ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৩৮
সম্পাদকীয়,
সোজারথের আটদিন পর উলটোরথ। সেদিন জগন্নাথ বলরাম আর সুভদ্রা মাসির বাড়ি থেকে ফেরে। উল্টোরথের গল্প বলেছে দোলনচাঁপা আন্টি আর ছবি তুলে পাঠিয়েছে পার্থ আঙ্কেল। একি একি রথের কথায় ভুলে গেলাম মেলার কথা বলতে যে। তাই মাকসুদা রেগে মেগে একটা ছবি এঁকেছে। এত অভিমানের কিছু নেই। এবার সামনে ফেরো। ওমা পীযূষ আঙ্কেল আবার কার কোন অভিমানের কথা বলছে দেখো তো। ভোট দিতে পারে না বলে ছোটোরা অভিমান করেছে? ঠিকই তো। কৃষ্ণা পিসি উপাসনার গল্প বলেছে। তোমাদের বন্ধু অনন্যা বন্ধুকে নিয়ে ছড়া লিখেছে। এসো মেঘের দেশে বেড়াতে গয়ে কে হারিয়ে গেছে দেখি। লাচুঙ জায়গাটা বাবা মোটে ভাল নয়। শ্রীকান্ত আঙ্কেল এবার তো বেশ রহস্যের মধ্যে ফেলল আমাদের। আর সেই দেশের ছবি পাঠালো সাথী। এবার অন্য আর একটা রহস্যের কথা বলি। বাসবদত্তা আন্টি বলছে সমুদ্রে নাকি বেড়া। দারুণ ব্যাপার তো! এসো দেখি কী ব্যাপার। শেষে পড়ে ফোলো রূপা আন্টির লেখা চিঠিটা। দারুণ না? আমার তো দারুণ লেগেছে। --মৌসুমী ঘোষ।
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ১৭
শ্রীকান্ত অধিকারী
আস্তে বলা কথা কি দ্রুত মানুষের কানে পৌঁছায়? না হলে গ্যাটসোর মৃদু স্বরে বলা কথা কেন সব্বাই শুনতে পেল! শুনতে পেল নয় বেশ ভালো ভাবেই কথাটা শুনেছে এবং স্তম্ভিত হয়ে খানিক ক্ষণের জন্য হতবাকও হয়ে পড়েছে।
রামসির মা তো বলেই দিল,-সেই কুতুবউদ্দিন না কি যেন নামটা?
বড় মামি বলল,-‘তখনই বলেছিলাম, ছেলেপিলেদের সাবধানে রাখ।প্রথম থেকেই জায়গাটা আমার ভালো লাগছে না।কেমন ভূতুরে ভূতুরে। আজই ফিরে চল বাপু। ঘরের ছেলে প্রাণটা নিয়ে ঘরে ফিরে যাই। বাড়িতে কত কাজ পড়ে আছে।’ বলেই বড় মামার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন সব দোষ বড় মামার।
বড় মামা বেশ গম্ভীর হয়েই গ্যাটসোকে ডাকল,-‘এখানে পুলিশ স্টেশনটা কতদূরে?’
গ্যাটসো বড়া মামার প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য ধরেই জানায়–‘আগে। হোটেল হোয়াইট লিলি সে
যাদা দূর নেহি। নর্থ সাইড মে ফাইভ মিনিটস চলনা হোগা।’
‘পুলিশ কী করবে? পাহাড়ের ওপাশে মেঘেদের দেশে কেউ যদি হাঁটতে বেড়োয় তো টুপ
করে তারা খসার মত খসে যাবে না।তারপর আর তাকে কেউ দেখতে পাবে?’ ছোট মামা এ বিষয়টাকে সে ভাবে পাত্তা না দিয়ে বলে,‘দেখো কোথাও কোন রাস্তায় আটকে গেছে। ও ঠিক আবার ফিরে আসবে।খামোকা ওদের নিয়ে চিন্তা করা। চল মুখোশগুলোকে ভালো করে দেখে নিই। গরুড় আর কালী মায়ের মুখোশটা তো সাংঘাতিক বানিয়েছে। মাথার ওপর পাঁচটা করোটি,আর রক্তিম লোল জিহ্বা মুখে নিয়ে ভয়ঙ্কর তার দৃষ্টি। বীভৎস তার চেহেরা !’ ছোট মামা এমন ভাবে কথাগুলো বলল যেন
ওই বাংলাদেশের কুতুবউদ্দিন নামে লোকটার হারিয়ে যাওয়াটা নিছক সামান্য ব্যাপার।
বরঞ্চ আমরা যা করতে এসেছি তাই করি। ভাল করে লাচুংটা ঘুরে নিই।
-‘আচ্ছা গ্যাটসো এখান থেকে কাটাও কতদূর! যাওয়া যায় না?’ছোটমামা যেন এক্ষুনি বেরোতে
চায়।
বেশ ছটফট করতে দেখা গেল গ্যাটসোকে।
অন্যদিকে সাঙ্গকে দেখা গেল ওখানে লোকাল কিছু লোকের সঙ্গে কথা বলতে। বেশ উত্তেজিত
মনে হল। মাঝে মাঝে হাত দেখিয়ে ওদেরই দেখাচ্ছিল।
হঠাৎ কোত্থেকে পিতলের পাত মোরা বাঁশের পাত্র নিয়ে এসে গ্যাটসো বলে,-‘লিজিয়ে,ইয়ে পাক্কা
হোম মেড।‘’
‘ক্যায়া?’
