ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪১
সম্পাদকীয়,
উঁচুতে উঠতে কার না ভালো লাগে। উঁচু থেকে নিচের সব কিছু দেখলে নিজেকে বিশাল বড়ো মনে হয় তা জানো তো? এবারের প্রচ্ছদের ছবিতে ভারাল-টা তাবলে নিচের জিনিস দেখবে বলে উঁচুতে উঠেছে তা ভেব না। ওর বাড়িই ওখানে। ওখানে মানে লাচুঙে তা ভেব না যেন। নীলাব্জ আঙ্কেল বলল, গোমুখ যাবার পথে। লাচুঙেও আছে হয়তো। কিন্তু দেখা যায় নি এখনো। নেকড়ের কথায় মনে পড়ে গেল ২৯ শে জুলাই বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস। বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে তাই আমাদের সচেতন হতে হবে জানিয়েছে দোলনচাঁপা আন্টি। চিন্তার কিছু নেই এখানে বর্ষায় কিন্তু ব্যাঙের সংখ্যা বেড়েছে। ব্যাঙের কথায় মনে পড়ে গেল এবারে সোনালি আন্টি ব্যাঙেরা কর্তা-গৃহিনী মিলে বর্ষা আসায় কেমন মজা করছে তার ছড়া লিখেছে। বর্ষায় তো ওদের মজা হবেই। নিজের মনোমতো পরিবেশ না পেলে কারোর ভালো লাগে না। রকিরও লাগেনি নতুন পাড়ায় গিয়ে। রকি কে? জানতে হলে পড়ে নাও বহ্নিশিখা আন্টির গল্প। তবু মানিয়ে নিতে হয় আমাদের নতুন পরিবেশে। নাহলে নতুন নতুন জানা অজানা কথা জানবে কেমন করে? তোমাদের বন্ধু শুভশ্রী কাকে নিয়ে লিখেছে জানো? না বলবো না পড়ে নিও। ছবিও পাঠিয়েছে একটা। আর সৌমী কী মিষ্টি একটা বন্ধুর ছবি পাঠিয়েছে। তোমাদের আঁকা লেখা নিয়ে প্রতিক্রিয়া লিখে পাঠিয়েছে সুরশ্রী আন্টি। কি খুশি তো? আরো খুশি হবে ১৫০ তম ছোটোবেলা প্রকাশ পেলে। তোমরা তারজন্য লেখা আঁকা পাঠাও। - মৌসুমী ঘোষ।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ২০
শ্রীকান্ত অধিকারী
পুলিশস্টেশন থেকে বেরোতেই ছোট মেয়েটা যে এতক্ষণ মায়ের কাছে ছিল,বড় মামার হাত ধরে ডাকে।-আঙ্কেল ।
বড়মামা পেছন ফিরে দেখে সেই বাচ্চা মেয়েটা, কি যেন নাম বলেছিল শিঙি।-বিটলে। আর ওর মা।
বড়মামাকে কিছু বলতে না দিয়েই ভদ্রমহিলা বেশ কাতর হয়েই বলে, স্যার দ্যাইখি আপনার লগে অফিসারের খুব ভাব। আমাদের ব্যাপারডা একটু দ্যাইখেন না।
-আপনাদের ব্যাপার মানে আপনার হাজব্যান্ড কুতুব উদ্দিনকে খুঁজে বের করা তো।
-জি? ওই লোকডা আমার হাজব্যান্ড না। ও তো এজেন্ট। ট্রাভেলিং এজেন্সি আছে। বাংলাদেশ থেইকে ইন্ডিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে লইয়ে যায়।
-মানে?
-জি।ওকে খুঁইজে না পাইলে দ্যাইশে ফিরা যাইতে সমস্যা হতে লাগবে।ভিসা পাসপোর্ট সব ওর হেপাজতে।
-শেষকালে পালিয়ে গেল! বড়মামা যেন আকাশ থেকে পড়ে।এতটা ভুল!লোকটা যে বলল,সে চুয়াডাঙার।-ছ্যাঃ এইজন্যই কাল রাতে বেশি কিছু না বলে ঘরে ঢুকে গিয়ে ছিল।তার মানে ও জানত যে শাদুলের কাছে বেশি কথা বললে ওর ইমেজ নষ্ট হয়ে যাবে। বড় মামার কপালে ভাঁজ,-কিন্তু আপনাদের বাকি লোকজন?
-মঙ্গন গিচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে।ওত্থানে রাস্তার ধারে জঙ্গলের ভিত্তর নাকি একখান আধ খাওয়া মানুষ পাওয়া গিচ্ছে।
গ্যাটসো চমকে ওঠে।সে কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই বড় মামা বলে,-কেন সেখানে কেন? সে তো অনেক নীচে।
-লোকডার হাতে যে ব্যাগ ছিল সেইডাতেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছিল। নাম বুঝা যাচ্ছে না। রক্ত আর দাঁত চিবানোতে অনেকডা নষ্ট হইয়ে গিচ্ছে।
-এত খবর আপনি কী করে জানলেন?
-ওই পুলিশগুলানই তো কইল। ওরা যতক্ষণ না ফিরছে ততক্ষণ বইসে থাকতে হবে।
-আপনার হাজব্যান্ড!
-নেই। আমরা কাজিনের সঙ্গে এসেচ্ছি।
-আপনাদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গাই তো!-সিওর?
-আমাগো বাড়ি যাবার ব্যবস্থা কইরে দিন প্লীজ।ভদ্রমহিলা বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ওঠে।
-চলত বিটলে, আরেক বার।বড় মামা আবার পুলিশ স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করে। বেশী এদিক ওদিক করতে হয় না।পাশের ঘরে ল্যাপটপে ঝুঁকে ছিল এস পি সাহেব।ওদের দেখতে পেয়েই ডেকে নেয়,-নন্দী স্যার ইধার আইয়ে। দেখিয়ে জি পি এস ট্রাকিং কী বলছে?
মনিটরের স্কিনে ভেসে আসে বেশ কতক গুলো স্কয়ের বক্স প্যাটার্নের ছবি।
-এতো আপনাদের পুলিশের ছবি। রানিং ইনভেস্টিগেশনের।
-ইয়েস।এরা আমার স্নো লেপার্ড।সিক্কিমের কোণায় কোণায় ছাঁদবিঁধ করতে পারে। নর্থ সিক্কিমের হিল এরিয়া অ্যান্ড ফরেস্ট এরিয়া লাইক এ লেপার্ড ফুঁড়ে দেয়। সো ইউ ডোন্ট ব্লেম টু মাই ফ্রেন্ডস! মাই ডিয়ার।
-ওকে!বাট হাফ ইটিং ট্যুরিস্টের কী খবর? ওদের জন্য এই ম্যাডামদের বাড়ি ফেরা হবে না যে। সেটা কী ভেবেছ?
