কালের অতল তলে কলোরাডো-৭
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
রাত গভীর। দেওয়াল জোড়া কাঁচের জানলার গাঢ় নীলপর্দা সরিয়ে সেখানেই একাকী অন্ধকারে বসে আছি। বরফাবৃত পাহাড়ের শুভ্র শৈল শীর্ষে কাঁসার থালার মত গোল চাঁদ নিষ্প্রভ ,পান্ডুর । চন্দ্রিমার আলো থাকলেও পাহাড়ের এ রাত তবু ও জোৎস্না ভেজা নয়। শৈল উপত্যকায় প্রকৃতির স্নেহধন্যা এ শহর কৃত্রিম আলোর জোয়ারে ভেসে উৎসবে মেতেছে । লাল, নীল ,হলুদ সবুজ কত রঙের বাহারী led lamp এর ঝিকিমিকি উজ্জলতায় হাজার হাজার চুনী পান্নার পাথর দিয়ে গাঁথা নেকলেসে সেজেছে রাতের রানী আস্পেন। অভিমানী চাঁদের মুখে হালকা মেঘের কালোবরণ ওড়নার আড়াল। দূর নভনীলে কুয়াশায় ঢাকা অবাধ্য তারাদের দল ও মেঘের শাসনে মুখ দেখায় নি। শীত ৪ ডিগ্রির কাছে হলেও ,আবহাওয়া রিপোর্টে তুষার পাতের সম্ভাবনা নেই বলেই হয়তো পাহাড় বাসী সবাই এক সাথে জড়ো হয়েছে আনন্দ যজ্ঞে। বিদেশের বহু জায়গায় বেড়াতে গিয়ে দেখেছি , শহর বাসীরা রাস্তার ধারে স্কয়ার মত জায়গায় খোলা চত্বরে পছন্দমত অর্কেস্ট্রা পার্টি নিয়ে ওপেন এয়ার কনসার্ট ফাংশনে মেতে ওঠে। বরফে ঢাকা বৈচিত্র্য হীন পাহাড়ি জীবনে ক্লাব কালচারে আস্পেন মাউন্টেন ও আজ প্রমোদ সাগরে ভেসে তেমনি উৎসবের আয়োজনে মেতেছে। মিউজিক বাজছে,বাজি পুড়ছে। সান্ধ্য আকাশে আলোর ফুলকি। আমার ''ইয়ং এডভেঞ্চারের দল '' স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে যোগ দিতে চলে গিয়েছে সেখানে। ইয়ম ,পারভীন অর্কেস্ট্রার সাথে তাল মিলিয়ে ঘরেই নাচ শুরু করেছিল। আলোকময় আস্পেন নগরীর সাথে আকাশের নিষ্প্রভ অভিমানী চাঁদ দুইয়ের টানাপোড়নে আমার চোখের পাতায় ঘুম জড়িয়ে আসছে। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ঘোরের মধ্যে উপত্যকা পেরিয়ে বন পাহাড় নদী ঝর্ণার ধারায় ভেসে একেবারে স্বপ্নের জগতে। সেই প্রত্যুষায় আকাশ রাঙিয়ে সূর্য ওঠার আগেই অজস্র অজানা পাখিদের প্রলাপ শুরু হলে আমার ঘুম ও চোখ থেকে উধাও, দেখি শান্তিতে ঘুমায় শহর। রাতের হুল্লোড় থেমে গিয়ে নিস্তব্ধ শান্ত পাহাড়। এতো মানুষের জমায়েত ,প্রতিদিন এতো ট্যুরিস্টের যাতায়াত অথচ কোথাও দেখিনা কোনো আবর্জনা জমে আছে। পরিবেশ এত টুকু মলিন বা হত শ্রী। সব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছবির মত সুন্দর। প্রকৃতির যা কিছু সম্পদ মার্কিন দেশের মানুষ তাকে আগলে রাখে ,শ্রদ্ধা করে ও ভালোবাসে। 