‘ছাং।’
‘চা?’ বড় মামি বলে। কিন্তু হাত বাড়িয়ে মুখের কাছে নিতেই মুখ কুঁচকে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলে,
‘উঁ! হাম লোগো কো চণ্ডাল পাতা হ্যায়! ছ্যা। ছ্যা।’
হা হা করে হেসেই ফেলে ছোট মামা!–খাও খাও শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে বৌদি।এসব মাখন মাখানো
খাবার। চা নয়। এখানের শুদ্ধ পানীয়।
ছাং খেয়ে শরীর কিছুটা তাজা হলেও সেই বাইরে ঘুরে বেরানোর আনন্দটা আর এলো না। সাঙ্গ একবার এসে বলে গেল, ‘আভি হাম লোগোকো জানা হোগা। সিক্কিম পুলিশ বহোত
কড়ক হোতা হ্যায়।’ তারপর অনেক কিছু বলে গেল হিন্দি বাংলা আর ওদের নিজস্ব লেপচা ভাষাতে। সব বোঝা না গেলেও এটুকু বোঝা গেল,যে কোনো সময় সিকিম পুলিশ এসে যেতে পারে এবং সমস্যায় ফেলে দিতে পারে। সেই পারমিশনের কাগজপত্র সই সাবুদ ইত্যাদি ইত্যাদি।
-‘কিন্তু হোমে গেলেও যে পুলিশ খোঁজ নিতে আসবে না তা কে বলেছে?’ রামসির বাবাও
ছোট মামার সঙ্গে এক মত।–‘এখানে ত বার বার আসা হবে না’।
অতএব যতটা পারা যায় যতক্ষণ থাকা যায় এই পাহাড়ের কোলে থাকায় বেটার।–‘এখান থেকে
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না?’
কাঞ্চনজঙ্ঘা নাম শুনতেই গ্যাটসো দু হাত মাথায় তুলে বুকে আর কানে হাত বুলিয়ে চোখ
মুজে দেয়।
-‘লেপচারা বিশেষ করে আদি বাসিন্দা- লেপচা ভোট নেপালি বা তিব্বতীরা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে
দেবতা মানে।এই উৎসবেও ওরা এই পর্বত দেবতাকে উৎসর্গ করে এক মাস ধরে নাচে।
দেবতাকে খুশি করে। চলো আমরাও ওনাকে প্রণাম করি।’ বলেই ছোটমামা জোরে জোরে বলতে থাকে—‘জয় বাবা কাঞ্চনজঙ্ঘা।’
সঙ্গে সঙ্গে কিছু বলার আগেই বেশ কিছু স্থানীয় লোক এসে ছোট মামাকে শান্তভাবে কিছু বলে
গেল।
গ্যাটসো ইশারা করে বোঝালো চুপ করে থাকতে।
ছোট মামা তবু মুখে হাসি এনে বলল কী বলে গেল বলতো? কোন ভাষায় বলে গেল?
রামসিরা যখন নিরুত্তর তখন ছোট মামা বেশ চোখ নাচিয়ে নাচিয়ে বলে, ‘জানতাম তোরা কেউ পারবি না।–ডেনজংপেক।’
-‘মানে?’ রামসি হাঁ।
-‘সিকিমি ভাষা। আসলে এটা দক্ষিণ তিব্বতী ভাষা।ওতেই কী সব বলে গেল।-ওরে এরা
কী বুঝবে হিমালয় পর্বত রাজার গুরুত্ব। আমাদের মাতৃ শক্তি দেবী দুর্গা মায়ের জনকের গুরুত্ব। এরা শুধু চ্যাং ব্যাং বলে আর চুয়াং চুয়াং খায়। আমাদের ভক্তিটাকেই টুঁটি চেপে দিল।’
রামসির মা ফিক ফিক করে হেসেই গেল। সঙ্গে শিঙিও।
বড়মামা ছোট মামার দিকে কট কট করে তাকাচ্ছিল।
ছোট মামা তবু বলে, ‘এরা কাটাওয়ের কথা বলে না,কাঞ্চনজঙ্ঘার কথাও বলে না।’
রামসি হঠাৎ পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে খাদের ঘন জঙ্গলের দিকে চেয়ে সব্বাইকে অবাক করে
বলে, ‘পথ হারিয়েও যেতে পারে। হয়তো মেঘেদের দলে কিংবা পাহাড়ের কোলে ফেরার পথ
ভুলে যেতে পারে।’
-‘পথ ভোলা এত সোজা নয় রে পাগলা। পথ ভুলতে গেলেও তোকে পাগল হতে হয়।
প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার জন্য পাগল। আর তার জন্য ভীতু হলে হবে না। মনে নেই লোকটাকে ওদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা জিজ্ঞেস করে ছিলাম,অমনি উঠে পালিয়ে গিয়েছিল। অথচ ওরা হল চুয়াডাঙার মানুষ। বুক পেতে রক্ত ঝরানো মাটির গন্ধ আছে ওদের রক্তে।’
-‘এমনও তো হতে পারে জংলী জানোয়ারও তুলে নিয়ে গেছে?’