-ইয়েস! ওনার পাসপোর্ট ভিসা সব ওই কুতুব বলে লোকটার কাছে। বের করে দিতে হবে।দেন?
-আর একটা কথা।
-কুতুব এনার হাজব্যাণ্ড নয়,তাই তো।
বড়মামা চুপ হয়ে যায়। শুধু কি তারই বুঝতে ভুল হয়ে গেল!
-এই ধরণের বহু এজেন্ট ওদিকে থেকে লোক কালেকশন করে এদিকে নিয়ে আসে।বদলে মে থোক টাকা পেয়ে যায়।অউর এক ইম্পরট্যান্ট বাত হ্যায়,-ইস লোগো কো কাভি কাভি কিডন্যাপিং কি কেস ভি লাগে। বাই দি বাই ফির ইধার কিস লিয়ে আনা পরে? সের গিল সাহেব বড় মামার দিকে কোঁচকানো ভ্রু তুলে শুধায়।
-নাথিং লাইক দ্যাট! জাস্ট পুছনে আয়া কি,এই লোকগুলো কতক্ষণ এখানে থাকবে? ওরা কি হোমে ফিরে যেতে পারে?
-সিওর!
-আর একটা কথা। আধ খাওয়া মানুষ! আই মীন হাফ ইটিং ম্যাটারটা বোঝা গেল না? কোনো জীব জন্তু?
সের গিল সাহেব খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর নিজের মোবাইল স্টোর থেকে বের করে বেশ কিছু ছবি। দেখেই আঁতকে ওঠে বড় মামা। বলে ফেলে, এ গুলো কী? সব হাফ ইটিং!
-ইয়েস, কামড়ানো পিঞ্চ করা সব বডি। কোনোটার একটা পা নেই তো কারোর দুটো কিংবা হাত বা শুধুমাত্র বডি।
বড় মামা আরো একবার সেই ভিডিও ক্লিপিং এবং স্টিল ফোটোগুলো স্ক্রল করে করে দেখে।
-নাহ মোটেই সুবিধের মনে হচ্ছে না।কিন্তু এর সোর্স নিকালনা জরুরি।
-চেষ্টা চলছে। আসলি বাত অউর হ্যায়।সের গিল সাহেব গ্যাটসোকে দেখে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,আব হোম যাইয়ে।ইনকো ভি লে যাইয়ে।ওরা ফিরলে তুরন্ত খবর দেব। অউর এক রিক্যুয়েস্ট, স্যার আপ মেরে সিনিয়র থে ইস লিয়ে ফির রিক্যুয়েস্ট কর রাহা হুঁ, আপ হামরো এক কার লি জিয়ে। জরুরত হো তো দো কনস্টেবল ভি লিজিয়ে। সেফটি কে লিয়ে।
-থ্যঙ্কস! কিন্তু এখন দরকার নেই।
ভাড়া গাড়িতে বড় মামা গ্যাটসোকে সঙ্গে নিয়ে ফিরছিল সঙ্গে ছিল বাংলাদেশি ভদ্রমহিলা আর তার ছোট্ট মেয়ে বিটলে।ও জানলার ধারে বসে ছিল। মাঝে মাঝে মায়ের সঙ্গে কথা বলছিল আর হেসে উঠছিল। হয়তো এতক্ষণ এক নাগাড়ে পুলিশ স্টেশনে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিল। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এক চাপা উত্তেজনায়। এখন রিলিফ পেয়েছে।গুনগুন ক’রে অস্ফুট স্বরে গান গায়।
সবাই চুপ।গাড়িটা কিছু রাস্তা পেরোতেই বড় মামা গ্যাটসোর কাঁধে হাত রাখে,-ট্যুরিস্ট গায়েব হয়ে যাওয়ার খবর আর তাদের এই মারাত্মক পরিণতির খবর অল ইন্ডিয়া বেসিস নিউজ চ্যানেল বা পেপারগুলো কভার করে না কেন? সিক্কিমের মেন ডেইলি পেপার সিক্কিম এক্সপ্রেসকেও দেখলাম নীরব।-হোয়াই?
-বহোত দিনো সে এক লড়াই চল রাহা হ্যা স্যার ইঁহা। আপনাদের মত ট্যুরিস্ট লোগ এখানে ঘুমনে আসে লেকিন দার্জিলিং সে যাদা ইয়ে পাহাড় অন্দর সে জ্বল রাহা হ্যা। সিক্কিম ফর সিক্কিমিজ! পেপার ওয়ালারাও চায় এই রকম কিছু একটা হোক। গোর্খাল্যান্ড কা ডিমান্ড আভি হুয়া।লেকিন সিক্কিম ফর সিক্কিমিজ–বহোত সালো সে ডিমান্ড আছে।
সিকিমের প্রাচীন জনজাতি লেপচা।ওদের ভাষাও নিজস্ব এবং সুপ্রাচীন।সিকিম,ভুটান, দার্জিলিং, কালিম্পং, নেপাল ও ডুয়ার্সের এরা ছড়িয়ে আছে। কিন্তু মূল ভূমিপুত্র হিসেবে এরা তেমন সুযোগ সুবিধা পায় না।বরঞ্চ ভুটানি নেপালিরা এসে ওদের জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে।বড়মামা বলে, এই জন্যই কি ইণ্ডিজিনাস লেপচা ট্রাইবাল অ্যাসোসিয়েশন ফর্ম করেছে? এরা কি এই নটোরিয়াস কাজগুলো করে?
