কালের অতল তলে কলোরাডো
পর্ব ৮
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
''যে পথ সকল দেশ পারায়ে উদাস হয়ে যায় হারায়ে
সে পথ বেয়ে কাঙাল পরাণ যেতে চায় কোন্ অচিন পুরে--
-দূরে কোথায় দূরে দূরে---আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে --ঘুরে --"
অতনু একমনে গাড়ির জানলায় মাথা রেখে নির্ভুল উচ্চারণে ওর মিষ্টি সুরেলা গলায় রবীন্দ্রসংগীত গাইছিল ।
আমি গলা মেলাই ''যে বাঁশিতে বাতাস কাঁদে সেই বাঁশিটির সুরে সুরে। দূরে কোথায় দূরে দূরে-''--
---গান জমে উঠেছে। পারভীন ও গুনগুন সুরে গাইছে। ইয়ম ও শুনছে ,জানি,খানিক পরেই সুরটা ওর মাউথর্গানে নির্ভুল বেজে উঠবে। কথা না জানলে ও এ গানের সুর হৃদয় স্পর্শ করে যায়। দেশ কালের সীমা ছাড়িয়ে তার আবেদন বড়ো মর্মস্পর্শী। সুরের মূর্ছনায় উদাসী পথিক এগিয়ে চলে উদাস পথের ডাকে। অতৃপ্ত আত্মার মত তাকিয়ে থাকি নতুন পথের ঠিকানায়। দূরান্তরে মিলিয়ে যেতে যেতে অন্তবিহীন এ পথ বলে - চলো- চলো-চলো।
অবর্ণনীয় সৌন্দর্যে ভরা আমেরিকার যত ,রাজপথ জনপথ , গলিপথ নিটোল পরিপাটি। পথের বিবরণ কলোরাডোর ভ্রমণের বৃত্তান্তের শুরুতেই অনেক বার লিখেছি ।এখোনো কত রহস্য প্রতি টা পথের বাঁকে অপেক্ষা করে আছে।ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ি লস -গ্যাটস ফেরার আনন্দে মশগুল হয়ে আছি । পাড়ি দিতে হবে আরো তিন দিনের পথ। কিন্তু ব্রতীন কথা দিয়েছিল ,ফেরার সময় ইউটার আরিজোনা Grand junction Colorado Monument , Arches national park. আরো কত দেখার জায়গা আছে। সব জায়গা গুলো দেখবো।
দুই বছর আগে ,সেবার যখন ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্পবেলে এসে ছিলাম , প্রতিবেশী সিডের গ্র্যান্ডপা চলমান বিশ্বকোষ হ্যারি সাহেবের সান্ধ্য কফির আড্ডায় এই কলোরাডোর গল্পে তিনি বলেছিলেন ,স্প্যানিশ ভাষায় কলোরাডো মানে রঙিন লাল বা রডি। এই রাজ্যের লাল পাহাড় ,লাল বর্ণের মাটি তাই স্প্যানিশরা এর আদুরে নামকরণ করেছিল ''কলোরাডো। '' ভাবছি নাম টা সম্পূর্ণ সার্থক। এমন সুউচ্চ লাল বা গোলাপী পাথরের পাহাড়, বন ,গিরিখাত আদিম হ্রদ সহ অত্যাশ্চর্য্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভান্ডার এই রাজ্য টি। তখন কল্পনায় মনের মাঝে যে ছবি এঁকেছিলাম আজ তার থেকেও হাজার গুণ সুন্দর হয়ে সে বাস্তবে আমার সামনে ধরা দিয়েছে।