6th march--- ক্যালেন্ডারে তারিখ দেখে অবাক হই। কেমন করে ঝড়ের গতিতে সময় কেটে গেলো। এর মধ্যে অবকাশ পেলেই পাহাড়ের কাছে র ছোট্ট গ্রাম গুলো ঘুরতে গিয়েছি । এখানে খুব সাধারণ জীবন। যদি ও সব রকম আধুনিক সামগ্রী ব্যবহারে ওরা বেশ অভ্যস্ত। তবু ও বছরের বেশীর ভাগ সময়ে স্তূপীকৃত জমা বরফের সাথেই সংগ্রাম করে এদের প্রতিদিনের জীবন যাত্রা । চাষ আবাদের ক্ষেত দেখিনি এমন বরফস্নাত ভূমিতে ফলন সম্ভব নয় । তবে এখানের বাসিন্দাদের কাছে শুনেছি কলোরাডো প্রকৃতির এই তীর্থ ক্ষেত্রে বারোমাস ভ্রমণার্থীর আসা যাওয়া লেগেই থাকে। হাইকার ,বাইকার এবং স্কীয়ার ক্যাম্প গুলো আছে বলে ঘর ভাড়া দিয়ে রেস্তোরাঁ খুলে আর্থিক উন্নতির সাধন এদের উপার্জনের এক প্রশস্ত উপায়।
সেদিন আইসপার্কে আলাপ হয়েছিল মোটেলের বারে ,নাইট ক্লাবের নৃত্য গীত শিল্পী ব্রাজিলিয়ান মেয়ে এম্প্রেসের সাথে। মিনিট ১৬ র মত হেঁটে পারভিনের প্রজেক্টের কাজের এরিয়ায় এক পাহাড়ি হ্যামলেটে এ পৌঁছে ছিলাম। রাস্তা ময় থিকথিক করছে বরফ পায়ে চলার পথ টি এক বিশালদেহী মহিলা বেলচা হাতে সাফ করছিল। আমি সামনে এসে পড়ায় যত বরফ ছিটকে এসে লাগে আমার গায়ে মাথায়। উত্তেজিত পারভীন চেচিয়ে উঠেছে কি !, হচ্ছে টা কি ? আমি কয়েক সেকেন্ড হতবাক ! তারপর হো হো করে হেসে উঠি। আরে এ যে আমার চেনা ,এম্প্রেস। ওর মুখ দিয়ে তখন সরির বন্যা বইছে। আমি ততক্ষণে ওর বন্ধু হয়ে গিয়েছি , হাত ধরে কাছেই ওর ঘরে নিয়ে এসে ড্রায়ার দিয়ে বরফ কণা শুকিয়ে দিলে আমিও উষ্ণতায় বেশ আরাম পেলাম। বিরাট ভারী চেহারা প্রায় সাড়ে ছয় ফুটের ওপর লম্বা মিশমিশে কালো গোল মুখে ক্যাটস আই ,জ্বলজ্বল করছে। মাথার চুলে সরু সরু বিছের মত ঝুলছে অন্ততঃ শত খানেক টিক্কির মত বিনুনী । আশ্চর্য্য হয়ে ভাবছি চুলে এতো বিনুনী কেমন করে বাঁধে? পরে জেনেছি চুল বাঁধার এই স্টাইল টা কে ব্রেইড বলে,যা ওদের সব চেয়ে পছন্দের। পার্লারে গিয়ে একবার ডলার খরচা করে ব্রেইড বেঁধে এলে সহজে খোলে না। ওর গায়ে সবুজে মেরুনে মেশানো সোনালী জরির সূতোর কাজ করা লম্বা কোটে সিল্কের দড়ি ঝুলছে। পরনে তুঁতে নীল ট্রাউজার। আমি ওর কোমড়ের কাছে। ঘাড় উঁচু করে কথা বলি । দুজনের কেউ কারো ভাষা বুঝি না। আমি চেষ্টা করে বেশ কয়েক লাইন ইংরেজি ঠোঁটের গোড়ায় গুছিয়ে নিয়ে বলছি বটে তবে সে বলছে তার মাতৃ ভাষায়। দুজনেই অবশেষে আকারে ইঙ্গিতে মনের ভাবাবেগ প্রকাশ করছি। আমার ভাঙা ইংরেজি এবং ওর দুর্বোধ্য ব্রাজিলিয়ান ইংরেজিতে আলাপ চলছে । ৪৭ বছরের এম্প্রেস ওর পুরোনো সংসারের স্মৃতি ভুলে গিয়ে নতুন বাঁচার পথ আঁকড়ে ধরে আপাততঃ বেশ সুখেই আছে। ওর এখনকার বয় ফ্রেন্ড জাভেদ ৪০ বছর বয়সী ,দক্ষ এক স্কী প্রস্তুত কারক ।
দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে নিয়মিত : জ্বলদর্চি।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
🍂
এম্প্রেস গর্ব করে বলে আস্পেনের মাউন্ট এরিয়ার ক্লাবে ব্যবহৃত স্কী গুলো বেশী টাই জাভেদের তৈরী। ওর স্ব উপার্জনে বানানো কাঠের ঘর গুলো ভাড়া দিয়ে আর হোটেলের বারে নেচে গেয়ে ওদের দিন দিব্যি চলে যায়। গ্রীষ্মে হ্রদের বরফ গলে ,জাভেদ একাকী মাছ ধরতে,যায় তখন রেস্তোরাঁয় মাছের যোগান দিয়ে আরো স্বচ্ছল চলে। আমি ছেলে মেয়েদের সাথে বেড়াতে এসেছি শুনে ওর চক্ষু ছানাবড়া। বিস্মিত! চোখের কোণে জল টলটল। কান্না ভেজা গলায় বলে ''আমার তিন টি ছেলে মেয়ে .জনি ,টোকি ,লুই। এই কাছে পিঠেই থাকে ,চার বছর কোনো সম্পর্ক নেই.। কেউ খোঁজ রাখে না। তারা সবাই ভালো আছে এবং প্রতিষ্ঠিত। তোমরা ইন্ডিয়ানরা খুব লাকী ,সন্তান যত দূরেই থাকে তার সঙ্গে সময় কাটাতে পারো। ''
ভাবছি ঠিকঠাক ভাষা না বলতে জানলেও এ ভাবেই বিনা ভাষায় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিছুটা সময় কাটিয়ে যখন উঠতে যাচ্ছি , অতিথি কে সম্মান জানিয়ে এম্প্রেস এক সুদৃশ্য কাঁচের পান পাত্রে মোলাসেস আদা আঙ্গুর ভাত ইত্যাদি দিয়ে তৈরী এক নিষিদ্ধ ঘরোয়া তরল পানীয় আমাকে পান করতে দিয়েছিল। ভাবছি কি কান্ড ,সৌজন্য দেখাতে গিয়ে মহা বিপদ পড়বো যে। দিনে দুপুরে এ হেন পানের চক্করে পড়লে ভারী মুশকিল ,চট করে মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলি '' মোলাসেস আদা আঙুরে '' ওরে বাবাঃ এক্ষুণি শ্বাস কষ্ট শুরু হবে ; আমার ভয়ানক এলার্জি আছে। এম্প্রেস কি বুঝলো ঐ জানে। দ্বিতীয় বার আমাকে আর অনুরোধ করেনি। ওর বাড়ির গলি পথ ছাড়িয়ে এসে পিছন ফিরে দেখি ওই দীর্ঘ্য দেহী রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে। ওর বিশাল ভয়ঙ্কর চেহারার আড়ালে অমন সারল্য ময় সুন্দর ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছিল।
ব্রতীন দের অফিসিয়াল ট্যুর আজ শেষ। ফেরারি মনের এবার ঘরে ফেরার পালা। এখন যে যার তল্পি তল্পা গুটিয়ে গাড়ি বোঝাই করছি। ভোরের সূর্য কে প্রণাম জানিয়ে সেই সাত সকালেই ঘর ছাড়ার দল আবার পথের টানে বেরিয়েছি। এই বিশাল রাজ্য কলোরাডো ঘিরে কত নতুন দেখার জায়গা , নতুন পথ পরিক্রমায় ভরে চলেছি সঞ্চয়ের ঝুলি। পারভীন বলে ,মাউন্ট ইভান্স ,লিটিলবেডলি কলোরাডো ,গার্ডেন অবদিগডস ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাস সাফায়ার পয়েন্ট ফোর কর্ণার মনুমেন্ট , ডেনভার ইত্যাদি কত দেখার জায়গা রয়েছে দেখার ; আসার আগে প্ল্যান করেছিলাম। আমরা সেখানে যাবো তো ?
