সুমিত্রা ঘোষ
প্রীতরাম দাস যখন রোজগারে ফুলে-ফেঁপে উঠতে লাগলেন তখন তাঁর পিসেমশাই অক্রুরচন্দ্র প্রীতরামের বিবাহের ব্যবস্থা করলেন। নিজের ভাই যুগলকিশোর মান্নার মেয়ে মায়ার সঙ্গে প্রীতরামের বিবাহ দিলেন।বিবাহে তিনি যৌতুক হিসেবে ষোলো বিঘে জমি পেলেন। এই জমির উপর প্রীতরাম দাস নির্মাণ করলেন বিশাল বাড়ি। প্রীতরামের শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বরাবর প্রীতরামের বাড়িতে বসবাস করেছেন। তাঁদের মেয়ে-প্রীতরামের স্ত্রী মায়া নিজের মা-বাবার দেখভাল করতেন সংসারের সবকিছু সামলে।
প্রীতরাম ও মায়ায় হরচন্দ্র ও রাজচন্দ্র নামে দুজন পুত্র ছিল। প্রথমপুত্র হরচন্দ্রের কম বয়সে বিবাহ দেওয়া হয় এবং অতি- অল্প বয়সেই সে মারা যায়। তার কোনো সন্তানাদি হয়নি। হরচন্দ্রের স্ত্রী প্রীতরামের সংসারের স্ব-মহিমায় বসবাস করতেন। কেউ কোনদিন হরচন্দ্রের স্ত্রীকে হেয় জ্ঞান করেনি। রাজচন্দ্রও বড় বৌদিকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা-ভক্তি করতেন।
🍂কালের নিয়মে প্রীতরাম কনিষ্ঠপুত্র রাজচন্দ্রের দু-দুবার বিবাহ দিলেন কিন্তু দুই বৌ অকালে মারা গেল। তখনকার দিনে ছেলে-মেয়ে উভয়ের কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। একাধিক বিয়ে হওয়া সামাজিক প্রথার নিয়ম বলে মনে করা হত। এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হচ্ছে। রাজা রামমোহনের যখন নয় বছর বয়স তখন তাঁর পিতা তাঁর বিবাহ দেন। তাঁরও প্রথম বউ মারা যায়। তারপর দ্বিতীয় বিবাহ দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় স্ত্রী বর্তমান থাকতেই পুত্র রামমোহনকে তৃতীয়বার বিবাহ করতে বাধ্য করা হয়। সুতরাং অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজা রামমোহনকে তিনবার বিয়ে করতে হয়।
রাজচন্দ্রকে প্রীতরাম জোর করে বিবাহ দেননি। প্রথম পুত্র অকালে মারা গেল। বিশাল সম্পত্তির কথা ভেবে রাজচন্দ্রকে তাঁর পিতা দুবার বিবাহ দিলেন। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী অকালে মারা যায়। তখন প্রীতরাম পুত্র-রাজচন্দ্রের তৃতীয়বার বিবাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দুবার স্ত্রী মারা যাওয়ায় লোকেরা ধরে নিল রাজচন্দ্রের স্ত্রী ভাগ্য একদম ভাল নয়। তখনও কেউ-ই জানত না রাজচন্দ্রের তৃতীয় স্ত্রী এসে রাজচন্দ্রকে খ্যাতি যশ ও সৌভাগ্যের অধিকারী করে নিজে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। ইনি আমাদের সকলের মনের মানুষ রানি রাসমণি।
বড়লোকের ছেলে হলেও রাজচন্দ্র সংযত, পরিশ্রমী এবং ধর্মপ্রাণ। পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছেন রাজচন্দ্র দাস। তাঁর নৌকাভ্রমণের নেশা ছিল। মাঝে-মধ্যে বন্ধুদের নিয়ে নৌকো ভ্রমণে যেতেন। এমনই নৌকো ভ্রমণের সময় একদিন হালিশহরের কোনা গঙ্গাঘাটে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখানেই ঘটে গেল অত্যাশ্চর্য ঘটনা। সেখানে কোনার গঙ্গার ঘাটে একটি সুন্দরী মেয়েকে দেখতে পেলেন। তখনকার দিনে প্রথামত বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা ভোরবেলায় নিয়মিত গঙ্গাস্নানে যেতেন। সঙ্গে মা-মাসি বা সঙ্গীসাথীরা থাকত। রানি রাসমণির মা খুব ছেলে-বেলায় মেয়েকে ছেড়ে পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। নিমাই পন্ডিতের মাতৃদেবী এমনই এক গঙ্গা-স্নানে গিয়ে বিষ্ণুপ্রিয়াকে পছন্দ করেছিলেন। রাজচন্দ্র দাসও কোনার গঙ্গাঘাটে রানি রাসমণিকে দেখে পছন্দ করেন। তিনি অবশ্য রানিকে দূর থেকে যেটুকু দেখেছিলেন তাতেই তাঁর খুব পছন্দ হয়ে যায়। তখনকার দিনে পরিবার-পরিজনদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হত। জানবাজারে ফিরে এসে রাজচন্দ্র তাঁর ভালো লাগার কথা পরিবার-পরিজনদের জানালেন। সেই সময় রাজচন্দ্রের পিতা পুত্রের জন্য উপযুক্ত পাত্রীর সন্ধান করছিলেন।
(ক্রমশ)
ক্লিক করে পড়ে দেখতে পারেন 👇
হে, কবি হে... /ঋত্বিক ত্রিপাঠী
0 Comments