-‘ হতে পারে। কিন্তু এখানে জানোয়ার কোথায়? এই ঠাণ্ডাতে বৃষ্টিতে ভিজতে আসবে নাকি
তোর স্নো বীয়ার্ড, ল্যাপার্ড ক্যাটস কিংবা নেকড়ের দল। আছে শুধু দেশি কুত্তা।’ রামসির বাবা রামসিকে হাত ধরে কাছে টেনে নেয়।
ওদের গাড়িটা ফিরতি পথ ধরতেই সিক্কিম পুলিশের একটা গাড়ি ক্রস করে। কেউ কিছু না
বললেও বড় মামা শুধু মুখ দিয়ে ‘চু চু’ করে উঠল।–‘এই রে আর একটু স্টে করলেই এখানেই
দেখা হয়ে যেত।’ ( ক্রমশ)
বন্ধু
অনন্যা দাস
সপ্তম শ্রেণি, কেশপুর গার্লস হাই স্কুল, পশ্চিম মেদিনীপুর
বন্ধু মানে কাছের সাথী,
একটু একটু রাগ,
বন্ধু মানে সুখ দুঃখের
ফিফটি ফিফটি ভাগ।
বন্ধু মানে চোখের কোণে
একটু একটু জল,
বন্ধু মানে হঠাৎ করে
একটা মিসড্ কল।
গল্প
দেশের বাড়ি
কৃষ্ণা দাস
পর্ব ১
আমি উপাসনা।ক্লাস সিক্সে পড়ি।কলকাতায় থাকি।কিন্তু আমাদের একটা দেশের বাড়ি আছে। দেশের বাড়ি মানে বর্ধমান জেলার একটা গ্রাম।আমার ঠাকুরদার বাড়ি।যেখানে আমার বাবার জন্ম।সেখানে আমার ঠাকুর্দা জেঠু কাকু, জ্যাম্মা আর আমার চার জ্যাঠতুতো দাদা আছে। আমাদের দেশের বাড়িটা উঁচু পাঁচিল ঘেরা, উঠোন বাঁধানো, উঠোনে একটা কুয়ো।বাড়িটাকে প্রতিবেশীরা বলে, ‘পাগলা গারদ’। অবশ্য তাদের তেমন দোষও দেওয়া যায় না। এ বাড়ির সবাই একটু যেন কেমন।মানে ঠিক অন্যদের মত নয়।আচ্ছা একটু বুঝিয়ে বলি।
যেমন আমার দাদু মানে ঠাকুরদার কথাই ধরা যাক। সংস্কৃতে বিশাল পন্ডিত। কিন্তু তাই বলে কি রোজ সকালে স্নানের সময় কুয়োতলায় লাফিয়ে লাফিয়ে ‘নরঃ নরৌ নরাঃ’ শব্দরূপ মুখস্ত বলতে হবে। তারপর মাথায় প্রথম ঠান্ডা জলের মগটা ঢেলেই এমন ‘নরাঃ’ বলে সবাইকে পিলে চমকে দেবে যে সে আর বলার কথা নয়।হয়তো তখন পাড়ার নেড়ি আর মেনি উঠোনে সবে একটু শীতের সকালের রোদ পোহাচ্ছিল। দাদুর ‘নরাঃ’তে চমকে উঠে “ভৌ ভক্” আর “ম্যাঁও ফ্যাঁচ্” করে দাদুকে বকে দিয়ে যায়।
সারাটা শীতকাল জুড়ে দাদুর হ্যাঁচ্চোর বিভৎস দাপট চলে।একবার দুবার নয় লাগাতার।আর কী তার হর্সপাওয়ার।আশেপাশে কাউকেই তখন টিঁকতে দেন না। সে এক ভয়াবহ ব্যাপার হয়। পাশের বাড়ির খোকাকে অনেক কষ্টে সবে হয়তো তার মা ঘুম পাড়িয়েছিল, ঐ হাঁচ্চোর চোটে বাচ্ছার পিলে এমন চমকালো যে সে জম্মের মত ট্যারাই হয়ে গেল।পাশের বাড়ির নাদুর দাদু সবে হয়তো রোদে বসে দুধমুড়ি খাচ্ছিল, হঠাৎ আমার দাদুর হ্যাঁচ্চোর দাপটে হাতের বাটি আকাশে ছুড়ে মাটিতে চিত্তির।নাদুর দাদুর তখন এই যায় কী সেই যায় অবস্থা।
এদিকে আমার বড়জেঠু আবার যাত্রায় তবলা, কীর্তনে ঢোল বাজান।কিন্তু রাত নেই দিন নেই হঠাৎ হঠাৎ তার যে কী খেয়াল হয়, “সচী মাতা গোওওও” বলে গলার শির খিঁচিয়ে বুক ধড়ফড়ে কির্তন করবে। তখনই আশেপাশে বাড়ির দরজা জানলা দমাদ্দম বন্ধ হবার আওয়াজ শোনা যাবে।আসলে শব্দ দূষণ হয় হয়তো। এমনিতে বড়জেঠু কারো সাতেপাঁচে থাকেন না।জেঠুর দুই হৃষ্ট পুষ্ট ছেলে, যাদের আদর করে নাম রেখেছেন তাঁর প্রিয় দুই বাদ্যযন্ত্রের নামে,‘তবলা’ ও ‘ঢোল’।তারা বছরের পর বছর ক্লাস নাইনেই পড়ে আছে, পাস আর করতেই পারে না।স্কুল থেকে কতবার নাম কেটে দেয়।দাদু গিয়ে হাতে পায়ে ধরে আবার নাম তুলে দেয়।কিন্তু তারা স্কুলে গেলে তো!সবসময় কিছু না কিছু তারা চিবতে থাকে।আর সুযোগ পেলেই এর গাছে আম ওর গাছে জাম চুরি করে বেড়ায়।