অতনু , ব্রতীন মাথা নেড়ে বলে অসম্ভব,এবার হবে না রে । ছুটি ও বাজেট দুটোতেই চরম টান পড়ছে । আস্পেন সিটি কে বিদায় জানিয়ে বরফের রাজ্য থেকে পাহাড়ের গায়ে পাক খেয়ে ধীরে ধীরে এসে পৌঁছলাম বেসাল্ট টাউনে। লাল পাথরের ধূলো উড়ছে সারা রাস্তায় । অতনু বলে, ধূসর বেসাল্ট লৌহ আকর। ডিনামাইট দিয়ে পাহাড় ভেঙে রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে দেখলাম ,তারই লাল ধূলো বাতাসে উড়ছে। ধু ধু নির্জন কালো পাহাড়ি পথে ভ্রমণ পিয়াসী দের গাড়ি গুলো হাওয়ায় তরঙ্গ তুলে সুদূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। এখানেই কিছুটা এগিয়ে গেলে সমুদ্র তল থেকে ১২,০৯৫ ফুট উঁচুতে আছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাস। সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা মনোরম এই পথ টি আস্পেন এবং টুইনলেকের মাঝ বরাবর দিয়ে সোজা চলে গিয়ে উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ একটি মহাদেশীয় বিভাজনের উপর দিয়ে ঘুরে গিয়েছে। প্রকৃতির নিজের হাতে সাজানো এ উদ্যান টির পাশ দিয়ে যাবার সময় ব্রতীন কে গাড়ি থামাতে নির্দেশ দিলাম। 'সবুজে ধূসরে মিলে একাকার পাহাড়ের গায়ে মেঘমুক্ত নীলাম্বরী আকাশ গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শুধুই ছবি তুলে ক্যামেরার গ্যালারী ভরে ফেলেছি। মন মাতাল করা এই প্রাকৃতিক লীলা ভূমি ছেড়ে এক পা নড়তে কেউ রাজী নই। দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে লাঠিতে ভর দিয়ে হাইকারের দল। আর কিছুটা পথ এগোলেই আমরা গ্লেনউড স্প্রিংস এ পৌঁছে যাচ্ছি। ইয়ম অতনু কে বলে ,তখন কোনো তাড়া দিলে চলবে না। সেখানে অনেকটা সময় হটস্প্রিঙে ইচ্ছে মত সময় কাটাতে চাই । অতনু হেসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে , অবশ্যই ,তোর ইচ্ছে মতই সময় কাটাস। পাশ দিয়ে কলকল শব্দে তরঙ্গিণী তটিনীর মত কলোরাডোর শাখা নদী বয়ে চলেছে। যে দিকে তাকাই রুক্ষ পাথুরে পাহাড় লাল নীল সাদা কালো বিচিত্র রঙের সৌন্দর্য নিয়ে উদ্ধত মাথা তুলে আকাশের গায়ে হেলে আছে। কলোরাডোস ল্যান্ড অফ ওয়াটারের রাজ্য গ্লেনউড সিটি। পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত বিশাল গরম জলের ঝর্ণা ধারা পাথুরে মাটির তল থেকে Geothermal attraction এ উৎসারিত হটস্প্রিং বা প্রস্রবণের ছোট্ট শহর গ্লেনউড রিসোর্টস পর্যটকদের মনের মত সাজানো । ভ্রমণার্থী পথিকের দলএখানে প্রাকৃতিক উষ্ণ ঝর্ণায় steam bath ও hot bath নিতে প্রবল উৎসাহী হয়ে ছুটি কাটিয়ে যায়। আশ্চর্য্য হয়ে ভাবি ,আজ ভোরের বেলায় ছিলাম বরফের রাজ্যে এখন আবার উষ্ণ প্রস্রবণের ধারায়। ব্রতীন বলে ,গতবারে আরকানসাসে দেখেছিলাম এমনি এক উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে সবাই গ্যালন গ্যালন মিনারেল ওয়াটার সংগ্রহ করে নিচ্ছে। ওদের বিশ্বাস এই মিনারেল ওয়াটার পান করলে শরীর সুস্থ থাকবে। এসে দাঁড়ালাম সবুজের গায়ে মেরুন রঙের ছোঁয়ায় মিশে একাকার যেন রঙ তুলি দিয়ে কোলাজ করা ছোট্ট ছোট্ট পাহাড়ের সারির পায়ের তলে।