-নো স্যার। এখানের লেপচারা বহোত শান্ত। খুন খারাবি কিডন্যাপিং ই সব কামের সঙ্গে যোগ রাখে অলগ অলগ ব্লাইন্ড উলফ গ্রুপ। বলতে বলতে হঠাৎ চুপ করে যায় গ্যাটসো।এপাশ ওপাশ দেখে নিয়ে ড্রাইভারকে দ্রুত যেতে ঈশারা করে।
দেখতে দেখতে দিনের আলো কমে আসছে।সঙ্গে সঙ্গে মেঘের কালো চাদর উড়ে চলেছে।
বড়মামা এই রকম একটা কিছু সন্দেহ করছিল। কোথাও না কোথাও গড়বড় তো হচ্ছে।তাড়াতাড়ি রুমে ফিরতে পারলেই রক্ষে।
গুনগুন করে গানের রেস আসছিল অনেক ক্ষণ থেকেই। এবার আরো স্পষ্ট হল। বিটলে গান গায়ছে—নতুন ধানের চিঁড়ে মুড়ি নিয়ে যাব মেয়ের বাড়ি
মেয়ে দেখিস করবে সেলাম ভক্তি ভরে পাই
আয় রে আয় রে ধান কাটতে যাই।
অঘ্রাণেতে উঠবে ফসল ভরবে গোলা ভাই
খেজুর রস আর পাকান পিঠের তুলনা যে নাই,
ছোলার শাগ আর ডাল খিঁচুড়ি নেই রে তাহার কোনো জুড়ি
জারি গান আর যাত্রা পালায় বাজবে রে সানাই।
আয় রে আয় রে ধান কাটতে যাই।
রুমে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে নি।বড়মামা আর বিটলেরা ফিরতেই সবাই ঘিরে ধরে।বড়মামি বেশ মেজাজ নিয়েই বলে, কোথায় গিয়েছিল?
বড় মামা স্বভাবমত গম্ভীর হয়ে বলে,ছোট আর রামসিংকে ডাকো। কথা আছে।
-ওরা মামা-ভাগ্নে বেরিয়েছে। বলল,এখন বৃষ্টি থেমেছে। চারপাশটা দেখে আসি।
-ওহ শিট! ( ক্রমশ)
দশম শ্রেণি,কেশপুর গার্লস হাই স্কুল,পশ্চিম মেদিনীপুর
বর্ষা বাদল
সোনালি
ব্যাঙের মাথায় নতুন ছাতা
মুখে চওড়া হাসি।
ব্যাঙ গৃহিনী বলেন
আমি বড্ড ভালবাসি
ঝিরিঝিরি জলের গান আর
মেঘলা আকাশ কালো।
গ্যাঙর গ্যাঙ গানের সুরটি
শুনতে ভারি ভালো।
কর্তা ব্যাঙের সেকি খুশী!
কচু পাতার তলায়
চকচকে চোখ রেয়াজ চলে
দুপুর সন্ধ্যে বেলায়।
জলে কাদায় ছপর ছপর
হ্যাঁচ্চো বলেন কাকা
চতুর্দিকে ভিজে জামা
যে যেদিকে তাকায়।
মায়ের হাতের খিচুড়ি আর
পাঁপরভাজার মজা
ইলিশ মাছ আর বেগুনি সব
হচ্ছে গরম ভাজা।
পুচুন টুলি টুকুন সবাই
শুনছে বাদলা সুর,
বৃষ্টি দিনে গল্পগাছার
আল্লাদে ভরপুর।
অষ্টম শ্রেণি, শতদল বালিকা বিদ্যালয়, উত্তর ২৪ পরগণা
সুন্দর এক পৃথিবীর জন্য
বহ্নিশিখা ঘটক
যেদিন থেকে ওরা পুরনো ভাড়া বাড়ি ছেড়ে এই নতুন ফ্ল্যাটে চলে এল, রকির খুব মন খারাপ হয়েছিল। ওখানে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ওর খুব বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় ইঁট দিয়ে উইকেট বানিয়ে ছুটির দিনে ক্রিকেট খেলত। ওদের বাড়ির সামনেটা ছিল চোরাগলি। ফলে ওই রাস্তায় গাড়ি ঢুকতো না সহসা। তাই মাঠের অভাব পূরণ করতো সেই গলি পথ।
সেই বাড়ি ছেড়ে ওরা চলে এসেছে অনেক দূরের এক নতুন ফ্ল্যাটে। এসে ইস্তক ওর মন খারাপ। সব অচেনা মুখ। এখানে কেউ কারুর সঙ্গে মেশেনা । রাস্তায় খেলা সে তো কল্পনার বাইরে । যেন পুরাকালের কথা। মেঠো রাস্তা, গলি বলে যা কিছু ছিল সব অতীত। এখানে ওদের ফ্ল্যাটের সামনে বিশাল চওড়া পিচঢালা রাস্তা । সারাক্ষণ গাড়ি চলাচল করছে। তাছাড়া সেটা সম্মান জনক নয় এখানকার বাসিন্দা হিসেবে।
ছেলে ছোকরাদের খেলার জন্য ক্লাব হাউস আছে। বাবা এখানে আসার পর একদিন নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে এনেছে। সেখানকার হাই-ফাই ব্যবস্থা দেখে রকির মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়। ওর সমবয়সী এখনো কাউকে পায়নি। যে দুএকজনকে দেখেছে, তারা সবাই যেন অন্য জগতের। ইংরেজিতে কথা বলছে। রকি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেনা তা নয়, সে তাদের সঙ্গে মিশতে পারেনি একটু ইন্ট্রোভার্ট বলে । হ্যালো- হাই করেছে যেদিন প্রথম একটা গেট টুগেদার হোলো কমিউনিটি হলে।
নতুন জায়গায় এসে ওর মন তাই কিছুতেই বসছেনা। সিক্স থেকে সেভেনে ওঠার সময় অংকে হাইয়েস্ট নম্বর পেয়েছে বলে বাবা একটা কম্পিউটার গিফ্ট করেছিল । কপিউটার ওর স্কুলে একটু আধটু শেখানো হয়। কিন্তু আরো ভালো করে শেখার জন্য মা ওকে কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছে। মা বলেছে এটি ঠিকমতো না শিখলে কোনো ভবিষ্যত নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে এর আধিপত্য। তোমার পড়াশোনা যতো এগোবে ততো কম্পিউটার তোমার সঙ্গী হয়ে চলবে। কাজেই এটা যতো তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করবে তোমার শেখা ততই সহজ হবে।
মার কথা যে ঠিক তা স্কুলের ভালো ছাত্রদের কথা থেকে বোঝে। আর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ বাবা। বাড়িতে থাকলে সারাদিন ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকে। অনেক দিন বাবাকে অফিসে যেতেই হয়না। ঘরে বসে বসে অফিসের কাজ করে দেয়।