এর জন্য বড় জেঠুর কাছে মারও খায় প্রচুর, তবু তাদের হুস হয় না।গত পুজোর ছুটিতে যখন দেশের বাড়ি গেলাম তখন দেখি পাড়াপ্রতিবেশিরা রেগেমেগে দল বেঁধে বাড়ি এসে নালিশ করে গেল ওদের নামে।তবলা আর ঢোলদাদা কার নাকি রোদে দেওয়া আচার বয়েম শুদ্ধু গায়েব করেছে।নালিশ শুনে বড়জেঠু তো রেগে কাঁই।দুই ছেলেকে তক্তোপোষে উপুড় করে ফেলে পিছনে শাসন ও বাদ্য যন্ত্র বাজানোর প্রাক্টিস একই সঙ্গে সেরে নিলেন। শেষে ক্লান্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দিলে দেখা গেল তবলা আর ঢোলদাদার জিভ বেরিয়ে চোখ উল্টে মরা ব্যাঙের দশা।কিন্তু ওই পর্যন্তই।ব্যথা সারলেই আর আবার ল্যাজ বেরোয়।প্রতিবেশীরা রাগে দুঃখ ওদের নাম দিয়েছে বালি আর সুগ্রীব।
মেজোজেঠু আমার বড় শান্তিপ্রিয় হাসিখুশি মানুষ। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা। যদিও কালো মোটাসোটা লোমশ চেহারার জন্য লোকে তাকে পিছনে ‘জাম্বুবান’ বলে হাসাহাসি করে!তা হাসুক, মেজোজেঠু এসব গায়ে মাখেন না।তিনি খুব আমুদে মানুষ। সব ব্যাপারেই তাঁর হাসি পায়। তিনি সর্বদা আনন্দে থাকেন।মেজোজেঠু এতই মোটাসোটা ভুড়িদার মানুষ যে তাঁর মাপে বাজারে জামা কিনতে পাওয়া যায় না।সেই কোনকালে দাদু দর্জিকে দিয়ে শক্তপোক্ত একটাই জামা বানিয়ে দিয়েছিলেন সেটা পরেই মেজোজেঠু বিয়েবাড়ি থেকে শ্রাদ্ধ বাড়ি, বাজার থেকে শ্মশান করে বেরোন।মেজোজেঠুর এতে কোনও সমস্যা নেই। মেজোজেঠুরও দুই জমজ ছেলে।বছর বছর ম্যালেরিয়া ডেঙ্গু চিকেনগুনিয়ায় ভুগে ভুগে তাদের শরীরে শুধু হাড় পাঁজরা সার। তারা জেঠুর থেকেও মিশমিশে কালো। তাদের ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল, ড্যাব ড্যাবে চোখ, মুলোর মত দাঁত। হাসলে মাড়ি বেরিয়ে পড়ে।মেজোজেঠু বড় আহ্লাদ করে তাদের নাম রেখেছেন ‘ভূত’ ‘ভুতুম’।ওদেরও ওই নামে বড় আহ্লাদ।তারাও ক্লাস ফাইভের পর স্কুল ছেড়ে দিয়েছে।সত্যি বলতে কী রাতের বেলা অন্ধকারে তাদের দেখলে আমারও কেমন গা শিরশির করে। গ্রামের পথে ঘাটে সন্ধে রাতে ভূত ভুতুমকে কেউ দেখে ফেললেই ঘটে যায় নানা অঘটন।অনেকেই ভয়ে দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে গিয়ে অন্ধকারে ডিগবাজি খায় খানাখন্দ পুকুরে। কারুর আবার চোখ উল্টে দাঁত কপাটি লেগে প্রায় মর মর অবস্থা হয়। ভূত ভুতুম অবশ্য এতে খুব মজা পায়।ইচ্ছে করে ভয় দেখাবে বলে অন্ধকারে চুপি চুপি প্রতিবেশীর উঠোনের আনাচে কানাচে গাছের তলায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে। অন্ধকারে তাদের সাদা চোখ আর মূলোর মত দাঁত শুধু প্যাটপ্যাট করে।কারুর না কারুর চোখে পড়লেই ঠ্যাঙে ঠ্যাঙ জড়িয়ে গোঁ গোঁ করতে থাকে।পরে আসল সত্য টের পেয়ে প্রতিবেশীরা গাল পাড়তে পাড়তে দল বেঁধে মেজোজেঠুর কাছে নালিশ ঠুকতে আসে।কিন্তু সমস্যা হল নালিশ শুনেই মেজোজেঠুর সেই যে ভুড়ি কাঁপিয়ে অট্টহাস্য শুরু হয় তা আর থামেই না।এতে প্রতিবেশীদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে বাধ্য।তারা মেজোজেঠুকেই ওরাংওটাং, জাম্বুবান, কিংকং বলে গাল পাড়তে পাড়তে বাড়ি ফেরে।এর পর রাস্তায় বাপ দুইছেলেকে দেখে কেউ যদি ছড়া কাটে “দুইধারে দুই নন্দি ভিঙ্গি, মধ্যিখানে কিংকং জঙ্গি”! তবে কি তাদের দোষ দেওয়া যায়?