এখানে উষ্ণ জলের প্রস্রবণে ওরা চার জনই প্রবল উৎসাহে সুইম স্যুটে তৈরী হয়ে জলে নেমে গিয়েছে। এখানে প্রায় ১৭টা পুল আছে ,সব পুল গুলোতেই ভ্রমণার্থীরা কিছুটা সময় হট বাথের আনন্দ নেবে । কেউ আবার পাহাড়ের গুহাতে ঢুকে steam bath নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। অবাক লাগছে ভাবতে।এই বিস্তীর্ণ উদার প্রকৃতি নিজেকে উম্মুক্ত করে দিয়েছে তার অমূল্য রতনের খনি মানুষের হাতে তুলে দিয়ে। কত যে বিস্ময় বিশ্বপ্রকৃতি তার আঁচলের আড়ালে গোপন করে রেখেছে ,আর মানুষ তা সাধ্যমত উপভোগ করছে নিত্য দিন। এক স্বচ্ছ জলের খরস্রোতা নদীতে ইয়ংছেলে মেয়েরা দুই পাশে সাদা ফেনার ঢেউ তুলে রাফটিং করছে। ওরা ভয় পায় না ,বাঁধা মানে না ,প্রাণ চঞ্চল যৌবনের দূত। আমার ইয়ংদল ও প্রায় ঘন্টা দুই গরম জলস্রোতে কাটিয়ে দিলো। সবাই ক্ষুধার্থ। এখানে অনেক রেস্তোরাঁ আছে কিন্তু ব্রতীনের মাথায় ঘুরছে নতুন খেয়াল। নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে , বন্ধুগণ জানি এখন তোমাদের লাঞ্চ টাইম ,তোমরা ভীষণ রকম ক্ষুধার্থ ও তৃষিত। কিন্তু এই মূহুর্তে আমি তোমাদের নিয়ে চলেছি আর এক বিস্ময়ের জগতে রাইফেলের সংগ্রহ শালায়। আমি প্রচন্ড রেগে যাই বলি after lunch সেখানে গেলে কি ক্ষতি ছিল ? আমার সাথে পারভীন ইয়ম ও একমত ওরা কেউ রাজী নয়। মিনিট দশ ও হয়নি এক পার্কিং লটে গাড়ি থামলো। আমি বলি হায় ভগবান ! এযে একটি রেস্তোরাঁ ,খাবারের জায়গা। রাইফেল বলেছিলি যে? ব্রতীন বলে, ওপরের দিকে তাকাও ,কলোরাডোর এ শহরের নাম টা Rifle . আর রেস্তোরাঁর নাম Shooters Grill ,,এখানেই আমরা লাঞ্চ করবো। অবাক হয়ে দেখি,রেস্তোরাঁর নাম -- লাল অক্ষরে জ্বলজ্বল করছে Shooters Grill। ওখানে টেবিল বুক করে বসেছি। মেনু কার্ড খুলে দেখি খাবারের ডিশ গুলোর নাম ও অদ্ভুত m16 burrito , six shooter Omelette ,derringer breakfast bowl ইত্যাদি সব খাদ্য তালিকা। তার যেমন চোখ ধাঁধানো রূপ ,তেমনি নাম সব রাইফেল সম্পর্কিত। এমন কি সেখানে এমপ্লয়ীদের পোশাক রাইফেল ধারীদের মত। আমরা অবাক , ব্রতীন বলে এখানেও এক গল্প আছে। যিনি এই রেস্তোরাঁর মালিকীন,তিনি Lady Lauren Boebert একজন পলিটিক্যাল লিডার। 1776 সালে আমেরিকার স্বাধীনতার পর তার সংবিধানে Second amendment /Article 2A অনুযায়ী লেখা ছিল গণতন্ত্রের অধিকার বজায় রাখতে সকল নাগরিকের কাছে Rifle থাকা আবশ্যক। যাতে জনগণ তার রাষ্ট্রীয় প্রাপ্য অধিকার থেকে সরকার দ্বারা বঞ্চিত হলে আত্মরক্ষার্থে প্রতিবাদ জানাতে পারে। ফলত নাগরিকের সবার হাতে বন্দুক উঠে আসায় ক্রমশ সরকার বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে এই আইন রোধ করতে চাইলে বিরোধী পক্ষের লিডাররা জনগণের হয়ে আন্দোলন চালায়। তারই প্রতিবাদের সিম্বল হিসেবে এই রাইফেল সিটি। এবং Lady leader তিনি ও খাবারের নাম সহ রেস্তোরাঁর নাম রাখলেন Shooters Grill। ঐ Rifle এর সাথে মিলিয়ে । তবে খাবার গুলো ভারী সুস্বাদু এবং সবই আমাদের চেনা। শুধু নাম গুলোই ছিল অপরিচিত। গল্প শুনে মজার ভোজন পর্ব শেষ হলে আবার পাড়ি দিলাম ''অন্য কোথাও অন্য কোনো খানে।''
0 Comments