতে লাগল। সাইকেলে যেতে যেতেই তপন বলল," দ্যাখ অলক, তোকে প্রথম থেকেই বলেছি ঐ সব মেয়ের পাল্লায় পড়িস না।তুই না জানলেও আমি জানি ওদের মোটিভটা কী।দিন কয়েক একজনের সাথে খুব নাচানাচি করে অন্য কুঞ্জে গিয়ে ভিড়বে। " সামনেই একটা চা দোকান দেখে অলক বলে," আয়,চা খাবি।" দুজনেই সাইকেল থেকে নেমে চা দোকানে ঢুকল।

'শোন,তপন,' -- আস্তে আস্তে অলকই কথা শুরু করে," কে ভালো,কে মন্দ,- একবাক্যে তা বিচারের ভার ঈশ্বর আমাদের দেন নি।হতে পারে,মানসী আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তার মানে এই নয় যে সে খারাপ। মানুষের যে কোনো কাজের সঙ্গে তার পারিপার্শ্বিক, আনুষঙ্গিক এবং হার্দ্যিক বিষয় জড়িয়ে থাকে।তাছাড়া, সে তার দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করছে,আর আমরা আমাদের থেকে।এই সমস্তগুলো এক জায়গায় না বসিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না কোনটা ভালো,কোনটা মন্দ।"
" তাহলে তোর ধারণা,মানসী তোকে ঠকায় নি।"
" আমি তার সঙ্গে দীর্ঘদিন মিশেছি, তাই এক কথায় তার সম্বন্ধে আমি এতটা
রূঢ় হতে পারিনা।"
" কথায় বলে,প্রেমেতে মজিলে মন......" তপন ব্যঙ্গের সুরে কথাটা বলে।
" স্টপ ইট তপন।" রাগে গজরাতে থাকে অলক," দ্যাখ, তোকে লাস্ট একটা কথা বলে দিচ্ছি, ফারদার ওর সম্পর্কে একটা বাজে কথা বলবি না।"
" আমি তোর বন্ধু ,তাই কথাটা বললাম। রাগ করবি জানলে বলতাম না।"
" আমি তোর বন্ধু ঠিকই, কিন্তু তাই বলে তোর সব কথা আমাকে মেনে নিতে হবে ,বন্ধুত্বের এমন সংজ্ঞা আমার জানা নেই। যার সম্পর্কে তোর এতটা অবজ্ঞা সেই মানসীও আমার জীবনে কম কিছু নয়।আজ যদি তোর সম্পর্কে কেউ খারাপ কথা বলে তাহলেও কি মেনে নেব?নেভার। কোনো মানুষকে শ্রদ্ধা করতে না পারিস তাকে ঘৃণা করিস না। চল্ বাড়ি যাওয়া যাক। "

দুটো টিউশন সেরে এসে রাত্রি ন'টার সময় কিছু খেয়ে দেয়ে অলক বাইরে বেরিয়ে পড়ে। কিছুটা দূরে রাস্তার ধারে একটা বড় পুকুর আছে।বাঁধানো সিঁড়ি।চুপিচুপি সিঁড়ির একটা ধাপে গিয়ে বসে।দিনের বেলায় কত নরনারীর কলধ্বনিতে মুখরিত সিঁড়ি ঘাট এখন নির্জন। কদাচিৎ চলন্ত পথচারীদের আলাপ শোনা যায়। আকাশে একাদশীর চাঁদ। তার প্রতিবিম্ব পুকুরের জলে।এই রোমান্টিক আবহাওয়ায় বিষন্ন অলক নিজের মনের সঙ্গে কথা কয়।মনে পড়ে, মানসীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সেই মনোরম বিকেল বেলা। কলেজ শেষে মানসী বলেছিল," চলো অলকদা,কোথাও একটু বেড়িয়ে আসি।" হতভম্ব অলক বলেছিল," এই অবেলায় কোথায় বেড়াবে?" প্রত্যুত্তরে মানসী জানিয়েছিল," শহরের পশ্চিম দিকে একটা খাল আছে।এই রাস্তা ধরে গেলে একটা সেতু দেখতে পাবে।ওখানে গিয়ে একটু বসবো।" তারপর মানসীই পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সত্যিকারের মনোরম জায়গা। সেতুর নীচে খালের স্বচ্ছ জল বয়ে যাচ্ছে। জলে পা ডুবিয়ে একটা পাথরের ওপর দুজনে বসেছিল। হঠাৎ হাত দিয়ে এক আঁজলা জল তুলে মানসী ছিটিয়ে দিল অলকের গায়ে। " আরে কী হচ্ছে কী?" বলে মানসীর হাত দুটি ধরে অলক স্তব্ধ হয়ে গেল। পিছনে লাল সূর্য। তার বঙ্কিম আভা লেগেছে মানসীর মুখে।টিকালো নাক,মুক্তো ঝরানো হাসি,লেবুর কোয়ার মত ঠোঁট, মসৃণ গাল।উঠন্ত যৌবনের সদম্ভ দুটি অমৃত কুম্ভ তাকে ক্ষণিকের জন্য বিহ্বল করে তুলল।খুব দ্রুত তাকে কাছে টেনে নিয়ে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিল অলক। যথা শীঘ্র তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মানসী একদৃষ্টে চেয়ে রইল অলকের দিকে।তারপর বলল," চলো,বাড়ি যাই।"