সেসব দিক দিয়ে আমার ছোটকাকু ভালো।বিয়ে থা করেননি।নির্বিবাদী মানুষটা রোগা লম্বা।তাঁর তোবড়ানো গাল হলেও মাথার পিছনে দুএকগাছি চুল কায়দা করে পনিটেল বাঁধা।তিনি নিজের ঘরে জানলা দরজা বন্ধ করে একমনে শুধু জ্যোতিষচর্চা করেন।কিন্তু কাউকেই পান না যার হস্তরেখা বিচার করবেন।বাড়ির লোকদের করতে গেলেই তারা যেহেতু তেড়ে আসে,তাই তিনি গ্রামের রাস্তায় ওৎপেতে বসে থাকেন।কাউকে দেখতে পেলেই ধাওয়া করে ধরে ফেলেন।তারপর বাঁ হাতে খপ্ করে তার জামার কলার চেপে ধরে ডান হাতটা টেনে নিয়ে হাত দেখতে থাকেন। গলা ঝেড়ে, পনিটেল নাড়িয়ে, ঊর্ধ্বমুখে দরাজ গলায় বলেন, “মাত্র একশো টাকা ভিজিট, তোমার জীবনের মানেই বদলে দেব, দেখবে তুমি পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে কেমন চাঁদের মাটিতে ডিগবাজি খাবে”।কিন্তু সত্যি বলতে কী কেউই পৃথিবীতে হোক বা চাঁদে ডিগবাজী খেতেই চায় না। তারা ফাঁকফোকর পেলেই দৌড়ে পালায়।এমনও হয়েছে ছোটকাকুকে দূর থেকে দেখলেই সবাই পগার পার।কেউ হয়তো কাজে বেরচ্ছিল, আবার হাঁফাতে হাঁফাতে বাড়ি ফিরলেই সবাই বুঝে নেয় তাকে ‘আতঙ্কে’ ধরেছিল। আসলে ওরা যে পিছনে ছোটকাকুর নাম দিয়েছে আতঙ্ক।
কিন্তু আমার বাবা এদের সবার থেকে আলাদা। বাবা খুব গম্ভীর।প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলেন না।বাবার চাকরি কলকাতায়।তাই আমরা, মানে মা বাবা আর আমি থাকি কলকাতায়। বাবা দাদুকে প্রত্যেক মাসে সংসার খরচ পাঠান।দেশের বাড়ির সবাই তাঁকে যমের মত ভয় পান, বাবাকে এড়িয়ে চলেন। বাবা দেশের বাড়িতে এলে সবাই ফিসফিস করে কথা বলে। যেন জোরে কথা বললেই সেজোবাবু মানে বাবা কুচ্ করে গলা কেটে পাঁচিলের বাইরে ছুড়ে দেবে।
বড়দিনের ছুটি চলছিল স্কুলে, বাবারও অফিসের কাজে দিল্লী যাবার কথা। তাই আমাদের দেশের বাড়িতে রেখে বাবা দিল্লী চলে গেলেন।
আমি দেশের বাড়ি এলে সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। জেঠিমারা আমাকে কী যত্ন করবে কী খাওয়াবে তাই নিয়ে ভেবে ভেবে অস্থির।আসলে এ বাড়ির পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আমিই এক মাত্র মেয়ে। যে হেতু সবাই জানে আমি পড়াশোনায় ভালো, ক্লাসে ফার্স্ট হই আর সবার ছোট, তাই আদরটা আমার ভাগে বেশিই। এখানে এসে সবার আদর যত্ন খেতে খুব ভালো লাগলেও সবার বোকা বোকা আচরণ আর কথায় বিরক্ত লাগে।একটুও হাসতে পারিনা। আর আমার মুখে হাসি না দেখে বাড়ির লোকের বড় চিন্তা।তারা ভাবে বাবার মত হয়েছি, হাসতেই জানি না।
এদিকে গ্রামে তবলা আর ঢোল দাদার দৌরাত্ম বেড়েছে। পাশের বাড়ির চাঁদুর দাদু সখ করে দু’পাটি দাঁত বাঁধিয়েছিলেন, সময় সময় একটুআধটু পাঁঠার মাংস চিবোবেন বলে। সে দাঁত রোজ দুপুরে ভাত খাওয়ার পর মুখ থেকে খুলে ভালো করে ব্রাশ করিয়ে রোদে শুকোতে দিতেন।কিন্তু একদিন দেখেন হাওয়া।হয়ত কাকে মুখে করে নিয়ে গেছে কিন্তু পড়শিদের মত এ তবলা আর ঢোলদাদার কাজ।ওরা বাড়ি এসে নালিশ জানিয়ে গেল।
ওদিকে ভূত আর ভুতুম দাদার নামেও প্রচুর অসন্তোষ জমা পড়ছে। গ্রামের তেমাথার মোড়ে একটা বট গাছে ভর সন্ধ্যায় পুঁটুর পিসি জোড়া ভূতকে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখেছে। দৌড়ে পালাতে গিয়ে পিসি অন্ধকারে পানাপুকুরে উলটে পড়েছে। শীতের সন্ধ্যায় পানাপুকুরের হিম শীতল জলে পড়ে তার তিন দিন ধরে ধুম জ্বর।সবার সন্দেহ এও নিশ্চই ঐ ভূত-ভুতুমেরই কাজ।
( ক্রমশ)
ছড়া
ভোট
পীযূষ প্রতিহার
বাবার আছে মায়ের আছে
আমার কেন নেই?
আমরা কি আর নেহাত ছোট
কোন গুরুত্ব নেই?
