সুমিত্রা ঘোষ
অসাধারণ পরিশ্রমী প্রীতরামের সংযত চরিত্রের মানুষ ছিলেন। হাতে অতিরিক্ত টাকা পেলেও কোনদিন অপব্যবহার করে টাকা উড়িয়ে দেননি। দেওয়ানের পদ থেকে অবসর নিয়ে তিনি কলকাতা ফিরে এলেন। সেই সময় তিনি বেশ কিছু টাকা পেয়েছিলেন, সেই টাকা থেকে উনিশ হাজার টাকায় মকিমপুর তালুকটি নিলামে কিনলেন। সেই সময় হাইকোর্টে এই রকম হামেশাই হত। প্রীতরাম দাসের পিসেমশাই অক্রুরচন্দ্র মান্না কলকাতার নামকরা ধনী ব্যক্তি ছিলেন।প্রীতরাম যখন দুই ভাইকে নিয়ে পিসেমশায়-এর বাড়ির আশ্রয়ে থাকলেন তখন তিনি মামার সদগুণ আয়ত্ত করেছিলেন। সেইসময় কলকাতার জমিদার তনয়রা স্ফূর্তি করে টাকা পয়সা উড়িয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত আছে। প্রীতরাম সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী চরিত্র— যথেষ্ট টাকাপয়সা উপার্জন করেছেন এবং তা বৈষয়িক খাতে ব্যয় করেছেন।
যেমন,মকিমপুরে তালুক কেনার পর নিজের উপার্জনের টাকায় বেলেঘাটায় দুটি আড়ত চালাতে লাগলেন। এর মধ্যে একটি বাঁশের আড়ত অপরটি মকিমপুর তালুকের পণ্যসামগ্রীর আড়ত। বাঁশের আড়তের ব্যবসা এইভাবে চালান হয় - একসঙ্গে অকেক বাঁশ বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পাঠানো হত। বাঁশ চালান করার এই পদ্ধতিকে মাড় বলা হত। তাই লোকে অনেকসময় তাঁকে প্রীতরাম দাস না বলে অনেক প্রীতরাম মাড় বলে সম্বোধন করতেন। বাঁশের কারবার চলাকালীন সময়ে তিনি নিলামে নানাপ্রকার দ্রব্য কিনে সাহেবদের কাছে বিক্রয় করতে থাকেন। অষ্টাদশ শতকের সেই সময়টা সাহেবরা তখন এদেশের (ভারতে) সবকিছু চিনে উঠতে পারেননি। তাই হাতের কাছে সব কিছু জিনিসের যোগান পেয়ে তাঁরা খুশি হতেন।
অত্যধিক পরিশ্রমী ও সময়োপযোগী হওয়ায় প্রীতরাম নিজের চেষ্টায় ভাগ্য ফিরিয়ে নাম করা ধনীব্যক্তির মর্যাদা লাভ করেছিলেন। ফলস্বরূপ তৎকালীন যুগে ধনীব্যক্তির তালিকায় তাঁর পরিবার প্রথম সারিতে ছিল। ধনী ব্যক্তি বললে ভুল বলা হবে। উচ্চশ্রেণির জমিদার বলতে প্রীতরাম দাসকে বোঝাত। তখনকার দিনে জমিদারের অভাব ছিল না। বড়লোকের সংখ্যাও নেহাৎ কম ছিল না। বদান্য জমিদার আর অত্যাচারী জমিদার— উভয়ে মিলে এই বাংলায় ভারসাম্য বজায় রেখেছিল, কিন্তু জানবাজারের জমিদার - তথা প্রীতরাম দাসের পরিবার সেবামূলক কাজে ও সদাচারে চিরকালের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। যেমন,রানি রাসমণির সেবামূলক কাজ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ও চিরকাল উজ্জ্বল থাকবে।
ক্রমশ
ক্রমশ
0 Comments