পৌঁছলাম কাইবাব ন্যাশানাল ফরেস্টে। দুই পাশে যতদূর দৃষ্টি যায় মাঝারি সাইজের সবুজ গাছ গুলো ঘন ডালপালা মেলে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবুজের রাজত্বে মানুষের অবাধ বিচরণ-- বন পর্ব শেষ হলেই শুরু হলো লাল পাথরের পাহাড়ের সারি। আমার পশ্চিম বঙ্গের মেদিনীপুরের গড়বেতায় শিলাবতী নদীর ধারে সৃষ্টি গনগনির আগুনে লাল ক্যানিয়ান কে মনে হলো যেন এর মিনি সংস্করণ। কাইবাব ন্যাশানাল ফরেষ্টের সীমানা পেরিয়ে কোলমাইন ক্যানিয়ান ,গ্রীন রিভার পার হয়ে আরিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ান ন্যাশানাল পার্কে চলেছি। গ্লেনউড স্প্রিং টাউনের অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের রেশ চোখের পাতায় এখোনো স্থির হয়ে আছে। উষ্ণ প্রস্রবণে সিক্ত হয়ে রাইফেল টাউনের অত্যাশ্চর্য্য লাঞ্চ আর গল্পে মোহিত হয়ে আমাদের আবার পথ চলা শুরু হলো। কত রকম সবুজ ক্যাকটাসে ছেয়ে আছে পাহাড়ের রুক্ষ মাটির উঁচুনীচু টিলা গুলো। তারই গায়ে ছোট ছোট বসতি , মানুষের ঘর বাড়ি। শহরের কোলাহল ছেড়ে ভ্রমণ বিলাসী প্রকৃতি প্রেমিকের রুক্ষ মরুভূমির ও দূরের পাহাড়ের নির্জনতা উপভোগ করার জন্য যেন এক আদর্শ পরিবেশ।
🍂 কলোরাডো এখন মুখর প্রাণবন্ত ,উল্লাসে মেতে ছলছল কলরোলে পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে। অতনু বলে ,গত দুদিন পাহাড়ের এই সব অঞ্চল লাগাতার বৃষ্টিতে ভিজেছে ,আকাশে তাই সাদা মেঘে বাহারে নীলাভ সামিয়ানা । নদী কেমন উতলা , ভরা যুবতীর মত প্রগলভা হয়ে মিলনের অভিসারে চলেছে। মহান পর্বতেরা বৃষ্টির জলে ধুয়ে টুকটুকে রক্তিম বর্ণে সেজে প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে। কতক্ষণে সুন্দরী কলোরাডো ঝাঁপিয়ে পড়বে তার পদপ্রান্তে।সারা পার্ক জুড়ে বিশাল এই গিরিখাতে নদী পাহাড়ের এমন মিলন যেখানে নিরন্তর সৃষ্টি করে চলেছে এক অনুপম স্বর্গীয় সৌন্দর্য। ওর নির্বিকার ভাবে উচ্চারিত এমন শুদ্ধ বাংলা শব্দ শুনে আমি হেসে আকুল। ব্রতীন হো হো করে হেসে বলে এ ছেলের তো দেখছি মতি গতি ঠিক নেই, ; বেশ কাব্যিক উন্নতি হয়েছে। আমি ভাবছি বাঃ বেশ তো ! ,এ যে আমারই মনের কথা। চমৎকার সাজিয়ে বলে দিলো।
ধূসর পাহাড়ের অসীম নীরবতার সাথে ঢালা ও রাস্তার চড়াই উৎরাই বেয়ে গাড়ি উঠছে নামছে। লাঞ্চের পর গাড়ির দুলুনিতে চোখে ভাত ঘুম নেমে আসে। ইয়ম হাত ধরে সজোরে নাড়া দিয়ে বলে , দেখো আমরা গ্লেনউড ক্যানিয়াল কখন পার হয়ে কোথায় এসেছি। আঙ্গুল দিয়ে দিক নির্দেশ করে বলে ''ঐ যে একটু দূরেই গ্র্যান্ড জংশন দেখা যাচ্ছে । তাকিয়ে দেখো কী অপূর্ব দৃশ্য ''। তামাটে ,লাল ,নীলাভ কত রঙের মিশ্রনে পাথুরে পাহাড়ের কী অপরূপ মনোরম শোভা ! আমার ভাবনাকে মাতিয়ে তুলেছে এই অনির্বচনীয় সৃষ্টির ঐশ্বর্য্য। পৃথিবীর অত্যাশ্চর্য্য এক লীলা ভূমি আরিজোনার সর্বোচ্চ গিরিখাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে পৌঁছলাম।