সেই দুজনের শেষ কথা।আবার অলকের মনে প্রশ্ন জাগে,তবে কি সেই আবেগ বিহ্বল ঘটনাটিই এই বিচ্ছেদের কারণ? কিন্তু তা কেন হবে? সে তো চিরায়ত সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে চেয়েছিল,- চেয়েছিল ওই রকম রোমান্টিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে।এর বেশি কিছু তো চায়নি সে। জ্যোৎস্নারাত্রিতে চাঁদের সৌন্দর্যে মগ্ন হয়ে মানুষ যখন নিজেকে ভুলে যায়,তখন বিষাদগ্রস্ত অলক চুপিসারে বাড়ি ফিরে আসে।

শরীরটাকে মশারির ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে মনে মনে বলে," নাঃ,আজ আর কিছু ভাববো না।একটু ঘুমোতে পারলে হয়।" কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস এমনই যে,কাউকে নিজে থেকে চিন্তা করতে হয় না,চিন্তা আপনা আপনিই মাথার ভিতর  পাক খায়।দংশক কীটের মত হুল ফোটাতে থাকে মনের গোপন প্রকোষ্ঠে। অলক ভাবে,কালই একবার মানসীর সঙ্গে দেখা করা দরকার। আবার ভাবে,মানসী যদি অপমান করে তাড়িয়ে দেয়,প্রায় যেমনটা হয়েছিল সেদিন। 'চিত্রা' সিনেমা হলের গেটের মুখে দাঁড়িয়েছিল মানসীর অপেক্ষায়। মানসী এসেও পড়েছিল তার সামনে।চোখাচোখি হওয়া মাত্রই দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিল বন্ধুদের সাথে। আবার যদি তাই হয়? পরক্ষণেই মনে হয়,হয়তো,অনেকের সঙ্গে ছিল বলেই সে ঐ রকম করেছে।অলকের মনে 'সু' আর 'কু'এর দ্বন্দ্ব চলতে থাকে।'সু' বলে,"কেন, যাকে তুমিএত ভালোবেসেছো তাকে এত ছোট ভাবছো কেন? যদি সত্যিই তার মনে কিছু ক্ষোভ থাকে,তবে তা নিজে থেকেই দূর করো।অন্যের দ্বারা তা সম্ভব নয়।" আবার 'কু' বলে," ভালোবাসা তো একতরফা হয় না।যদি ক্ষোভ থাকে তবে সে নিজে জানাতে আসুক। " অলকের নিদ্রাহীন চোখ দেখে দিনের আলো।