পড়ার সময় স্কুলের সময়
তোমরা যখন বলো
ছোট্টটি নেই হচ্ছো বড়ো
বয়স অনেক হলো,
এবার একটু সিরিয়াস হও
মন লাগিয়ে পড়ো।
তখন ভাবি সত্যি হয়তো
হয়েছি অনেক বড়ো।
কিন্তু যখন ভোটটি আসে
তর্জনীতে কালি
আমার তখন কান্না আসে
আমার আঙুল খালি।
বড়দের সব ভোটাধিকার
আঠেরো পার হলে
আমরা তখন খুবই ছোট
নেই ভোটারের দলে।
ধারাবাহিক ভ্রমণ
শ্যামদেশ থেকে ফিরে
তৃতীয় পর্ব
বাসবদত্তা কদম
তৃতীয় পর্ব) সমুদ্রের মধ্যে পাড়ের কাছেই একটা জায়গায় দেখলাম ভাসমান বেড়া। সমুদ্রে আবার বেড়া কেন? তাও পাড়ের কাছে। কি জানি! সকালে ব্যাপারটা বুঝিনি। তবে নজরে পড়েছিল। বুঝতে পারলাম বিকেলে এসে। স্থানীয় মানুষরা তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ওখানে স্নান করছেন। তাদের সাঁতার শেখাচ্ছেন।
বেড়া দিয়ে সীমা নির্দিষ্ট যেমন করা হয়েছে সাঁতারের জন্য, তেমনি স্পীড বোটগুলিও সেটা বুঝেই চালায় সাবধানে, ঐ বেড়া থেকে বেশ খানিকটা দুরত্ব বাঁচিয়ে।
এ দেশে সাধারণ মানুষদের মধ্যে সমুদ্র নির্ভর জীবিকা অনেক- সে মাছ ধরাই হোক কিংবা নৌকা চালানো অথবা সেই স্পীড বোট। সে যেটাই হোক না কেন, সমুদ্রের বুকে জীবিকার সন্ধানে বাঁচতে গেলে সাঁতার তো জানতেই হবে। তাই হয়তো এখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে এসে সপ্তাহান্তে সমুদ্রের পাড়ে বসে সময় কাটানো কিংবা সমুদ্রে সাঁতার কেটে বাড়ির বাচ্চাটির ভয় কাটিয়ে দেওয়াটাও খুব জরুরী।
সেরকমই এক ক্ষুদেকে দেখলাম দিব্যি একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে সমুদ্র সৈকতে। তার দিদি তখন সাঁতার কাটছে। বাবা মা ঠাকুমা/দিদা চারজনেই বেশ খানিকটা দূরে বালির ওপর বসে গল্প করছেন। হ্যাঁ লক্ষ্য নিশ্চয়ই রাখছে। তবে বেশ নিশ্চিন্ত। সে ক্ষুদের ছবি আমি পুটুস করে আমার ক্যামেরায় নিয়ে নিয়েছি। হ্যাঁ ওর বাড়ির লোকের অনুমতি নিয়েই।
অনেকক্ষণ ধরে ঘোরাঘুরি করছি, বেশ খিদে পেয়ে গেছে। এবার খেয়েদেয়ে হোটেলে নিজেদের ঘরে গিয়ে ঘুমানোর পালা। সেদিন রাত্রে আমি বললাম অবশ্যই স্থানীয় খাবার খাবো।
আগে থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল ওখানকার খাবার। আমি যখন যেখানেই যাই তখন সেখানকার খাবার খাবারই চেষ্টা করি। অসম্ভব পেটুক মানুষ আমি, তাই লক্ষ্য থাকে বিশেষ ডিসগুলো যেন টেস্ট করে দেখতে পারি। আর কোনো জায়গার খাবারই সেই জায়গার বাইরে কিছুতেই সেই স্বাদ পাওয়া যায় না। তোমরাও বেড়াতে গেলে এই কথাটা মনে রেখো।
তবে এখানে খাবারের নাম আমাকে পুরো বোল্ড আউট করে দিল।
কি সব নাম! ‘খাও ফাড়’ ‘ঠালাই ফাড়ছা’ ‘ফাও ঘাঁ প্রঁ’ ওরে বাবা এসব কি! নীচে যদিও লেখা আছে কি কি থাকবে সে খাবারে তবুও যে মেয়েটি খাবার দিচ্ছে তাকে ডেকে জেনে নেওয়া ভালো বলেই মনে হলো। সে দেখলাম বেশ ভালো ইংরেজি বোঝে। বলতেও পারে অনেকটাই। অন্তত যে কারুর বোঝার মতো। তার বলে দেওয়া দুটি ডিস নিলাম আমরা। অপূর্ব সুন্দর স্বাদ সে রান্নার। এর পরে প্রায় প্রতিদিনই রাত্রে তোমাদের আঙ্কেল অফিস থেকে ফিরলে আমরা স্থানীয় খাবারই খেতাম।
এই বেড়ানোয় খাওয়া আসবে অনেকবার ঘুরে ফিরে, কারণ এ সমস্ত খাবারই আমার কাছে নতুন।
তোমরা কি ভাবতে পারো এখানে আস্ত আস্ত কুমির ভাজা বিক্রি হয়!