গাড়ি পাকিং জোনে রেখে টিকিট কেটে আস্তে আস্তে চলেছি ভিউ পয়েন্টের দিকে। যেদিকে তাকাই সর্বত্র সৌম্য দর্শন জটাজুট ধারী ধ্যানস্থ ঋষির মত মনোমুগ্ধ কর পাহাড় ,সুগভীর খাদ গুলো স্তরে স্তরে বিভিন্ন রূপ নিয়ে ভূগর্ভের নীচের দিকে শেষ প্রান্তে নেমে গিয়েছে। কোথাও দুই পাহাড়ের গোলাপী পাথুরে দেওয়ালের মাঝখান দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এই গভীর গিরিখাতের । চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে শুধুই দেখে চলেছি , অনন্ত কাল ধরে আকাশের বুকে মাথা রেখে একই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সেই স্থির নিশ্চল নির্বাক রুক্ষ অচলায়তনের সৌন্দর্য।
পারভীন বলে জানো ,ভূবিজ্ঞানী দের মতে '' আগামী দুই মিলিয়ন বছর পরে এ গিরিখাত আরও অনেক বেশী বৃদ্ধি পাবে। টেকটনিক প্লেট গুলো ভূ অভ্যন্তরের উত্তপ্ত ও গলিত ম্যাগমার উপরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। এ গুলোর স্থান পরিবর্তনের ফলেই তৈরী হয়েছে মহাদেশ ও মহাসাগর। এবং এইসব প্লেট গুলো সর্বদাই পরিবর্তিত হচ্ছে। ভূতত্ত্ববিদেরা এখোনো রিসার্চ করে চলেছেন। ওদের মতে ৫থেকে ৬ মিলিয়ন বছর ধরে কলোরাডো নদী এই গতিপথ প্রতিষ্ঠা করেছিল। ইতিহাস ও ভূতাত্ত্বিক প্রমান বলে ,প্রায় সতেরো মিলিয়ন বছর আগে অগ্নুৎপাত এবং ভূমিকম্প প্রাকৃতিক বিশাল বিপর্যয় ঝড়ঝঞ্জার কারণে উন্মত্ত কলোরাডো নদীর পাগল পারা প্রবাহে ভাঙন শুরু হয়ে এই গভীর গিরিখাতের সৃষ্টি হয়েছিল। ''
আমার ''ইয়ং দলের '' পারভীন মহাখুশী হয়ে গাইডের ভূমিকা নিয়েছে । ও সুবক্তা , ওর কথা শুনে মুগ্ধ হই। ও বলে ,এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গিরিখাদ টি পৃথিবীর প্রায় ২০০ কোটি বছরের এক অনবদ্য শোভায় সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক অবিনশ্বর সৃষ্টি। যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা অঙ্গ রাজ্যের একটি অসম্ভব সুন্দর গিরিখাত। প্রকৃতিদেবীর আপন হাতে নির্মিত যে সব বিস্ময় মানুষ কে যুগে যুগে বিস্মিত করেছে তার একটি নীরব সাক্ষী এই নয়ানাভিরাম ক্যানিয়ন পার্ক টি। এই গিরিখাতের মধ্য দিয়ে কলোরাডো নদী কোটি কোটি বছর আগে উদ্দাম তরঙ্গে চঞ্চল বেগে প্রবাহিত হতো । এখন সে শান্ত সুপ্ত। এর বেশীর ভাগ অংশই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ান ন্যাশানাল পার্কের ভিতরে পরেছে। এবং এ টি দৈর্ঘ্যে ২৭৭ মাইল। মানে (৪৪৬ কি,মি) প্রস্থে সর্বচ্চো ১৮ মাইল (২৯ কি,মি ) এবং এর সর্বচ্চো গভীরতা এক মাইলের ও বেশী , প্রায় ১৮০০ মিটার।