চা-জলখাবার খেয়ে সাইকেল নিয়ে অলক বেরিয়ে পড়ে মানসীর বাড়ির উদ্দেশে।খোঁজ নিয়ে জানতে পারে,মানসী,তার বন্ধু,রমার বাড়ি গেছে।রমার বাড়ি যেতে গেলে মেইন রাস্তার পশ্চিম দিকে যে গলিটাতে যেতে হয়, সেখানে একটা বড় লরি দাঁড়িয়েছিল। মাল নামছে। লরির পাশে যে সরু লোক চলাচলের রাস্তা আছে বড় জোর একসঙ্গে দু'জন মানুষ অথবা একটি সাইকেল পেরোতে পারে।ওপাশ থেকে সাইকেল আসছিল, তাই অলকের দাঁড়িয়ে থাকার পালা।হঠাৎই চোখের সামনে বিদ্যুত খেলে গেল। মানসী সাইকেল নিয়ে এপাশে আসছে।
"মানসী,আজ তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে।আমার সঙ্গে চল।" আর উপেক্ষা করতে পারল না মানসী,তা লোক লজ্জার ভয়েই হোক বা অলকের সঙ্গে শেষবার বোঝাপড়ার জন্যই হোক। অলকের নির্দেশিত পথেই চলল সে।

শহরের এক প্রান্তে একটা পোড়ো মন্দির আছে।তার পিছনে একটি ফাটা চাতালে বসল অলক। বসতে বলল মানসীকে।মানসী দাঁড়িয়ে রইল।কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ। প্রথম কথা বলল মানসী,"কী বলবে বল অলকদা,আমার তাড়া আছে।"
"দ্যাখো মানসী,আজ তোমাকে আমি ডেকে নিয়ে এসেছি কিছু উত্তর পাওয়ার জন্য।"--মনের ভেতরকার অগোছালো কথাগুলোকে যথাসম্ভব গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে অলক। "হয়তো এটাই আমাদের শেষ সাক্ষাত।আর কোনোদিন এমনভাবে কথা বলার সুযোগ থাকবে না। আমি যেটা বলতে চাইছি সেটা হল, আমাদের ভেতর কী এমন ঘটেছে যার জন্য তুমি আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইছো? দোষ যদি আমার থাকে ,বল,আমি তা স্বীকার করে নেবো।কিংবা আমি যদি তোমার উচ্চতর সুখ লাভের পথে কাঁটা বলে মনে হয়,তাও বল,আমি পথ থেকে সরে দাঁড়াবো।কোনোদিন তোমাকে বিরক্ত করবো না।কারণ আমি যাকে ভালোবেসেছি তাকে সর্বাংশে সুখী করাই আমার কাম্য। "
--"সমাধান তো হয়েই গেল অলকদা।তুমি তোমার পথে চল,আমি আমার পথে।আর সুখ--সে তো ঈশ্বরের দান।সেজন্য আমি তোমার কাছে হাত পাতবো কেন?"
"মানসী,ঈশ্বরের দান তো মানুষের হাত দিয়েই মানুষের কাছে পৌঁছায়। তুমি কিন্তু বললে না,আমার কাছে কেন তোমার অ-সুখ।আমাকে দুঃখ দেওয়াই কি সুখ? যদি তাই হয়,তবে তুমি সুখী হও।তবে জেনে রাখো,কারও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়াও দুঃখ।আচ্ছা মানসী,আমাদের মধ্যে কে প্রথম এগিয়ে এসেছিল?"
"সেটাকে সম্বল করেই কি তুমি আমার উপর জোর খাটাতে চাও?একেই কি তোমরা ভালোবাসা বল?সে কি কেবল এক পক্ষের ইন্দ্রিয় সুখ চরিতার্থ করার জন্য? মেয়েদের বুঝি কোনো মান মর্যাদা নেই? তাদের বুঝি মতামত নেই? পুরুষ জাতটাই কি এরকম? তাই কি আজ এই নির্জন জায়গায় ডেকে নিয়ে এসেছো? তারপর সব কাজ মিটে গেলে আমায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে যাবে অন্য কোথাও।... এই.. এইভাবেই..."
"চুপ করো।" কড়া ধমকে চুপ করে মানসী।"এতটা নীচ আমাকে ভাবতে পারো,জানলে আমি কখনোই এখানে ডাকতাম না।ভালোবাসার কতটুকু জেনেছ তুমি? প্রেম জন্মে এই হৃদয়ে।তাকে মজবুত করে শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস। সবই আছে আমার এই বুকে।সেই বুকে তুমি ছুরি বসাতে চাও? তুমি জানো না ,আজ তুমি শুধু আমাকে না,তুমি রক্তাক্ত করলে চিরায়ত প্রেমকে।যাকে আমি ঈশ্বরের দান বলে গ্রহণ করেছিলাম তাকে তুমি ভুলুন্ঠিত করলে।তুমি যাও।আমার আর কোনও কথা নেই।" অলক হাঁপাতে থাকে।"হ্যা,আর একটা কথা,আজ এখানে ডেকে আনার জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। এবার তুমি যাও। "