না! মজা করছি না। সত্যি। সে গল্পেও আসবো। তবে একটু পরে।
সমুদ্রের পাড়ে দেখলাম আমাদের দেশের মতই এটা সেটা বিক্রি হচ্ছে। ফিরিওয়ালারা পিঠে বা হাতে জিনিষ নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে। সে খাবার হোক বা খেলনা, সব বিক্রেতাদেরই প্রধান লক্ষ্য ছোটরা। এটা আমাদের দেশেও তাই। তোমরাও হাসছো জানি। বাচ্চারা বায়না করলে বাবা মায়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিনে দেন। না করতে পারেন না।
থাইল্যান্ড বুদ্ধ ধর্ম প্রধান দেশ। এখানে নব্বই ভাগের বেশি মানুষ বৌদ্ধ ধর্মালম্বী।
যার সঙ্গেই চোখাচোখি হয়, সেই দেখলাম মাথা ঝুকিয়ে মিষ্টি হাসি হেসে চলে যাচ্ছে।
এরপর কয়েকটা দিন তোমাদের আঙ্কেল তার অফিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি একা কাছাকাছি খানিকটা ঘুরে দেখলাম।
থাইল্যান্ড দেশটা অনেকটাই ট্যুরিস্ট/পর্যটক নির্ভর। আশেপাশে দেখলাম অজস্র দোকান। কোনটা সামদ্রিক খাবার। কোনটা সে দেশের উপহার সামগ্রীর। আছে প্রচুর চিনা খাবারের দোকান। ছোট বড় মিলিয়ে সেটা অনেক। আর দেখলাম অজস্র ভারতীয় এবং বাংলাদেশী খাবারের দোকান।
এর থেকে এটুকু বুঝতে পারলাম, ভারতীয় বিশেষত বাঙালি পর্যটকের সংখ্যা নেহাৎ কম নয় এখানে।
এর পর একদিন বিকেলে গেলাম বীচ থেকে বাঁদিকে যে রাস্তা চলে গেছে সেই রাস্তা ধরে। বিগ বুদ্ধা টেম্পলে। বীচকে ডানহাতে রেখে সে রাস্তা চলে গেছে সোজা ‘প্রা তমনক’ পাহাড়ে। সে পাহাড়কে স্থানীয়রা বলেন, ‘বিগ বুদ্ধ মাউন্টেন’।
সে পাহাড়ে আছে বুদ্ধদেবের বিভিন্ন বয়সের বিশাল বিশাল মূর্তি। যেখানে নামলাম, সেখান থেকেই দেখা যাচ্ছে তথাগত বুদ্ধের এক বিশাল মূর্তি, দেখে মনে হয় যেন সোনা দিয়েই তৈরি। সিঁড়ি উঠে গেছে পাহাড়ে। সিঁড়ির দুপাশে পাহাড়ায় দুই বিশাল ড্রাগন।
স্মরণীয় দিবস
(উলটোরথ)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হল রথযাত্রা।
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে প্রতিবছর সূচিত হয় এই রথযাত্রা আর দশমি তিথিতে হয় উল্টো রথ। রথযাত্রার দিন মাসির বাড়ি অর্থাৎ ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী গুন্ডিচার বাড়ি যান ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। সেখান থেকে সাত দিন পর আবার মন্দিরে ফিরে আসেন ভগবান জগন্নাথ সহ তিন ভাই বোন। এই মাসির বাড়ি যাওয়াকে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা বা সোজা রথ বলা হয়। সাত দিন পর মাসি গুন্ডিচার বাড়ি থেকে মন্দিরে ফিরে আসাকে বলা হয় উল্টো রথ।
জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার প্রচলনের অনেক ইতিহাস আছে, তার মধ্যে একটা হল যে, বৃন্দাবন লীলা শেষ করে শ্রীকৃষ্ণ যখন দ্বারকার রাজা হন তারপর কুরুক্ষেত্রের পুণ্য ভূমিতে দ্বারকা বাসীদের নিয়ে সূর্য গ্রহণের পুণ্য লাভ করতে আসেন। এদিকে বৃন্দাবন বাসীরাও একই উদ্দেশ্যে কুরুক্ষেত্রে আসেন। এরপর বৃন্দাবন বাসীরা, ভগবান কৃষ্ণকে বৃন্দাবনে নিয়ে যেতে চান,পুনরায় তাঁর বাল্যলীলা আস্বাদের জন্য। সেই সময় বৃন্দাবনবাসীরা কৃষ্ণের রথের দড়ি টেনে নিয়ে যায়, বলা হয় এভাবেই রথযাত্রার প্রচলন ঘটে।
আর একমতে বলা হয়, বোন সুভদ্রার ইচ্ছে পূরণের জন্য দাদা জগন্নাথ ও আর এক দাদা বলরাম তাঁকে রথে করে মাসির বাড়ি নিয়ে যায় এবং সাত দিন পর তারা মন্দিরে ফিরে আসে।
জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা প্রচলন পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে শুরু হয়। হিন্দু ধর্ম মতে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনে ফেরাকে কেন্দ্র করে এই উৎসব পালিত হয়। রথযাত্রা এবং উল্টো রথের দিন দেশের সকল কৃষ্ণ মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা সহ সুদর্শন চক্র ও বিগ্রহ সমূহ কে মন্দিরের বাইরে সর্বসমক্ষে আনা হয়। পুরীর মন্দিরে তিনটি সুসজ্জিত রথে বসিয়ে দেবতাদের পুজো করে রথ টানা হয়। সাত দিন পর শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে মাসি বাড়ি থেকে পুনরায় রথ টেনে মন্দিরে আনা হয় বিগ্রহ সমূহ, এই অবস্থাকেই বলা হয় উল্টোরথ।