১৯০৩ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট এই রঙিন গিরিখাতে প্রায়ই ভ্রমণ করতে এবং শিকারে আসতেন। তিনিই পরবর্তী সময়ে এই পার্ক টিকে উত্তর আমেরিকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে সংরক্ষণের তালিকা ভুক্ত করেন। কিন্তু ১৯১৯সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন একে জাতীয় পার্কে পরিণত করেছিলেন। এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে এক অত্যাশ্চর্য্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এর দ্বার উদ্ঘাটন করেছিলেন। ফলে সারা বছর দেশ বিদেশের পর্যটকদের ভ্রমণের কারণে মার্কিন পর্যটন ব্যবসার বিশেষ উন্নতি ও প্রসার লাভ ঘটে চলেছে।
ব্রতীন বলে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যাই ,.দক্ষিণ আরিজোনার মরুভূমির এই গিরিখাত অঞ্চলে উষ্ণ জলবায়ু বেশ আরামদায়ক। গ্রীষ্মে বেশ গরম হলে ও ঠান্ডা আবহাওয়া ও থাকে ,তখন হাইকার দের দেখা যায় পিঠে বোঝা চাপিয়ে হাইকিংয়ে উৎসাহীরা দলবদ্ধ হয়ে খাদের পথ পরিক্রমায় এগিয়ে চলেছে । কিন্তু উত্তর আরিজোনায় তখন অবিরত বরফ জমছে , ফ্ল্যাগস্টাফ ,আলপাইন ও টুসনের এলাকায় স্কী রিসোর্ট ও স্কীয়ার দের ভীড় দেখা যায় স্কী নিয়ে ছুটছে। কলোরাডো মালভূমি তে বিশাল গভীর গিরিখাতের সাথে পাইন ডগলাস ফার স্প্রুস গাছের ঘন বনাঞ্চল ঘিরে রয়েছে দেখা যায় । হাজার হাজার বছর ধরে নেটিভ আমেরিকানদের অনেক জাতি উপজাতি এখানে বসবাস করছে। তারা গিরিখাত এবং গুহা গুলোর মধ্যেই বসতি স্থাপন করে নিশ্চিন্ত আশ্রয় স্থল টুকু খুঁজে নিয়েছে। পুয়েব্লোর লোকেরা এই গ্র্যান্ডক্যানিয়ন কে একটি পবিত্র স্থান মনে করে। অন্তত ২৭টি নেটিভ আমেরিকান উপজাতির বাসস্থান এখানে পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে নাভাহো ,উটাহ নেশন টি ও রয়েছে।
অতনু ও ব্রতীন ম্যাপ খুলে বসেছিল।ইয়ম ও পারভীনের ফটো স্যুট চলছেই। আমি রেলিঙের ধারে বসে খাদের নীচে তাকিয়ে আছি। সেখানে কলোরাডোর নীল জলের ধারা থমকে বয়ে চলেছে। হঠাৎ দেখি ঐ দুই মেয়ে সরসর করে খাদের এক ধার বেয়ে নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে। ঐ বিদেশিনীদের দুঃসাহসিক কান্ড দেখে আমি ভয়ে অস্থির , ভীষণ ঠান্ডা হাওয়া বইছে আমি কাঁপছি । ব্যস্ত হয়ে উঠেছি বিপদের আশঙ্কায়। খানিক পরে দেখি দুই শ্রীমান ও ওদের পিছু নিয়েছে। আমি নিরুপায় হয়ে পাহাড়ি ঠান্ডা হাওয়াতে ও ঘেমে নেয়ে জল। এত উঁচুর থেকে বিন্দুর মত লাগছে ওদের। প্রায় ঘন্টা খানেক পরে এরা ফিরে এলে আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাঁচলাম।