সহসা মানসীর মনে এ কী হল। হৃদয়ের বন্ধ দুয়ার কী করে খুলে গেল। সে এ কী করল? কাকে আঘাত করেছে? চিৎকার করে ওঠে,"অলকদা,আমি ভুল করেছি।আমাকে ক্ষমা করো।আমি অতীতকে বর্তমানের সঙ্গে এক করে দিয়েছিলাম। আমি ভুল করেছি।"
"কী তোমার অতীত?"
শুনবে? বেশ, তাই শোন।তারপর চির বিদায় দিও আমাকে।" বলেই কিছুটা ধাতস্থ হয়ে শুরু করল,"যৌবনের প্রথম আমন্ত্রণে আমি বাঁধা পড়েছিলাম একজনের ভালোবাসায়।তখন মনে হত সুব্রত না থাকলে আমার জীবনটাই বুঝি অন্ধকার। মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতাম তাকে।কিন্তু তখন বুঝতাম না,সে শুধু আমার শরীরটাকে ভালোবাসে।তাই একদিন ওদের বাড়িতে একা পেয়ে জোর করে আমার সর্বস্ব লুট করে।" সহসা ডুকরে কেঁদে ওঠে মানসী।চাতালের একপাশে বসে পড়ে।খানিক পরে আবার বলে চলে," কিন্তু না, দ্বিতীয়বার তাকে আর কোনো সুযোগ দিইনি। তাই সে আমার এক বান্ধবীকেই পরবর্তী শিকার হিসেবে বেছে নেয়।বুঝলাম প্রেম নয়,ওটা ওর খেলা। একটার পর একটা টার্গেটে সে ছুটে যায়।"

দুজনেই চুপচাপ। পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছে বউ কথা কও পাখিটা ডেকেই চলেছে।দুজনের মাঝখানের নিস্তব্ধতা ভাঙিয়ে একটি টিকটিকি টিক্ টিক্ করে উঠল ভাঙা মন্দিরের দেওয়ালে।
"অলকদা,তোমাকে আমি ভুল বুঝেছিলাম, তার শাস্তি আমি পাচ্ছি।তীব্র অন্তর্দাহে পুড়ে মরছি। যাক্ আমার ঘৃণ্য জীবনের কথা বলে ভালোই হল। তুমি আমার কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে গেলে।আমার জীবনের দুঃখের ভার আমি একাই বয়ে বেড়াবো।তুমি সুখী হও। "
" দাঁড়াও মানসী। যদি তুমি এই কারণেই আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাও,তাহলে আমি নিজের কাছে খুব ছোট হয়ে যাবো।কাপুরুষ তারই,যারা সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পায়। তুমি তো কোনও দোষ করো নি। দোষ করেছে সেই স্কাউন্ড্রেল, যে তোমার প্রেমকে হত্যা করেছে। সত্যের পথে চলে আর কিছু না হোক, তুমি নিজের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলে।জয় হলো ভালোবাসার। চল।"
অলক যাবার জন্য পা বাড়ায়।ডান হাতটা বাড়িয়ে দেয় মানসীর দিকে।মানসী উঠে দাঁড়ায় তাকে ভর দিয়ে।নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।তারপর অলকের বুকে মাথা রেখে বলে,"অলকদা,তুমি আমাকে ছেড়ে কখনও যাবে না, বলো।"

Post a Comment

1 Comments

  1. AnonymousJune 10, 2023

    বেশ সুন্দর একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প পড়লাম। মধুরেণ সমাপয়েৎ । তবে অলকের মুখে প্রথমে একটি ছোট্ট ইংরেজি সংলাপ ছিল, আমার মনে হয় বাংলাতে রাখলে আরো ভালো লাগত। বিশেষত মানসী যখন বাংলায় বলছে, উত্তর বাংলা অনার্সের ছাত্রের কাছে থেকে বাংলা উপযুক্ত হত। সবমিলিয়ে ভালো। ( গৌতম বাড়ই)

    ReplyDelete