মা চাকরি করে প্রাইমারী স্কুলে। বাবার মতো মারও এন্ড্রয়েড ফোন আছে। মা বলে এখানেও কম্পিউটারের মতো অনেক কাজ করা যায়। সত্যি বলতে কি ভবিষ্যতে এন্ড্রয়েড ফোনই বিশ্ব জয় করবে। কম্পিউটার ল্যাপটপ লাগবেনা। রকি বইতে পড়েছে কম্পিউটারের প্রথম জন্মে সে ছিল একটা বিশাল আকৃতির যন্ত্র। এক ঘরজোড়া অবস্থান। তারপরে যত দিন যেতে লাগলো সে হতে লাগলো খর্বাকৃতির বিপরীতে বিশালভাবে কর্মদক্ষ। ক্রমে ক্রমে সেটি যে মোবাইলের মতো ছোট হয়ে যাবে সে বুঝতে পারছে।
তার এখনো নিজের একটা এন্ড্রয়েড ফোন হয়নি। সে জানে ঐ ফোন কম্পিউটারের মতো কাজ করে।
লক ডাউনের সময় সে তো অন লাইনে ক্লাস করেছে মায়ের মোবাইলে। মা অবশ্য বলেছে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে এবার এনড্রয়েড ফোন কিনে দেবে।
এদিকে তার যে ভালো লাগে গল্পের বই পড়তে। বাবা তাকে জন্মদিনে এবার গল্পের বইয়ের বদলে কম্পিউটার শেখার এক সেট বই উপহার দিয়েছে। সেসব একটু উল্টেপাল্টে সে রেখে দিয়েছে।
কিন্তু তাকে এখন টানছে আদ্ধেক শেষ করা গোয়েন্দা গল্পের বইটা। স্কুলের এক বন্ধুর কাছ থেকে এনেছে। মা জানেনা। এখন মা বাড়ি নেই। এই ফাঁকে বইটা শেষ করতে পারবে। সে কম্পিউটার বন্ধ না করেই বইটা খুলে বসলো।
রকি মগ্ন হয়ে বই পড়ছিল। হঠাৎ কী একটা শব্দে চোখ তুলে দেখে চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে অদ্ভুত পোশাকে ঢাকা একটি মানুষ। মাথায় বিশাল একটা টুপি। তাতে লাল হলুদ পাথর বসানো। তা থেকে উজ্জ্বল রশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে ঘরের চারিদিকে। মাথা নেড়ে নেড়ে লোকটা তাকে দেখছে। তার চোখদুটো অদ্ভুত। কাচের মতো চকচকে আধারে কালো গোল তারাদুটি জ্বলজ্বল করছে। তাতে সাদা আর হলুদ কয়েকটা বিন্দু। আলো যেন ছিটকে বের হচ্ছে সেগুলো থেকে।
আচম্বিতে তার ঘরে এমন একটি অজানা অচেনা অবাঞ্ছিত অতিথিকে দেখে প্রথমে সে ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠতে যাচ্ছিল। নির্ঘাত কোনো চোর এরকম ছদ্মবেশে ঘরে ঢুকে পড়েছে। এই সময় মা মর্নিং স্কুলে। বাবাও অফিসে। ঘরে শুধু রান্নার মাসী আর সে। তার স্কুলে স্পোর্টসের পরদিন বলে ছুটি। সেই সব খবর নিয়েই বোধহয় চোর দিনের বেলাতেই চুরি করতে চলে এসেছে জাদুকরের মতো সাজগোজ করে। যদিও জাদু দন্ড হাতে নেই। তবে হিপ পকেটে রিভলবার থাকতে পারে।
রকি বই ফেলে তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। ঘরের কোনায় রাখা ব্যায়ামের ডাম্বেল হাতে নিয়ে বলল,
-এই, তুমি কে? এখানে কী করতে এসেছ? দরজা বন্ধ, তবু কীভাবে এলে? কে তোমাকে দরজা খুলে দিল?
মানুষটি ইশারায় তাকে চুপ করতে বললো। তার চোখ মুখে এখন একটা অসহায় ভাব। যেন বলতে চাইলো, ভয় পেয়োনা ভয় পেয়োনা তোমায় আমি মারবোনা। সত্যি বলছি কুস্তি করে তোমার সঙ্গে পারবোনা।
-কী, তুমি তোমার প্রিয় কবি সুকুমার রায়ের ছড়ার কথা ভাবছো তো? মানুষটি বলল। এখন তার চোখে ফুটে উঠেছে হাসির আভাস। ঠিকই, আমি ভয়ংকর কেউ নই। ভয় পেয়োনা। আমার মাথার টুপি দেখে অবাক হয়েছো। এ সম্পর্কে পর বলবো।
রকি ভারি অবাক! এ যে দেখি তার মনের ভাবনা বুঝে ফেলছে! এ কে?
-ঠিক, ঠিক। আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারছি।
-কিন্তু কীভাবে? রকি এবার ভয় ভুলে অবাক গলায় চেঁচিয়ে উঠলো।
-কারণ আমি দেখতে মানুষের মতো হলেও পুরোপুরি তোমাদের মতো নয়। আমি মানুষের ভার্চ্যুয়াল রূপ। যন্ত্র মানুষ। একধরনের রোবটও বলতে পার। আর আমাট টুপিতে অজস্র চিপস্ লাগানো। আমার দুটো চোখ আরো শক্তিশালী চিপস। এ দিয়ে মননশীলতার কাজ হয়। আর টুপির চিপস আমার মুভমেন্টের কাজ করে ঐ যাকে বলে আমার বাহন।
রকি সবিস্ময়ে দেখতে লাগলো এই অচিন জীবটিকে। মানুষের ভার্চুয়াল রূপ। সে আবার কী? তার কিছু বোধগম্য হলনা।
দেখতে অবিকল মানুষের মতো। এই রোবট সাইন্স সিটিতে যেমন দেখেছিল সেরকম নয়। আজকাল একদম মানুষের মতো দেখতে রোবট তৈরি করছে অনেক দেশ। জাপান যার মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে। ভারতের বিজ্ঞানীরাও রোবট তৈরিতে দক্ষ। কিছুদিন আগে একটা বিজ্ঞান পত্রিকায় নাকি এন্ড্রয়েড রোবটের কথা বেরিয়েছে। বাবা বলছিল দক্ষিণ কোরিয়ার ইন্সটিটিউট অফ ইনডাসট্রিয়াল টেকনোলজি এটা তৈরি করেছে। নাম এভার -সিক্স। সে একটা সঙ্গীত অনুষ্ঠানে বাদকদলকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
এ কি সেরকমই কিছু? কিন্তু একে এখানে কে পাঠালো? চেহারা যতো বড় জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আসা সম্ভব নয়। ওদের ফ্ল্যাটের দরজা সবসময় বন্ধ থাকে। কোনদিক দিয়ে সে এলো?