আজ লিখতে বসে মনে পড়েনা আরিজোনার দিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতির মাঝে কখন উত্তর দক্ষিণ কখন পূর্বে পশ্চিমে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। শুধু মনে পড়ে অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতির নদ ,নদী ,বন পাহাড় গিরিখাত ,মরুভূমি মাঠ প্রান্তরের উপত্যকায় কত প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্যের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। আর মনে আছে পথ ভুলে পাগলের মত ঐ অপরূপার চক্করে ঘুরেছিলাম শেষ বিকেলের গোধূলির সর্বশেষ আলো টুকু পর্যন্ত।
ভীষণ ঠান্ডা হাওয়া বইছে এখন ভরা দ্বিপ্রহর। রাস্তায় ছোট্ট ছোট্ট ঝুপড়ির মত দোকান। দেখা হলো নেটিভ আমেরিকান দের সাথে। ওরা ট্যুরিস্ট দের কাছে ঘর সাজানোর জিনিস পত্র ,শো পিস ,হাতে বানানো গয়না ,মাফলার ,টুপি ইত্যাদি বিক্রি করছে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে আমি কিছু শো পিস কিনে ঝোলায় ভরলাম। এখানে একটা ভিউ পয়েন্ট রয়েছে। ব্রতীন বলে এখানে ছোট্টো একটা ক্যানিয়ন আছে। গাড়ি থেকেই দেখছিলাম কত ছোট বড়ো পাহাড়ের সারি।
সূর্যের বিদায়ী আলো পাহাড়ের গায়ে পড়লে ,মনে হয় যেন রাজাধিরাজ আপন মর্জিতে নানা রঙের পোশাকের বাহারে অলঙ্কারে সেজে উঠেছেন । আমাদের ট্যাকোমা দ্রুত গতি তেই চলছে মাইলের পর মাইল । চলার পথ কখনো প্রাচীরের মত খাড়াই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে পথ বেঁকে গিয়ে আবার সোজা চলতে শুরু করেছে । অতনু জিপিএস দেখে জানায় সামনেই পেজ শহর আসছে। কিন্তু দর্শনীয় স্থান বিখ্যাত হর্স শু -বেন্ড একেবারে কাছেই আছে। একটু এগিয়ে দেখা গেলো পার্কিং জোনে লম্বা লাইন। গাড়ি থেকে নেমে চলতে শুরু করেছি।
শুনেছি এই বিশেষ ক্যানিয়ান টিতে বহুকাল আগে খেয়ালী কলোরাডো তার উদ্দাম নৃত্যের তালে চলার গতিতে এখানে এসে থমকে দাঁড়িয়ে যায় ,তারপর হঠাৎ এক পাক খেয়ে সম্পূর্ণ উল্টো দিকে ঘোড়ার নালের মত বেঁকে গিয়ে আবার নতুন করে তার চলা শুরু হয়। লক্ষাধিক বছর ধরে সেই ঘোড়ার নালের মত বাঁক টা দিয়ে নদীর জল বয়ে ধস নামিয়ে পাথুরে মাটি কে হাজার ফুটের মত পাতালে নামিয়ে দিয়েছে। খাদের ধারে কোনো রাস্তা বা রেলিং নেই। ,নীচের দিকে তাকালেই ভয়ে বুক ঢিব ঢিব করতে শুরু করে। ওপর থেকে দেখি খাড়া গোলাপী পাথরের দেওয়াল নেমে গিয়েছে সোজা হাজার ফুটের থেকেও বেশী নীচে। আর সেই খাদের অতলে গা ভাসিয়ে তির তির করে বইছে কলোরাডোর শ্যাওলা সবুজ স্নিগ্ধ জল রাশি। সাঁঝের আধার ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। আমরা চলেছি সামনের কোনো মোটেলের উদ্দেশে মাথা গোঁজার ঠাই খুঁজে রাত টা কোনো মতে কাটিয়ে ভোরের আলোয় আবার চলার নেশায় পাড়ি দেব পেজের দিকে এন্টিলোপ ক্যানিয়ন দেখতে । .
0 Comments