প্রসঙ্গক্রমে একটা কথা বলা দরকার, যে তিনটি রথ তৈরি হয় তার একটি করে নাম আছে, যেমন ভগবান জগন্নাথ দেবের রথের নাম নন্দীঘোষ এর ষোল টি চাকা থাকে, বলরামের রথের নাম তালধ্বজ এবং সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন।
পুরী সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশের মাটিতেও যেখানে সনাতন ধর্মালম্বীরা আছেন সেখানে রথযাত্রা ও উল্টো রথ উপলক্ষে দুদিন ধরে জমজমাট মেলা বসে। হাজার হাজার সনাতন ধর্মপ্রাণ মানুষ সোজা রথ এবং উল্টো রথে দড়ি টানাতে অংশগ্রহণ করেন। উল্টো রথ পুরীতে বহুদা নামে পরিচিত।
পাঠপ্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছোটোবেলা ১৩৭ পড়ে রূপা চক্রবর্ত্তী যা লিখলেন)
প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে জ্বলদর্চি পত্রিকার প্রচ্ছদটির মিষ্টি পাখিটি , পাতার ফাঁকে আমাকে দেখেই সে বলে উঠলো ---
নিয়ে এলাম মেঘলা আকাশ
নূপুর পায়ে বৃষ্টি ,
বর্ষারানীর খেয়াল খুশি
সবুজ পাতার সৃষ্টি |
সেই আমেজ নিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করলাম একটি স্বপ্নের দেশে | শিশুমন অনেক সময় বুঝে উঠতে পারে না ভালো মন্দের তফাৎ , লেখক দিলীপ কুমার মিস্ত্রি " পিয়াল এক স্বপ্নের দেশ " গল্পে ছোট অবুঝ মনকে তার মতো করেই বুঝিয়েছেন মানিয়ে নেওয়ার সাথে প্রকৃত ভালোবাসা কাকে বলে ? আসল বন্ধু কারা ? তমোনাশের মতো ভুল তো আমরাও করি , অনাদিদের না চিনতে পেরে অবজ্ঞাও তো করে থাকি কত সময় | লেখক সুন্দরভাবে সেই ভুল ভাঙলেন গল্পের পরিকাঠামোয় |
রুদ্রাংশ দাসের ছবিটি কিন্তু বেশ প্রাণবন্ত হয়েছে | তোমরা কি চিনতে পেরেছো ও কার ছবি এঁকেছে ? জানাবে কিন্তু |
কোকিলের মধুর গানের কথা আমরা সকলেই জানি কিন্তু সেই গানে মুগ্ধ হয়ে যে এমন মিষ্টি একটা ছড়া আমাদের উপহার দিলেন সুমিত্রা ঘোষ সেটা কি উপরি পাওনা নয় ? বলো বলো সত্যি কিনা ?
আমার মতোই অনেকের যে থাইল্যান্ড দেখা হয়নি সে আমি খুব জানি তবু বাসবদত্তা কদমের "শ্যামদেশ থেকে ফিরে " ভ্রমণকাহিনী পড়ে যা দেখে নিলাম আর জানলাম- কেউ জিগেস করলে কে বলবে আমি যাই নি সেখানে ? তাছাড়া মুদ্রা , ডলার , পাউন্ড এর সাথে ভারতীয় টাকার হিসেবটাও বেশ বুঝে নেওয়া গেলো আর সাথে চিত্রটিও চোখ জুড়ানো |
পুচকে আয়ুষ্মিতা সামন্ত রথযাত্রা র কি সুন্দর ছবি এঁকেছে দেখেছো ? জগন্নাথ , বলভদ্র , সুভদ্রা ছোট্ট হাতের টানে বেশ ফুটে উঠেছে - তাই না ? ভালো রেখো জগন্নাথ সকলকে |
ভীষণ মিষ্টি মিষ্টি একটি লেখা " মিষ্টির টিয়া " | নীল কাকুর কথার আসল মানে বুঝে ঐটুকু মিষ্টি খাঁচা থেকে তার টিয়াকে নীল আকাশের বুকে উড়িয়ে দিলো তার কষ্ট বুঝতে পেরে , কত বড় মনের পরিচয় দিয়েছে ছোট্ট মিষ্টি যা বড়রাও বোঝে না তাই তো খাঁচায় আটকে রাখে | কারোকে কষ্ট দিয়ে প্রকৃত আনন্দ পাওয়া যায় না , সবাইকে আনন্দে রাখলেই নিজের আনন্দ যে সহজে মেলে |
শ্রীকান্ত অধিকারীর "লাচুংয়ের নেকড়ে" বইটির নাম শুনে বেশ ভয় পেলাম প্রথমে , কি জানি বাবা নেকড়ে না আবার লাফিয়ে ঘাড়ে পড়ে কিন্তু না - গল্পের ধাপে ধাপে যত এগিয়েছি মনোরম বর্ণনা আর গাছ , পাখি , পশু ও নানা উৎসবের সাথে বেশ মজা লাগছিলো কিন্তু শেষে ' ও সুবা সে লা পাতা ' --- বাবা গো ! পড়ে আমি তো চিন্তার সাথে ভয়ে ভয়ে আছি কি জানি কি খবর আসে ? তোমরাও কি ভাবছো ? চলো দেখি পরের সংখ্যায় কি খবর পাওয়া যায় ---
শিশু শ্রমের কথা তোমরা হয়তো শুনে থাকবে কেউ কেউ তবে তার বিস্তারিত জানতে পারবে দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে এর " শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব দিবস " লেখাটি পড়লে , আমিও
অনেক তথ্য জানলাম |
সবশেষে বলবো সম্পাদক মৌসুমী ঘোষের অভিমান ও 'শপথ ' এর কথা - কারণের বিষয়টি খুঁজতে নামিয়ে পুরো পত্রিকার চিত্রটি যেভাবে আমাদের দেখিয়ে পড়িয়ে নিলেন তা সত্যি প্রশংসনীয় | এগিয়ে চলুক জ্বলদর্চি ---
1 Comments
বন্ধু নিয়ে অনন্যার ছড়া ভালো লাগল
ReplyDelete