রকির হতভম্ব ভাবের মধ্যেই রোবটটি ঘরের চারপাশ ঘুরে এসে কম্পিউটার টেবিলের ওপর কম্পিউটারে হেলান দিয়ে বসল। রকি আর্তনাদ করে উঠলো,
-কী করছো কী? কম্পিউটারের ওপর বসছো, ওটা ভেঙে যাবে।
রোবটটা সোজা হয়ে বসে বলল,
-আরে কিছু হবেনা এই কম্পিউটারের। আমিতো আসল মানুষ -মানে রোবট নই। আসলের ভার্ভার্চুয়াল রূপ। আমার শরীর তো এখানে নেই। সেটা অন্য গ্রহে। এ, শুধু তার ছায়া মূর্তি। এর কোনো ওজন নেই। বলে সে একটু হাসল। তুমি তো নতুন শিক্ষাব্রতী। ফিজিক্সের ম্যাজিক তোমার কিছু আয়ত্ত হয়নি। হলোগ্রাফির অতি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের গ্রহের বিজ্ঞানীরা সৃষ্টি করেছে আমার এই রূপ। বলে সে অভয়দানের ভঙ্গিতে আবার হাসলো।
একটু আগে ভার্চুয়াল মানুষটি যে হাসার ভঙ্গি করেছিল, সেটাও চালাকির নয়, সহজ সরল।
হাসি এমন জিনিস যা ভরসা যোগায় সহজেই। বিশেষ করে তার মধ্যে যদি বন্ধুতার আভাষ থাকে।
রকির ভয় ভাবটা কাটল। একটু পরে সাহস অর্জন করে জিজ্ঞেস করল
–তোমাকে কী বলে ডাকব, তোমার নাম কী?
–আমি ভি ওয়ান।
–ভি ওয়ান? এ আবার কেমন নাম? রকি অতি সাহসী হয়ে বলে ফেলে।
– আমি তো ভিন্ গ্রহ থেকে এসেছি। আমাদের গ্রহে সবাই আমরা ভার্চুয়াল মানুষ। তাই আমাদের সবার নাম ভার্চুয়ালের প্রথম অক্ষর ভি দিয়ে হয়। তারপর তাতে সংখ্যা যোগ করা হয়।
–ভিন গ্রহ? একটু আগে অন্য গ্রহ জাতীয় একটা কথা বলেছিল বটে। সেটা মাথায় আসেনি যে পৃথিবীর বাইরে কোনো গ্রহের কথা বলেছে। এখন ভাবতে গিয়ে বিষ্ময় থই পায়না রকির। সে ভিনগ্রহের মানুষদের কথা গল্পের বইতে কেবল পড়েছে। সত্যি সত্যি ভিন গ্রহের মানুষ তার কাছে এসে দাঁড়াবে সে ভাবতেই পারেনি। ঘোর কাটিয়ে জিজ্ঞেস করল :
–কী নাম সেই গ্রহের?
–ভি ওয়ান। গ্রহের নামেই আমাদের নাম হয়। একেক গ্রহের একেক প্রতিনিধি। আমি ভি ওয়ানের প্রতিনিধি। এরকম অগুনতি গ্রহ ও তার প্রতিনিধি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মহা-মহাকাশে ছড়িয়ে আছে। আমরা সবাই সার্ভে করতে বেরিয়েছি।
-কীসের সার্ভে?
- আমরা খুঁজতে বেরিয়েছি একটা আদর্শ গ্রহ।
বলে সে তার চোখ ঘুরিয়ে তার ঘরের সবকিছু খুঁটিয়ে দেখল। তারপর হাসির চেষ্টা করে বলল:
– কি, কম্পিউটার ভালো লাগছেনা, তাই গল্পের বই পড়ছো?
রকি আবারও ভীষণ অবাক।
–ও এ কথাটাও তুমি জান? কী করে একটু বলবে ভি ওয়ান?
–জানবনা কেন। এই যন্ত্রের যুগে এটা খুব সহজ ব্যাপার। বলে গা নাড়িয়ে জামাটা দেখিয়ে ভি-ওয়ান বলল:
–আগে আমাদের শরীরের জামাটা হতো একটা স্পেসশিপ। এতে চড়ে আমরা গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যেতাম। এখন আর সশরীরে কোথাও যেতে হয়না। এন্ড্রয়েড সিস্টেমের দৌলতে আমরা এখন ভার্চ্যুয়ালি চলে যাই।
রকি দম বন্ধ করে শুনছিল। বলল,
-সেটা কীরকম ভাবে হয়?
-ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এই যেমন, তোমার কম্পিউটারে ইন্টারনেট খোলা ছিল। তুমি কোনো কাজ করছিলেনা। তাই আমি খুব সহজেই তোমার নেটওয়ার্কের পথ ধরে তোমার ঘরে ঢুকে পড়লাম। আমার শরীরে অনেক রকম চিপস ভরা আছে। সামনের কোন বস্তু, প্রাণী বা মানুষের সম্পর্কে এই চিপস থেকে জানতে পারি।
–তাই? তাদের মনের কথাও? রকির চোখ কপালে ওঠে। এই যেমন আমার মনের না বলা কথা বলেদিলে। এমন চিপস্ যখন আছে, তবে ঘরে বসেই সব কথা জানতে পার।
না ফিল্ড স্টাডি বলে একটা ব্যপার আছে। তাছাড়া তোমাদের মতো ওয়াই জেনদের মনে কথা জানতে হলো তাদের কাছাকাছি যাওয়া চাই, তবে তাদের কথা বুঝতে পারবো।
-বাহ্ তাহলে তো তোমরা জাদুমন্ত্র শিখে গেছ।
ভি ওয়ান বলল,
–হবেনা কেন? এ হলো প্রযুক্তির উন্নতিকে ঠিক ঠিক কাজে লাগানো।
দেখো, আগে যেমন তোমাদের অনেক দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগই সম্ভব ছিল না। এখন চাইলেই বহু দূরের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারছো, চাইলে এমনকি চোখের সামনে দেখতেও পারছ। ফোন এলো বলেই সেসব সম্ভব হল। এ হলো এনড্রয়ফোনের কেরামতি। আবার দেখো, এখন তোমরা আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশেও উড়ছো। শুধু তাই নয়, অন্য গ্রহে পাড়ি দিতে চাইছ।
আমরা অনেক দিন আগে এসব স্টেজ পেরিয়ে এসেছি। এখন আমাদের সবকাজ যন্ত্রের মাধ্যমে হয়। সত্যি বলতে কি আমাদের গ্রহে সবাই যন্ত্র মানুষ। সেখানে কাজ ছাড়া আর কিছু নেই। সেখানে কেউ হাসেনা। আনন্দ করেনা। শুধু কাজ আর কাজ।
–কিন্তু তুমি মনেহয় একটু আগে হাসতে চেষ্টা করলে। রকি বাধা দিয়ে বলল।
– হুঁ। সেটা তোমাদের এখানে এসে দেখতে দেখতে শিখেছি। হাসি আনন্দ ছাড়া জীবন যে সঠিক জীবন নয় বুঝতে পেরেছি। তাই এখন আমরা খুঁজছি এমন একটি গ্রহ যা হবে পবিত্র সুন্দর আদর্শ গ্রহ । যেখানে হাসি আনন্দ ভালবাসা থাকবে। শুধু যন্ত্র নয়, প্রকৃতির আধিপত্যও থাকবে সেখানে। প্রকৃতির সন্তান মানুষের অগ্রগতিতে সহায়ক হবে যন্ত্র। এরপর সব গ্রহকে সেই আদর্শ গ্রহের মতো করে গড়ে তুলতে হবে। এ নিয়ে মহা-মহাকাশ গবেষণাগারে চলছে গবেষণা। সেই গবেষণার সহায়তায় বিভিন্ন গ্রহে গিয়ে আমরা তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছি। আমি এসেছি পৃথিবীতে। এর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে।
–কী তথ্য পেলে?
–আমরা দেখছি তারামন্ডলের মধ্যে পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে সবুজের প্রাধান্য আছে। আছে স্নেহ ভালোবাসা। পরস্পরের জন্য টান।
– তাই নাকি? পৃথিবীর প্রশংসায় রকি খুশি হল। তার কাছেও এই সবুজের মূল্য অনেক। গাছপালার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই তার বেড়ে ওঠা। গাছপালা ছাড়া সে কেমন জায়গা? এই বাইশ তলা ফ্ল্যাটে এসে প্রথমে চোখের সামনে গাছপালা দেখতে না পেয়ে তার কেমন লাগছিল। যেন মরুভূমিতে রয়েছে। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তারপর কিছু দিনের মধ্যে মা ব্যালকনি ভর্তি করে ফেলল গাছ দিয়ে।
আর মা বাবার স্নেহ ভালোবাসা ছাড়া কোনো জায়গা সে কল্পনা করতেই পারে না।
– আচ্ছা, আর কোনো গ্রহে সবুজ গাছপালা নেই?
–ছিল। কিন্তু এখন প্রায় নেই। সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে প্রকৃতির দ্বন্দ্ব চিরকালের। একসময় মনে হয় উন্নয়ন জিতেছে। গাছপালা কেটে সবুজ ধ্বংস করে সে এগিয়ে চলেছে। আর প্রকৃতি হেরে গিয়ে চুপচাপ বসে দেখছে। আসলে সেটা সাময়িক ব্যাপার। প্রকৃতির চেয়ে বড়ো মানুষ তো হতে পারেনা। মানুষ প্রকৃতির একটা প্রোডাক্ট। প্রকৃতির চেয়ে বড়ো কখনও নয়। তাই প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে সে তার প্রতিশোধ একদিন না একদিন নেবেই। তার ফলে যেসব গ্রহ একদিন সবুজ ছিল তা পুরোপুরি আবার নুড়ি পাথরের উষ্ণ পিন্ড হয়ে গ্রহ নিপুঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেক গ্রহে আবার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আর্টিফিসিয়াল গাছপালা দিয়ে সবুজের ইম্প্রেশন তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেটা বিশুদ্ধ ফাঁকিবাজি।
আমরা যা দেখলাম, পৃথিবী তবুও কিছুটা সবুজ ধরে রাখতে পেরেছে এখনো । কিন্তু কতকাল পারবে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কারণ উন্নয়ন এখানেও চোখ রাঙাচ্ছে। এখনো সময় আছে। তোমরা যদি সচেতন হয়ে সবুজকে, পৃথিবীকে রক্ষা করার দিকে মন দাও, তবে নভোমণ্ডলে পৃথিবী সেরা ও আদর্শ গ্রহের পুরস্কার পেতে পারে।
রকি মুগ্ধ হয়ে শুনছিল ভি-ওয়ানের কথা। পৃথিবীর বিপদের কথায় তার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাদের বাসভূমি ধ্বংস হয়ে যাবে এ কথা সে ভাবতেই পারছিল না। কিন্তু সত্যিই তো চোখের সামনেই যেভাবে বহুতল নিয়ে পাহাড়ের জনবসতি ভেঙে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, ভূমিকম্প, সাইক্লোন দেখা দিচ্ছে। তারা যে চরম বিপদের সম্মুখীন হতে পারে আর কিছু কাল পরেই, এটা আর অবিশ্বাস্য নয়। আর এটাও তো দেখতে পাচ্ছে, পৃথিবীর বায়ুমন্ডল কী উষ্ণতায় ভরে উঠেছে। কী ক্ষণস্থায়ী হয়েছে শীতকাল। ছয় ঋতুর বিভাগ আর তেমন করে বোঝা যায় না। বাবা বলছিল মাকে এ সি মেশিন যতটা সম্ভব কম চালাতে। এতে গ্রীনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি হয়। এই যে পৃথিবীর পরিমন্ডল এতো গরম হয়ে যাচ্ছে এর ফলে পাহাড়ের মাথার বরফ গলে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। আর তাতে কিছুদিন পরেই সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে তীরবর্তী জনবসতি জলের তলায় তলিয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই সুন্দরবনের অনেক দ্বীপ ডুবে গেছে।
বাবার বলা এই কথাগুলি এখন মনে পড়ায় রকি এই যন্ত্র-মানুষের কথাকে অবিশ্বাস করতে পারলনা । সে অসহায় ভাবে জিজ্ঞেস করল :
– তুমি যখন সব জানো, তাহলে কীভাবে আমরা আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে পারি বলবে একটু?
–সেটাই তো তোমাদের গবেষণা করে বের করতে হবে। বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রব্যবস্থা, সাধারণ মানুষ, সমাজ বিজ্ঞানী সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে সে কাজ করতে হবে। এটা কিন্তু শুধু তোমাদের হাতে। আমরা কিছু করতে পারবনা এ ব্যাপারে। আমরা শুধু দেখতে চাই একটা সবুজ সুন্দর প্রাণবন্ত আদর্শ গ্রহ।
আদর্শ গ্রহ হবে তাদের পৃথিবী? মা কালকেই তো টিভি বন্ধ করে বলছিল, খবর শুনতে আর ভালো লাগে না। চারিদিকে শুধুই হানাহানি, লুটপাট অন্যায় অত্যাচারের কাহিনি। বেআইনি ভাবে গাছ কেটে অরণ্য ধ্বংস করে চলেছে কাঠব্যবসায়ীদের মাফিয়ারা৷। দুর্লভ প্রাণীরা শিকার হচ্ছে তাদের চামড়ার ব্যবসায়ীদের হাতে। কেউ ধরা পড়ছেনা। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে মানুষ উন্নয়ন করছে। প্রতি বছর কতো মিটিং হচ্ছে। কাজের কাজ কবে আর হবে ?
রকি ভাবল আহা আমরা কবে পারবো এমন টেকনোলজি বের করতে যাতে কারুর চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনের কথা বুঝতে পারব! যারা অন্যয় করে মিথ্যে বলে পার পেয়ে যাচ্ছে সেই সব মানুষ মিথ্যে বলার সুযোগই পাবে না। অন্যায় কমবে।
আর কীভাবেই বা সম্ভব হবে প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে উন্নয়ন সাধন করতে ? সেটাই বিজ্ঞানীদের গবেষণা করে বের করতে হবে। সে কাজ আমরা যদি করতে পারি, তবে অন্য গ্রহে যাওয়ার দরকার নেই, কবির ভাবনা মতো এই পৃথিবীটাই তখন মানুষের বাসযোগ্য হয়ে উঠবে । সবুজ গ্রহ বলে পৃথিবী সেরা পুরস্কার জিতে নেবে।
– হবে না কেন? ভি ওয়ান বলল তার মনের কথা বুঝে। স্টেপ বাই স্টেপ কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ, সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং এই তোমরা যেমন শিখছ, তেমনি স্টেপ বাই স্টেপ তোমরাও প্রযুক্তির উচ্চ শিখরে… বলতে বলতে ভি-ওয়ান থমকে গেল। ব্যস্ত হয়ে বলল, এখন চলি। মাস্টার সিস্টেম থেকে ডাক এসেছে.....
রকি কিছু বোঝার বা বলার আগেই যেমন নি:শব্দে এসেছিল তেমনি নি:শব্দে ভি ওয়ান ছোট হতে হতে একটা বিন্দুর মতো হয়ে কম্পিউটারের মধ্যে মিলিয়ে গেল।
রকি সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইল।
তার বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যি কেউ এসেছিল।
বাইশ তলা ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে বাইরে অসীম শূন্যের দিকে তাকিয়ে রকির মন সুদূর ভবিষ্যতের ভয়ংকর পৃথিবীটাকে যেন দেখতে পেল। গাছপালা হীন একটা মৃত গ্রহ হয়ে পড়ে রয়েছে তাদের পৃথিবী আর সব মৃত গ্রহের দলে নাম লিখিয়ে। শিউরে উঠলো সে।
না না, এ হতে দেওয়া যায় না।
রকির বুকের মধ্যে আর্তনাদ ফোটে পড়ল।
রকি বইটা সরিয়ে রেখে কম্পিউটার নিয়ে বসল। তাকে সব শিখতে হবে। সে আপ্রাণ চেষ্টা করবে একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য। এমন একটা সফটওয়্যার সে বানাবে যা মানুষের অন্যায়, মিথ্যাচার সহজেই ধরে ফেলতে পারবে। আর….
একটা স্বপ্নের পৃথিবীর কল্পনায় ডুবে গেল রকি।
বিদ্রোহী কবি
শুভশ্রী সরকার
অষ্টম শ্রেণী
সুখচর শতদল বালিকা বিদ্যালয়তন
বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতো এক মহান পুরুষের আবির্ভাব হয়েছে। তার নাম কাজী নজরুল ইসলাম। শুধু সাহিত্যাঙ্গনের মানুষদের নয়, তিনি অন্যায়,জুলুম,অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংগ্রামীর চেতনা এনেছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে এক বিস্ময়কর নাম। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুখীরাম নামে পরিচিত ছিলেন। এই ব্যক্তিটি নিজের জীবনে জড়িয়ে থাকা সমস্ত দুঃখ দুর্দশাকে তুচ্ছ করেন। সাহিত্য কবিতায় ছড়িয়ে দেন দুঃখকে জয় করে সুখ সুন্দরকে আঁকড়ে নেওয়ার বাণী। তাঁর কবিতায় ছিল চির যৌবনের জয়ধ্বনি। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে তিনি ছিলেন সমুজ্জ্বল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাশাপাশি জেগে উঠলেন আরও এক কবি। প্রতিবাদের সুরের ঝঙ্কারে মানুষের মনকে প্লাবিত করতে গিয়ে তিনি কারাবরণ করেন বহুবার। কিন্তু তাঁর লেখা থেমে যায় নি একবারও। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁর লেখার লেখনীর বাহুবলে বিদ্রোহ করে গেছেন। তাঁকে আমরা আরও একটি নামে জানি "বিদ্রোহী কবি"।
স্মরণীয় দিবস
বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস
(২৯ জুলাই)
কলমে- দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
২৯ শে জুলাই আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস। পৃথিবী জুড়ে বাঘ ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার জন্য, বাঘ সংরক্ষণের জন্য ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বেশ কয়েকটি দেশ এই দিনটি পালনের উদ্যোগ নেয়।
বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো, বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাঘ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করা।
চোরাশিকার, বনাঞ্চল ধ্বংস ও বেআইনি ব্যবসা ইত্যাদির কারণে বিগত দেড়শো বছরে বিশ্বে প্রায় ৯৫% বাঘ কমেছে।
২০১০ সালের ২৯ শে জুলাই, বেশ কিছু দেশ রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইগার সামিটে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই সামিটে যে ১৩ টি দেশ অংশগ্রহণ করে, সেই দেশ গুলি হল, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাউস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম কম্বোডিয়া এবং রাশিয়া।পৃথিবী থেকে যাতে আর বাঘের সংখ্যা না কমে এবং সেই সম্পর্কে সচেতনতা প্রচারে বদ্ধপরিকর হয় তারা।
যে সকল দেশের বাঘের বসবাস বেশি তারাও এই চুক্তিতে সামিল হয়। ২০২২ সালের মধ্যে নিজেদের দেশে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার ব্রত নেয় দেশগুলি।
পুরো পৃথিবীতে যত বাঘ আছে তার মধ্যে ৭০% আছে ভারতবর্ষে। রিপোর্ট বলছে, এই মুহূর্তে ভারতে কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশের সবথেকে বেশি বাঘ আছে। তবে বক্সা সহ উত্তর- পূর্বের অন্তত তিনটি ব্যাঘ্র প্রকল্প আপাতত বাঘ শূন্য। সেগুলিকে পুনরায় বাঘে ভরাতে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা চলছে।
১৯৭০ সালের বিশ্বজুড়ে শার্দুল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ভারতে প্রজেক্ট টাইগার শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে বাঘ সংরক্ষণ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে ভারতবর্ষ বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার(WWF) এর মতে, বিশ্বে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ৩৯০০। লক্ষ্য আছে, আগামী বছরের মধ্যেই সেই সংখ্যা ৬০০০ বেশি করার।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
(ছোটোবেলা ১৪০ পড়ে সুরশ্রী ঘোষ সাহা যা লিখল)
ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪০ পড়লাম। প্রথমেই মন কেড়ে নিয়েছে ঋপণ আর্যের তোলা একটি ছবি। যে ছবির তিন বয়সের তিনটি বাচ্চার হাস্যোজ্জ্বল মুখ ক্ষণিকের মধ্যে যেকোন কাউকে শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তারপর ভীষণ ভালো লাগল সম্পাদকীয়তে ছড়িয়ে থাকা লেখিকা মৌসুমী ঘোষের কথাগুলি। তাঁর কলমে ছোট্ট করে পুরো সংখ্যারই সুন্দর একটা আভাস পেয়ে যাই শুরুতে।
তবু পড়তে যখন বসেছি তখন সকল আঁকা দেখব ও লেখা তো পড়বই, তাই না! ছোট্ট নার্সারীর ছাত্রীর আয়ুস্মিতা সামন্ত ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অভিষিক্তা দাসের সুন্দর আঁকা দুটির প্রশংসা না করলেই নয়। এইটুকু বয়সে যদি তোমরা এত সুন্দর আঁকতে পারো, তাহলে বড় হয়ে ভিনসেন্টের মতো নাম তো করতেই পারো, তাই না?
আঁকার পর লেখার কথা বলতে শুরু করি চন্দ্রশেখর ঘোষের ছড়ার বৃষ্টি দিয়ে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে তো আমিও মনের উঠোনে কুমির ডাঙা খেলতে থাকি।
তারপর যে কথা না বললেই নয়, তা হল, 'পুরানো সেই দিনের কথা' নামক বন্দনা সেনগুপ্তর কলমে ব্যাবিলনের শূন্যোদ্যান বা হ্যাঙ্গিং গার্ডেন অফ ব্যাবিলনের কথা। আমার কাছে এটি বিশেষ ভাবে সুখপাঠ্য হয়ে উঠেছে এই সংখ্যায়। কারণ, তাঁর কলমে গল্পের আকারে ইতিহাস উঠে এসেছে। যে ইতিহাসকে পড়তে পাঠ্য বইয়ের পাতায় শিশু-কিশোরদের নিরস লাগে, তাকেই কত সুন্দর ভাবে লেখিকা জানিয়েছেন মিষ্টি কাহিনির মাধ্যমে। শিশু-কিশোরদের জন্য আদর্শ এই লেখা সকল পাঠক মনকে আকৃষ্ট করবেই।
ছোটদের জন্য মনোগ্ৰাহী এক গল্প পাই এই সংখ্যয়, যা হল, রাহুল পাত্রর লেখা 'স্বপ্নের বিশ্বাসঘাতক'। বাচ্চাদের কাছে এই গল্প কিছুটা শিক্ষনীয়। কে বন্ধু, আর কে বন্ধু নয় তাও চেনায় এই বিশ্বাসঘাতকতার আতঙ্ক! লেখকের কলমের মুন্সিয়ানায় অনুপ্রাণিত হই।
স্মরণীয় দিবস প্রসঙ্গে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস
(১১ই জুলাই) নিয়ে লিখেছেন দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে। বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা যে দেশের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছে এবং দেশের জনসংখ্যা যে মানবসম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা সেই দেশের সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে, সেকথা লেখিকা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন ঠিক এই দিনটিকে নিয়ে সুদীর্ঘ আলোচনা করে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে যে দেশের নিরক্ষরতা, বেকারত্ব, দারিদ্রতা এবং অনাহারের মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে সেই কথাও মনে করিয়ে দিতে ভোলেন নি। বর্তমান সময়ের একটি উপযুক্ত আলোচনার দিক উঠে এসেছে লেখিকার কলমে তা অনস্বীকার্য।
শ্রীকান্ত অধিকারীর লেখা ধারাবাহিক 'লাচুঙের নেকড়ের' কথাও এই পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে বসে বাদ দিলে চলবে না। খুব সুন্দর একটি উপন্যাস এগিয়ে চলেছে জ্বলদর্চির পাতায়। আর সবশেষে উল্লেখ করতে হয় ছোটোবেলা ১৩৯ পড়ে লেখা গল্পকার নীতা রায়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া। যেখানে উপরি পাওনা হিসেবে পাওয়া যায় বিধানচন্দ্র রায়ের দুটি মজার ঘটনা।
বন্ধুরা, তোমরা জ্বলদর্চি ছোটবেলা পড়তে থাকো, তবেই ছোটবেলার বয়সেও থাকতে পারবে। বুড়ো হতে আর কে চায়, বলো!
0 Comments